ধ্রুবতারা (৪ র্থ পর্ব)

মিনুর বাবা গয়াবাড়ির হাট থেকে বাড়ি ফিরে এসে মিনুর মায়ের হাতে বাজারের ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে তার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন , ” মিনুর মা , হামাক এট্টুক তাংকু দাও। আর শুনেন , হাটত বেপারীর নাগান পাইছিনু। হামাক দেকি কাচে আসিল , সাথত করি দুজন মিলি চা খাবার গেনু। তর বেটির জন্নি বেপারী এক কান সম্মন্ধ নিয়া আইচ। ”

” চ্যাংড়া কাঁই থাকে ? কি করে ? কিয়াম ডেকত ? আপনে দেকিচেন ? ” প্রশ্ন করে মিনুর মা ।

‘ মুই নোয়ায় দেকিচ। জ্যানবার পারিম ডিমলা সদরেত বড় দুকান আচে। চ্যাংড়ার বয়েস নাকি একটুক বেশি। তয় হাত পাঁও ঝাড়া। ভিটত তিয়াম আর কেউ নেই। বাপে মারা পরিচে আগেই । মায়ে আঁচে বাঁচিয়া। ভিটত আরও দুই ভাই আঁচে। ত্যানেগো পিরথেক সংসার। এলায় কিচু জমি পাতি আঁচে। মায়ে একুন ঐ ছাওয়ার সংসারত খায়। চ্যাংড়ার নাম জমির। ছাওয়ার আগে একবার বিয়া স্যান্ধাইছিল। কিন্তুক বৌয়ের বাচ্চা হবার যাতিই বৌডা মরি যায়। পর অনিকদিন পারি হবার নাগিচ , চ্যাংড়া আর বিয়া না স্যান্ধাই। বুড়ি একন উঠি পড়ি নাগিচ ছাওয়ার ফির বিয়া দিবার জন্নি। বুড়ির মুনে এলায় ভয় ঢুকিচ , বুড়ি মরি গ্যলীন তার ছাওয়ারে কাঁই দেখিবে , কাঁই আন্না বান্না করি সংসারত গুছায় আকিবে। ব্যাপারী আরও কহিচে , ত্যানাগো কুনো ডিম্যান্ড নোয়ায়। তয় যে চ্যাংড়ির সাত বিয়া হবি সেই কইনাকে নাকি বিয়ার সুময়ই চারি শতক জমি নিকা দিবি। ”

মিনুর বাবা নূর ইসলাম আরও একটু দম নিয়ে জামার পকেট থেকে একটা বিড়ি বের করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে একটা টান দিয়ে আবারও বলে উঠলেন ,
” সক শুনি হামার মুনে অয় হামাকেরে ছাওয়া ওটি সুখেই থাকিম ! মিনুর মা তুমি কি কন ? ”

” আপনে যে কহিচেন চ্যাংড়ার বয়েস একটুক বেশি ! উয়ার আগে একবার বিয়া স্যান্ধাইছিল। এই কতা শুনি হামার ক্যামন য্যান নাগিচ ! তোমরাগুলা এগল্যা কি শুরু করনেন ? হামাকেরে ছাওয়া তো বানের জলের থন ভাসি আসে নাই ! হামাকেরে তো একটাই ছাওয়া। হামার অবশ্যি হামাকেরে গাঁও এর রাজনরে খুবই পছন্দি। হের সংসারত এক বুড়ি দাদী ছ্যাড়া আর আচেটা কে হুনি ? ত্যানে জামাই বানানের মুন চাই। হের সাত বিয়া দিয়াম পারিলে বেটি হামাকেরে চোঁখের সামনেই থাকিম। দূরেত নোয়ায় যাওন নাগিব। ”

মিনুর মার কথা শুনামাত্র মিনুর বাপ নূর ইসলাম রাগে গর্জে উঠে বললেন , ‘ সাবোধান ! মুই যে সম্মন্ধ আনিচি তা নোয়ায় ভাঙ্গিয়াম। হে চ্যাংড়ার ভিটেত এ্যামতোন কি আচে যে হামাকেরে ছাওয়াক খিলাবে ? চ্যাংড়ার নিজেরই তো প্যাট নোয়ায় চলে। সামান্যি চাইল জোগাড় করি নোয়ায় পারে। ডিং খরচা মিটিবার নোয়ায় পারি বেকার আছিল। দ্যাশত কুনো কাম জুটাইবার নোয়ায় পারি বুড়িক ফেলি ঢাকায় কনটে উয়ান কাম করিবার গেচে ! ঢাকায় তারে কাম দিবেন কে লা ? এইকনা ভিটেমাটি ছাড়া আর কিচু নাই। উয়ার পরেও সেখ্যানত বিয়া দিয়া কি হামাকেরে ছাওয়ার ভবিষ্যৎটা নষ্ট করিব লা ? ওই চ্যাংড়াক কাই বিয়া করবি ? ঢ্যানা হয়া থাকিম। মুই তরে এক খ্যান কতা পষ্ট কহি দিচ্চি , ঐ চ্যাংড়া য্যান হামার ভিটেত আর নোয়ায় আইসে। এই মোর শ্যাষ কতা। ”
এই কথা বলেই নূর ইসলাম রাগে হনহনিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন ॥
( চলবে )

তাংকু : তামাক
নাগান : নাগাল / কাছে পাওয়া
চ্যাংড়া ও চ্যাংড়ি : ছেলে ও মেয়ে
ছাওয়া : সন্তান
নাগিচ : লেগেছে
কাই : কে
নোয়ায় : না
এ্যামতোন : এমন
ঢ্যানা : অবিবাহিত

-ফিরোজ চৌধুরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *