নিতুর বিয়ে (২য় পর্ব)

রোহান নিতুকে মায়ের ঘরে পৌছে দিয়ে সেই যে গিয়েছে আর খবর নেই। রোহানের মা বেশ শক্ত পোক্ত মহিলা। রোহানের বাবা মারা যাবার পর তিনিই সংসারটা সামলেছেন। তিনটে সন্তানকে মানুষ করেছেন। তবে দুু’টো সন্তানই প্রবাসী। তিন্নির সাথে রোহানের বিয়েটা তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি। বুদ্ধিমতি মাহিলা তিনি তবে এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলেনও নি। রোহান তার অসম্ভব আদরের সন্তান। তিন্নির কারনে রোহানের সাথে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে যেটা তিনি মন থেকে কখনও মেনে নিতে পারেন নি। তবে তিন্নির মৃত্যুটা তাকে অনুশোচনায় ফেলে দিয়েছে, মেয়েটাকে জন্ম দিয়ে চব্বিশ ঘন্টা বেঁচে ছিল তিন্নি। মৃত্যুর আগে তার হাত ধরে বলে গিয়েছে মেয়েটাকে যেনো তিনি অবহেলা না করেন। সেই থেকে নাতনিকে বুকে আগলে রেখে ছেন। রোহান কেন জানি বাচ্চাটাকে সহ্য করতে পারছে না। তার ধারনা তিন্নির মৃত্যুর জন্য মেয়েটা দায়ী। বাচ্চাটার মুখটা পর্যন্ত দেখেনি রোহান।

তোমায় একটা প্রশ্ন করি নিতু, আচমকাই কথাটা বললেন রোহানের মা। বলুন, উত্তর দিল নিতু। তুমি কেন আমার রোহানকে না দেখেই বিয়ে করার জন্য রাজী হলে? বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো নিতু, আলতো পায়ে হেঁটে দোলনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, অল্প একটু দুলে উঠলো দোলনাটা। মাটির দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললো, আমি খুব লোভী, তাই রাজি হয়েছি, মা হারা একটি মেয়ে মা ডাকের লোভটা সামলাতে পরিনি। আপনি যেদিন আমার মাথায় হাত রাখলেন, কি যে হল আমার, মাথায় কেবল আপনার কথাই ঘুরতো। আমার মাকে আমি কখনও দেখিনি, মায়ের কোনো ছবিও ও বাড়ীতে নেই, তাই মা কেমন হয় আমি জানতাম না। আপনাকে দেখে মনে হলো, মা বুঝি এমনই হয়। আমি লোভে পড়লাম, আমাকে কি আপনার খুব লোভী মেয়ে মনে হচ্ছে? এবার চোখ তুলে তাকালো নিতু, পূূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো নিতু, আমি কি আপনাকে মা ডাকতে পারি?

কি যে হল রোহানের মায়ের শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন নিতুকে। নিতু মাকে জড়িয়ে ধরে প্রায় ফিস ফিস করে বললো, আমার দ্বিতীয় লোভের কথা শুনবেন না মা? নিতুকে ছেড়ে দিলেন রোহানের মা, তাকালেন তার মুখের দিকে, আবারও বলা শুরু করলো নিতু। জগৎ সংসারে মা ছাড়া একটি মেয়ের বেড়ে ওঠা যে কি কঠিন তা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানেনা। এই মেয়েরা কাঁদতেও ভুলে যায়। আপনি যখন আমাদের বাসায় গিয়ে বললেন আপনার ছেলের দু মাস বয়েসি একটি মেয়ে আছি, আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এখানে আমার বিয়ে হোক বা বা হোক এই মেয়েকে আমি কোনো কষ্ট পেতে দিবোনা। বুক দিয়ে আগলে রাখবো। প্রয়োজন হলে বাবুটার আয়া হয়েও। নিতুর ঠোঁটে হাত ছুঁয়ে মা বললেন আয়া হয়ে কেন? মা হয়েই তুমি থাকবে।

নিতুকে রোহানের রুমে নিয়ে এলেন মা। বললেন, আজ থেকে এটা তোমার ঘর। যাও হাতমুখ ধুয়ে কাপড় বদলে এসো। একসাথে চা খাবো।

কাপড় বদল করে বারান্দায় এসে দাড়ালো নিতু, শূন্য বারান্দা কেমন যেনো খা খা করছে, এতো চমৎকার একটি বারান্দা অথচ দু টো চেয়ার নেই, দেখেই নিতুর মনটা খারাপ হলো। মাকে বলে এখানে দু টো চেয়ার রাখতে হবে, মনে মনে ভাবলো নিতু।

-জাহেদা মিমি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *