পোট্রেট অফ এ সাইকো (১১ তম পর্ব)

স্যামের মোবাইলে কল আসল৷ হাসান দেখল রিসিভ করেই স্যামের মুখ গম্ভীর হয়ে উঠেছে৷

হাসান উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে আছে৷ ওর মনে হচ্ছে জেরিন ম্যাডামের বিপদ ঘটেছে এবং এই স্যামের মুখ গম্ভীর হয়ে যাওয়া মানে সেই বিপদ সম্পর্কে কনফার্ম হওয়া৷
স্যাম ফোন রেখে বলল সেদিন রাতে পার্টির পর পরই রাতে ইরমা কে ফ্রান্সে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ গোপনে৷
স্যাম নিজের মনেই বলল তারমানে এই দাঁড়াল স্যার উইলিয়ামই এসব করছে৷ সে তার মেয়েকে নিরাপদ দুরত্বে পাঠিয়ে দিয়েছে৷ এরপর ফোন পাওয়ার ভান করে জেরিন ম্যামকে কিডনেপ করেছে৷
কিন্তু উইলিয়ামের একা এই কাজ করার সামর্থ্য নেই৷ নিশ্চয়ই ওর পেছনে আরও লোক জড়িত এবং এদের একটা নেটওয়ার্ক আছে!
হাসান এ ব্যাপারে তুমি কিছু সাহায্য করতে পার?
হাসান স্রাগ করলো৷ মানে সে আর কিছু জানে না৷
স্যাম এর মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে৷ জেরিন কে কিডনেপ করার মানে কি? কি কারণ থাকতে পারে৷ তারমানে এই হলো, জেরিন এমন একটা কিছু জানে বা জেরিনের কাছে এমন একটা কিছু আছে যেটা ওদের ভীষণ প্রয়োজন৷ যার জন্যে পুলিশ স্টেশান থেকে এভাবে মাথায় পিস্তল ধরে জেরিন কে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷
স্যামের দরজায় নক হল৷
ইয়েস কাম ইন…
হিউ প্রবেশ করলো৷
কি খবর হিউ বলতো?
স্যার কিছু জিনিস খাপছাড়া ঠেকছে৷ আলতাফের প্রতিটা ভিকটীম এর সাথে প্রতিটি ভিকটিমের সুক্ষ্ম একটা মিল রয়েছে৷ শুধু মাত্র শেষ মেয়েটা ছাড়া!
স্যাম বললেন বল শুনি আর কি সারপ্রাইজ দেবে৷
হিউ বলা শুরু করলো…
কিছু দিন আগে আমাদের এক এজেন্ট এই সাইকো দ্বারা নিহত হয়েছে৷ নিনা৷ মেক্সিকান ইমিগ্রেন্ট ছিল নিনা৷ তারপর পাকে চক্রে সে আমাদের সাথে এসে জুটে৷
নিকি, সে ছিল রুমানিয়ান ইমিগ্রেন্ট৷ সেও সাইকোর হাতে নিহত হয়৷ এর আগের কেইস গুলারও একই অবস্থা৷
যারা মারা গেছে সবাই কখনও না কখনও পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সাথে কোন না কোন ভাবে জড়িত ছিল৷ গ্রাসিয়া, মার্থা, আয়শা, নিনা, নিকি সবাই৷ আমার ধারণা স্যার এরা সবাই ই নিকির মতোন ডাবল এজেন্ট ছিল৷
সবচেয়ে অবাক করা খবর স্যার এখন দিব৷ হোলগার এরেস্টের মতো ঘটনা আছে৷ ড্রাগ এডিকশান, ছিনতাই, চুরি এসব কারণে রিহেবিটেশান সেন্টারে থাকতে হয় বেশ কিছুদিন৷ তারপর তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ফ্রান্সে৷ অন্ততঃপক্ষে ডাটাবেস সেই কথা বলে৷ এরপর তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায় না দীর্ঘদিন৷ গত আড়াই তিন বছর ধরে হোলগা এ দেশে আছে৷ এবং সবচেয়ে সন্দেহজনক ব্যাপার হলো সে এখানে প্রবেশ করার পরপরই আলতাফ দ্যা সাইকো সক্রিয় হয়েছে৷ আর হত্যা কান্ড গুলো ঘটেছে৷ হোলগার হত্যার ব্যাপারটা আসলে কিছুতেই মেলানো যাচ্ছে না৷ তবে…
বলে একটু থামলো হিউ৷ দম নিল৷ স্যাম উৎসুক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷
তবে… জেরিন ম্যাম এর কিডনেপিং, হোলগা নামের মেয়ের হত্যা, উইলিয়াম ও সাইকোটাকে যদি এক লাইনে দাঁড়া করানো হয় তাহলে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়৷
কারণ হোলগা’র বাবার নামের জায়গায় কার নাম লিখা আছে জানেন?
স্যাম উত্তেজিত গলায় বলল কার নাম?
স্যার উইলিয়ামের নাম!
হিউ বলতে শুরু করলো স্যার আমার ধারণা এসবই কোন একটা বড় পরিকল্পনার অংশ৷ সম্ভবত ইন্টেলিজেন্সের করাপটেড একটা অংশ এসবে আছে৷ উইলিয়াম তাতে যোগ দিয়েছে৷ যোগ দিয়েছে হোলগা৷ তাদের এসবের সাথে কোন না কোন ভাবে যুক্ত আছেন মিস জেরিন৷ তাকে টেনে আনার জন্য শুরু হয়েছে এই সাইকো হত্যা কান্ড৷ সেই হত্যা কান্ডে জীবন যাচ্ছে সেই সব মেয়েদের যারা ডাবল এজেন্ট হিসেবে কাজ করতো এবং বর্তমানে তাদের আর প্রয়োজন নেই!
এক ঢিলে দু’টা না স্যার তিনটে পাখি মারার প্লান ওদের
কিছু এজেন্ট কে সরিয়ে দেওয়া কিন্তু দেখানো এটা এক ধরণের সাইকো কিলিং
দুই সাইকো কেইস ধরে জেরিন কে এখানে টেনে আনা
তিন জেরিনের কাছ থেকে এমন কিছু বাগানো যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
স্যার! হিউ বলল আমার ধারণা কিছুদিন আগে থাইল্যান্ডে জেরিন যে ক্রাইম সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন সেই ক্রাইম সিন্ডিকেট এই লন্ডনেও সক্রিয়৷ জেরিন ম্যাম এর ফারার হওয়া থাইল্যান্ডে আত্মপ্রকাশ সবকিছুই সম্পর্কযুক্ত এই কিডনেপিং এবং সাইকো কিলিং এর সাথে৷
হিউ আবার বলল স্যার ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ অন্ততঃ আমাদের দেশের সিক্যুরিটির ক্ষেত্রে ৷ জেরিন ম্যাম একজন ফিল্ড অফিসার৷ আমরা সরকারী ভাবে উনাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এখানে নিয়ে এসেছি৷ এখন যদি কোন সমস্যা হয় স্যার সেটা আমাদের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক ভাবেই ক্ষুন্ন করবে!
স্যাম মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলেন হিউ’র বক্তব্য শুনে৷
তার মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে পুরা৷
হাসান যে সামনে বসে আছে সেটা তাদের খেয়ালই নাই৷ এদিকে তুষার ঝড় বয়ে যাচ্ছে বাইরে৷ হিথরো থেকে একে একে ফ্লাইট ক্যান্সেল হচ্ছে৷ বিভিন্ন জায়গার সাথে লন্ডনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ এই মুহূর্তে বের হওয়াও সম্ভব নয়৷
স্যাম মনে মনে বললেন জেরিন তুমি টিকে থাকো৷ এই ঝড় বন্ধ হওয়া পর্যন্ত সারভাইভ করো৷ আমরা আসছি….
স্যামের দরজায় আবার টোকা পড়লো৷ ইয়েস কামইন৷
এবার একটা মেয়ে প্রবেশ করলো৷ বলল স্যার আপনার জন্য একটা অদ্ভুত ইনফরমেশান আছে৷
স্যাম মলিন একটা হাসি দিয়ে বললেন বল আর কি সারপ্রাইজ তোমরা দেবে?
স্থানীয় হাসপাতালের সামনে থেকে আধঘন্টা আগে একটা এম্বুলেন্স চুরি গেছে৷ চোর সিসিটিভি ক্যামেরার সামনে এসে জানালায় একটা অক্ষর লিখেছে ‘A’
স্যাম বলল তাড়াতাড়ি ফুটেজ দেখাও মিস তাড়াতাড়ি!
মেয়েটা বলল আমি এখনই আনছি স্যার৷
হিউ বলল স্যার এ যদি আলতাফ হয় তাহলে সাইকোটা এম্বুলেন্স নিয়ে এই ঝড়ের সময় কোথায় রওয়ানা হলো?
হাসান বলল সম্ভবত স্যার সাইকোটা জেরিন ম্যাম এর খোঁজ জেনে গেছে!
….
প্রবল তুষারপাত উপেক্ষা করে আলতাফ গাড়ি চালাচ্ছে৷ সাবধানতার ধার না ধরে৷ ওর যেন কিছু একটা মনে হয়েও হচ্ছে না৷ কিছু একটা মাথায় আসি আসি করেও আসছে না৷
স্যাম এর মতো সে ও বলল এই ঝড়টা সারভাইভ করো জেরিন, আমি আসছি….

জেরিনের পেছনে উইলিয়াম৷ হাতে পিস্তল৷ জেরিনের হাত টাই দিয়ে বাঁধা৷ নামার পরপরই এ কাজটা করেছে উইলিয়াম৷
এরপর হাক দিল সে৷ সামনের আলো গুলোর উদ্দেশ্যে৷ একটু অসতর্ক হয়ে গেলো উইলিয়াম৷ সুযোগটা নিল জেরিন৷ ব্যাক ফ্লিপ করলো সে৷ হাওয়ার মাঝে ডিগবাজি খেয়ে নামার সময় পা নামিয়ে আনল উইলিয়ামের হাত বরাবর৷ নিচে তুষার থাকায় ঠিক মতোন হলো না৷ উইলিয়াম আর জেরিন হুড়মুড়িয়ে পড়ল লাড্ডু পাকিয়ে৷ একটা গুলি ঝড় আর বাতাসের মধ্যে হারিয়ে গেল৷ গাড়ির হেড লাইটের আলোতে জেরিন কোন রকমে উঠে দাঁড়ালো৷ পিস্তলটা সামনে পড়ে আছে৷ উইলিয়াম উঠার চেষ্টা না করে হাত বাড়ালো পিস্তলের দিকে৷ লাথি মেরে সরিয়ে দিল জেরিন৷
ইতিমধ্যে ছয়জন লোক ঘিরে ধরলো জেরিন কে৷
এদের একজন শওকত!
পাঁচজনের অতি উৎসাহী একজন জেরিনের দিকে এগুলো৷
উইলিয়াম জানেন জেরিন একজন মোয়েইথাই ফাইটার কিন্তু কতটা পরিনত ফাইটার তা জানেন না৷ দুই’ হাজার বছরের এই পুরোনো বিদ্যা জেরিন রপ্ত করেছে একজন এক্সপার্টের কাছে৷ যারা ঘিরে ধরেছে জেরিন কে সবাই মোটামুটি ভাল ফাইটার৷ যে প্রথম জেরিন কে চেজ করতে এগিয়েছে সে নিজেকে ভাল ফাইটারই মনে করে…
ছয় জনের মধ্যে শওকত শুধু দুই পা পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো৷ সে জানে এই বাঘিনীকে৷ এরা পড়ে গেলে তারপর এগুবে৷
উইলিয়াম তার পিস্তল হাতড়াচ্ছে৷
প্রথম এগুনো লোকটার দিকে দু’কদম এগিয়ে গেল জেরিন, অনেকটা দৌঁড়ের সময় স্প্রীন্ট শুরুর ঠিক আগে যেমন একজন দৌড়বিদ লম্বা করে কদম ফেলে ঠিক তেমন৷
ছোট্ট একটা লাফে এক পা লোকটার বাড়ানো পায়ের ঠিক হাঁটুর উপর রাখলো৷ সেই পায়ের জোরে আরও অনেকটা লাফালো জেরিন৷ লোকটা কিছু বুঝে উঠার আগেই কনুই নামিয়ে আনল সে৷ বরফের কারণে সব পিছল হয়ে আছে৷ লোকটার ব্রহ্ম তালুতে মারটা লাগলো না তাই৷ যদি লাগতো ভবলীলা ওখানেই সাঙ্গ হত৷ মাথার একপাশ থেকে কান পর্যন্ত চিরে গেল লোকটার৷ কনুই এর আঘাতে৷ মাটিতে ল্যান্ড করে শরীর মুছড়ে লোকটার পাঁজড়ে মারল জেরিন৷ তিনহাত উড়ে যেয়ে বরফের উপর স্কীড করলো লোকটা৷ থেমে গেল, জ্ঞান হারিয়েছে মারের চোটে৷
বাকি চারজন এবার সতর্ক হয়ে এগুলো৷ দু’মারে দসাসই একটা মানুষ কে যে কুপোকাত করতে পারে সে সাধারণ কিছু নয়!
ডানের জনের উদ্দেশ্যে ফলস স্টেপ দিল জেরিন৷ বাম থেকে এগোলো একজন৷ চকিতে পাঁজর বরারবর পা চালালো জেরিন৷ সামনের একজন জেরিন কে অরক্ষিত পেয়ে ফ্লাইং কিক হাঁকল৷
ব্যাপারটা এমন জেরিনের বাম পা একজনের ডান পাঁজড়ে আর ঠিক সামনে থেকে আরেকজন ওর বুকে কিক করেছে৷
তিনজনের পতন একসাথে হল৷ জেরিনের লাথি খেয়ে একজন ছিটকে পড়ল৷ জেরিন ছিটকালো আরেক জনের লাথি খেয়ে আর জেরিন কে যে ফ্লাইং কিক করেছিল সে পা হড়কাল৷
জেরিন একলাফে উঠে দাঁড়িয়েছে৷ লোকটা পা পিছলে জেরিনের কাছাকাছি চলে আসল৷ এবার ফ্রন্ট ফ্লিপ করলো জেরিন৷ ঘুরে সামনের দিকে ডিগবাজী দিয়ে পড়ার সময় পা লম্বা করে দিল৷ পায়ের গোড়ালি লোকটার পেটে প্রবল জোরে আঘাত হানল৷ হুক করে সব বাতাস বেরিয়ে গেল লোকটার৷ উইলিয়াম পিস্তল খুঁজে পেয়েছে৷ ফাঁকা একটা গুলি ছুঁড়ল সে৷ তারপর জেরিনের উদ্দেশ্যে তাক করে বলল থামো! যথেষ্ট হয়েছে৷ এরপর শরীরে বেঁধাবো৷
জেরিন থেমে গেল হাত তুলতে তুলতে৷
জেরিন চোখ তুলে হিংস্র দৃষ্টিতে তাঁকালো উইলিয়ামের দিকে৷ চিবিয়ে বলল একবার সুযোগ যদি পাই উইলিয়াম…
উইলিয়াম বলল কি করবে! কিছুই করতে পারবে না! ইউ ক্যান ডু নাথিং লেডি…
জেরিন বলল ইয়েস আই ক্যান ইউ মোরান! আই উইল রিপ ইয়োর %*লস এন্ড উইল মেক ইউ সো… শওকত এগিয়ে এসে জেরিনের মাথার পেছনে মাপা মার দিল ৷ নেতিয়ে পড়ল জেরিন৷ তুষারের উপরে৷
শওকত উইলিয়ামের দিকে তাকিয়ে বলল ইউ গিভ চান্স শি ডু একজেক্টলি , সেইড৷ নো গিভিং চান্স , লেট কিল৷ ছেমড়ি (আরে ধুর নিজের মনেই বলল সবথিকা কঠিন কাজ ইংরাজী বলা), নো, নো ছেমড়ি, দিস গার্ল জেরিন উইল কীল ৷ অল অব ইউ৷
উইলিয়াম হেসে বললেন বুলেটের সামনে কেউ টেকেনি কখনও টিকবেও না৷
আমরা একে কথা বলাব৷ তার আগে নো কিলিং৷
শওকত মাথা নেড়ে বলল মিসটেক গ্রেট মিস্টেক৷ লেটার আফসোস, মিনস পস্তাবা৷ এই দুইটা শব্দের ইংরাজী খুঁজে পেল না শওকত৷ চাকু চালানো ইংলিশ বলার থেকে বেশি সহজ৷
উইলিয়াম বলল একে নিয়ে যেয়ে বেঁধে রাখো৷ ভাল করে৷ ওয়ার হাউজের উপরে যে কোন একটা ঘরে৷ গায়ে শুধু শার্ট আর প্যান্ট ছাড়া যা গরম কাপড় আছে খুলে ফেলবে৷ বীচটা ঠান্ডা খাক কিছুক্ষণ৷ না হলে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া যাবে৷
শওকত বলল উইলিয়াম, জাস্ট কিল্ড হার৷ ওর আফটার, শি উইল গিভ আস বাম্বু৷
কথার ধরণে উইলিয়াম মোটামুটি বুঝে গেল কেন শওকত বাম্বুর কথা বলেছে৷
সে হা হা হা … করে হেসে উঠল আর বলল নো শি কান্ট! হা হা হা শি উইল গিভ বাম্বু৷ হা হা হা হোয়াট এ জোক….হা হা হা ৷
….
ঢাকায় জেরিন কিডনেপ হবার খবর পৌঁছে গেছে৷ দু’তাবাসের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে৷ তার বলেছে সমস্যা নেই৷ উয়ি উইল হ্যান্ডল..!

কাউন্টার ইন্টেলিজেন্ট চীফ রাহাত সাহেব নেগোসিয়েশনে বসেছেন৷ রুদ্ধদ্বার বৈঠক৷ তিনি উত্তেজিত হয়ে বললেন আপনাদের ওখানে তুষার ঝড় শুরু হয়েছে৷ মেয়েটাকে কিডনেপ করা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত কোন খবর নেই!
বিদেশী লোকটা বলল এজ ফার এজ আই নো সে তোমার বিভাগের কেউ নয়!
রাহাত সাহেব বললেন এজ ফার…! এই মেয়েটা একটা যুদ্ধ শুরু করেছে৷ সিস্টেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ৷ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধ৷ সে রানার মতো দাড়াবাজ স্পাই নয়৷ সোহানার মতো তার ব্যাকআপ নেই৷ কেবল মাত্র নিজ বুদ্ধি আর শক্তি বলে এই মেয়েটা সবার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে৷ তোয়াক্কা করেনি৷ একটা কালো হাতের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যেয়ে বাবাকে হারিয়েছে৷ সাসপেন্ড পর্যন্ত হয়েছে দমে যায় নি৷
জেরিন আমার মেয়ে!
আমাদের কাছে ইনফরমেশান আছে, সাইকো খেলাটা সাজানো৷ ওর বাবার ফাইলের জন্য ফাঁদ সাজিয়ে ওখানে তাকে টেনে নেওয়া হয়েছে তোমরা কিছু না পার আমাদের ফিল্ডে নামতে দাও৷
আমাদের ডিপ্লোমেটিক…
রাহাত আর স্থির থাকতে পারলেন না৷ টেবিলে চাপড় মেরে বললেন প্লিজ! ওসব শুনিয়ো না৷ ছেলেরা এমনিই খেপে আছে৷ পারমিশন না দিলে এমনিই ওরা ঢুকে যাবে৷ কোন কিছুর তোয়াক্কা করবে না৷
চয়েজ ইজ ইয়োরস! ইয়েস অর নো..!
লোকটা মাথা নাড়ল৷ কানের ব্লু টুথ হেডটার বাটনে চাপ দিলেন তিনি বললেন বয়েজ প্রসিড! হাসানের দেওয়া কোর্ডিনেটে অগ্রসর হও৷ ঝড় থামার সাথে সাথে যেন পৌঁছতে পারো! গুড লাক৷
কনফারেন্স রুম থেকে বের হবার সাথে সাথেই রাহাত সাহেব একটা কল পেলেন, বললেন ইয়েস..
ওপাশ থেকে ভরাট গম্ভীর একটা স্বর উচ্চারণ করল স্যার রানা! রানা বলছিলাম৷ আমি কি…
নো.. তোমার জন্য অন্য কাজ আছে৷ এম আই সিক্স এর পরিচিত কারও সাথে নেগোসিয়েশানে যাও৷ এ ব্যাপারে কিছু করতে পারে কি না দেখ! করাপশন সব জায়গায়ই আছে৷ যারা এটা করছে ওরা পঁচে গেছে৷ পঁচা অংশ কেটে ফেলতে হবে৷৷ ওরা না পারলে আমরা সহযোগিতা করবো৷

শিবলি ফ্রান্স থেকে ট্রেনে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছে৷ যততাড়াতাড়ি সম্ভব কোর্ডিনেশানে পৌঁছতে চায়, রফিক আয়ারল্যান্ডে, শুধু তাই না তাজও প্রস্তুত৷ ওয়ালশ মানে সবচেয়ে কাছাকাছি আছে সে৷
দীর্ঘদিন ধরে জেরিন একা যুদ্ধ করছিল৷ রাহাত সাহেবের কাছে সে খবর পৌঁছে দিয়েছিল রানাই৷ এই প্রচন্ড মেরিটরিয়াস কিন্তু প্রায় বিপথে চলে যাওয়া তাজ, ট্রেকার রফিক, স্পেশাল ব্রাঞ্চের শিবলি আর হাসান সবাইকে তিনি একত্রিত করার আশায় ছিলেন৷ কিন্তু মাঝপথে জেরিন হঠাৎ লন্ডনে চলে যাওয়ায় উদ্দেশ্যটা ভেস্তে যায়৷ রাহাত সাহেব হয়তো কিছু টের পেয়েছিলেন৷ কাজেই ওদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন আগেভাগেই৷
হাসান তো লন্ডনে ছিলই!

ঠান্ডা আর অন্ধকার একটা ঘরে চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় জেরিন৷ মাথা নুঁয়ে পড়েছে বুকের কাছে৷ ফ্যাকাশে হতে শুরু করেছে ত্বক৷

স্যাম, রাহাত, রানা, শিবলি, রফিক, তাজ, হাসান, রানা সবাই প্রার্থনা করছে মনে মনে৷ শুধু বলছে জেরিন শুধু ঝড় থামা পর্যন্ত টিকে থাকো.. আমরা আসছি…

যদি জেরিন ঝড় থামা পর্যন্ত টিকে যায়, যদি বেঁচে যায়, সারভাইভ করে ফেলে তাহলে জেরিন জানতে পারবে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সে আর একা নয় অনেকেই তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে!

(চলবে)

-পলাশ পুরকায়স্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *