পোট্রেট অফ এ সাইকো (১২ তম পর্ব)

মধ্যরাতের পর ঝড় স্তিমিত হয়ে এসেছে৷ জেরিনকে একটা চেয়ারের মধ্যে বেঁধে রাখা হয়েছে৷ মাথার বাঁ পাশে আঘাত লাগায় রক্ত চোখ ও গালের উপরে এসে জমাট বেঁধে রয়েছে৷ তাছাড়া ঠান্ডায় জানালা খোলা অবস্থায় রাখার কারণে কিছুটা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে ওকে৷

জেরিনের মাথাটা ভার ভার লাগছে৷ মনে হচ্ছে ওটার ওজন বেড়ে গেছে কয়েকগুণ৷ কথা বলার মতোন অবস্থা নেই তার৷
উইলিয়াম আর চারপাঁচজন ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে বা বসে৷
অনতিদূরে শওকত দাঁড়িয়ে আছে৷ একটু অন্ধকারে৷ চুপচাপ৷ ব্যাপারটা ওর ভাল লাগছে না৷ টর্চার মর্চার করা ওর ধাতে নেই৷ ও একটা কথাই বোঝে৷ বিপদজ্জনক শক্রু কে বাঁচিয়ে রাখতে নাই৷ একটা ফাইলের জন্য ওরা এমন করছে৷ উইলিয়াম কে সে বলেছিল৷ মেরে ফেল জেরিন কে৷ নতুবা আমি মেরে ফেলি৷
উইলিয়াম বলেছে যা বোঝো না সেটা নিয়ে কথা বলতে এসো না৷ এটা উপরের হুকুম৷ ওদের ইনফরমেশান অনুযায়ী ফাইল জেরিনের সাথেই আছে৷ আগে ওটা চাই৷
শওকত আর কিছু বলেনি৷
উইলিয়াম জেরিনের গালে হালকা দুটো চাপড় দিল৷ জেরিন কোন রকমে মাথা তুলল৷ ঘোর লাগা চোখে উইলিয়াম আর তার সাথের লোকদের দেখল৷
উইলিয়াম বলল জেরিন আ’ম সরি৷ শুধু ফাইলটা কোথায় বলে দাও৷ তোমাকে ছেড়ে দিব৷
জেরিন কিছু বলল না৷ শুধু বলল পানি!
উইলিয়াম আবার বলল জেরিন ফাইলটা কোথায়?
জেরিন বলল ঠান্ডা৷
একজন বলল স্যার ঠান্ডায় সম্ভবত ডিপপ্রেসড হয়ে গেছে মেয়েটা৷ আবোল তাবোল বকছে তাই৷
উইলিয়াম বলল তাহলে ওকে উইস্কি খাওয়াও৷ গরম কাপড় দাও৷ কথা বলার মতোন অবস্থা সৃষ্টি করো৷ ঝড় থামলে আমরা বেশিক্ষণ সুযোগ পাব না৷ ওর সিগনালিং আমি ভুল পাঠিয়েছি৷ কিন্তু ধরতে সময় লাগবে না ওদের৷ ওরা এসে পড়বে৷
শওকত আবার বলল উইলিয়াম ফিনিশ হার৷ লেটস গো৷ একটা ফাইল নিয়া নো টাইম ওয়েস্ট৷ লেটস গো ফার এওয়ে৷ আদারওয়াইজ ডাই৷ অল৷
উইলিয়াম বলল তোমার প্রয়োজন পড়লে তুমি চলে যাও ইউ ব্লাডি সোয়াইন৷ শেষপর্যন্ত ফাইল উদ্ধারের চেষ্টা করতে হবে৷ আমি ফোর্স থেকে বেরিয়ে এসেছি৷ আমার ফিরে যাবার উপায় নেই৷ জেরিনের জ্যাকেট জামা কাপড় সব চেক করো৷ ওর গায়ে অর্নামেন্টস সহ যা আছে সব চেক করো খুলে৷ প্রয়োজনে কাপড় চোপড় সব খুলে চেক করো!
ওরা প্রফেশনাল৷ এসব কথায় বিব্রত বোধ করে না৷ জ্যাকেট প্যান্ট গেঞ্জি, হুডি সব একে একে চেক করলো ওরা৷প্রাথমিক ভাবে৷ আপাতত খোলার প্রয়োজন মনে করলো না কাপড় গুলো৷ হাতের কালো ব্রেসলেট টা চেক করতেই বেরিয়ে পড়ল লম্বা একটা পাথর আলাদা৷ একজন বলল উইলিয়াম! আমরা মনে হয় কিছু একটা পেয়েছি৷
জেরিন এখন বাংলা গান গাইছে৷ ঠান্ডায় গলা বসে গেছে৷ বেসুরো ভাবে গাইছে ও আমরা সবাই রাজা আমাদেরই… তিনচার লাইন গেয়ে শুরু করলো লালনের গান আমি ওপার হয়ে বসে আছি,… তিনচার লাইন গেয়েই শুরু করলো এত জল ও কাজল নজরুল গীতি…
উইলিয়ামের সাথের একজন বলল এইটার মাথায় কি গন্ডগোল ধরে গেছে নাকি! জেরিন অন্য আরেকটি গান শুরু করলো৷
উইলিয়াম তেতে উঠে বলল বাংলা বীচের মাথাটা গেছে মনে হয়৷ ঠান্ডায় ধরছে৷ এরে উইস্কি গেলাও৷ তারপর গরম কাপড় পরিয়ে উপরে বেঁধে রেখে এসো৷ আগে এই পাথরটার ভিতরে কি আছে বুঝে নিই৷ যদি ফাইল থাকে ত ল্যাঠা চুকে গেল৷
জেরিন হেঁড়ে ভাঙা গলায় গান গেয়েই চলেছে৷ দু’জন ধরে মাথা সিধে করার চেষ্টা করলো জেরিনের৷ সে চিৎকার করে মাথা সরিয়ে নিল৷ আবার গান শুরু করলো৷
উইলিয়াম বিরক্ত হয়ে বলল হুইস্কি গিলিয়ে শালীর মুখে টেপ আটকাও৷ তারপর বেঁধে রেখো৷ মাথাটা শেষ করে ফেলল বীচ টা!
জেরিনের গালে একজন ঠাস করে একটা চড় দিল৷ এবার দু’তিন ঢোক উইস্কি ঢেলে দিল৷ কেশে উঠল জেরিন৷ আরও দু’ঢোক গেলানোর পরে আস্তে আস্তে মাথাটা বুকের কাছে ঝুলে পড়ল জেরিনের৷ মুখে টেপ লাগানো হল ওর৷ উপরের ঘরে নিয়ে চেয়ারে বেঁধে রাখা হল ওকে৷ গরম কাপড় পরানো হয়েছে জেরিন কে৷
নিচে উইলিয়াম পাথরটা নিয়ে বসল৷
ঘরছেড়ে ওরা বেরিয়ে যেতেই সক্রিয় হলো জেরিন৷ এতক্ষণ ও নাটক করছিল৷ পাথরটা ভেঙে ওরা একটা মেমরী কার্ড পাবে৷ ওখানে যা আছে তা ডিকোড করতে বিশ পঁচিশ মিনিট সময় লাগবে উইলিয়ামের৷
ঐ সময় টুকুই কাজে লাগাতে হবে ওর৷ এখান থেকে ছাড়া পেতেই হবে৷ উইলিয়াম আর শওকতের একটা বিহিত করতেই হবে৷ নিজেকে ছাড়ানোর কোন রাস্তা না পেয়ে জেরিন এই কাজটা করেছে৷ ঠান্ডা এবং আঘাত জনিত কারণে মেন্টালি ডিসঅর্ডারড পার্সনের মতো আচরণ করেছে সে৷
যে চেয়ারে ওকে বেঁধে রাখা হয়েছে সে চেয়ারটা রডআয়রনের৷ বেশ পুরোনো৷ কাজেই এটাকে ভেঙে ফেলার একটা চেষ্টা করা যেতে পারে৷ একটা হাতলও যদি উঠিয়ে ফেলা যায়৷ নিজেকে মুক্ত করতে পারবে জেরিন৷ সেটাই করছে এই মুহুর্তে৷ হুইস্কি পেটে পড়ায় লাভই হয়েছে৷ ঠান্ডাটা ভেতর থেকে কিছুটা কমেছে তার৷ সর্বশক্তিতে ডান হাতটা মোচড় দিল জেরিন৷

উইলিয়াম জেরিনের ব্রেসলেটের পাথর থেকে একটা মেমরি কার্ড উদ্ধার করেছে৷ সেটাতে কিছু ডাটা আছে৷ সম্ভবত একটা ফাইল৷ এনক্রিপটেড৷ এখানে সেটা ব্রেক করার উপায় নেই৷ ঝড়ে নেটওয়ার্কও বিপর্যস্ত৷ তারপরও একটা লেপটপ দিয়ে নিজের জানা মতোন চেষ্টা করল উইলিয়াম৷ পারল না৷ হতাশ হয়ে কিছুক্ষণ লেপটপ স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকল সে৷ কি করবে এখন?
জেরিনকে ঝেড়ে ফেললেই ভাল হত৷ কিন্তু ফাইলটা কনফার্ম না করে কিছু করা যাচ্ছে না৷ এটা সে ফাইল যদি না হয়!
একজন কে বলল উইলিয়াম দু’জন উপরে যাও৷ মেয়েটাকে নিয়ে এসো। দেখি কিছু করা যায় কি না৷
ওরা উপরে যেয়েই দ্রুত নিচে নেমে এল৷
উইলিয়াম ! মেয়েটা নেই!
উইলিয়াম পুরো হতভম্ব হয়ে গেল৷
বলল ইউ স্টুপিড বীচ! কি বলছো এসব৷
ঠিকই বলছি উইলিয়াম৷
জানালা খোলা৷ চেয়ারের হাতল টেনে উঠিয়ে ফেলেছে মেয়েটা!
জানালা খুলে নিচে লাফিয়ে পড়েছে৷ বরফ থাকায় শব্দ হয় নি৷
উইলিয়াম উঠে দাঁড়াল৷ বলল সবাই তৈরী হও৷ মেয়েটাকে খুঁজতে শুরু করো৷ এই অবস্থায় বেশি দূর যেতে পারার কথা না মেয়েটার৷ তাছাড়া ঝড় এখন ধরে এসেছে৷ এখনই বের হলে ওকে ট্রেক করা সম্ভব হবে৷ বি কেয়ারফুল! মেয়েটাকে জীবিত চাই আমাদের৷
শওকত এবার কথা বলল
আমি তখনই বলেছিলাম উইলিয়াম৷ কিল হার!
এখনও তুমি জীবিত চাও তাকে৷
এটা করতে যেয়ে তুমি সবাইকে বিপদে ফেলবে৷ তারচেয়ে যেখানেই জেরিন কে পাও, দুটো বুলেট গেঁথে দাও দূর থেকে কিংবা কাছ থেকে৷ ফাইল তো একটা পেয়েছ৷ নাকি৷ এত কনফার্ম হবার দরকার কি৷
উইলিয়াম রাগত স্বরে বলল তুমি কি হত্যা ছাড়া কিছু চিন্তা করতে পারোনা!
এটা থারটি মিলিওনের ব্যাপার! নিশ্চিত না হয়ে ওরা আমাকে টাকা দেবে কেন?
শওকত হেসে বলল দু’চার মিলিয়ন পাও নাই! এডভান্স৷ তবে এত টেকার খায়েস ক্যান তোমার৷ তোমার চেলাচামুন্ডুরাওতো পাইছে৷ অনেক টেকা৷ তাইলে৷ লোভ সামলাও উইলি৷ নাইলে …অকালে মরবা৷
উইলিয়াম কিছু বলল না৷ লোক জনদের নিয়ে বেরিয়ে গেল৷ জেরিনকে যে করেই হোক খুঁজে বের করতে হবে৷
ওদের পেছনে পেছনে শওকত বের হল৷
সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আর হাইড এন্ড সিক খেলা না৷ জেরিনকে পাওয়া মাত্র নিকেশ করবে সে৷ এসব ফিরিঙ্গিদের ধার ধারবে না আর৷
জেরিন যেখানে লাফিয়ে পড়েছে সেখান থেকে সার্চ শুরু করলো ওরা৷ শওকত উপরে গিয়ে জানালা দিয়ে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো কোনদিকে যেতে পারে তার শিকার!

থেরাগ পৌঁছে গেছে ওয়ার হাউজের কাছাকাছি৷ এম্বুলেন্সটা কিছুদূর আগে ফেলে এসেছে সে৷ ওটা আর চলছে না৷ সরু একটা পথ ধরে আসতে আসতে এক জায়গায় একটা গাছ ভেঙে পড়ে থাকতে দেখল৷ বরফে সব চিহ্ন উধাও হয়ে গেছে৷ এম্বুলেন্স থেকে একটা ফ্লাশলাইট তুলে এনেছে সে৷
গাছটা পার হয়ে আরও কিছুদূর এগুলো সে৷ পথের বা পাশে একটা গাড়ি পার্ক করা৷ বরফে সয়লাব হয়ে গেছে৷ বুঝতে পারলো এই গাড়িটা রাতেই এখানে এসেছে৷
ওভার কোটটা জানালার কাঁচের উপর রাখল৷ তারপর পাঞ্চ করলো গ্লাসে৷ ওটা ভেঙে পড়ল৷ কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল সে৷ আসপাশ থেকে কোন শব্দ আসে কি না, শোনার চেষ্টা করল৷ নাহ৷ কিছু নেই৷
একটুকরো কাঁচ তুলে নিয়ে পাশের একটা গাছে A অক্ষরটা লিখল সে৷ তারপর আবার পথের দিকে তাকাল৷ এই পথ ধরেই যেতে হবে হয়তো৷ অক্ষরটার নিচে এরো এঁকে দিল থেরাগ৷
সন্তর্পণে এগুলো শওকত৷ হাতে বেসবল বেট!

উইলিয়াম তার সাথি একজন কে ডেকে বলল ল্যানলি আমরা ক’জন আছি৷ আটজনের মতোন তো!
ল্যানলি বলল জি স্যার আট জ’নের মতোন৷
আমাদের কাছে অস্ত্র কি আছে?
স্যার সবগুলোই লাইট৷ বেশি রেঞ্জের নয়৷ ভাঁজ করা যায় এমন মেশিন পিস্তল৷ অটোমেটিক এসব৷ গ্রেনেড বা লাঞ্চার আছে?
ল্যানলি বলল আই বেগ ইয়োর পার্ডন স্যার মেয়েটাকে ধরতে যেতে এসবের প্রয়োজন আছে কি?
উইলিয়াম বলল অত কথা বল না৷ এখান থেকে যাবার সময় ওয়ার হাউজটা শেষ করে দিয়ে যেতে হবে৷ প্রয়োজনে আগুন লাগিয়ে সব তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করতে হবে৷
ল্যানলি বলল সরি স্যার৷ লাঞ্চার জাতীয় কিছু নেই আমাদের কাছে৷
উইলিয়াম বলল তুমি এখানে থেকে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করো৷ দু’জন যাও পথের পাশে গাড়িটা আছে ওটা নিয়ে আস৷ গেসোলিন বের করে রাখ৷ আমরা জেরিন কে পেলে এখানে ফিরে এসেই রওয়ানা হব৷ যাবার আগে ওয়ারহাউজটাতে আগুন ধরিয়ে দিতে হবে৷
ল্যানলি বলল ইয়েস স্যার৷ ঘুরে সে রওয়ানা হল ওটার দিকে৷ উইলিয়াম বলল হাওয়ার্ড আর মরিশ তোমরা গাড়িটাকে নিয়ে এস৷ বাকিরা আমার সাথে চলো৷ দু’জন করে একসাথে থাকবে৷ একজন আরেকজনের উপরে চোখ রাখবে৷ যে মেয়েটাকে আমরা ধরতে যাচ্ছি সে কিন্তু সাধারণ কেউ নয়৷ সবার ওয়াকিটকি চেক করে নাও৷ মেয়েটার মুভমেন্ট ধরা পড়লে জানিও৷
আবছা অন্ধকারে ওরা সবাই যে যার পথে রওয়ানা হল৷
হাওয়ার্ড বলল শওকত কি করবে?
উইলিয়াম বলল ক্রেজি কিলারটা যা ইচ্ছে করুক৷ চাইলে সে আমাদের সাথে আসতে পারে৷ শুধু খেয়াল রেখো ও যেন জেরিনকে মারতে না পারে৷
আর শোন জেরিনকে যে বা যারা আগে ট্রেক করতে পারবে তাদের বা তাকে আমার অংশ থেকে একটা অংশ বোনাস হিসেবে দিব৷ এখন চল৷
অন্ধকারে কিছু আলো নড়তে নড়তে এগিয়ে গেল৷ একসময় তাদের আর দেখা গেল না৷
শওকত দোতলার ঘরটা থেকে নেমে ওয়ারহাউজের সামনে আসল৷ ওদের কথাবার্তা কিছুটা কানে এসেছে৷ মাথা নাড়ল সে৷
গন্ডমূর্খ গুলা মরতে যাচ্ছে৷ ওরা জেরিন কে পাকড়াও করতে যাচ্ছে৷ লাভ হবে না৷ জেরিন কে সামান্য যদি চিনে থাকে শওকত তাহলে ওরা সবাই জেরিনের হাতে মারা পড়বে৷
সহজ হিসেবটা এই ফিরিঙ্গিদের মনে কেন আসছে না৷ দেখতে পেলে মেরে ফেল৷ শেষ৷ ফাইল দিয়া কি হবে৷ তোদের বাবাদের নামই তো আসবে৷ আর কিছু কি৷ তোরা আবার নতুন বাবা খুঁজে নিবি বেজন্মার দল!
নিজের কথায় নিজেই কৌতুক ভোধ করলো শওকত৷
ল্যানলি শওকত কে দেখে বলল তুমি এখানে কি করছো? যাবে না ওদের সাথে৷ তোমার অস্ত্র কই?
শওকত হেসে বেল্টের বাকলে একটা টোকা দিল৷ বলল হিয়ার মাঈ ওয়েপন৷ আই ওয়ার্ক এলোন৷ আই ক্যাচ দ্যা গার্ল৷ আই কিল৷
ল্যানলি বলল উইদাউট এ গান?
শওকত বলল নাইফ ওকে৷ আই কাট৷ নো গান বলদের দল৷ তোরা মরবি৷
ল্যানলি বলল হোয়াট!
শওকত বলল নাথিং৷ জাস্ট টেল থেঙ্কু ইউ বলদ৷ টাটা৷ আই গো৷ জেরিন কিল৷ বাই৷
শওকতের কথায় ল্যানলি শ্রাগ করলো শুধু৷
শওকত অন্ধকারে পথে নামল৷ জেরিন কে মারার মিশনে৷ লোন উলফের মতো অন্ধকারে পা ফেলছে শওকত৷ একটু পরেই আঁধারে অদৃশ্য হলো সে৷ ঝড় থেমে গেছে প্রায়…

জেরার্ড ক্যাম্পবেল৷ সত্তুরের উপরে তার বয়স৷ এই একাকার জঙ্গলের শেষাশেষি তার বাড়ি৷ ব্রিটিশ আর্মিতে কাজ করেছে সে দীর্ঘদিন৷ এখন অবসর জীবন যাপন করছে৷ প্রায় দু’বছর হল এখানে একা আছে সে৷ দু’বছর হলো তার স্ত্রী মারা গিয়েছে। এই বাড়ি ঘিরে তাদের কত স্মৃতি৷ তিনি তাই আর ছেড়ে যান নি জায়গাটা৷ এখানকার নির্মল আকাশ৷ ঝরণার কূল কূল শব্দ আর বৃক্ষরাজির মধ্যে তিনি স্ত্রীর অস্তিত্ব টের পান যেন৷ আজ তুষার ঝড় শুরু হবার পর কেমন একটা অস্থিরতা ভর করেছে মনে৷ রাত্রির দিকে হঠাৎ মনে হলো কয়েকটা গুলির শব্দ শুনলেন৷ সৈনিকের অভ্যস্ত কানে গুলির ক্ষীন শব্দটাও এড়ায়নি৷ তিনি তার একনলা শট গানটা পাশে নিয়ে দোলনা চেয়ারে বসলেন৷ ওয়ার হাউজটা তার বাড়ী থেকে বেশি দূরে নয়৷ ওদিক থেকেই এসেছে বলে মনে হল৷ স্থানীয় পুলিশ কে জানাতে গিয়ে দেখলেন নেটওয়ার্ক কাজ করছে না৷ তিনি দুশ্চিন্তা গ্রস্ত হলেন৷ বেশ কিছুদিন ধরেই উনার মনে হয়েছে এই এলাকায় বাইরের কেউ ঘোরাফেরা করছে৷ স্থানীয় স্টোরে দু’জন মানুষ কে দেখেছেনও৷ সৈনিকের চোখ সৈনিক চিনতে ভুল করে না৷ তবে ওরা রেগুলার সৈন্য বলে তার মনে হয় নি! কারা ওরা?
সেই চিন্তা বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু আজ আবার আগে দেখা ঘটনা গুলো মনে পড়ছে৷ মেলাচ্ছেন তিনি৷
হঠাৎ দরোজার উপরে ধাড়াম ধাড়াম করে শব্দ হল৷ তিনি চমকে উঠে শটগান টা আঁকড়ে ধরে বললেন হু’জ দেয়ার৷
একটা কম্পিত নারী কন্ঠ শুনতে পেলেন ক্যাম্পবেল৷ প্লীজ আই নীড হেল্প৷ প্লীজ হেল্প!
কন্ঠটা ঠান্ডায় কাতর বুঝা যাচ্ছে৷ তবে নারী কন্ঠ৷ তিনি শটগান বাগিয়ে দরজাটা আস্তে আস্তে খুললেন৷
সামনে মেয়েটা হাঁটু ভেঙে পড়ে গেল৷ তারপর ক্যাম্পবেলের দিকে তাকালো মেয়েটা৷ মেয়েটা ক্যাম্পবেলের দিকে তাকিয়ে বলল প্লিজ গ্রেন্ড পা আই নীড হেল্প!
তিনি একলহমায় মেয়েটা কে দেখে বুঝলেন এ বিপদগ্রস্ত৷
বন্দুকটা পাশে রেখে তিনি মেয়েটাকে ভেতরে নিয়ে এলেন৷
ঠান্ডায় মেয়েটা কাঁপছে৷ চেয়ারের উপর থেকে তিনি উলের একটা চাদর মেয়েটার গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ছোট ডায়নিং টেবিলের পাশে চেয়ারটায় বসালেন৷ কোন কথা না বলে ঘরের রাম ঢাললেন একটা গ্লাসে৷ তারপর মেয়েটাকে বললেন একচুমুকে ওটা ভেতরে চালান করো৷ তারপর বলো কি হয়েছে?

মেয়েটা একটু ধাতস্ত হয়ে বলল আমার নাম জেরিন৷ বাঙালী৷ এদেশের গোয়েন্দা বিভাগের সাথে কাজ করছি৷ কিছু লোক আমাকে কিডনেপ করে এখানে নিয়ে এসেছে৷ আমি পালিয়েছি!
ক্যাম্পবেলের সৈনিক সত্বা মুহূর্তে জেগে উঠল যেন৷ তিনি বললেন ওরা কতজন ? ওরা কি বুঝে গেছে তুমি পালিয়েছ?
জেরিন বলল বুঝেনি তবে বুঝে যাবে গ্রেন্ড পা!
লোকটা কপট গাম্ভীর্যের সুরে বলল আমার বয়স মাত্র সত্তুর৷ তুমি আমাকে গ্রান্ড পা ডাকছো ইয়াং লেডি!
ক্যাম্পবেল এর কাছে কেন জানি এই মেয়েটাকে খারাপ বলে মনে হয়নি৷ এই ঠান্ডার মধ্যেও মেয়েটার কন্ঠস্বরে একটা তীক্ষ্মতা৷ মেয়েটি ইংরেজ নয়৷ এবং অবশ্যই বিশ্বাস করার মতোনই ব্যক্তিত্ববতী মেয়েটা৷ আচরণে কোন সংকোচ নেই৷ বহুদিন তিনি মানুষের সাথে চলাফেরা করেছেন৷ সৈনিক হিসেবে মানুষের সাথে কাজ করেছেন৷ তিনি মনে মনে ভাবলেন আমার দেখায় ভুল না হলে এ সাক্ষাৎ বাঘিনী!
জেরিন আস্তে আস্তে বলল গ্রান্ড পা৷ আমাকে একটা অস্ত্র ধার দাও৷ যদি থাকে৷ বিশ্বাস করো আমি খারাপ লোক নই৷ খারাপ লোকদের সাথে লড়বো৷ আমি এখনই এখান থেকে বেরিয়ে যাব৷ না হয় ওরা খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে আসতে পারে৷
ক্যাম্পবেল কিছু না বলে উঠে চলে গেলন ভেতরে৷
কিছুক্ষণ পর কিছু পোশাক আর একটা লম্বা সরু বড় বাক্স নিয়ে ফিরলেন৷
কাপড় গুলো জেরিন কে দিয়ে বললেন আমার স্ত্রী আর তোমার সাইজ প্রায় একই হবে৷ তোমার কাপড় গুলো পাল্টে ফেল৷ ওগুলো ভেজা৷
বক্সটা খুলে সিলভার কালারের ডাবল ব্যারল একটা শটগান বের করলেন তিনি৷ দেখেই বোঝা যায় প্রতিনিয়ত ওটার যত্ন নেওয়া হয়৷
জেরিন কে দেখিয়ে বললেন চলবে?
জেরিন বলল চলবে না দৌড়াবে!
জেরিন কাপড় পাল্টে শটগান টা হাতে নিল৷ একটু ভারী ওর জন্য কিন্তু চমৎকার কাজ করবে৷
জেরিন লোকটা কে বলল গ্রান্ডপা মেনি থ্যাংকস৷
ক্যাম্পবেল হেসে বললেন আমাকে নাম ধরে ডাকবে৷ আমার নাম ক্যাম্পবেল৷
জেরিন বলল তোমার এখানে পনের বিশমিনিট হলো এসেছি ৷ আমার কথা শুনে তুমি আমার হাতে একটা বন্দুক ধরিয়ে দিলে৷ অবিশ্বাস হয় নি!
ক্যাম্পবেল বলল ডিয়ার ইয়াং লেডি, একটুও হয় নি৷ তোমার মতো মানুষ আমি অনেক দেখেছি৷ ওরা সৌজন্যের ধার ধারে না৷ যা বলার সরাসরি বলে৷ তাছাড়া তুমি অবলা কেউ নও৷ আমার কাছে এসে তুমি সাহায্য চাওনি৷ চাইলে বন্দুক! আমার ছেলেটাকে মনে পড়ে গেল হঠাৎ৷ তোমার মতই ছিল ও৷ আফ্রিকায় একটা মিশনে গিয়ে আর ফিরে আসেনি!
জেরিন বলল আমি সরি গ্রান্ড পা৷
লোকটা কোন কথা না বলে একটা ছোট ব্যাগ ধরিয়ে দিল৷ বলল এতে কার্তুজ আছে৷ বেশি নেই৷ হিসেবে খরচ করো৷
জেরিন বেরিয়ে যাবার আগে লোকটাকে আলিঙ্গন করলো৷ লোকটা বলল গুডলাক লেডি৷
জেরিন বলল বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে গ্রান্ড পা৷
লোকটা জেরিন কে থাকতে বলেনি একবারও৷ কেননা সে বুঝে গেছে এই মেয়ে জাত লড়িয়ে৷ একে বললেও এখানে থেকে ক্যাম্পবেলের বিপদ বাড়াবে না৷
আর জেরিনও জানে এমন মানুষদের বিপদে ফেলতে নেই৷
ক্যাম্পবেল বলল ইয়াং লেডি তুমি একটু অপেক্ষা করো এখানে৷ আমি সামনেটা একটু রেকি করি৷ এই বারান্দায় দাঁড়িয়েই করবো৷
জেরিন বলল ওকে৷
ক্যাম্পবেল বের হয়ে দুমিনিটের মাথায় ভেতরে প্রবেশ করল
দরোজা বন্ধ করতে করতে বলল ওরা আশেপাশে এসে গেছে ইয়াং লেডি৷ আমি বেশ ক’টা আলোর নাচন দেখেছি! আশেপাশে৷
জেরিন বলল এখান থেকে বাইরে বেরিয়ে যাবার অন্য কোন পথ আছে কি?
লোকটা বলল আছে৷ সেলারের ভেতর দিয়ে একটা পথ আছে৷
চলো দেখাই৷ ওটা বেসমেন্টে৷
বেসমেন্টে নামার সময় জেরিন শটগান দিয়ে লোকটার মাথায় আঘাত করলো৷ লোকটা ঢলে পড়ল বেসমেন্টের মেঝেতে৷ জেরিন বলল সরি গ্রান্ড পা৷ আমার উপায় ছিল না৷ আমি বেরিয়ে গেলে ওরা তোমাকে ধরত৷
বেসমেন্টে খুঁজে পেতে একটা চেয়ার পেল জেরিন৷ কিছু দড়িও৷ ক্যাম্পবেল কে বেঁধে জায়গা মতোন একটা ছুরি রেখে দিল৷ লোকটার জ্ঞান ফিরলেই যাতে সে বুঝতে পারে৷
উপরে উঠে ফ্রন্ট ডোরটার ছিটকিনি খুলে রেখে নিচে নেমে আসল৷
একটু খুঁজতেই বেরিয়ে যাবার পথ টা পেয়ে গেল জেরিন৷ হঠাৎ একটা জিনিস দেখে পিছিয়ে আসলো সে৷ লোহার দাঁতওয়ালা স্প্রীং এর একটা ফাঁদ!
ওটা নিয়ে পেছনের রাস্তা দিয়ে ছুটলো জেরিন৷ গুহার মতো অংশটুকু পেরিয়ে দরোজা খুলে সামনে ফাঁদটা পাতল৷ বরফ দিয়ে ঢেকে দিল৷ সামনেই অনতিদূরে জঙ্গল৷ ঢালু হয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে৷ জেরিন তড়িৎ নামতে শুরু করল৷

উইলিয়াম কে একজন জানালো জেরিনের ট্রাক সামনে ঐ বাড়ি পর্যন্ত গিয়েছে৷ উইলিয়াম নিঃশব্দে ওদিকে দু’জন কে এগুতে বলল৷ পেছনে আরও দু’জন৷ পেছনের লোকগুলোকে হাতের ইশারায় ছড়িয়ে পড়তে বলল৷
ঝড় পুরোপুরি থেমে গেছে৷ মেঘ সরে বেরিয়ে এসেছে শেষরাত্তিরের হদুল চাঁদ৷ বরফ গাছ আর সবকিছু মিলিয়ে অদ্ভুত অপার্থিব এক পরিবেশ৷
শুরু হল এক জীবন মরণের খেলা৷ টিকে থাকার লড়াই…

(চলবে)

-পলাশ পুরকায়স্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *