পোট্রেট অফ এ সাইকো (৩য় পর্ব)

জেরিন কে মেয়েটা নিয়ে গেল ছোট্ট একটা ঘরে৷ কাঁচ ঘেরা ঘরের ভেতরটা দেখা যায় না৷ বাইরে থেকে শুধু অবয়বের আবছা উপস্থিতি টের পাওয়া যায়৷ জেরিন রুমে প্রবেশ করলে সামনের দু’জন তাকে বসতে বললেন৷ মেয়েটা আর ঘরে প্রবেশ করেনি৷

প্রথম জন জেরিন এর কাগজপত্র এবং পাসপোর্ট চাইলেন৷ জেরিন এগিয়ে দিল৷ কাগজপত্র হাতে ধরা নীলচোখের মহিলার ঠোঁটে একটু বাঁকা হাসি৷ তাচ্ছিল্যের৷ তিনি নিজের দেশের পুলিশ ফোর্সের বা গোয়েন্দা বিভাগের উপর কিছুটা বিরক্তও মনে হয়৷
নীলনয়না জেরিন কে বললেন আপনার সানগ্লাসটা চোখ থেকে নামান৷
জেরিন নামাল৷
পাসপোর্টের ছবিতে তো চোখের উপর কাটা দাগ নেই ম্যাম! বলল নীল নয়না৷
জেরিন স্মিত হেসে জবাব দিল এটা কিছুদিন পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে কাজেই নেই৷
নীলনয়না আর কিছু বললেন না৷
পাশের লোকটা এবার প্রশ্ন করল আপনাকে আমাদের এখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ পেপারেও দেখলাম৷ সাইকো কিলার কে ধরার পরামর্শক হিসেবে৷
জেরিন বলল একজেক্টলি তাই৷ আগের বার বাংলাদেশে আমিই ঐ মাথা নষ্ট মানুষটাকে ট্রেস করতে পেরেছিলাম৷ শেষ মূহুর্তে হাত ফসকে বেরিয়ে যায়… জেরিন এবার বলল দেখুন আমি আমার কেইসের ডিটেলিং এখানে আপনাদের সাথে আলাপ করতে আসিনি৷ আমি আপনাদের গেস্ট হিসেবে এসেছি৷ সো দেখুন কাগজপত্র যথাযথ আছে কি না৷ না থাকলে বিদেয় করেদেন৷
জেরিনের কঠিন কথায় উনাদের মুখটা গোমড়া হয়ে গেল৷
উনারা সবকাগজ পত্র পরীক্ষা করে জেরিন কে ফেরত দিলেন৷ তারপর বললেন লন্ডনে স্বাগতম আপনাকে৷ যিনি আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন তিনি বাকিটা বুঝিয়ে দিবেন৷ এই কেইস যারা হ্যান্ডেলিং করছে তাদের কাছে আপনার একটা রিপোর্টিং আছে৷ ব্যাপারটা আপনার সাথে থাকা উনি সামলাবেন৷ আপনি যেতে পারেন!
জেরিন থেঙ্কস জানিয়ে উঠে গেল৷ দরোজার সামনে যেতে যেতে শুনলো ওরা ফ্রেঞ্চ এ ওকে নিয়ে হাসাহাসি করছে৷ দরোজা খুলতে যেয়ে আবার সে ঘুরে দাঁড়ালো৷ তারপর হাসি মুখে ফ্রেঞ্চ ভাষায় যা বলল তার অর্থ দাঁড়ায় এই

“ম্যাম তোমরা এশিয়ান বিশেষ করে আমাদের দেশের মানুষদের এত ছোট করে দেখো কেন? উন্নত বিশ্বের মানুষ বলে! তোমার গর্ভনমেন্টই তো আমাকে এখানে ডেকে পাঠিয়েছে এই কাজে সাহায্য করার জন্য সেটা কি সইতে পারছো না৷ আমাদের দেশে মেয়েরা এখন সমান তালে আর্মি গোয়েন্দা পাইলট কিংবা অন্য পেশায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে আর কাজও করছে চুটিয়ে৷
নীল নয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলল এই তুমি যেমন করছো! আচ্ছা তুমিও তো এখানে কাজ করছো একজন পুরুষের সমান তালে, তাহলে আমাকে হেও করে কথা বলছো কেন!
ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশান ম্যাম, এই তোমাদের দেশেই সতের আঠারো শতকের দিকে দেনার দায়ে বউকে পর্যন্ত নিলাম করা যেত! অন্ততঃ আমার জানামতে আমাদের দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটতে শুনিনি৷
দ্বিতীয়বার আমার সামনে যদি আমার দেশ কিংবা নারী নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলো তাহলে… হাত তুলে মুষ্ঠিবদ্ধ করলো সে, তারপর বলল দাঁত গুলো ভেঙে তোমার গলা দিয়ে নামিয়ে দিব… এরপর হেসে বলল আসি তাহলে ধন্যবাদ৷
জেরিন আর ফিরে তাকাল না৷ ওদের চেহারার দুর্দশা কল্পনা করে নিল৷ মনে মনে ভাবল এই কথা গুলার জন্য ওরা হয়তো রিপোর্ট করবে৷ করুক৷ কি আর হবে তাকে হয়তো দেশে ফেরত পাঠানো হবে৷ যা হবার হবে৷ পরোয়া করে না৷
মাথা নষ্ট মানুষটা নির্বিবাদে একেরপর এক খুন করছে৷ ওকে না আটকালে আরও করবে৷ নেহায়েত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুরোপুরি ফিট না হয়েও এই কেসে কাজ করার জন্য হাজির হয়েছে এতদূর৷
অথচ এরাই অবজ্ঞা করছে তাকে আর তার দেশ কে….

যে মেয়েটা কাঁচ ঘর পর্যন্ত নিয়ে এসেছিল সে আনমনা জেরিন কে বলল কি ভাবছো?

এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে জেরিন আর মেয়েটা একটা গাড়িতে উঠেছে৷ সামনের সিটে জেরিন বসে মেয়েটা ড্রাইভ করছে৷ জেরিন আনমনা হয়ে বসে ভাবছিল৷

মেয়েটা তখন প্রশ্ন করে জেরিন কে কি ভাবছ?

জেরিন বলল কিছু না! দুঃখিত মেজাজটা একটু গরম ছিল তোমার সাথে পরিচিত না হয়েই তোমার গাড়িতে উঠলাম৷ আমি জেরিন আগেই জেনেছো নামটা৷ এখানে কেন এসেছি সেটাও তোমার অজানা নয়৷
এবার তোমার নাম টা বল৷ আর আমার অমনযোগী আচরণের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি৷

মেয়েটা সুন্দর করে হেসে বলল আমি পেট্রিসিয়া৷ সবাই আমাকে নিকি বলে ডাকে৷ এখানে তোমাকে পিক করার জন্যই পাঠানো হয়েছে আমাকে৷ ইমিগ্রেশন পর্যন্ত যাবার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল৷ ওখানে কাঁচঘরে নিশ্চয়ই খারাপ কিছু ঘটেছে ! আমি বুঝতে পেরেছি তাই তখন আর কথা বাড়াইনি৷

জেরিন বাইরে তাকিয়ে বলল তেমন কিছু হয়নি সেই আদি অকৃত্রিম ইগো প্রবলেম! বাংলাদেশের মতো একটা পুচকে দেশ থেকে আমাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে সেটা সহ্য হচ্ছে না!
নিকি হেসে বলল হয় এমন৷ এদের অনেকেই আমাদের সহ্য করতে পারে না৷ ওদের ধারণা আমরা উড়ে এসে জুড়ে বসে ওদের দেশে ওদের অধিকার নষ্ট করছি৷
জেরিন মুখ ফিরিয়ে বলল আমরা বলতে? আমি না হয় বাইরে থেকে এসেছি তুমি তো এদেশের নাগরিক, তাই না?
নিকি মলিন হেসে বলল তিন পুরুষ ধরে৷ আমার জন্ম বেড়ে ওঠা এখানেই কিন্তু এদেশিয় হতে পারিনি আর৷ আমার পূর্বপুরুষ রুমানিয়া থেকে এসেছিল৷
জেরিন বলল ওয়াও সেই ড্রাকুলার ট্রানসিলভেনিয়া তো রুমানিয়াতে তাই না!
নিকি হেসে বলল আমরা ওখান থেকেই এসেছি৷ যাহোক আজ রাতটা আমার ওখানেই থাক৷ কাল রিপোর্টিং করে নাহয় কাজে লাগবে৷ তখন অফিসিয়ালরা যেখানে যেতে বলবেন সেখানে যেয়ো৷
জেরিন ভদ্রতা করে বলল তোমার সমস্যা না হলে আমার আপত্তি নেই৷
নিকি বলল সমস্যা নেই কোন৷ আমি একাই থাকি৷ আজ রাত গল্প করা যাবে৷ তার আগে চল কিছু খেয়ে নিই৷ এসময়ে ফ্লাটে ফিরে রান্নাবান্নার আর ইচ্ছে থাকে না৷
বৃষ্টি শুরু হয়েছে৷ পথঘাট সব ভেজাভেজা৷ নিয়ন বাতি গুলো গাড়ির কাঁচ ভেদ করে ঝাপসা দেখাচ্ছে৷ রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে৷ মাঝে মাঝে কিছু লাল বাস কিছু কার দেখা যাচ্ছে৷ হুসহাস করে বেরিয়ে যাচ্ছে৷৷ এখানে লেটনাইট শপিং বলতে সন্ধ্যা সাতটা৷ এরপর কমার্শিয়াল সবকিছুই বন্ধ হয়ে যায় পুরোপুরি৷ দু’একটা খাবার দোকান গলি ঘুপচিতে খোলা থাকে৷ ওগুলো এশিয়ানরা চালায়৷ এছাড়া বড়জোর ম্যাকডোনাল্ডস খোলা পাওয়া যাবে৷ তাও শুধুমাত্র মুষ্ঠিমেয় কিছু সংখ্যক শাখার ড্রাইভ থ্রু তে অর্ডার করা যায়৷ বিলিংসগেইট টানেলে ঢোকার আগে চৌ-রাস্তার মোড়ের ম্যাকডোলান্ড থেকে অর্ডার মাফিক খাবার নিয়ে নিল নিকি৷ চারপাশে চোখ দিয়ে দেখছে আর অন্ধকারে জেরিন ভাবছে আলতাফের কথা৷ অসুস্থ মানুষটা কি করবে এরপর!

…..

খাওয়া দাওয়া শেষে লিভিং রুমে দু’মগ কফি নিয়ে জেরিন আর নিকি মুখোমুখি বসল৷ বেশ ঠান্ডা পড়েছে আজ৷ ঘরের ভেতর অবশ্য আরাম দায়ক উষ্ণতা৷ কফিতে চুমুক দিতে দিতে জেরিন বলল এই সাইকো কিলিং এর ব্যাপারে তুমি কি কিছু জান নিকি? কাল অফিসিয়ালদের সাথে কথা বলার আগে আমাকে একটা ব্রিফিং দেওয়া যাবে?
নিকি কফিতে চুমুক দিয়ে বলল অফিসিয়ালি সম্ভব না৷ আনঅফিসিয়ালি আমি বলছি তোমাকে, তবে দয়া করে ওদের কাছে এটা নিয়ে কোন ব্রিফিং করো না!
জেরিন বলল সমস্যা হলে থাক৷ বলতে হবে না৷

নিকি ছোট্ট করে হেসে বলল সমস্যা নেই জেরিন! তোমাকে বলব কারণ তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে৷ দরোজার ফাঁক দিয়ে ঐ ইমিগ্রেশানের দুইটার ঝুলানো চোয়াল দেখেই বুঝেছি তুমি একহাত নিয়েছো ওদের৷ তখন থেকে তোমাকে ভাললেগে গেল৷ তাছাড়া তোমার চলাফেরা, ড্যামকেয়ার ভাব আমার পছন্দ হয়েছে৷ তোমার সম্পর্কে শুনেছিও কিছুটা৷ এমন ডেয়ারিং মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়নি কখনও৷ তাও এমন একটা দেশের যে দেশ সম্পর্কে আমাদের নেগেটিভ ছাড়া পজেটিভ কোন ধারনা নেই! আর তোমার চোখের ঐ দাগটা৷ যদিও কেটে গেছে তারপরও এটা তোমাকে একটা ম্যানলি লুক দিয়েছে! হাহাহা৷ তুমি ছেলে হলে নির্ঘাত তোমার প্রেমে পড়ে যেতাম৷ এমন ড্যাশিংতো অনেক ছেলেও হয় না৷
জেরিন হাসল৷ চোখের উপরের দাগে হাত বুলালো৷ তারপর বলল এটা থাইল্যান্ডে হয়েছে৷ রিং এর ভেতরে৷ লোকটা একপাঞ্চেই ফাটিয়ে দিয়েছিল ওখান টা৷ ওটা ছিল বেঁচে থাকার লড়াই৷ হয় মারো না হয় মরো! শেষ পর্যন্ত পা মচকে দুটো রিব ভেঙে আধমরা হয়ে রেহাই পাই৷
নিকি প্রশ্ন করলো আর ঐ লোকটা? তোমার প্রতিপক্ষ!
ওর মাথা ফাটিয়ে ঘাড় ভেঙে দিই!
তা রিঙ এ নেমেছিলে কেন? এই সব অমানষিক ইলিগ্গেল ফাইটে?
জীবন বাঁচাতে নিকি, জীবন বাঁচাতে৷ বাচ্চা একটা মেয়ে এগারো বছর বয়সের তাকে বাঁচাতে!
ঠিক বুঝলাম না জেরিন বাচ্চাকে বাঁচাতে ফাইটে নামতে হল কেন? নিকি প্রশ্ন করল
জেরিন উদাস গলায় বলল কোলকাতার ছোট্ট একটা মেয়ে কে কিডনেপ করে থাইলেন্ড নিয়ে যাওয়া হয়! ওখানকার এক ক্রাইম সিন্ডিকেট আবার মেয়েটাকে কিডনেপ করে৷ কাকতালীয় ভাবে তখন আমি ফেরারী ছিলাম৷ দেশে আরমান চৌধুরি নামের এক মানুষরূপী পিশাচ কে খুন করে পালিয়ে ইন্ডিয়া চলে যাই৷ মেয়েটা আমার পাশের ফ্লাটে থাকত৷

নিকি দেখল জেরিনের চোখ ছলছল করছে৷ জেরিন উদাস হয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে৷ আস্তে করে নিকি বলল সেই ঘটনাটাকি বলা যাবে?
জেরিন কথা না বাড়িয়ে বলল অন্যদিন নিকি৷ আজ আর না৷ এখন বিশ্রাম নিতে হবে৷
নিকি বুঝল কোন কারণে জেরিন ঘটনাটা এড়িয়ে গেল৷
নিকি বলল ঠিক আছে৷ আমার এখানে দুটো ঘর৷ উপরে৷ একটা আর এই লিভিং রুমের সাথে একটা৷ ওটাতে শুয়ে পড়৷ আমিও একটু বিশ্রাম নিব৷ উপরে চলে যাচ্ছি আমি৷ তুমি শুয়ে পড়৷

জেরিন কে পাশের ঘরটা দেখিয়ে দিল নিকি৷ জেরিন আর কথা না বাড়িয়ে ঘরে চলে গেল৷
উপরে উঠে নিজের ঘরে যেয়ে নিকি একটা নাম্বার ডায়াল করলো৷ ওপাশ থেকে ভারী গলায় একজন বলল মেয়েটা এসেছে?
নিকি বলল হ্যাঁ৷
তোমার সাথেই আছে তো?
হ্যাঁ!
ওকে টুয়েন্টিফোর আওয়ার্স নজরে রাখবে কিন্তু৷ এমনকি নিজের ঘরে থাকলেও৷
নিকি বলল সে ব্যবস্থা করা আছে৷ গেস্ট রুমে হিডেন ক্যামেরা আছে৷ চিন্তা করো না৷
ওপাশ থেকে বলল ওকে গুডজব৷ কাল সকালে দপ্তরে নিয়ে এসো৷ যততাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে আমরা ওর দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিব৷
লাইনটা এরপর কেটে দেওয়া হলো৷
নিকি ল্যাপটপ অন করে হিডেন ক্যামেরা চালু করলো৷ জেরিনকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেল সে৷
ঘরের মেঝেতে দু’পা দুদিকে ছড়িয়ে কসরত করছে জেরিন৷ একহাত কোমরের কাছে৷ অন্য হাত সামনে ছড়িয়ে দেওয়া৷ ছড়ানো হাত টা এবার কোমরের কাছে টেনেনিল জেরিন৷ অপর হাতটা সামনে ছড়িয়ে দিল৷ এবার দু’হাত মেঝেতে রেখে ছড়ানো পা দুটো শূন্যে তুলে দিয়ে হাতের উপর একটা পাক দিয়েই দাঁড়িয়ে গেল জেরিন৷ অনবরত এরপর ব্যায়াম করে গেল মেয়েটা৷ সামনে হাত ছড়িয়ে টেনে, পা ছুড়ে, ছন্দবদ্ধ তালে৷ জেরিন যখন হাত এগিয়ে দিচ্ছে নিকির মনে হল একটা হাতি যেন তার শুঁড় এগিয়ে দিচ্ছে আবার টেনে নিচ্ছে৷ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ল নিকি৷

জেরিন তখনও কসরত করে যাচ্ছে৷ জখমী পা আর রিব দুটো ভোগাচ্ছে তাকে৷ তবুও দমে গেল না লৌহ মানবী৷ আলতাফ যদি সামনে আসে তাহলে শতভাগ ফিট থাকলেও তাকে সামলানো সম্ভব হবে কি না জানেনা জেরিন৷ এই অবস্থায় আলতাফের মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না৷ যততাড়াতাড়ি সম্ভব সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে নিজেকে তাই ফিট করে তুলতে চাইছে জেরিন৷ এবার আর আলতাফকে পালাতে দিতে চায় না সে৷
শেষবারে সাততলার উপরে আক্ষরিক অর্থে আলতাফের হাতে যখন তার জীবন মরণ নির্ভর করছিল তখন সাইকোটা তাকে বাঁচিয়েছিল৷ যাবার আগে বলেছিল হয় তুমি না হয় আমি জেরিন! হয় তুমি না হয় আমি!
প্রায় প্রতি রাতে এই দৃশ্য দুঃস্বপ্ন হয়ে জেরিনের কাছে ফিরে আসে৷ গত চার বছর ধরে ফিরে ফিরে আসছে… ভুলতে পারে না ও…

….

শহরের কোন এক এলাকায় বেসমেন্টের অন্ধকার৷ শুধু একটা টেবিলের উপরে টেবিল ল্যাম্প আলো দিচ্ছে৷ গ্লবস পরা একটা হাত ল্যাম্পটা ঘুরিয়ে টেবিলের সামনে দেয়ালে ফোকাস করলো৷ ওখানে একটা সাদাবোর্ড৷ বেশকিছু ছবি আটকানো৷ লাল নীল বেশকিছু রেখা টেনে ছবি গুলো লিংক করা৷ কিছু স্ট্রীট এর নাম লিখা৷ বাসের নাম্বার পাতাল রেলের নান্বার রুট নান্বার লিখা৷ বোর্ড জুড়ে লিখা আর রেখা গুলা অনেকটা মাকড়শা জালের মতোন ছড়িয়ে আছে৷ চারটে পজিশানে কালচে লাল গোল কাগজ পিন দিয়ে আটকানো৷ খুবভাল করলে খেয়াল করলে বুঝাযায় ঐ মরচে ধরা লাল রঙটা রঙ নয় রক্ত! বোর্ডের এক পাশে কিছু খবরের কাটিং লাগানো৷ শেষে একটা পেপার কাটিং লাগানো হলো৷ এদেশে জেরিনের আগমনের খবর কাগজের কাটিং ওটা!

লোকটা জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে৷ ওর নিঃশ্বাস বাতাসে ধুম্রজালের সৃষ্টি করছে৷ আবছা অন্ধকারে লোকটার চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না৷ গ্লবস পরা হাত দুটো সে মুখের কাছে আনল৷ হাত কাঁপছে ওর৷ লোকটা চোখ পিট পিট করলো বার দু’য়েক৷ তারপর ফিসফিসিয়ে বলল আমি জানতাম তুমি আসবে৷ আসতেই হবে! কিন্তু মাথামোটা গর্ধব গুলা এটাকে নিউজ করেছে! ওরা ভাবছে তুমি এলে আর আমি জানলে আমি গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণ করবো! ছাগলের দল৷
এই খেলাটা আমি আমার মতো খেলবো৷ হিসেব কষে খেলবো৷ জেরিন মাই লেডি, দেখি কে যেতে আর কে হারে…. খুক খুক করে কাশি দিল লোকটা৷ হুমম হুমম করে শ্বাস ফেলল বার দু’এক৷ ওর বেশ ঠান্ডা লেগেছে৷

টেবিল ল্যাম্পটা অফ হয়ে গেল এবার৷ চারদিকে অন্ধকার! ঘোর অন্ধকার গ্রাস করলো সব কিছু৷ শুধু আঁধার থেকে টুং টাং টুং টুং, টুং টাং টুং টুং ধাতব আর সুরেলা একটা আওয়াজ আসছে….

ভোর রাতের দিকে তড়াক করে বিছানায় উঠে বসল জেরিন৷ জোরে শ্বাস ফেলছে৷ দুঃস্বপ্নে আলতাফ যেন তাকে তাড়া করছে.. কাঁচের জানালার বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তখন৷ কাঁচ বেয়ে বৃষ্টি ধারায় গড়িয়ে পড়ছে!

লোকে বলে লন্ডনে তিন ডব্লিউ’এর কোন গ্যারান্টি নাই৷ ওয়ার্ক ওমেন আর ওয়েদার…

(চলবে)

-পলাশ পুরকায়স্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *