‘মাই ভ্যালেন্টাইন’

‘আপনি আমাকে চিনেছেন?’

‘হ্যাঁ, চিনেছি। না চেনার কোন কারন নেই’

‘সামান্য সময়ের দেখা। মনে নাও থাকতে পারে!’

‘যতটুকু সময় দেখেছি মন থেকে দেখেছি। আপনাকে ‘পছন্দের ব্যাপারটা সম্ভবত পরেরদিনই আমরা ফোনে জানিয়ে দিয়েছিলাম।’

বিনু খানিকটা লজ্জা নিয়ে নিজের দৃষ্টি ছেলেটির শান্ত স্থির চোখের উপর থেকে সরিয়ে নিল। এমন স্বচ্ছ দৃষ্টির সামনে বসে বিনু কিছুতেই রুক্ষস্বরে কথা বলতে পারবে না। নিজের মনে নিজের ভিতরের গতকাল রাতের সেই ক্ষোভ খুঁজেই পাচ্ছে না। অথচ শক্ত কিছু কথা বলবে বলেই তো সে এসেছিল সাদিকের কাছে। কাল রাতে জেগে জেগে কথাগুলো নিজের সাথে রিহার্সাল করেছে সে বারবার। কোথায় গেল ঠিক করে রাখা কথাগুলো?

সাদিক বিকালের এ সময়টা অফিসের নানান ব্যস্ততায় ডুবে থাকে। আজ কোন কাজে মন লাগানো যাচ্ছে না। মাথা থেকে সব বেরিয়ে গেছে। গত দশদিন আগে সাদিক তার বাবা আর মামাকে নিয়ে বিনু নামের এই মেয়েটাকে দেখতে গিয়েছিল। মেয়েটিকে তার পছন্দের ব্যাপারটাও তার সামনেই বিনুর মাকে ফোন করে জানানো হয়েছে। সব ঠিকঠাক মতই চলছে বলে সে জানে। কিন্তুু হঠাৎ ঘন্টাখানেক আগে মেয়েটি ফোন করে দেখা করতে চাওয়ার ব্যাপারটায় তার মনে খানিকটা খটকা লেগেছে। এখন মেয়েটাকে সামনে দেখে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। কোন ব্যাপার তো আছেই!

মেয়েটির সামনে বসে সাদিক কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বেল বাজিয়ে পিয়নকে ডেকে কোল্ড ড্রিংক আনতে দিয়ে বলল,

‘আমার জানামতে গত কাল আপনার বাবা-মায়ের সাথে আমাদের এনগেজমেন্ট আর বিয়ের তারিখ নিয়ে কথা বলার কথা।’ বলেই মনে মনে নিভে গেল সাদিক। মনের খটকা চেড়ে উঠল তার।

বিনু মুখ তুলে সাদিকের দিকে তাকাতে পারল না। হাতের কোল্ড ড্রিংকের ক্যান শক্ত করে ধরে কোনমতে বলতে পারল,
‘আমি আমার বিয়ে ভেঙ্গে দিতে এসেছি। ‘

সাদিক নিজের মনে ধাক্কা সামলাতে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। সে মনে মনে এমন ধারনাই করেছিল। নিশ্চয়ই মেয়েটি তার প্রেমিককে ছেড়ে তাকে বিয়ে করতে পারবেনা এটাই বলতে এসেছে। এসব কথা তার গার্ডিয়ানকে হয়ত সে বলতে পারেনি। আমার সাহায্যের দরকার তার। এসব ঘটনা এখন প্রায়শই ঘটে। কিন্তু এমন ঘটনা যে তার সাথেও ঘটবে এটাই ভাবতে পারছে না! অথচ মেয়েটাকে প্রথমদিন দেখে মোটেও তেমন মনে হয়নি।

সাদিক হালকা হাসি দেবার চেষ্টা করে বলল,

‘সমস্যাটা কি জানতে চাইতে পারি?’

বিনু এবার তার সাজিয়ে রাখা কথাগুলো খুঁজে পেয়েছে-

‘আপনি জানতে না চাইলেও আমি বলব। সে জন্যই তো এসেছি। গতকাল আপনার বাবা আমার মা কে কি বলেছে তা আমি শুনিনি। তবে রাতে আমার মা যখন আব্বুকে বলছিল, আমাদের দু’কাঠা জায়গায় দাঁড়ানো দোতলার ঐ ছোট্ট বাড়িটা বেঁচে দিয়ে তারা ভাড়া বাড়িতে উঠে যাবে, তা শুনেছি। বিনু বলেই যাচ্ছিল হড়বড় করে, সাদিক বিনুকে বাঁধা দিয়ে বলল,

‘কেন বাড়ি বিক্রি করতে হবে কেন?’

বিনু সাদিকের স্বচ্ছ চোখের দিকে তাকিয়ে আর কথা আটকালো না। নি:সঙ্কোচে বলল,

‘ কেন তা আপনারই ভাল বলতে পারার কথা। উত্তরার ফ্ল্যাট এগ্রিমেন্টে আপনাকে আরও আশি লক্ষ টাকা দিতে হবে যেটা আপনার বাবা তার ইঞ্জিনিয়ার ছেলের জন্য আমার বাবার কাছে দাবী করেছেন। বলেছেন, বিয়ে করে তো আপনার মেয়েই সেই ফ্ল্যাটে থাকবে। আমি বিয়ের পর স্বামীর সাথে দামী ফ্ল্যাটে সুখে থাকার লোভে আমার রিটায়ার্ড ব্যাংঙ্কার বাবার একমাত্র আশ্রয়টুকু বেঁচতে দেবনা। ‘

অনেকগুলো কথা একসাথে বলে ফেলে বিনু হাঁফ ছাড়ল। তার মনে হল সে যা বলতে এসেছিল, তা বলা হয়েছে। তারপরও দু’জনেরই চুপচাপ কাটল কিছু সময়। সাদিক কিছু বলতে পারছিল না। সে নিজের বিস্ময় নিজের মধ্যে গিলে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করতে লাগল।

বিনু নিরবে উঠে দাঁড়াল। হাতের ঠান্ডা কোল্ড ড্রিংকের ক্যান টেবিলে আগের জায়গায় রেখে দিয়ে বিনু পিপাসা অনুভব করল। কিন্তুু সে এখানে কিছু খেতে পারবে না। শুকনো মুখে হালকা স্বরে আবার বলল,

‘আমি এ বিয়েতে রাজি না বলে সমস্যা হবার কথা নয়। এমন ইঞ্জিনিয়ার ছেলের জন্য আশি লক্ষ টাকা কেন আরও অনেক কিছু দিবে এমন মেয়ের অভাব হবে না। আমি আসি, ভাল থাকবেন।’

১৩ই ফ্রেব্রুয়ারীর রাতে বিনুকে সাদিক ফোন করল,

‘একটু নিচে আসবে বিনু?’ বিনু হকচকিয়ে গেল। সাদিকের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হবার কথা ঠিক থাকলে আগামীকাল তার বিয়ে হত। কিন্তু সে তো সব মিটে যাবার কথা। সে কোন কথা বলতে পারল না। ওপাশে সাদিক হ্যালো হ্যালো বলেই চলছে

বিনু ফোন রেখে নিচে নেমে গেল।

‘সাদিক তার হাতের শাড়ির প্যাকেটটা বিনুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ফিরিয়ে দিতে চাইলে দিতে পারবে,আপাতত রাখ। ‘ এতটুকু বলে বিনুর অবাক হওয়া চোখ উপেক্ষা করে গাড়তে উঠে চলে গেল।

বিনু শাড়ির প্যাকেটের সাথে পাওয়া চিঠিটা খুলল-

বিনু,

ক্যান ইউ উইল বি মাই ভ্যালেন্টাইন?

মা বলেছেন, কালকেই তোমাকে তার বউ করে চাই। তাই আগামীকাল শেরওয়ানী পরে বনানীর কাজি অফিসে থাকব চারটায় ।

                                                        -সাদিক

বিনু মনে মনে অসংখ্যবার বলল,’আই মাস্ট উইল বি ইওর ভ্যালেন্টাইন সাদিক’

-বেলা প্রধান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *