হলো না পাওয়া তাকে

উফফ,
অসহ্য,
সন্ধ্যায় এতটা বাজে পরিস্থিতিতে পরবে, কখনো ভাবেও নি মাহমুদা,
হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো, রাস্তা থেকে একপ্রকার দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ই পাশের একটা টং এর দোকানে গিয়ে দাঁড়ালো সে, ইতিমধ্যে সেখানে আরো লোকজন জড়ো হয়েছে বৃষ্টি থেকে একটু বাঁচার আশায়।
.
কয়েকটা ছেলে এসে মাহমুদার ভিজা শরীরের দিকে তাকিয়ে মজা নিচ্ছে।
.
মাহমুদা তার হাজব্যান্ড কে ফোন দিচ্ছে বারবার।ধরছে না কেটে দিচ্ছে। একরাশ বিরক্তি মুখে নিয়ে মনে মনেই সে উচ্চারণ করল স্টুপিড, কেয়ারলেস।
.
খিট খিটে মেজাজ ঠান্ডা করার কোনো উপায় পাচ্ছে না মাহমুদা।বাজে ছেলে গুলো গায়ের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবারও সে কল দিলো তার হাজবেন্ড কে।কল ওয়েটিং!! কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা সে।হঠাৎ মাহমুদা খেয়াল করলো এই ঝড় তুফানের মাঝেও একটা ছেলে ভবঘুরের মত ভিজে ভিজে আসছে।এটা দেখে মাহমুদার কলেজ জীবনের কথা মনে পড়ে যায়।তার ও বৃষ্টিতে ভেজার লোভ হয় খুব।কতো দিন মন খুলে বৃষ্টিতে ভেজা হয়না তার।কিন্তু এই শাড়ী – হাই হিল পরে কেউ বৃষ্টিতে ভিজলে সেটা কেমন যেনো হয়ে যাবে।ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই এসব ভাবে সে।এদিকে হাঁটতে হাঁটতেই ছেলেটা খেয়াল করে একটা অপ্সরীর মত সুন্দর মেয়ে তার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।ছেলেটা তখন আর মন খুলে ভিজতে পারেনা। মন খুলে বৃষ্টিতে ভিজতে হয় লোকচক্ষুর আড়ালে।বৃষ্টিতে ভেজার সময় কেউ হা করে তাকিয়ে থাকলে সেটা যে কত বিরক্তিকর তা যে ভেজে সেই কেবল বুঝে, ছেলেটাও ভেজা বাদ দিয়ে টং দোকানে এসে দাঁড়ায়, লজ্জায় মেয়েটার দিকে একবার ও আর তাকায় না।
মাহমুদা তার কিশোরীবেলার স্মৃতি থেকে বাস্তবে ফিরে গাড়ির হর্ণ এর আওয়াজে।একজন সুটেট বুটেট লোক গাড়ির দরজা খুলে একরাশ বিরক্তি মুখে নিয়ে মাহমুদার দিকে তাকিয়ে ধমকের স্বরে বলে ভিতরে আসোহ।শাড়ি- হাই হিল পরে মাহমুদা টং দোকান থেকে বৃষ্টির ভিতর দিয়ে হেঁটে গিয়ে গাড়িতে উঠে।ওঠার সময় খেয়াল করে ভবঘুরে ছেলেটা তাকিয়েই আছে তার দিকে এখনো।
.

সাঁই সাঁই শব্দ করে পানির বুক চিরে চলে যায় গাড়িটা।ছেলেটাও আবার বৃষ্টির মাঝে হাঁটা শুরু করে।
___________________________
মাহমুদা গাড়িতে বসে ফোন হাতে নেয়। অনেক আগের
মুখস্ত করা নাম্বার,একটু কষ্ট করে মনে করে।তারপর , টপাটপ ডায়াল করে, একটা মেসেজ পাঠায়,
” আগের মতই রয়ে গেছো তাই না??
তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে গোসল করো।নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।জ্বর আসবে ”
ছেলেটা মেসেজের শব্দ পায়, পকেট থেকে মোবাইল বের করে,স্ক্রীনে জ্বল জ্বল করতে থাকা প্রিয় নামটা আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে আসে বৃষ্টির পানির ফোঁটায়,
৮ বছর আগেও, এভাবেই নামটা আবছা হয়ে এসেছিলো ছেলেটির চোখের পানিতে, আজ চোখে পানি আছে?? হয়ত নেই, আবার হয়ত বৃষ্টির পানির সাথে মিশে গেছে তাই বোঝা যায় না।
৮ বছর আগে,মাহমুদার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ করেনি হাসিব।
বিরক্তি বোঝাই করা সংসার হলেও কোনরকম চলে যাচ্ছে মাহমুদার জীবনগাড়ি, কোন এক হঠাৎ সন্ধ্যায় আবার তাকে দেখা!!
.
থেমে নেই সময়।কখন যে আট টা বছর কেটে গেলো!! ভেবেই আবার ঝুম বৃষ্টিতে, রাস্তার পাশ ধরে হাঁটতে হাঁটতে চোখের আড়াল হয়ে যায় ছেলেটি।

-হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *