হৃদয়ে আগন্তুক (৫ ম পর্ব)

আকাশ রূপাকে নিয়ে এসেছে অদূরেই হোয়াইট রক লেকের ধারে একটা কফি শপে। লেকের নামের সঙ্গে মিলিয়ে কফি শপের নামও হোয়াইট রক কফি। এই কফি শপের বিশেষত্ব হলো এখানে কাস্টমাররাই তাদের গানের সরঞ্জাম নিয়ে এসে গান-বাজনা করে। স্টুডেন্টরা বসে হোমওয়ার্ক করে। প্রেমিক-প্রেমিকারা বসে নিজেদের মধ্যে খুনসুঁটি করে। দোতলা কফি শপের পুরোটা জুড়েই রয়েছে স্থানীয় কফি প্রেমিকদের আনাগোনা।

আকাশ নিজের জন্যে ক্যাফে লাটে আর রূপার জন্যে ক্যাপাচিনো অর্ডার দিল। রূপাকে এভাবে কাছে পেয়ে ভালো লাগার সাগরে ভাসছে আকাশ। সে সারাক্ষন রূপার একটি হাত ধরে রেখেছে। গাড়ি চালানোর সময়ও ছাড়েনি। রূপার মধ্যে এই মুহূর্তে কোনো রকম অস্বস্তি বোধ নেই। বিদেশের মাটিতে দেখা হয়েছে বলেই হোক আর ইউনিভার্সিটির স্মৃতির কারনেই হোক–আকাশকে পেয়ে রূপা যেন নিজের কাছের কাউকেই ফিরে পেয়েছে।

আকাশ রূপার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তারপর বলো, কেমন আছো?’

‘ভালো।’

‘জাস্ট ভালো?’

‘হ্যাঁ, ভালোই তো।’ রূপা হেসে ফেলল।

‘কবে এসেছ আমেরিকায়?’

‘লাস্ট সানডে-তে। অফিস থেকে একটা ট্রেনিং-এ পাঠিয়েছে। অস্টিনে।

‘তাই? দ্যাটস গ্রেট।’

‘ট্রেনিং-এ যাবার আগে ভাবলাম তিথির সঙ্গে একটু সময় কাটিয়ে যাই। তাই ডালাসে আসা।’

‘তিথি?’

‘ওই যে আমার বান্ধবী। ওর হাজব্যান্ডই তো হাসান ভাই!’

‘কিন্তু সময়তো দেখি বান্ধবী নয়, কাটাচ্ছিলে বান্ধবীর হাজব্যান্ডের সঙ্গে। হা, হা, হা…’

মুহূর্তেই রূপার চেহারা কালো হয়ে গেল।

রূপাকে সহজ করার জন্যে সঙ্গে সঙ্গেই আকাশ বলল, ‘নেভার মাইন্ড, আই ওয়াজ জাস্ট কিডিং।’

রূপা কিছু বলল না। কফিতে চুমুক দেবার অজুহাতে আকাশের হাত থেকে ওর হাতটি ছাড়িয়ে নিয়ে ঢাউস সাইজের ক্যাপাচিনোর কাপটি দু’ হাতে পেঁচিয়ে ধরে ছোট্ট একটা চুমুক দিল।

কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আকাশ বলল, ‘মাইন্ড করলে? প্লীজ মাইন্ড করো না। অনেকদিন পর তোমাকে কাছে পেয়ে তোমার সঙ্গে সেই আগের মত একটু দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে হলো। সরি…’

রূপা আরো কিছুক্ষন চুপ করে থেকে নিজেকে সহজ করার চেষ্টা করল। তারপর বলল, ‘মাইন্ড করিনি।’

রূপা আস্বস্ত করায় আকাশ আবার উৎফুল্ল হয়ে উঠল। সে বলল, ‘মনে আছে রূপা, ক্যাম্পাসে তুমি ছিলে আমাদের ব্যাঙ্ক। কিছু খেতে ইচ্ছে করলেই তোমাকে খুঁজে বের করতাম। আমাদের পকেটে তো কখনোই তেমন টাকা-পয়সা থাকত না। হা হা হা।’

রূপা হেসে ফেলল।

‘তারপর আমাদের সাথে যোগ দিল পার্থ। কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো। এসেই ভাগ বসাল। এক সময় সবটুকু রূপার মালিক বনে গেল সে। আমরা অবশ্য জেলাস হতাম কিন্তু যখন দেখতাম তুমিই আগলে রেখেছ তাকে–তখন আমাদের আর কিছুই করার থাকল না। তুমি ছিলে আমাদের সবার, হুট করে হয়ে গেলে পার্থর একার, কেমন লাগে বলো?’

রূপা আকাশের কথার ধরনে আবারো হেসে ফেলল। সে বলল, ‘বাদ দাও ওর কথা। তোমার কথা বলো শুনি–পরীক্ষা শেষ করে সেই যে হারিয়ে গেলে… কেউ তোমার কোন ট্রেস করতে পারেনি। আমেরিকায় কবে এলে?’

‘ওই যে বললে হারিয়ে গেলাম। তখনই চলে এসেছিলাম।’

‘তো কি করছো, এখানে?’

‘একটা ইউনিভার্সিটিতে পরাই। টেক্সাস এ এন্ড এম-এর করপাস ক্রিস্টি ক্যাম্পাসে। ডালাস থেকে প্রায় ছয় ঘন্টার ড্রাইভ।’

‘করপাস ক্রিস্টি কি কোনো জায়গার নাম?’

‘হ্যাঁ। ভীষণ সুন্দর একটা জায়গা। টেক্সাসের দক্ষিণে মেক্সিকো উপসাগরের একটি শহর আর বে-এরিয়ার একটা আইল্যান্ডের মধ্যে আমাদের ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নৈসর্গিক লীলাভূমি করপাস ক্রিস্টি ভ্রমণ পিয়াসু মানুষের চারণভূমি বলা চলে। অবসর সময়ে এই আইল্যান্ডে ছুটে আসে অনেক পর্যটক।’

‘ওয়াও! শুনেই তো লোভ হচ্ছে। আর তুমি যেভাবে বর্ননা দিচ্ছ—বাব্বা!’

‘তুমি যাবে?’

‘অস্টিন থেকে কতদুর?’

‘মাত্র তিন ঘন্টার ড্রাইভ। ডালাস থেকে অস্টিন হয়েই করপাস ক্রিস্টি যেতে হয়।’

রূপা হঠাৎ করেই কি যেন ভাবল। তারপর বলল, ‘ডালাসে কি মাঝে মাঝেই আসো নাকি?’

‘হ্যাঁ, তাতো আসিই। এখানে অনেক বাঙালি আছে। বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট আছে, দোকান আছে যেখানে বাংলাদেশি আইটেম, মাছ-মাংস সবই পাওয়া যায়। যখনই আসি, এসব দোকান থেকে ইচ্ছে মত দেশী জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যাই। আমি যেখানে থাকি সেখানে তো আর এসব কিছু পাওয়া যায় না। করারও তেমন কিছু নেই।’

‘তাহলে সময় কাটাও কিভাবে?’

‘সপ্তাহে তিন-চারদিন ক্লাস থাকে। সেগুলোর প্রিপারেশন নিতে হয়। অবসরে ঘুরে বেড়াই। শখের ফটোগ্রাফি করি।’

‘ফটোগ্রাফি? বাহ! তোমার প্রিয় সাবজেক্ট কি?’

‘প্রকৃতির ছবি তুলতেই বেশি পছন্দ করি। প্রকৃতি আমাকে খুব টানে। প্রকৃতি খালি চোখে যতটা সুন্দর দেখায় তার চেয়ে একটু বেশি সুন্দর লাগে ক্যামেরার লেন্স এ।’

‘প্রকৃতির মাঝেই যার বসবাস—প্রকৃতি তাকে টানবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমার কাছে প্রকৃতি খালি চোখেই সুন্দর! কি জানি আমি তো আর ক্যামেরার লেন্স দিয়ে দেখার চেষ্টা করিনি কখনো।’

আকাশ হেসে বলল, ‘বাদ দাও। দ্যাখো তো, তখন থেকে আমি কেবল নিজের কথাই বলে যাচ্ছি। অথচ তোমার কথা শুনব বলে তোমাকে নিয়ে এলাম। বলো, তোমার কথা বলো।’

রূপা কিছু না বলে কিছুক্ষন চুপ করে থাকল। তারপর বাইরে তাকিয়ে বলল, ‘চলনা, একটু হাঁটি। জায়গাটা মনে হচ্ছে বেশ সুন্দর।’

‘ঠিক আছে, চলো।’

আকাশ আর রূপা দুজনে কফি শপ থেকে বের হয়ে হাঁটতে শুরু করল।

হাসান বাসায় ফিরে এসে ব্যাকইয়ার্ডে গিয়ে বসেছে। তার মনটা ভীষণ বিক্ষিপ্ত—সে উদাস নয়নে দূরে কোথাও তাকিয়ে কী যেন ভাবছে। বিষণ্ণতা যখন কাউকে পেয়ে বসে, তার মনটা কেমন যেন মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায়, কিছুই ভাল লাগে না–কিংবা ভাল লাগার অনুভূতি গুলোই কেমন যেন ভোঁতা হয়ে যায়।

তিতলির স্কুল আজকে হাফ-ডে (আর্লি রিলিজ) ছিল বিধায় লাঞ্চ ব্রেকে তিথি অফিস থেকে বের হয়ে এসে তিতলিকে স্কুল থেকে তুলে নিয়ে আবার অফিসে ফিরে গিয়েছিল। তিতলির স্কুল থেকে তিথির অফিসের দূরত্ব মাত্র পনের থেকে বিশ মিনিটের মত। হাসান যখন সপ্তাহে তিন-চার দিন ক্লায়েন্ট সাইটে গিয়ে কাজ করে, তিথি তখন তিতলিকে স্কুল থেকে তুলে নিয়ে আবার অফিসে ফিরে যায়। তিতলি তিথির অফিসে বসেই হোমওয়ার্ক করে তিথির কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত। মাঝে মাঝে সোফার উপর ঘুমিয়েও পড়ে ক্লান্ত হয়ে। ছোট মানুষ সেই সকাল ছয়টায় উঠতে হয়।

শেষ বিকেলে তিথি আর তিতলি বাসায় ফিরে এলো। তিতলি তার রুমে চলে গেল। তিথি দেখল হাসান ব্যাকইয়ার্ডে বসে রয়েছে একা। সে পেছনের দরজা খুলে ব্যাকইয়ার্ডের পাটাতনে এলো। রূপা নেই দেখে ভাবল হয়ত রূপা ওর রুমে রেস্ট নিচ্ছে। তবুও হাসানের দিকে তাকিয়ে সে জিজ্ঞেস করল, ‘রূপা কোথায়?’

‘ওর এক বন্ধুর সাথে গেছে।’ হাসান উত্তর দিল।

তিথি খানিকটা অবাক হয়ে বলল, ‘বন্ধুর সাথে গেছে মানে? কার সাথে? কোথায়?’

‘হ্যাঁ, আকাশ নামে ওর এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেল… অনেক বছর পর দেখা তাই… কোথায় গেছে তা তো বলতে পারবো না।’

তিথি দ্রুত চিন্তা করে দেখল আকাশ নামে সে কাউকে চিনে কিনা। নাহ, চিনে না। সে বলল, ‘আকাশ! আকাশের সঙ্গে দেখা হলো কোথায়?’

‘ও, না মানে, আমি রূপাকে একটা মুভি দেখাতে নিয়ে গেছিলাম। সেখানেই দেখা।’

‘মুভি দেখতে গেছিলে? কই আমাকে তো কিছু বলো নি?’

‘না মানে, বলার মত সিচুয়েশন ছিল না।’

‘বলার মত সিচুয়েশন ছিল না মানে কি হাসান? মুভি দেখতে যাবে, এটা বলার জন্য আবার সিচুয়েশন লাগে নাকি?’

হাসান একটু রেগে গিয়ে বলল, ‘তুমি এমন রিয়্যাক্ট করছো কেন তিথি? রিয়্যাক্ট করার মতো কিছু তো হয়নি।’

তিথি চুপ করে থাকল। হাসানও আর কোনো কিছু বলল না। বেশ খানিক্ষন পরে তিথি একটু ঠান্ডা স্বরে বলল, ‘আকাশ কোথায় থাকে?’

‘জানি না।’

‘কেন, তোমার সঙ্গে কথা হয়নি?’

‘তেমন ভাবে না। নাইস টু মিট ইউ পর্যন্ত… কোথায় থাকে, কি করে জানা হয় নি।’

‘কখন ফিরবে তা কি কিছু জানো?’

‘আকাশ বলেছে রাতে নামিয়ে দিয়ে যাবে।’

‘ফোন নাম্বার দিয়েছে?’

‘না।’

‘তারমানে রূপা কল না দিলে কিছুই জানার উপায় নেই।’ বলেই তিথি অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইল হাসানের চোখের দিকে।

হাসান মাথা ঘুরিয়ে তাকাল অন্যদিকে। তিথি আর কোনো কিছু না বলে ঘরের ভিতর ঢুকে গেল।

আকাশ আর রূপা অনেক্ষন ধরে চুপচাপ হাঁটছিল। আকাশ হঠাৎ থেমে ঘুরে দাঁড়াল রূপার দিকে। তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘কি বলবে না?’

‘কি বলবো? এখন আর কাউকে কিছু বলতে ইচ্ছা করে না। এসব কষ্টের কথা কি সব সময় বলা যায়?’

‘অবশ্যই বলা যায়। আমি আগের মতই এখনো তোমার বন্ধু আছি রূপা। আমাকে কোন কিছু বলতে তোমা্র দ্বিধা থাকা উচিত নয়। প্লীজ বলো। আমি শুনবো।’

রূপা তবুও কিছু বলল না। সে তাকিয়ে সামনের বড় রাস্তা দিয়ে গাড়ির চলাচল দেখতে থাকল।

সন্ধ্যা মিলিয়ে গেছে অনেক আগেই।

হাসান লিভিংরুমে বসে টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে আছে। হাসানের চোখের দিকে তাকালে যে কেউ বলে দিতে পারবে যে সে আসলে কিছুই দেখছে না, শুধু তাকিয়েই আছে। হাসান ঘন ঘন ঘড়ি দেখছে। মাঝে মাঝে ফোনের দিকে তাকাচ্ছে এবং একটি কান সজাগ রেখেছে দরজায় কলিং বেলের শব্দ শোনার জন্য।

তিথি এসে দাঁড়াল হাসানের সামনে। হাসান তাকালো তিথির দিকে। তিথি বলল, ‘খাবে না? খেতে আসো।’

হাসান একটু ইতস্তত করে বলল, ‘রূপা তো এখনো এলো না। ফোন করে এড্রেস নিবে বলেছিল, ফোনও করলো না। ফিরবে কিনা বুঝতে পারছি না।’

তিথি একটু বিরক্ত হয়েই বলল, ‘না ফিরলে না ফিরবে। তুমি এত অস্থির হচ্ছো কেন? সেই সন্ধ্যা থেকে দেখছি তুমি অন্যমনস্ক। ক্ষণে ক্ষণে ঘড়ি দেখছো আর দরজার দিকে তাকাচ্ছো। তুমি যে অস্থির সেটা কিন্তু বোঝা যাচ্ছে।’

‘অস্থির হবো না? একটা মেয়ে হুট করে একটা অচেনা মানুষের সঙ্গে চলে গেল। এতো রাত হয়ে গেল, অথচ-’

‘এমন কোন রাত হয় নি যে তোমাকে এতটা চিন্তিত হতে হবে। তাছাড়া মানুষটাকে তুমি চেনো না, কিন্তু যে গেছে সে তো চেনে।’

‘হ্যাঁ, তা হয় তো চেনে।’

‘এসো খেতে এসো।’ তিথি আবার বলল।

কিন্তু হাসান কোনো উত্তর না দিয়ে টেলিভিশনের দিকে অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে রইল। তিথি বুঝতে পারল, হাসান রূপার জন্যে অপেক্ষা করতে চাইছে। সে একটু খোঁচা দিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে, আমি খেয়ে নিচ্ছি। তুমি বরং রূপার জন্য ওয়েট করো। তবে আমার ধারণা, ও ডিনার করেই আসবে।’

‘আর একটা কথা, রূপার কাছে বাসার এড্রেস আছে। দেশ থেকে আসার আগেই ওকে দিয়েছিলাম। সেটা ওর হ্যান্ডব্যাগে নিশ্চয়ই থাকবে। তুমি টেনশন একটু কম করো।’ বলেই তিথি চলে গেল কিচেনে রাতের খাবার খেতে।

আকাশ রূপাকে নিয়ে এসেছে ওর পছন্দের একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে। তাদের বীফ শাহী বিরিয়ানি আকাশের খুব পছন্দের। খেতে খেতে আকাশ রূপাকে বলল, ‘তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, পার্থকে তুমি এখনও ভালোবাসো।’

‘হয়তো বাসি!’

‘যে ছেলেটি এতোদিন প্রেম করে তোমাকে বিয়ে করলো না, তাকে তুমি এখনো ভালোবাসো?’

‘ভালোবাসার সঙ্গে বিয়ের কি সম্পর্ক আছে? বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য ভালোবাসার প্রয়োজন, কিন্তু ভালোবাসলেই বিয়ে করতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। তবে হ্যাঁ, আমরা অনেকেই ভালবেসেই বিয়ে করি। আবার সেই ভালোবাসা বিয়ের পরে উড়েও যায়।’

‘এই থিওরিটা কি পার্থকে ভালোবাসার আগে থেকে তুমি বিশ্বাস করতে?’

‘হ্যাঁ করতাম। সম্পর্কের প্রথম থেকেই একটা বিষয় আমরা পরিষ্কার করে নিয়েছিলাম, ফ্যামিলির কাউকে অখুশি করে আমরা বিয়ে করবো না। তার জন্যে যতদিন অপেক্ষা করতে হয় করবো।’

‘তাহলে তুমি ওর জন্য কষ্ট পাচ্ছ কেন?’

‘কি মুশকিল, একটা মানুষকে ভালোবাসতাম, তাকে দেখতে পাচ্ছি না, কাছে পাচ্ছি না, তার জন্য কষ্ট হবে না? এটা নিশ্চয়ই পার্থরও আছে।’

‘তুমি কিভাবে জানো?’

‘আমি ওকে চিনি না?’

‘তাই যদি হবে, তাহলে সে তোমাকে ছেড়ে যাবে কেন?’

‘নিশ্চয়ই কোন কারণ ছিল। যে কারণে হয়তো ওর মনে হয়েছে, বিয়ে হলে আমরা সুখী হবো না। আর সুখী যদি নাই হই, তাহলে ভালোবাসার মৃত্যুর জন্যে তো বিয়ে করাটা ঠিক হতো না, তাই না?’

‘তোমার ভালোবাসা কি তাহলে এখনো টিকে আছে?’

‘হ্যাঁ, আছে।’

‘ওর জন্যে তোমার ঘৃণা হয় না?’

‘না, ঘৃণা হয় না। মাঝে মাঝে খুব রাগ হয়। ভীষণ রাগ।’

‘আশ্চর্য মানুষ তুমি। তুমি বিয়ে করছো না কেন?’

‘করবো, করবো নিশ্চয়ই।’

রূপা যখন ফিরে এলো তখন প্রায় মধ্য রাত। হঠাৎ রূপার মনে পড়েছে বাংলাদেশ থেকে আসার আগেই তিথিদের বাসার ঠিকানা সে লিখে রেখেছিল। তার হাত ব্যাগ থেকে সে ঠিকানা বের করে আকাশকে দিলে আকাশ তাকে নামিয়ে দিয়ে গেল।

তিথি অনেক আগেই ঘুমাতে চলে গেছে। হাসান এখনো জেগে রয়েছে। অপেক্ষা করছে রূপার জন্যে। আরো কিছুক্ষন পর ডোর বেল বেজে উঠল। হাসান উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখল রূপা দাঁড়িয়ে আছে।

রূপা একটু লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল, ‘সরি, দেরী হয়ে গেলো।’

হাসান কিছু বলল না। সে দরজা থেকে সরে দাঁড়াল। রূপা ভিতরে ঢুকে বলল, ‘আপনি এখনো ঘুমাননি?’

‘না।’

রূপা আর কিছু না বলে ওর রুমের দিকে চলে যাচ্ছিল, হাসান বলল, ‘তুমি খাবে না?’

‘ডিনার করে এসেছি। আকাশ না খাইয়ে ছাড়লো না।’

‘ও।’

রূপার কেন যেন মনে হলো হাসান না খেয়ে ওর জন্যে অপেক্ষা করেছে। সে একটু চুপ থেকে বলল, ‘আপনি খাননি?’

হাসান কোনো উত্তর দিল না। রূপা আবার বলল, ‘সরি, হাসান ভাই।’

হাসান কিছুই বলল না। সে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।

রূপা কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে তার রুমে ঢুকে আস্তে করে দরজা বন্ধ করে দিল।

(চলবে…)

  • ফরহাদ হোসেন
    লেখক-নির্মাতা
    ডালাস, টেক্সাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *