অপেক্ষা (৩য় পর্ব)

একটু ধাতস্থ হয়ে শরীফ কল করল সাউথওয়েষ্ট এইয়ারলাইন্সের কাস্টমার সার্ভিসে। সেখানে খোঁজ নিয়ে যা জানতে পারল তাতে তার মাথা আরও এলোমেলো হয়ে গেল। গতকালকের ওই নির্দিষ্ট ফ্লাইটে রুবিনা আলম নামে কোনো যাত্রী ডালাসে যায়নি। এয়ারলাইন্সের সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসী রুলসের কারনে কাস্টমার সার্ভিস থেকে এর চেয়ে বেশী আর কিছু সে জানতে পারল না। রুবিনা তাহলে গেল কোথায়?

রুবিনার খালা খাবার আয়োজন করছিলেন হঠাত বাসার ফোন বেজে উঠল। সে ফোনটা ধরতেই রুবিনার কন্ঠ শুনতে পেলেন। তিনি উতকন্ঠা নিয়ে জানতে চাইলেন, ‘রুবিনা! কেমন আছিস মা? তুই কোথায়?’

‘আমি ভাল। তোমরা কেমন আছো? খালুর শরীর কেমন?’

‘কেমন আর থাকব। তোর চিন্তায় তো আমাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এমনিতেই আমার ব্লাডপ্রেসার হাই। তোর না আসার কথা এখানে?’

‘কথা তেমনি ছিল খালা। একটা ঝামেলা হয়েছে। পরে সব বলব। আমাকে নিয়ে তোমরা কোন চিন্তা করো না। আমি ভাল আছি।’

‘আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। এমনিতেই আমার প্রেসারের সমস্যা। তুই তোর খালুর সাথে কথা বল। আমি ডেকে দিচ্ছি।’

‘খালুকে ডাকতে হবে না। আমি এখন কথা বলতে পারব না খালা। সময় হলে তোমরা সবই জানতে পারবে। আমি রাখছি।’

‘না না রাখিস না। একটু ধর… এই শুনছ?’ বলেই সে উচু গলায় ডাকল রুবিনার খালুকে।

রুবিনার খালু এগিয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখলেন অপর প্রান্তে কোনো রিং টোন নেই। সে চিন্তিত মুখে রুবিনার খালার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘লাইনটা বোধ হয় কেটে দিছে।’

রুবিনার হারিয়ে যাওয়ার শোকে শরীফ যখন চিন্তিত এবং মানষিকভাবে বিপর্যস্ত–রুবিনা তখন নিউইয়র্কের একটা এপার্টমেন্টের লিভিং রুমের সোফায় বসে ডিভিডিতে হিন্দি সিনেমা দেখছে। ঐদিন শরীফ যদি এয়ারপোর্টের ভিতরে যেত তাহলে সে দেখতে পেত—রুবিনা আসলে ডালাসে নয়, সাউথওয়েষ্ট এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে দাঁড়িয়ে নিউ ইয়র্ক ফ্লাইটের বোর্ডিং নিচ্ছে।

কিচেন কাউন্টার থেকে দু’কাপ ইন্সট্যান্ট কফি আর কিছু স্ন্যাক্স নিয়ে রুবিনার পাশে এসে বসল সোহেল। সোহেলের সংগে রুবিনার যোগাযোগ ছিল প্রথম থেকেই। সোহেলই নিউইয়র্কের টিকেট কেটে ইলেকট্রনিক কোড নাম্বারটি রুবিনাকে দিয়ে ছিল।

সোহেল বাংলাদেশ থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে কিছুদিন চাকরী খুঁজেছে। তারপর আরও কিছুদিন বেকার ঘুরাঘুরি করে সে নিউ ইয়র্ক থেকে প্রায় চারশত মাইল দুরের একটি ছোট্ট শহর বাফেলোতে মাষ্টার্স করার জন্যে চলে আসে দুই বছর আগে। ভেবেছিল হায়ার ডিগ্রী নিয়ে দেশে ফিরে গিয়ে ভাল একটা চাকরী পেয়ে যাবে সহজেই। রুবিনাকে বিয়ে করে সুখের সংসার করাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু মাষ্টার্সটা আর করা হয়ে উঠেনি তার। দেশ থেকে নিয়ে আসা কিছু টাকা আর প্রথম ছয় মাস একটি গ্যাস ষ্টেশনে রাতের শিফটে কাজ করে যা রোজগার করেছিল তা দিয়ে দুটি সেমিষ্টার ফি দিতে পারলেও বেশীদূর আর এগুতে পারেনি। সেমিস্টার গ্যাপ পড়ায় স্টুডেন্ট স্ট্যাটাস হারাতে হয়। অতঃপর হতাশ হয়ে চলে এসেছে ব্যস্ত নগরী নিউইয়র্কে। এখানে তার ভালই কাটছে দিনকাল। ক্যাব চালিয়ে রোজগারও খারাপ না। কিন্তু তারপরেও হতাশা তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিনিয়ত। একটাই আফসোস, ইস, একটা গ্রীনকার্ড যদি থাকত!

রুবিনার হাতে কফির কাপ দিয়ে সোহেল আক্ষেপ করে বলল, ‘বুঝলা রুবি, এই দেশে শালা সবকিছুই তাড়াতাড়ি হয়। মোটামুটি বিদ্যুৎ গতিতে বলতে পারো। হয় না শুধু ঐ কাগজটাই।’

সোহেল রুবিনাকে রুবি বলে ডাকে। কফির কাপে চুমুক দিয়ে সোহেল বলতে থাকে, ‘বছর লেগে যায়। যুগ পার হয়। কেন হচ্ছে না, কবে হবে তাও জানার উপায় নাই। ফোন করলে কেউ ধরে না। ঘন্টা পার হয়, সেখানে একজন লোক থাকার কথা। এটা তার চাকরী, কিন্তু কেউ নেই। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মেশিনে রেকর্ড বাজতে থাকে। যাতে একসময় ধৈর্য্য হারিয়ে তুমি ফোন রেখে দাও। আর কেউ যদি হঠাৎ ফোনটা ধরে, তার কাছেও কোন উত্তর নেই। আমেরিকার ফেডারেল এমপ্লয়ীজরা অনেকটা আমাদের দেশের সরকারী কর্মচারীর মতই।’

‘তো এতদিনেও তোমার একটা গ্রীনকার্ড হলো না?’ রুবিনার সরল প্রশ্ন।

‘পাগল। মানুষ দশ-বারো এমন কি বিশ বছর অপেক্ষা করেও কিছু করতে পারে না, আরতো আমি…।’

‘থাক। এখন আর তোমাকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্সটা নিয়ে নেব। সোনার হরিণ তো এখন আমার হাতের মুঠোয়…’ উচ্ছ্বসিত রুবিনা সোহেলকে আস্বস্ত করল।

‘তার আগে তুমি তোমার হাজব্যান্ডকে একটা ফোন করো। তাকে এভাবে টেনশনে রাখাটা তোমার মোটেই ঠিক হচ্ছে না।’

‘করব। আজ রাতেই ফোন করব।’

শরীফ কিছুতেই বুঝতে পারছে না রুবিনা কেন এমন করল? তাহলে কি সে সুখী নয়? তাই কি সারাক্ষন তার মুখটা বিষন্নতায় ভরা থাকে? শরীফের অস্থিরতা বেড়ে গেল। সন্ধ্যা থেকে সে ঘরময় পায়চারী করল। কিছুই ভাল লাগছে না। অস্হিরতা আর অজানা আশংকায় বুক ধরফড় করতে লাগল। কিছুক্ষণ কাটল স্তব্ধতার মধ্যে। শরীফের চিন্তাচ্ছেদ হলো ফোনের শব্দে। সে দ্রুত ফোনটা ধরেই বলল, ‘হ্যালো।’

‘আমি।’ ফোনের ওপাশে রুবিনার শান্ত কন্ঠ শোনা গেল।

‘রুবিনা! তুমি কোথায়?’ উত্তেজিত হয়ে শরীফ জানতে চাইল।

রুবিনা উত্তর দেবার আগেই শরীফ আবার বলল, ‘এসবের মানে কি? তুমি খালার বাসায় বেড়াতে যাবার কথা বলে চলে গেলে, অথচ সেখানে তুমি যাওনি। তাহলে তুমি কোথায় গেছ?’ শরীফ উত্তেজনায় কাঁপতে থাকল।

‘কোথায় গেছি সেটা তো কোন ইম্পোর্ট্যান্ট বিষয় নয়।’

‘কি বলছ এসব? তাহলে ইম্পোর্ট্যান্ট বিষয়টা কি রুবিনা?’ শরীফের উত্তেজনা আরও একধাপ বেড়ে গেল।

‘উত্তেজিত হচ্ছো কেন? শান্ত হও, আমি বলছি সবকিছু।’

শরীফ আর কিছু না বলে চুপ করে রইল।

রুবিনা বলল, ‘প্লীজ রিয়াক্ট করো না। একটা কথা বলছি বোঝার চেষ্টা করো।’ একটু চুপ করে থেকে রুবিনা আবার বলল, ‘দেখো, আমরা দুজন দু’প্রান্তের মানুষ। তোমার চিন্তাধারা একরকম, আমার একরকম। তুমি মানুষটা নিঃসঙ্গ আমি জানি। আর নিঃসঙ্গতা কাটানোর জন্য তোমার চাই শুধুই একজন সঙ্গী, জাস্ট এ কোম্পানী। বাট আই নীড মোর দ্যান দ্যাট।’

‘সেটা কি আমাকে বলো। তাছাড়া, কি নেই আমার আর কী দেইনি আমি তোমাকে?’

‘আমার যা চাই তা তোমার কাছে নেই এবং তুমি তা দিতেও পারবে না।’

‘তাহলে এতদিন কেন বলনি?’

‘বলেছি। অনেকবার বলেছি। তুমি বোঝার চেষ্টা করনি। অথবা বুঝেও কেয়ার করনি। মনে করে দেখো।’

শরীফের মনে আছে দেশে যাবার পর, রুবিনার সংগে বিয়ের কথা যখন ঠিক হচ্ছিল তখনই রুবিনা তার সংগে দেখা করে বলেছিল এ বিয়েতে সে রাজী নয়। শুধু বাবা-মাকে কষ্ট দিতে পারবে না বলে না করতে পারছে না। তাই সবচেয়ে ভাল হয় শরীফ যদি রুবিনাকে বিয়ে না করে অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করে। রুবিনা এও বলেছিল সে একজনকে ভালবাসে এবং তাকেই বিয়ে করতে চায়। তার জন্যে যতদিন অপেক্ষা করতে হয় করবে। কিন্তু শরীফ রুবিনার সে সব কথার কোনো গুরুত্ব দেয়নি। ভেবেছিল বিয়ের পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া একবার আমেরিকা নিয়ে গেলে পেছনের কোনো কথা তখন আর মনে থাকবে না।

কিছুক্ষন চুপ করে থেকে শরীফ জানতে চাইল, ‘তাহলে দেশ থেকে এসেছিলে কেন? না এলেই পারতে।’

‘আমিতো আসতে চাইনি। তুমিই ইনসিস্ট করেছিলে।’

‘হ্যাঁ আমিই করেছিলাম। ভুলটা আমারই। আমার বোঝার ভুল হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম…’

শরীফের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রুবিনা বলল, ‘কি ভেবেছিলে, আমেরিকায় গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে?’

শরীফ কোনো উত্তর দিল না। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল, ‘আরো আগেই তো চলে যেতে পারতে। এত নাটকের কি দরকার ছিল? কিসের অপেক্ষায় ছিলে তুমি?’

‘কিসের অপেক্ষায় ছিলাম তা এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ।’

‘আমার ভাবতে ঘৃনা হচ্ছে, ছিঃ! তুমি শেষ পর্যন্ত…। আচ্ছা, মানুষ কি ভাববে বলতো? নিজেকে ছোট করতে তোমার খারাপ লাগছে না?’

‘মানুষের কাজই হচ্ছে অন্যের ব্যাপারে মাথা ঘামানো। মানুষ নিজে যেমনই হোক সবসময় অন্যকে নিয়ে বলতে ভালোবাসে। মানুষ কি ভাববে, লোকে কি বলবে–এসব নিয়ে ভাবলে তো আমার চলবে না। আর তা নিয়ে আমার মাথা ব্যথাও নেই। শরীফ শোনো, তুমি আজ অনেক উত্তেজিত। মাথা গরম করে কোনো কিছুর সমাধান হবে না। আমি বরং এখন রাখি। এ ব্যাপারে পরে কথা বলব।’ রুবিনা শরীফকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই লাইনটা কেটে দিল।

সোহেলের এপার্টমেন্টে মোটামুটি স্বাচ্ছন্দেই সময় কাটছে রুবিনার। রান্না করছে, ঘর গোছাচ্ছে। সব খানেই একটা প্রাণের ছোঁয়া। সোহেলের ছোট্ট এক বেডরুমের এপার্টমেন্ট এ কদিনেই বেশ সুন্দর পরিচ্ছন্ন করে সাজিয়ে ফেলেছে সে।

সোহেল রাতের শিফটে ক্যাব চালায় আর দিনের বেশীর ভাগ সময় ঘুমিয়ে কাঁটায়। তবে রুবিনা আসাতে তার রুটিনের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন সে দুপুরের আগেই ঘুম থেকে উঠে পরে রুবিনার হাতের মজাদার রান্না খাবে বলে।

দুপুরে খাবার টেবিলে বসে রুবিনা আক্ষেপ করে বলল, ‘তবে যাই বলো সোহেল, তোমার মাষ্টার্স ডিগ্রী শেষ না করাটা কিন্তু আমি মোটেও মেনে নিতে পারছি না। কত ঝামেলা করে এদেশে এলে, অথচ…’

‘কিভাবে করব বলো? টিউশন ফি জোগার করব না ক্লাস করব? সারারাত কাজ করার পর দিনের বেলা ক্লাসে যেয়ে চোখে অন্ধকার দেখতাম। প্রচন্ড মাইগ্রেইন হতো। তারপরেও চেষ্টা চালিয়েছিলাম, কিন্তু বেশিদিন টিকতে পারিনি। এভাবে তো আর পড়াশুনা হয় না… এটা শুধু আমার একার সমস্যা না। আমার মত আরও অনেকেরই এই অবস্থা।’

সোহেল মন খারাপ করে তার আফসোসের কথা বলতে থাকল, ‘একটা সেমিষ্টার মিস করলেই আউট অফ স্ট্যাটাস। সেখানে আমি একটার পর একটা সেমিস্টার মিস করেছি, কোনো ক্লাসই নিতে পারিনি। তোমাকে তো সবকিছুই জানিয়েছি।’

‘জানতাম বলেই তো, শরীফের সংগে শেষ পর্যন্ত বিয়েতে রাজী হয়েছিলাম। অবশ্য তুমি না বললে আমি কখনোই রাজী হতাম না। মরে গেলেও না।’

‘ভাগ্যিস রাজী হয়েছিলে।’

‘শুধু তোমার জন্যে কত বড় মিথ্যের আশ্রয় আমাকে নিতে হলো, ভেবে দেখেছ? এটাতো একধরনের প্রতারনা তাই না?’

‘এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন ওয়ার এন্ড লাভ।’

‘কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগছে মানুষটার জন্যে। ওর তো কোনো দোষ নেই।’

‘তবে কার দোষ?’

‘জানিনা।’

হঠাৎই চুপ হয়ে যায় রুবিনা। সোহেলও আর কিছু বলতে পারে না। একটি অস্বস্তিকর নীরবতায় ছেয়ে গেল ঘরের ভিতর।

এর মধ্যে শরীফ আরও বেশ কয়েকবার চেষ্টা করল রুবিনার সংগে যোগাযোগ করার। রুবিনা কলার আইডি দেখে ফোন ধরেনি। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে শরীফ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করল রুবিনাকে।

ফোন ধরার পর রুবিনা যখন বুঝতে পারল এটা শরীফের কল তখন সে বলেছে, ‘এখন কথা বলতে পারব না। তোমাকে রাতে কল দিব।’ বলেই লাইনটা কেটে দিযেছে সে। এর পর থেকে আর কারো কোনো ফোনই ধরেনি রুবিনা।

সোহেলে রাতের শিফটে কাজে চলে যাবার পর শরীফকে কল করল রুবিনা।

‘একটা কথা আমার মাথায় ঢুকছে না কিছুতেই। তুমি হঠাৎ করেই এমন একটা ডিসিশন কেন নিলে?’ কথা না পেঁচিয়ে শরীফ সরাসরি জিজ্ঞেস করল রুবিনাকে।

‘ডিসিশন তো আমি হঠাৎ করে নেইনি, শরীফ। আমি আগে থেকেই জানতাম আমি এমনই কিছু একটা করব। কিছুদিন আগে বা পরে। মনে করে দেখো, আমেরিকায় আসার আগেও আমি বলেছিলাম—আমি যাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু আমাকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারবে না।’

‘তারপরেও, এভাবে চলে যাওয়াটা কি তোমার ঠিক হয়েছে বলো? আমাকে খুলে বললে আমি নিশ্চয়ই তোমাকে জোড় করে আটকে রাখতাম না। প্রয়োজনে আমরা মিউচুয়ালি সেপারেশন নিতাম।’

‘এখন তো জানলে! এখন তাহলে ডিভোর্স লেটারটা পাঠিয়ে দাও।’

এ কথা শুনে সহসাই শরীফ উত্তেজিত হয়ে পড়ল। সে তার রাগ চেপে রাখার কোনো রকম চেষ্টা না করেই বলল, ‘ডিভোর্স! ডিভোর্স তো আমি তোমাকে দিব না। তুমি চাইলে আমার এগেইনস্টে এলিগেশন এনে কোর্টে গিয়ে কেস করো। ডিভোর্স নিয়ে নাও। কিন্তু আমি তোমাকে ডিভোর্স দিব না।’

‘আমাকে তো তোমার ঘৃনা করা উচিত।’ রুবিনা নিজেকে শান্ত রেখেই বলল।

‘তুমি যা করলে, এটার জন্যে তোমাকে একদিন রিগ্রেট করতে হবে রুবিনা। রিমেমবার ইট!’

‘সেটাই যদি হয় আমার ডেস্টিনেশন, তাহলে করব। কপালের উপর তো কারো হাত নেই।’

‘ইউ শুড বী গ্রেটফুল টু মি!’ শরীফ ইচ্ছে করেই রুবিনাকে কথাটা মনে করিয়ে দিল।

‘অফকোর্স আই’ম গ্রেটফুল টু ইউ, শরীফ। তুমি আমাকে এদেশে এনেছো। তোমার জন্যে আমার গ্রীনকার্ড হয়েছে। আমার স্বপ্ন পূরণ হতে এখন আর কোন বাঁধা নেই। আমি অবশ্যই কৃতজ্ঞ। আমাকে তোমার অকৃতজ্ঞ মনে হতে পারে। কিন্তু আমি যা করেছি আমাদের দুজনের ভালোর জন্যেই করেছি। তোমার সংগে থাকলে তোমাকে ঠকানোই হতো শুধু। তুমি ভাল মানুষ, তোমাকে ঠকানোটা হতো অন্যায়। তাই চলে এসেছি।’ রুবিনা উত্তেজিত হয়ে একনাগারে কথা গুলো বলে চুপ করে গেল।

এরপর দীর্ঘ নীরবতা। কেউ কোনো কথা বলল না। একসময় নীরবতা ভেঙ্গে শরীফ বলল, ‘ঠিক আছে রাখি তাহলে।’ রাখি বলেও শরীফ ফোন ধরে থাকল। রুবিনাও চুপ করে থাকল। দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোথাও কোনো শব্দ নেই। এভাবে আরও কিছুক্ষন চলল চুপচাপ নিঃশ্বাসের আদান-প্রদান। তারপর একসময় ফোন রেখে দিল শরীফ।

অপরপ্রান্তে ফোন হাতে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল রুবিনা।

চলবে….

 

ফরহাদ হোসেন
লেখক-নির্মাতা
ডালাস,টেক্সাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *