আত্মজ

শীতের সকালে অফিসের কথা মনে হলেই সিঁটিয়ে যায় মন। ইস্ শীতকালটা যদি অফিস দশটা থেকে শুরু হতো! কনকনে ঠান্ডা পরেছে।রিয়ার ব্যথাগুলো বেড়ে গেছে। একা একাই গজগজ করতে করতে তৈরী হয় রিয়া।সাতটার একটু পর হলেই ট্রাফিক জ্যাম শুরু হয়ে যায়।
মোবাইলটা বেজে ওঠে।এত সকালে আবার কে ফোন করলো? রূপন্তির গলা– রিয়া জানিস আজ কুহু মারা গেছে।রিয়া কোনো কথাই বলতে পারে না।কুহু তো তার অনেক ছোট। মেয়েটাকে কয়েকবার দেখেছে রিয়া।আজ তার মৃত্যু খবরটা এমন বিবশ করে দিলো কেন?

তুখোর প্রেম তখন শৈবালের সাথে। সারা ইউনিভার্সিটি জানে তাদের প্রেম কাহিনী।শৈবাল আর রিয়া যেন একে অপরের পরিপূরক। কুহুকে শৈবাল দেখেছিল একটা বিয়েতে। গল্পটা রিয়ার জানা। তারপর আরো কত সময় কেটে গেছে দুজনের…
শৈবালের পরিবর্তনটা টের পায় রিয়া।কুহুতে মজেছে শৈবাল। কানে কানে রটে যায় কথাটা। রিয়াকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছে শৈবাল।
একদিন রিয়াই প্রসংগটা তোলে। শৈবালও সুযোগ পেয়ে কুহুর কথাটা বলে দেয়। রিয়া তারপর আর কোনোদিন শৈবালের কাছে ভালবাসার আকুতি নিয়ে যায় নি।
কুহুর সাথে শৈবালের বিয়েটা হয়ে গেলো।রিয়া কিভাবে নিজেকে সামলাবে, ভেবে পায় না!

বাবার পছন্দে বিয়েটা এবার করতেই হবে। আবীর ছেলেটা বেশ ভদ্র। লেখাপড়ায় ভালো।মফস্বলের ছেলেরা ভালো — বাবার এই উক্তিটাকে অস্বীকার আর করে নি রিয়া।বিয়ের পর আবীর পড়তে যায় বিলেতে।রিয়ার বাবাই সব ঠিক করে দেন। আবীরের সাথে রিয়াও দেশ ছাড়ে। বছর ঘুরতেই কোল জুড়ে আসে জামি।

জামিকে নিয়ে আবীর রিয়া বেড়াতে আসে দেশে। জামি ছোট ক’দিন দেশেই থাকো রিয়া।বিলেতে তোমার কষ্ট হবে একা একা।আমি তো থিসিসের কাজে ব্যস্ত থাকবো। কথাগুলো বলে আবীর।
চলে যায় আবীর। রিয়ার কোথায় একটু খটকা লাগে!

আবীরের ব্যস্ততার কথা রোজ শোনে রিয়া।ধীরে ধীরে ফোন,চিঠি,সবই কমতে থাকে। বাবার অসহিষ্ণু কন্ঠস্বর,মা’ র উৎকন্ঠা– সব মিলিয়ে রিয়া বিপর্যস্ত। আবীরকে আসতে বলে। বছর গড়িয়ে বছর যায়।আবীর আসে না আর!
জামিটা স্কুলে যায়।রিয়া চাকরী শুরু করে।
খবরটা আকস্মিকভাবে আসে। আবীর বিলেতে বিয়ে করেছে।বিলেতে পড়তে যাওয়ার জন্য রিয়া ছিল একটা সিঁড়ি।

নিজেকে নিয়ে আর ভাবে না রিয়া।শৈবাল,আবীর সব একাকার হয়ে যায়।কেউ রিয়াকে ভালবাসে নি আদতে…
জীবনটা একটা যুদ্ধক্ষেত্র– রিয়া জামিকে নিয়ে যুদ্ধরত!
জামি পড়তে গেছে ঢাকায়। ইন্জিনিয়ারিং পড়ছে।ছুটিতে আসে।রিয়াও মাঝেমাঝে যায়। বাবার বয়স হয়ে গেছে।বাবাও কেমন অসহায় হয়ে রিয়াকে দেখে! রিয়ার ভাল লাগে না বাবার এই অসহায়ত্ব!

কুহু আর শৈবাল সুখেই ছিল।খবর পেতো রিয়া। এত বছর পর কুহুর মৃত্যু খবরে শৈবালের জন্য একটা করুণা হলো।

গাড়ীটা চলছে।রিয়ার অফিসে আজ দেরী হয়ে গেলো। চারপাশে কত মানুষ…এরাই তো কেউ শৈবাল,কেউ আবীর! জামির জন্য মনটা কেঁদে ওঠে। জামিও তো একটা পুরুষ.. তারই আত্মজ!


ফারহানা নীলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *