উত্তরাধিকার (৯ম পর্ব)

বদুর বিধ্বস্ত চেহারা দেখে নুরার মতো কঠিন হৃদয়ের মানুষের হৃদয়ে করুণার উদ্রেগ ঘটে। নুরার রাগ কমে আসে।

– কি অইছে তর?
– ভাই, অনেক বড় ঘটনা ঘটছে।
– কি অইছে ক তাড়াতাড়ি।
যতদূর সম্ভব সবকিছু খুলে বলে বদু। সব শুনে ধপ করে বসে পড়ে নুরা। তার মনে হয় তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। সে সবচেয়ে ভয় পায় পুলিশকে। পুলিশের কথা শুনে সে ভয়ে কুঁকড়ে যায়।
– তরে কই লইয়া গেছিল কইলি?
– ভাই, ঢাহায়। ঐ হানে শুধু পুলিশ আর পুলিশ।
– তুই ত আমারে পাগল বানাইয়া দিবি।
– তরে কি জিগাইল?
– মাহফুজ সাহেবকে চিনি কিনা জিগাইছে।
– কস কি? হেয় ত অনেক আগে মারা গেছে।
– হেরে চিনতে দেরি করছি দেইখা, ম্যাডাম আমারে কুত্তার বাচ্চা কইয়া গালি দিছে।
– আমারে নিয়া জাইতে পারবি?
– এক হপ্তা পরে যাইতে কইছে।
বদুর কথা শুনে নুরার মনে জেগে উঠে শাহরিয়ার সাহেবের কথা।

শাহরিয়ার সাহেব নুরাকে এক সপ্তাহ পরে যেতে বলেছিল কিন্তু সে আর যোগাযোগ করে নি। তার মনে হচ্ছে, সে বিরাট ভুল করেছে। বদুকে তুলে নিয়ে যাবার সাথে তার একটা সম্পর্ক আছে। সে বদুকে বলে,
– তুই অহন বাইত যা, গোছল কইরা, খাওয়া দাওয়া সাইড়া ঘুম দে। কালকা ভূমি অফিস যাওন লাগব।
বদু তাকে সালাম দিয়ে বিদায় নেয়। নুরা ঘরে ঢুকে সব জমির কাগজ বের করে বসে।
বিশেষ করে জাল দলিলগুলো বের করে। একটা একটা করে খুঁজে দেখে। সেখানে মাহফুজ নামের কোন লোকের নাম আছে কিনা। মাহফুজ তার বংশের লোক ছিল। তিনি ছিলেন তার বাবার দাদা। তার একটা মাত্র ছেলে ছিল। পরবর্তীকালে তার ছেলের সন্তানেরা ঢাকায় বসবাস করে। মাঝে মাঝে গ্রামে আসতো। নুরা ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে। তার একটা কথা মনে হওয়ায় কাগজ পত্র তুলে রেখে বাড়ি থেকে বের হয়।

নুরা তার বাড়ির দেলু চাচার বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়।
– কাক্কু, বাইত আছেন?
দেলুর বউ বের হয়ে আসে।
– তোমার কাক্কু ত বাইত নাই। বাজারে গেলে পাইবা।
নুরা কোন প্রকার ভদ্রতার ধার ধারে না। বাজারে রওয়ানা হয়। দেলুর বাড়ি থেকে বের হয়েই সে কল দেয় দেলুর ফোনে।
– কাক্কু, আমি নুরা।-
– হ, ক,
– আম্নে কই?
– আমি বাজারে।
– আমি আইতাছি। আমনের লগে আমার কিছু কতা আছে।

নুরা বাজারে গিয়ে দেলুকে সাথে নিয়ে বাজার থেকে বের হয়ে আসে। দেলু অবাক হয়।
– কিরে কি কতা, ক। চায়ের দোকানে বইয়া কইলেই তো ভালা অইত।
– একটু গোপন কথা।
– ক, তর কি গোপন কথা।
– কাক্কু, আম্নের মাহফুজ দাদার কতা মোনো আছে?
– থাকব না কে? কি অইছে?
– তার পরিবারের কে কৈ থাহে কইতে পারবেন?
– তর কি দরকার?
– দরকার আছে।
– তুই ত ধান্ধা ছাড়া কোন কাজ করছ না
– কাক্কু, সবাই ত একই।
– কি দরকার আগে ক
– আছে, আগে কন, হেরা কই থাহে?
– তারা ঢাহা থাহে।
– ঢাহার কৈ থাহে?
– হুনছি গুলশান বনানী থাহে।
– আচ্ছা কাহা কন তো, আম্নের কাক্কুর দুই ছেলে মেয়ে কি করে?

নুরা দেলুর সাথে দীর্ঘ আলোচনা করে অনেক কিছু জানতে পারে। আস্তে আস্তে তার মনের কৌতুহল  কমতে থাকে। সে জানতে পারে মাহফুজ সাহেবের বংশধরেরা এখন অনেক টাকাপয়সার মালিক। শুধু তাই নয়, তারা এখন অনেক বড় বড় চাকরি করে। সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো তাদের একজন পুলিশের বড়কর্তা। সে সুতার ছেঁড়া অংশটুকু জোড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। তার পূর্বে সে সিদ্ধান্ত নেয় আগামীকাল সে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যাবে।

বদুকে নিয়ে নুরা রওয়ানা হয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। সহকারী ভুমি অফিসার নুরাকে সম্মান করে বসায়।
– নুরা ভাই, কোন কাজ আছে?
– হ, অনেক কাম আছে। আপনের ভলিউম নিয়া এট্টু সময় কাটামু।
– ঠিক আছে, আপনি কাজ করুন।
নুরা একটি ভলিউম নিয়ে কাজ করা শুরু করে। টানা দুই তিন ঘন্টা পরিশ্রম করে অনেক কাজ সহজ করে নেয়। বদুকে নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে আসে।
– বদু, আমি কালকা ঢাকা যামু, তুই এদিকে খেয়াল রাহিস।

চলবে———–

-বাউল সাজু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *