সে জানতো ডাক আসবে কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি সেটা আশা করেনি। দ্রুত তৈরি হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। আজ তার প্রিয় অটোমেটিক পিস্তল টি নিতে ভুললো না। বেডরুমের দরজাটা টেনে বাইরে তালা দিয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠলো। যখন ওরা চেয়ারম্যান বাড়ীতে গিয়ে পৌঁছালো তখন মধ্য দুপুর। রাইয়ান সাহেব বারান্দায় বসে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। গাড়ী ঢুকতে দেখেই উঠে দাঁড়ালেন, সাদা পান্জাবি পাজামা পড়া ছয় ফিট উচ্চতার এ মানুষটিকে যে দেখবে সে ই মুগ্ধ হবে। ভদ্রলোক হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এলেন।
হাত মেলাতে মেলাতে বললেন, রাজিব সাহেব আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি। আসুন একটা জিনিস দেখাই আপনাকে। গতদিন এসেছিল রাতের অন্ধকারে, রাতের অন্ধকারে বাড়ীটাকে যত গাছ পালায় ঢাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হয়েছিল দিনে তেমন মনে হচ্ছে না। তবে বারান্দায় রাখা সমস্ত টব বদলে ফেলা হয়েছে। গতকাল রাতে যেগুলো দেখে গিয়েছিল এখন সেগুলো নেই। সম্পূর্ণ নতুন আরেক সেট আজ রাখা হয়েছে। দরজা গুলো আজ আরও ভালো করে লক্ষ করলো, তার ধারনাটাই ঠিক। প্রতিটা দরজার মধ্য বরাবর ম্যাট রাখা।। রাইয়ান, রাজিবকে নিয়ে মধ্যের প্যাসেজে এলেন। আগের আমলের দোতালা বাড়ী। মধ্যে প্যাসেজ রেখে দু সারি সারি ঘর। দু দিকে তিনটি করে মোট ছ’টি কক্ষ। তবে প্যাসেজটা মধ্যে পড়ায় যথেষ্ট অন্ধকার, দিনের বেলায়ও আলো জ্বালিয়ে রাখা। প্যাসেজটার শেষ মাথায় দো ‘তালায় যাওয়ার সিড়ি। দোতালায় লম্বা টানা বারান্দা, বারান্দার শেষ মাথায় একটা ঘর। রাইয়ান সেই ঘরটার সামনে গিয়ে থামলেন। বোঝাই যাচ্ছে ভীষন উত্তেজিত তিনি। দরজার তালা খুললেন নিজ হাতে। রুমটা খুব একটা ব্যবহার হয় না। একটা বেশ বড় টেবিল রাখা ঘরটির মাঝ বরাবর। বাম পাশ ঘেষে বিশাল এক বিছানা পাতা তার পাশে একটা ড্রেসিং টেবিল। ড্রেসিং টেবিলের পাশের দেয়ালে চোখ আটকে গেলো রাজিবের। এক সুদর্শন ভদ্রলোক চেয়ারে বসা, পাশের চেয়ারে এক ভদ্রমহিলা, দু জনের কোলে দুটি শিশু হুবহু একই চেহারার। হাতে আঁকা ছবি। অসম্ভব জীবন্ত মনে হচ্ছে ছবিটা, যে এঁকেছে তার তারিফ করতে হয়। রাইয়ান সাহেবের ডাকে ছবিটা থেকে চোখ ফেরালো রাজিব।
রাইয়ান সাহেব বাক্সটা খুলতে খুলতে বললেন আজই এসেছে জিনিসটা, ইংলেন্ডের একটা অকশন থেকে কিনেছি। ওরা বলেছে ওরিজিনাল ঈজিপসীয়ান। ফারাওদের সম্পদ থেকে পাওয়া। খুব সাবধানে বের করলেন বাক্সটা থেকে। একটা বালিঘড়ি। অসাধারন সুন্দর কারুকাজ করা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল রাজিব।
কি মনে হয় আপনার ওরা যা বলেছে তা কি ঠিক?
এসব ব্যাপারে আমার আইডিয়া খুব কম, বললো রাজিব। হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। আজকাল সব জিনিসেরই নিখুঁত রেপ্লিকা তৈরি করা যায়।
তা অবশ্য ঠিকই বলেছেন। কাউকে দেখাইনি এখনও , এ এলাকায় এটা বোঝার মতো সমঝদার মানুষ কই? অথচ কাউকে দেখালে উত্তেজনাটা যাচ্ছে না। অনেকদিন থেকেই এমন একটা জিনিসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।।
সাবধানে জিনিসটাকে বাক্সবন্দী করলেন রাইয়ান। বাইরে বের হয়ে তালা দিলেন ঘরে। চাবিটা পকেটে ফেলতে ফেলতে বললেন, চলুন দুপুরের খাবারটা সেরে নেই।
আজ বনে পথ হারিয়ে অনেকটা পথ হাটা হয়েছে রাজিবের। প্রচন্ড খিদে জানান দিচ্ছে পেটে।
আজ অন্য আরেকটা রুমে আজ খাবার দেয়া হয়েছে গোল একটা কাচের টেবিল। ওভেন বেকড পাস্তা, স্যুপ, গার্লিক ব্রেড আর সালাদ। সাথে অবশ্য ম্যাঙ্গ ম্যুজও আছে। চিজের গন্ধে মৌ মৌ করছে চারিদিক। পিওর ইটালিয়ান খাবার। রাইয়ানের খাওয়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে তিনি এতেই অভ্যস্ত। খেতে খেতেই নিজের জীবনের গল্প করছিলেন রাইয়ান। খুব ছোট বেলায় বাবার সাথে ইউ এস এতে পাড়ি দেন তারা স্বপরিবারে। ওখানেই লেখাপড়া, তবে বাসার পরিবেশে বাবা ষোলআনা বাঙালীয়ানা বজায় রাখতেন। সব কথা বাংলায় বলতে হবে। ইংরেজী শব্দ একটাও ব্যবহার করা যাবে না। তাই বাংলাটা বেশ ভালোই বলতে পারেন। ভার্সিটিতে পড়ার সময় এক ইটালিয়ান সুন্দরীর প্রেমে পড়লেন, । বাবা কোনোভাবেই মেনে নিলেননা বিদেশিনীকে। বাবামায়ের সাথে একপ্রকার সম্পর্ক ত্যাগ করে আলাদা সংসার শুরু। দু হাতে পয়সা কামাতেন আর খরচ করতেন চারহাতে। দুটো সন্তান এলো জীবনে। এক সময় খেয়াল করলেন সবার কাছে তার প্রয়োজন ফুড়িয়েছে। তাই মনে হলো এবার দেশের মানুষের জন্য কিছু করা উচিৎ। তাই তার এ দেশে এসে বসবাস।
রাজিব খেয়াল করলো ভদ্রলোক অনেক কিছু গল্প করলেন কিন্তু তার ভাইবোন সম্পর্কে তেমন কিছুই বললেন না। খাওয়ার পালা চুকলে রাজিব নিজেই ওঠার জন্য অনুমতি চাইল। বের হবার মুহূর্তে রাইয়ান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো, উপরের রুমে হাতে আঁকা একটি পারিবারিক ছবি দেখলাম। ওটা কার আঁকা বলতে পারেন? খানিকটা চমকালেন রাইয়ান তবে মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ওটা অনেক আগের আঁকা তাই জানা নেই।
আপনার বাবা কি এখনও বেঁচে আছেন?
জ্বী।
-ঠিক আছে আজ আসছি।
চলবে……
-জাহেদা মিমি