একটি অমিমাংসিত রহস্য ( ৪ র্থ পর্ব )

লোকাল থানার অফিসারের কথায় যা বোঝার বুঝে গেলো রাজিব। এখান থেকে সাহায্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একবার ভাবলো থানার ভেতরে ঢুকবে না কিন্তু তার সিক্সথসেন্স তাকে ভেতরে যাওয়ার জন্য বলছে। সিদ্ধান্ত নিল ভেতরে যাবে। ভেতরে ঢুকেই তার চোখ আটকে গেলো টেবিলের উপর, এস্ট্রেতে তিনটি এক তৃতীয়াংশ খাওয়া সিগারেট পড়ে আছে। তখনই সিদ্ধান্ত নিলো কিছুক্ষন বসতে হবে এখানে। পেছন ফিরে বলল, এক কাপ চা খাওয়াতে পারেন মারুফ সাহেব? সকালে চা খাওয়া হয়নি, মাথাটা খুব ধরেছে। আসলে কি জানেন, কথায় আছে না, আমি যাই বঙ্গে, আমার কপাল যায় সঙ্গে সঙ্গে। এখানে এলাম একটু নিরিবিলিতে ছুটি কাটাবো, কোথায় কি? কোথাকার কে, মরার আর জায়গা পেলোনা, আর উজবুক গুলো আপনাকে ডেকে না এনে, আমার সকালের ঘুমটা মাটি করেছে। এ খুনের ব্যাপারে যা করার আপনিই করবেন। রাজিবের এ কথায় একদম গলে গেলো অফিসার, বলল স্যার বসেন, বলে নিজের চেয়ারটা দেখিয়ে দিয়ে বিগলিত হাসি হাসলো মারুফ। ধন্যবাদ মারুফ সাহেব। আমি এখন ডিউটিতে নাই ছুটিতে আছি, আপনি আপনার চেয়ারটাতেই বসুন। আমি এপাশে বসছি। ও কে স্যার। আপনি একটু বসুন আমি আপনার জন্য স্পেশাল মালাই দেয়া চায়ের ব্যবস্হা করছি। বাজারে একটা চায়ের দোকান আছে গরুর দুধের চমৎকার চা বানায়, বলে বারান্দায় গিয়ে কন্সটেবলকে ডাকতে গেলেন। এই সুযোগটাই কাজে লাগালো রাজিব। সিগারেটের টুকরো তিনটি দ্রুত একটি টিস্যু পেপারে মুড়িয়ে পকেটে চালান করলো। তারপর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো পুরো কক্ষটি। অজপাড়াগাঁয়ের পুলিশস্টেশন, সে তুলনায় যথেষ্ট গোছানো ও পরিপাটি অফিস কক্ষটি। টেবিলটা পুরোনো, কাঠের কিন্তু চেয়ার গুলো নতুন। দেয়ালে একটা পিন বোর্ড লাগানো। সেখানে পর পর চারটি মৃতদেহের ছবি, এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো প্রতিটি লাশই একই ভংগিতে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে আছে, ঠিক যেভাবে রানার লাশটা পাওয়া গিয়েছিল। মারুফকে রুমে ঢুকতে দেখে বোর্ড থেকে মুখ ফেরালো রাজিব, বলল আপনি তো খুব গোছালো, অফিসটাকে খুব সুন্দর করে রেখেছেন। এ কথায় একেবারে গলে গেলেন মারুফ, বললেন আসলে এ সবই চেয়ারম্যান সাহেবের অবদান।
মানে?
মানে, উনিই এ সবের ব্যবস্হা করেছেন। এই যে চেয়ার গুলো দেখছেন, এই বোর্ড এ সব কিছুই তিনি তার পয়সায় আমাদের কিনে দিয়েছেন। আসলে কি স্যার, বিদেশে বড় হয়েছেন তো, তাই মনটাও ভীষন উদার। এ এলাকায় এসে চেয়ারম্যান হয়েছেন শুধুমাত্র মানুষের উপকার করার জন্য। যা টাকা পয়সা সরকার থেকে বরাদ্দ পান তা তো খরচ করেন, উল্টো নিজের পকেট থেকেও ব্যয় করেন। আসলে টাকা পয়সার তো কোনো অভাব নেই, বলেন এক জীবনে তো অনেক কামাই করলাম কিছুটা না হয় মানুষের কাজে লাগুক।
এই যে মদনের ছেলেটার কথাই ধরেন বাপ মরার পর তিন কূলে তার কেউ নেই, চেয়ারম্যান সাহেব যদি তাকে আশ্রয় না দিতেন তবে না খেয়ে মরতে হতো।
মদন কে? প্রশ্ন করলো রাজিব।
যে লোকটার ছবি বোর্ডে সবার প্রথমে আছে।
এ লোকটাই কি সবার প্রথমে খুন হয়? জ্বী স্যার। মদন, এ জঙ্গলের শেষ সীমানায় থাকতো। মানে আপনি যে বাগানের বাংলোয় উঠেছেন তার শেষ সীমানা থেকে জঙ্গলের শুরু, এগুলো পতিত জমি, সরকারী। জঙ্গলের শেষে ইন্ডিয়ার বর্ডার তাই ওদিকে খুব একটা কেউ যায় না। সেখানেই ঘর বেঁধে থাকতো মদন ও তার ছেলে। ছেলেটার জন্মের সময়ই বউটা মরে যায়, বাগানে কাজ করতো, যখন বাগানের কাজটাও চলে গেলো তখন থেকেই জঙ্গলে ঘর তুলে থাকা শুরু।

চলবে…

-জাহেদা মিমি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *