একটি অমিমাংসিত রহস্য ( ৫ম পর্ব )

মদন ও তার ছেলে দুজনেই ছিল খুব নির্বিরোধী মানুষ। বাপ বেটা মিলে সারাদিন বনে কাঠ কুড়াতো। সন্ধ্যায় বাজারে এগুলো বিক্রি করে যে টাকা পেতো তা দিয়ে যৎসামান্য যা জুটতো তাই কিনে বাড়ি ফিরে রান্না করে খেতো। তিন কূলে তাদের কেউ ছিলনা।

মদন যেদিন মারা যায় সেদিন সে ও তার ছেলে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। সকালে উঠে ছেলে দেখে বাপ নেই, প্রথমে ভেবেছিল বাপ বোধহয় তাকে রেখেই আজ কাজে বেরিয়ে পড়েছে। কিন্তু বেলা পড়ার পরও যখন বাপ ফিরলো না তখন আশে পাশে খুজতে বের হলো।

চেয়ারম্যানের লোকেরাই মদনকে প্রথমে খুজে পায়। পরে তো থানা পুলিশ হলো কিন্তু এই খুনের কোনো হদিস মিললোনা।

ঐ দিনই চেয়ারম্যান সাহেব মদনের ছেলের দায়িত্ব নিলেন। তাকে নিজের কাছে রেখে পড়াশোনা শেখাচ্ছেন তিনি। বড় ভালো লোক। কারও দুঃখ কষ্ট সইতে পারেন না।

এমন সময় চা চলে এলো। মারুফ সাহেব করিৎকর্মা লোক, শুধু চা না সাথে পরোটাও আনিয়েছেন। চায়ে চুমুক দিয়ে রাজিবের প্রানটা জুড়িয়ে গেলো। আসলেই খুব চমৎকার চা। বহুদিন বাদে আজ এতো মজার চা খেলো।

মারুফ সাহেব, চা টা আসলেই খুব ভালো হয়েছে। সাথে পরোটা থাকায় আরও জমে গেছে।

খুশী হয়ে গেলো মারুফ। সাথে সাথে গল্পের গতিও বেড়ে গেলো। স্যার দ্বিতীয় যে লোকটা খুন হলো সে ছিল একটা পাগল। মানে আধা পাগলা। প্রত্যেকটা গ্রামেই এরকম একটা দুটো লোক থাকে, সেই রকম আর কি। সারাদিন ঘুরে বেড়াতো, কখনও বাজারে, কখনও জঙ্গলে। কারও সাথে খুব একটা বনতো না। তবে পাগল মানুষ দেখে এটা ওটা সবাই খেতে দিত। যা একটু খাতির ছিল তা ওই মদনের সাথে। ওর বাড়ী মাঝে মাঝে গিয়ে ভাত চেয়ে খেতো। কাউকে খুব একটা জ্বালাতো না। সেই নীরিহ পাগল মদনের মৃত্যুর পর হঠাৎ করে ক্ষেপে গেলো। সারা দিন রাত বকবকানি বেড়ে গেলো। খালি বলতো, ” আমি জানিতো, সব জানি, কে মদনকে মেরেছে। আরও কিছু প্রমান পাই, সব সবার কাছে ফাঁস করে দিবো। ছেলেটাকেও নিয়ে গেলো। আমি হলাম এল এল বি, আমার সাথে পাল্লা দেয় এমন লোক আছে নাকি। ”

এল এল বি মানে? প্রশ্ন করলো রাজিব।

স্যার সে নিজেকে সব সময় একজন এল এল বি উকিল বলতো। বক বক যা করতো তার সিংহভাগ জুড়ে থাকতো মামলা মোকদ্দমা নিয়ে।

এই লোকটার কেউ নেই?

না স্যার, পাগল টাকে কেউ বোধহয় দরগায় নিয়ে এসেছিল। সেখান থেকে কিভাবে কিভাবে যেনো এখানে এসে স্হায়ী হয়ে যায়। মদনের মারা যাওয়ার মাস খানেকের মধ্যে এই লোকটাও খুন হয়।

এটা নিয়ে কোনো মামলা হয়নি। হয়েছে স্যার একটা অপমৃত্যুর মামলা। পাগল ছাগল মানুষ বনে পরে মরে ছিল। তার জন্য কে অত খাটাখাটনি করবে বলেন? চেয়ারম্যান সাহেব নিজেই উদ্যোগ নিয়ে লাশ দাফন কাফনের ব্যবস্হা করলেন। আমাকে বললেন অপমৃত্যুর মামলা লিখে রাখেন আপনারও ঝামেলা কমবে। আমিও তাই করলাম।

এক দিনের জন্য যথেষ্ট হয়েছে বুঝতে পারলো রাজিব। এর বেশী নেয়া ঠিক হবে না। অন্য একটা বিষয়ও মনের ভেতর খচখচ করছে। রানার পেনের ভেতর কি আছে? ওটা জানার জন্য তাকে বাংলোয় ফিরতে হবে।

হাত বাড়িয়ে মারুফের সাথে হ্যান্ডশেক করে বলল, মারুফ সাহেব, আজ উঠি, আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। ছুটি কাটাতে এসে আপনার মতো একজন চমৎকার মানুষের সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো। যেতে যেতে হঠাৎ পেছন ফিরে বলল এ এলাকায়
হাঁস দিয়ে নাকি বাঁশ রান্না হয়, খেতে খুব মজা। কোনো হোটেলে পাওয়া যাবে এটা?

না স্যার, বাজারের ছোট ছোট এ হোটেল গুলোতে এটা পাবেন না, দেখি আমি ব্যবস্হা করতে পারি কি না।

আপনাকে ব্যস্ত হতে হবে না, মারুফ সাহেব।

এটা কি বললেন, স্যার আপনি আমাদের এখানে দু দদিনের জন্য মেহমান হয়ে এসেছেন, আর আপনার একটা শখ আমি পূরণ  করবো না, তা কি হয়? আমি দেখছি, কি করা যায়।

থানা থেকে বেরিয়ে সোজা বাংলোয় ফিরে এলো রাজিব।
এখন একটা ঘুম দিতে হবে। কাউকে বুঝতে দেয়া যাবেনা রানার মৃত্যুর ব্যাপারে সে কতটা কনসার্ন। তাকে তার সিক্থসেন্স বলছে তার ওপর কেউ নজর রাখছে,একে খসাতে হবে।

চলবে…….

-জাহেদা মিমি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *