এ পারফেক্ট রিভেঞ্জ ( ১ম পর্ব )

একটি মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যার শুরু। অনেকদিন থেকে এরকম একটি সন্ধ্যার অপেক্ষায় ছিল ইমরান।

সদর দরজায় কলিং বেল বেজে উঠতেই ইমরান ঘুরে তাকাল। স্মার্ট ভিডিও ডোরবেল থেকে আসা ভিডিও কলটি রিসিভ করতেই সে তার স্মার্টফোনে দেখল—দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক অনিন্দ্য সুন্দরী রমনী। চেহারায় উষ্ণতার ছাপ স্পষ্ট। চালচলনে কোথায় যেন একটা হলিউডি ভাব আছে। সুন্দরী রমনীর নাম এলিনা।

হাতের কাজ ফেলে দ্রুত এগিয়ে গেল ইমরান। দরজা খুলে দিতেই সে দেখল এলিনার ঠিক একটু পিছেই দাঁড়িয়ে আছে এক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান। শ্বেতাঙ্গের নাম রজার্স—এলিনার বয়ফ্রেণ্ড।

দীর্ঘদিন পর ইমরানকে দেখে এলিনা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল, ‘হাই ইমরান!’

ইমরানের চেহারায় অবশ্য তেমন কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ পেল না। সে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল, ‘হাই এলিনা।’

ইমরান গোয়েন্দার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এক পলক তাকাল রজার্সের দিকে। বয়স চল্লিশের আশে পাশে হবে হয়ত। তাহলে এইই সেই—এলিনার বয়ফ্রেণ্ড! দেখতে সুদর্শন, সুঠাম ও দীর্ঘদেহী—লম্বায় ছ’ফুটের কম হবে বলে মনে হয় না। বর্তমানে একটা মডেলিং এজেন্সির মাস্টার ফিটনেস ট্রেইনার এবং জিমনেস্টিক ইন্সট্রাকটর হিসেবে কর্মরত আছে। পাশাপাশি সে নিজেও একজন মডেল সেই সূত্রে হলিউডের কিছু প্রডাকশন কোম্পানীর সাথেও রয়েছে কানেকশন।

ইমরান লক্ষ্য করল রজার্সের হাতে একটি রেড ওয়াইনের বোতল। রজার্স হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে ইমরানের দিকে।

‘স্যরি, উই আর লেট।’ এলিনা বলল।

ইমরান রজার্সের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে তাকাল এলিনার দিকে। এলিনা হাসল সুন্দর করে।

ইমরান তার হাত ঘড়িতে সময় দেখল—সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। ‘নট অ্যাট অল। আই জাস্ট ফিনিসড মাই কুকিং—ইউ আর সার্টেনলি নট লেট।’ সে বলল।

ইমরান এলিনাকে বলেছিল সাতটার দিকে আসলেই হবে। সেখানে তাঁরা এসেছে সাড়ে-সাতটায়। আধ ঘণ্টা দেরি এমন কোনো দেরিই না। বাঙ্গালিদের দাওয়াতে কমপক্ষে এক ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছানো হচ্ছে স্বাভাবিক ঘটনা। কেউ কেউ দেড় ঘণ্টা এমনকি দুই ঘণ্টা দেরিতে গিয়েও হাজির হয়।

এলিনা ঘরের ভিতরের দিকে ইশারা দিয়ে বলল, ‘ক্যান উই কাম ইন?’

‘ইয়া—অফ কোর্স! কাম অন ইন।’ মৃদু হেসে বলল ইমরান।

ইমরান সরে গিয়ে ওদেরকে ভিতরে ঢুকতে দিল। দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়াতেই এলিনা বলল, ‘কেমন আছ?’

‘এই তো—চলে যাচ্ছে। তুমি?’

‘ভাল।’

এলিনা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ইমরানের মুখের দিকে। তারপর একটু এগিয়ে এসে হঠাৎ করেই সে জড়িয়ে ধরল ইমরানকে। এ বিগ হাগ!

ইমরান কী করবে ভেবে পেল না। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে চুপ করে রইল। কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে। অস্বস্তি কাটাতেই সে বলল, ‘গুড টু সি ইউ, এলিন!’

‘গুড টু সি ইউ টু।’

তারপর যেন হঠাৎ করেই কথা হারিয়ে ফেলল দুজনেই। চুপ করে রইল কিছুক্ষণ। অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে এল ওদের তিনজনকে ঘিরে। রজার্স বোকার মত তাকিয়ে রইল ওদের দুজনের দিকে। সে ঠিক বুঝতে পারছে না—তার কি কিছু বলা উচিৎ কিনা। সেও কোন কথা বলেনি পুরো সময়ে। তবে হাসিমুখে কথা শুনছিল ওদের দুজনের।

এলিনা রজার্সের অস্বস্তিবোধ বুঝতে পেরে বলল, ‘লেট মি ইনট্রোডিউস… ইমরান, মিট মাই ফিয়ান্সে রজার্স। রজার্স দিস ইজ ইমরান।’

ফিয়ান্সে! এলিনা কী তাহলে রজার্সকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে? এতদিন সে জানত রজার্স তার বয়ফ্রেণ্ড—জাস্ট লিভিং টুগেদার! এদেশে অনেকেই সেটা করে। বিয়ের আগে জানাশোনা। বিয়ের আগে জানাশোনা না থাকলে বিয়ের পরে সমস্যা হয়। বিয়ে জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। তাই বিয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দুজন দুজনকে ভাল করে জানা খুবই জরুরি। অনেকে আবার বিয়ে না করেও বছরের পর বছর এক ছাদের নিচে কাটিয়ে দেয়। তারপর হঠাৎ একদিন একজন আরেকজনের কাছে এসে বলে, ‘আই নিড টু টক টু ইউ।’ অপরজন তখন বুঝে যায়, বিচ্ছেদের ঘণ্টা বেজে গেছে। ‘আই নিড টু টক টু ইউ’ হচ্ছে প্রাথমিক সংকেত।

খানিকক্ষণ অবাক হয়ে চেয়ে থেকে ইমরান বলল, ‘নাইস টু মিট ইউ রজার।’

‘প্লিজড টু মিট ইয়োর একুয়ানটেন্স অলসো এণ্ড থ্যাঙ্কস ফর ইনভাইটিং আস।’ বলেই রজার্স ওয়াইনের বোতলটি ইমরানের দিকে এগিয়ে দিল।

‘ইউ আর ভেরি ওয়েলকাম! এণ্ড থ্যাঙ্ক ইউ টু!’ ওয়াইন বোতলের গায়ে লাগানো লেবেলটি একনজর দেখে ইমরান সৌজন্যমূলক ধন্যবাদ জানাল রজার্সকে। ইমরান মদ্যপানে অভ্যস্ত নয়। তবে বন্ধুদের জন্যে তার সংগ্রহে খুব ভাল এবং দামী ব্র্যান্ডের ওয়াইন কিংবা হার্ড লিকার থাকে। তার কাছে ব্র্যান্ড তাই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷.

‘বাই দ্য ওয়ে—মাই নেম ইজ রজার্স, নট রজার। দেয়ার ইজ অ্যান ‘এস’ এট দ্য এণ্ড।’

‘ওহ, ওকে। রজার্স, রজার্স।’ ইমরান দুবার রজার্সের নাম উচ্চারন করল। তারপর একটু থেমে বলল, ‘ডিনার ইজ রেডি, প্লিজ ফলো মি।’

ইমরান ওদেরকে ডাইনিং রুমে নিয়ে এল। বড় হলওয়ে ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় এলিনা চারিদিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল। একবার উপর তলার দিকেও তাকাল। বসার আগে সে ইমরানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ইরিন কোথায়? বাসায় নেই?’

‘বাসায়ই আছে। চলে আসবে যে কোনো সময়।’

ইমরান চেয়ার টেনে এলিনাকে বসতে সাহায্য করল। রজার্স বসল এলিনার সামনে—টেবিলের অন্য পাশে।

কেবিনেট থেকে তিনটি ওয়াইন গ্লাস নিয়ে ইমরান এসে দাঁড়াল এলিনা আর রজার্সের মাঝখানে। তিন গ্লাস ওয়াইন ঢেলে দুটি গ্লাস এগিয়ে দিল দুজনের দিকে। সে বসল এলিনা আর রজার্সের মাঝে—কোনার চেয়ারে। তারপর গ্লাস উঁচু করে বলল, ‘চিয়ার্স!’

এলিনা আর রজার্স একসাথে টোস্ট করল। ‘চিয়ার্স!’

সবাই যার যার গ্লাসে ছোট্ট একটা চুমুক দিয়ে গ্লাস নামিয়ে রাখল টেবিলে। কিছু সৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলা দরকার। যেই বিশেষ কারণে এলিনা রজার্সের হাত ধরে চলে গেছে, সেই বিষয়টি নিয়েই নেহায়েতই কিছু সৌজন্যমূলক কথাবার্তা বলা যেতে পারে। ইমরান রজার্সের দিকে ঝুঁকে এসে বলল, ‘সো রজার্স, হোয়েন আর ইউ গেটিং হার ইনটু হলিউড…?’ এলিনার দিকে তাকিয়ে একটা অর্থপূর্ণ হাসি দিয়ে বলল, ‘লুক অ্যাট হার—শী ইজ সো রেডি টু মুভ!’

রজার্স অস্বস্তি নিয়ে তাকাল এলিনার দিকে। ইমরান কথা শেষ করার আগেই এলিনা তার কাছে মুখ নামিয়ে এনে নিচু গলায় বলল, ‘এসব কথা থাক ইমরান—অন্য কোনো প্রসঙ্গ থাকলে বলো।’ এ প্রসঙ্গে কথা বলতে এলিনার নিজেরও আর ভাল লাগে না—ভাল লাগার অবশ্য কথাও না। যে স্বপ্ন রজার্স তাকে দেখিয়েছিল, সে স্বপ্ন আদৌ কখনো পূরণ হবে কিনা সে নিজেও জানে না।

বাংলাদেশের এক সময়ের আলোচিত মডেল ও অভিনেত্রী এলিনা—এলিনা খান নামেই সমধিক পরিচিত ছিল। মডেলিং এর পাশাপাশি অসংখ্য জনপ্রিয় টিভি নাটকে অভিনয় করেছে সে। ছোট পর্দা ছাপিয়ে বড় পর্দায়ও জুটি বেঁধেছিল ঢাকাই ছবির এক শীর্ষনায়কের সঙ্গে। কিন্তু কী মনে করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা সত্বেও এলিনা আমেরিকায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। অত্যন্ত সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্য সচেতন একটা মেয়ে সে। বয়স চল্লিশ ছুঁয়েছে—তবুও সৌন্দর্য যেন পিছু ছাড়ছে না তার। বরং দিন দিন আরো আকর্ষণীয়া হচ্ছে সে। চাঁপা ফুলের মতো গায়ের রং—একবার তাকালে মনে হয় আবার তাকাই। সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঈর্ষণীয় শারীরিক গঠন এলিনার। সবসময় সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনে অভ্যস্ত সে। তাই একটু অতিরিক্ত সচেতন তাকে হতেই হয়। নিয়মিত জিমে যায়। আজও সেই পুরনো এবং আকর্ষণীয়া এলিনার প্রতিনিয়তই নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান রহস্য হচ্ছে শরীরচর্চার কঠোর অনুশীলন এবং পরিমিত পরিমাণে সঠিক খাদ্যগ্রহণ।

ইমরান একবার রজার্সের দিকে আড় চোখে দেখে নিয়ে এলিনাকে ইশারায় আস্বস্ত করল। তারপর প্রসঙ্গ বদলে বলল, ‘সো হোয়েন আর ইউ টু গেটিং ম্যারেড?’

রজার্সের কপালে এবার চিন্তার সূক্ষ্ম রেখা দেখা দিল। সে ইতস্তত করছে—কী বলবে বুঝতে পারছে না। এলিনা আবারো তাকে উদ্ধার করল। সে বলল, ‘উই আর থিঙ্কিং জানুয়ারী… বাট উই রিয়েলি ডোন্ট হ্যাভ এ ডেট সেট ইয়েট।’

ইমরান বলল, ‘আই থিঙ্ক জানুয়ারী ইজ এ ওয়ান্ডারফুল মান্থ টু গেট ম্যারেড—দ্য স্টার্ট অফ দ্য নিউ ইয়ার…’ ইমরান তাকাল রজার্সের দিকে। ‘ইউ এগ্রি উইথ মি, রজার?

রজার্স অন্যমনস্ক ভাবে তাকিয়ে আছে উপরতলার দিকে। মনে হচ্ছে তার চোখ কিছু একটা খুঁজে ফিরছে। ইমরান আবার বলল, ‘ইউ আর নট সেয়িং এনিথিং। আর ইউ নট কমফোরটেবল?’

‘নো। ইয়েস। আই’ম জাস্ট ফাইন। আই’ম এঞ্জয়িং ইয়োর কনভার্সেশন।’ ইমরানের দিকে ঘুরে রজার্স বলল।

‘আর ইউ এগ্রি উইথ মি?’

‘এগ্রি?’ রজার্স আবার খেই হারিয়ে ফেলল। তার চেহারায় দ্বিধা স্পষ্ট। সে বলল, ‘ওহ, ইয়েস, ইয়েস। আই ডু। আই ডু এগ্রি উইথ ইউ।’

এলিনা একটু অবাক হয়ে তাকাল দ্বিধাগ্রস্ত রজার্সের দিকে। তারপর ইমরানের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অস্থিরতার সাথে বলল, ‘ইরিন আসছে না কেন এখনো? আমি কি উপরে একবার যেয়ে দেখব?’

‘আই’ম হিয়্যার।’

দূর থেকে ইরিনের কণ্ঠ শোনা গেল। সবাই ঘুরে দেখল ইরিন নেমে আসছে সিঁড়ি দিয়ে। ইরিনের বয়স চৌদ্দ বছর। মায়ের রূপ পেয়েছে—দেখতে ভীষণ মিষ্টি। তবে স্বভাব হয়েছে বাবার মত। কিছুটা একরোখা এবং রুক্ষ্ম। অল্পতেই রেগে যায়। অন্তর্মুখী স্বভাবের একটি মেয়ে ইরিন। তার চাপা স্বভাবের কারণেই সবার সঙ্গে খোলা-মেলা ভাবে মিশতেও পারে না। বেশিরভাগ সময়ে একা একাই সময় কাঁটায় সে।

ইরিন ধীর পায়ে হেঁটে এসে দাঁড়াল এলিনার পাশে। এলিনা উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরল ইরিনকে। বেশ কিছুক্ষণ জোর করে চেপে ধরে রাখল। তারপর ছেড়ে দিয়ে কানে কানে বলল, ‘তুমি রজার্সকে হাই বলবে না?’

ইরিন কিছু বলল না। কোনো রকম আগ্রহও দেখাল না—সে রজার্সের দিকে শীতল দৃষ্টিতে একবার তাকাল শুধু।

রজার্স ইরিনের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক একটা সৌজন্য হাসি দিল। ইরিন সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করল না। রজার্স আস্তে করে বলল, ‘হাই ইরিন—ইউ লুক বিউটিফুল।’

ইরিন এবারও কোনো উত্তর দিল না। সে নির্লিপ্তভাবে এলিনার পাশের চেয়ারে বসে রইল চুপচাপ। ইরিনের বসার ভঙ্গিতে মনে হচ্ছে সেও একজন অতিথি।

এলিনা একটু লজ্জিত হলো—একইসাথে বিব্রত বোধ করল। ইরিনের এভাবে রজার্সকে উপেক্ষা করার ব্যাপারটাকে তার মোটেও ভাল লাগেনি। সে মাঝে মাঝেই রজার্সের দিকে তাকিয়ে তার মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছে। রজার্সের চেহারা দেখে অবশ্য কিছু বোঝা যাচ্ছে না।

রজার্সের সঙ্গে এলিনার সম্পর্কটাকে ইরিন মেনে নিতে পারেনি। সেটা ঠিক আছে—মেনে না নেয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে সামান্যতম সৌজন্যতাটুকু দেখাবে না—এটা কেমন কথা। একজন অপরিচিত মানুষকেও তো মানুষ সালাম দেয় কিংবা হ্যালো বলে। ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেলেও এলিনা হাসি হাসি মুখ করে ইরিনের দিকে তাকিয়ে ভ্রূ উঁচু করল।

ইরিন তবুও কিছু বলল না। সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে শূন্য দৃষ্টিতে খাবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে রইল। দেখে মনে হয় জগতের কোনো কিছুর প্রতিই তার কোনো আগ্রহ নেই। শুধু শূন্য প্লেটটির দিকে তাকিয়ে থাকাটাই হচ্ছে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ।

ইমরান তাকাল ইরিনের দিকে। মেয়েটির মনের মধ্যে দিয়ে কিছু একটা হচ্ছে—সেটা আর কেউ না বুঝলেও সে বুঝতে পারছে ঠিকই।

ইরিন ইমরানের দিকে তাকিয়ে মৃদূ কণ্ঠে বলল, ‘ডিনার কি রেডি বাবা?’

‘অবশ্যই রেডি! এক মিনিট—এক্ষুণি নিয়ে আসছি।’ বলেই সে দ্রুত কিচেনে গিয়ে ঢুকল।

ওভেনের ডালা খুলে ইমরান দেখল সবকিছু ঠিক আছে কিনা। দুহাতে মোটা কিচেন গ্লাভস পড়ে, টং এর সাহায্যে সে তার বিখ্যাত বিফ স্টেক লোফের ট্রেটি বের করে আনল। অতঃপর মেটাল টংটি ৪৫০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রার জ্বলন্ত ওভেনের ভিতরে রেখে ওভেনের ডালা লাগিয়ে দিল সে। কাজটি কী সে ভুল করে করল নাকি ইচ্ছাকৃত ভাবেই তা অবশ্য তার চেহারা দেখে বোঝা গেল না।

ইমরানের ঠোঁটের কোণে ঈষৎ একটি হাসির রেখা ফুটে উঠে নিমেষেই মিলিয়ে গেল।

ফরহাদ হোসেন
লেখক-নির্মাতা
ডালাস,টেক্সাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *