ক্ষরণ ( ৫ম পর্ব )

                        "Mom what's happened?"

পাশে দাঁড়ান মেয়ের কথা ভুলেই গিয়েছিলেন রোজী মার্গারেট। “এত কষ্ট করে তোমাকে বাংলা শেখালাম ছোটবেলা থেকে, তাও ইংলিশটাই চলে আসে মুখে তোমার! অন্তত আমার সাথে বাংলা টা বল জেসি! “

“আচ্ছা আর বলবনা।” ঈষৎ সোনালী চুল দুলিয়ে হাসল সে। “তুমি তো বললে আমাদের নিতে লোক আসবে, কোথায় সে?”

“আসবে। বাংলাদেশের রাস্তায় অনেক জ্যাম হয়, তাই হয়ত দেরী হচ্ছে।”

হালকা সবুজ রঙের জ্যাকেট পড়া ২৮/৩০ বছরের একটা ছেলে এগিয়ে এলো — “এক্সকিউজ মি ম্যাম, আমি জামান আহমেদ। আপনি রোজী মার্গারেট?”

“হ্যা।” রোজী তাকিয়ে রইলেন কয়েক সেকেন্ড। “মন্টু আসেনি?”

“স্যার একটা জরুরী কাজে আটকে গেছেন, বলেছেন আপনাদের নিয়ে যেতে, চলুন!”

অভিজাত হোটেলের একটি সুসজ্জিত কক্ষসংলগ্ন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে রোজী, নীচে আলোকিত শহর। রাস্তার ঘন জ্যামে জমা হওয়া গাড়ী গুলো সারি বাধা পিঁপড়ের মত লাগছে। চোখ ধরে এল। ঘুমন্ত মেয়ের দিকে তাকালেন। লম্বা জার্নিতে ক্লান্ত সে। ঠাণ্ডা লাগছে অল্প অল্প। শীত চলে এসেছে এখানে। শহুরে কোলাহল আর যান্ত্রিকতায় সেটা অনুভূত হয়নি এতক্ষণ। পাতলা একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিলেন। অনেক রাত এখন! আকাশের দিকে তাকিয়ে মন টা কেমন বিষণ্ণ হল। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে লন্ডনের বিশাল আকাশ বহুবার দেখেছেন তিনি। এই আকাশ টা বাংলাদেশের, শুধু এই বোধ টাই তার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ বদলে দিচ্ছে বারবার। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। ক্লান্ত লাগছে। আজকাল শরীর মন একই ছন্দে এগোতে পারেনা। ঘুম নেমে আসছে সমস্ত শরীর জুড়ে।

পুরো শপিং মল ঘুরে একগাদা অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ফেলল জেসি। যাই দেখছে উচ্ছাসিত হয়ে কিনছে। দোকানের লোক গুলো ঠকাচ্ছে, বুঝতে পারছেন রোজী। জামান ছেলেটি এসেছে তাদের সাথে। ছেলেটা এই ভরদুপুরে জ্যাকেট পড়ে আছে কেন কে জানে! ইশারায় ডাকা মাত্র ছুটে এল সে — “ম্যাডাম বজ্জাত দোকানদার গুলো জেসি ম্যাম কে ঠকাচ্ছে, উনি বুঝতে পারছেন না।” তার গলায় দারুণ উদ্বেগ।

রোজী হাসল — “বুঝতে পারছি, কিন্তু মেয়েটা এত আনন্দ নিয়ে কেনা কাটা করছে দেখতে ভাল লাগছে।”

“কিন্তু ম্যাডাম টাকা গুলো নষ্ট হচ্ছে। পাঁচ টাকার জিনিস পঞ্চাশ টাকা নিচ্ছে!”

“বাদ দাও। আমরা লাঞ্চ করব কোথায়? ভাল দেশী খাবার পাওয়া যায় এমন একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে চল।” জামান ছেলেটা একটু বোকা সোকা। তবে কাজের অনেক। বহুদিন পড়ে পুরোপুরি বাঙালি স্বাদের খাবার খেলেন। সেই চেনা স্বাদ, গন্ধ! হঠাৎ অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে চলে গেলেন তিনি। ছোট্ট একচালা একটা ঘর, সামনে বেড়া দেয়া হলুদ গাঁদা ফুলের গাছ, শান্ত ছায়া ঘেরা সবুজ কচুরিপানায় ঢাকা একটা পুকুর, পুকুর ঘাটে ঘোমটা দেয়া মায়ামাখা একটা মুখ, সূর্যের আলোয় তার নাকছবির ঝিলিক! কানে অনবরত বাজছে —- ম্যাডাম! ম্যাডাম! মৃদু ঝাঁকুনিতে সম্বিৎ ফিরে পেলেন। জেসি কাঁধে হাত রেখে উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে আছে — “কি হয়েছে মা! শরীর খারাপ লাগছে?”

রোজী হাসলেন — “না, ঠিক আছি। চল উঠি।”

১০.

কখনো কখনো শরীরের উত্তাপ অনুভব করতে স্পর্শের প্রয়োজন হয়না। ফিরোজা বেগমের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ চোখে এখন আতঙ্ক। মমতাজের মাথায় ক্রমাগত পানি ঢালা হচ্ছে। তার চোখ রক্তবর্ণ, উত্তাপের আঁচে সারা মুখ লালচে, অনবরত প্রলাপ বকছে সে। মমতাজের এমন ভয়ংকর অবস্থা দেখে দিশেহারা ফিরোজা বেগম। একমাত্র ছেলের মৃত্যু শোক ছাপিয়ে তাকে গ্রাস করছে অন্য এক আশংকা। ধীরে ধীরে দাঁড়ালেন রুমীর ঘরের দরজায়। বাবলু শক্ত করে ধরে আছে বোনের হাত। মুছিয়ে দিচ্ছে চোখের পানি। এই চরম বিপর্যস্ত সময়ে এই দৃশ্য টুকু অতি সামান্য হলেও স্বস্তি দিল তাকে। সামনের বারান্দায় বিছানো পাটিটায় বসলেন তিনি। ছেলেটা চইলা গেল তারে ছেড়ে, কেমন করে! গোসল করাইয়া কাফনে জড়াইয়া তারে সবাই শুইয়ে দিল খাটে। মুখটার দিকে তাকাইয়া ছিলেন, কি স্নিগ্ধ হাসি হাসি মুখ! ঘুমালেও খোকারে এমনই দেখাতো। বিশ্বাস হইতেছে না ছেলেটা নাই। কাচারি ঘরে চুপচাপ বসে থাকত, কথা কইত না তেমন, তবুও তো ছিল! ডাক্তার বলছিল হার্ট এটাক হইছে। সে বোঝে, বুকের মধ্যে কষ্ট জমতে জমতে পাহাড় হইয়া গেছিলো। সইতে না পাইরা দম ফাইট্যা মইরা গেল খোকা! কত যন্ত্রনা বুকে নিয়া চইলা গেল বাবায়! অসহ্য যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যাচ্ছে শরীরটা, আর্তনাদ করলেন তিনি– “খোকারে!”

গত তিনদিনে প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া এ ঘর টা থেকে একবার ও বের হয় নি রুমী। খাবার বলতে বাবলু জোর করে যা মুখে দিয়ে দিয়েছে তাই। জানালা দিয়ে মাকে দেখতে পেল, কেমন শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ ফিরিয়ে নিল সে। দাফন দেবার পর থেকে এ কদিনে মায়ের সাথে একবারও দেখা হয়নি তার। শেষ বারের মত দেখার জন্য তাকে ধরে যখন বাবার লাশের কাছে নিয়ে গেল সবাই, মা তখন আচমকা চিৎকার করে উঠলেন — “খবরদার! তুই ধরবিনা! একদম দেখবিনা তুই! তুই ডাইনী, অপয়া! তুই মেরে ফেলেছিস তারে!”

অবাক বিস্ময়ে সে শুধু তাকিয়ে ছিল, কেমন জমে গিয়েছিল শরীরটা। নড়তে পারছিল না। মাথার মধ্যে শেষ কথা টুকু আটকে গেল। কেউ যেন অনবরত বলেই চলেছে — “তুই মেরে ফেলেছিস! তুই মেরে ফেলেছিস!” অসহ্য যন্ত্রণায় পাগল হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। বাবলু জড়িয়ে ধরেছিল তাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে, চোখ মুছে দিয়েছিল। প্রবল শোক কখনো কখনো মানুষের সম্পর্কগুলোর মধ্যে সৃষ্ট ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয়। জানালা থেকে আসা শীতল বাতাস চোখেমুখে লাগতেই কেঁপে উঠল সে।

শোক যতই গভীর হোক না কেন, সময় তাকে প্রলেপ দিয়ে চলে আপন গতিতে। বাবলু আজ স্কুলে গিয়েছে। রুমী নিঃশব্দে বাইরে এলো। খিদে পেয়েছে খুব। রান্নাঘরে মা কে দেখতে পেয়ে সরে এলো। মুখোমুখি হতে চায়না সে। নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়ল চুপচাপ। কপালে স্পর্শ পেতেই চমকে উঠল। গা ঘেঁষে বসলেন ফিরোজা বেগম। “তোরে একটা জরুরী কথা কইতে চাই, তোর মায়ের মাথায় মনে হয় গণ্ডগোল দেখা দিছে, খুবই চিন্তার বিষয়! গতকাল সকালে দেখলাম চায়ের কাপ হাতে নিয়া কাচারি ঘরে গেছে। গভীর শোক পাইলে মানুষ এমন করতে পারে, তাই অবাক হই নাই। আমি পেছন পেছন গেলাম। জানালা দিয়া দেখি একা একা কথা কয়, এমন ভাবে কয় যেন তোর বাপে সামনে বইসা আছে। আজ সকালেও একই কাজ করছে। জানালায় আমারে দেইখা আবার শরমও পাইলো। কি করি ক’তো? কাল থেইকা আমি দুশ্চিন্তায় শেষ! এই শরীরে এত চাপ আর নিতে পারিনা। “

উঠে বসল রুমী। মায়ের প্রতি যে অভিমান জমা হয়েছিল, তা কেটে গেল নিমিষেই। বরং তীব্র মায়ায় মন আচ্ছন্ন হল। একটা কাজ জোগাড় করতে হবে, যেভাবেই হোক। মাকে ডাক্তার দেখাতে হবে। মাথার মধ্যে অনেক গুলো ভাবনা একসাথে জট বাঁধতে লাগল। থমকে যাওয়া জীবন টা যেন চলতে শুরু করল আচমকা। দ্রুত তৈরী হয়ে বাইরে বেরোলো সে। এখন পোস্ট অফিসে রওনা দিলে বিকেলের আগে ফিরে আসা যাবে। পুকুরপাড়ের সরু রাস্তাটা ধরে এগোতেই তিনজন অপরিচিত মানুষ কে দেখতে পেল। এদের একজন পুরুষ, দুজন মহিলা। তাদের মধ্যে একজন বিদেশী। টকটকে ফর্সা গায়ের রঙ, চুল গুলো সোনালী।

১১.

বেশ দূরত্ব রেখে একদল কৌতুহলী মানুষ অনুসরণ করছে আগন্তুকদের। তাদের মূল আগ্রহ সোনালী চুলে। পুকুরপাড় পর্যন্ত এসে তারা থামল। রুমী দাঁড়িয়ে রইল স্থির হয়ে। পাশের বাড়ীর গফুর চাচাও ছিলেন একটু পেছনে, খেয়াল করেনি এতক্ষণ সে। চাচা এগিয়ে এলেন এবার সামনে। “তগো বাড়ীর ঠিকানা দেখাইয়া কইল নিয়া আসতে, দেখতো চিনোস কিনা?”

বিস্মিত রুমীকে আরও হতবাক করে দিয়ে সোনালী চুলের মেয়েটি শুদ্ধ বাংলায় বলল —- “তুমি নিশ্চই রুমী?”

কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইল, উত্তর দিতে পারলনা সে। তেইশ বছরের সমস্ত স্মৃতি, সম্পর্ক হাতড়ে কোথাও কিছু পেলো না, যার সাথে এদের কোন যোগসূত্র আছে। সে মাথা নাড়ল – “হ্যা, আমিই রুমী।” মাঝবয়সী সুন্দরী মহিলা টি সম্ভবত মেয়েটির মা। তিনি অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছেন। রুমী ধাতস্থ হল — “কিছু মনে করবেন না, আমি ঠিক চিনতে পারছিনা আপনাদের।”

ভদ্রমহিলা হাসলেন — “আমি কি তোমার বাবার সাথে একটু দেখা করতে পারি?”

রুমী তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ — “আসুন।”

সামনের ঘরের আসবাব বলতে চারখানা চেয়ার আর ভাঙা চোরা একটা চকি। নিখুঁত আধুনিকতার পলিশে আবৃত সুসভ্য মানুষ গুলোকে বসতে দেয়ার উপযুক্ত কোন জায়গা এবাড়ীতে নেই। চাপা অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল রুমী। মাথার মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। যার কেন্দ্রবিন্দু এদের পরিচয়। “বাবা নেই। মারা গেছে আজ আট দিন।” মৃদু স্বরে বলল সে।

একই সংগে তিনজন বিস্মিত হয়ে তাকালো । হঠাৎ নিরবতা নেমে এলো ঘরটায়। খবরটা অপ্রত্যাশিত। খানিক বাদে উঠে দাঁড়ালেন রোজী। অবনত মাথায় স্পর্শ পেতেই মুখ তুলল রুমী । “হঠাৎই মারা গেলেন, সুস্থই ছিলেন। দুপুরে খেতে ডাকতে গেলাম ঐঘরে………
গলা ধরে এলো রুমীর। “বসুন আপনারা, মা আর দাদীকে ডেকে আনি।”

ভেতরের ঘরে পা রাখতেই ছুটে এলেন উদ্বিগ্ন ফিরোজা বেগম– “এরা কারা? কি চায়? কোন আপদ ডাইকা নিয়া আসছোস ঘরে?”

“আহ! দাদী আস্তে বল! এরা কারা আমিও বুঝতে পারছি না। বলবে নিশ্চয়ই। কি চায় তাও বলবে। মাকে নিয়ে আসো, এরা কথা বলতে চায়।”

“তোর মা ঘুমায়, তার শরীর ভালনা। তাছাড়া মাথাও ঠিক নাই! তুই কথা ক’। এত ভেজালের দরকার কি!”

সামনের পাটি বিছানো চকিটায় বসলেন ফিরোজা বেগম, পাশে রুমী। বাবলু সবেমাত্র স্কুল থেকে ফিরেছে। বিস্ময় আর কৌতুহল নিয়ে সেও দাঁড়াল পাশে। রোজী সবার দিকে তাকালো একবার, সবাই অপেক্ষা করছে। সে গুছিয়ে নিল নিজেকে। “আমি রোজী মার্গারেট। ও আমার মেয়ে জেসি মার্গারেট। এই ছেলেটি আমাদের গাইড বলতে পারেন, ভাল ছেলে। আমরা লন্ডন থেকে এসেছি বিশেষ একটা কারনে। আমার মেয়ে পেশায় একজন ব্যারিস্টার। দুবছর আগে ডিগ্রী নিয়েছে। এখন প্রাকটিস করছে ওখানে।” থামলেন তিনি। উৎসুক চোখে তাকানো তিনটি মানুষের দিকে তাকালেন আরো একবার। “আমি খুব স্পষ্ট কথা বলি, তাই সোজাসুজি বলছি, আমি আমার মেয়েকে দিয়ে রুমীর কেস টা লড়তে চাই।”

বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে গেল রুমী। তার চোখ বিস্ফোরিত। কয়েক সেকেন্ড কথা বলতে পারলনা সে। ” কক্ষনো না। এটা অসম্ভব। মরে গেলেও এই কেস আমি লড়ব না।”

রোজী মাথায় হাত রাখলেন — ” আমার পুরো কথা টা আগে শোন মা!”

“না প্লিজ! এবিষয়ে আমি আর একটি কথাও বলতে চাই না। আপনি কিছুই জানেন না। এ পর্যন্ত যা হয়েছে, সব শুনলে আপনি কখনোই একথা বলতেন না। তাছাড়া আপনি দেশের বাইরে থাকেন, এখানের পরিস্থিতি গুলো কেউ চাইলেও আপনাকে বোঝাতে পারবেনা। আমরা একরকম পালিয়ে চলে আসছি এখানে জীবন বাঁচাতে, আমার ভাইকে বাঁচাতে। কোন ভাবেই আমি আর তাদের বিপদে ফেলতে পারব না।”

“আমি জানি, প্রতিটা ঘটনা জানি। থানার বিষয় গুলো, তোমার ভাইয়ের ঘটনা, সব। ইনফ্যাক্ট তোমার চোখের আড়ালে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ও।”

বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইল রুমী। “কে আপনি?”

হাসলেন রোজী, “তুমি এত সহজে রাজি হবেনা এমন ভেবেই এসেছিলাম আমি। তাই হতাশ নই। তবে কেস টা লড়লে তোমাদের নিরাপত্তার বিষয় টা এবারে নিশ্চিত ছিল কিন্তু! খুলে বলি, মামলা চলাকালীন তোমার পরিবার টা একটা নিরাপদ জায়গায় থাকত, প্রয়োজন বোধে আদালত থেকে নিরাপত্তার পারমিশন নেয়া হত। তুমিও পুরোটা সময় থাকতে পুলিশের নিরাপত্তায়। আমরা শুরু থেকেই গুছিয়ে নামতাম। তারপর কেস জিতলে তোমরা আবার চলে আসতে এখানে। আর আমি ফিরে যেতাম আমার গন্তব্যে।”

তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বসে পড়ল রুমী। “আপনাকে কে বলল কেস টা জিতবেন? এত সোজা? এতদিন পর কোন কথা নাই বার্তা নাই , ফট করে কেস জিতে যাবেন? কোন দুনিয়ায় আছেন আপনি?”

“হ্যা, জিতে যাব।”

“আপনি তো বললেন সব জানেন! তাহলে নিশ্চয়ই এটাও জানেন ওরা কারা? কত ক্ষমতা ওদের! সত্যি করে বলেন তো কে আপনি? আর এখানের ঠিকানা পেলেন কোথায়? “

“বোকার মত কথা বললে রুমী। এত কিছু যখন জানি, তখন ঠিকানা টা কি আমার জন্য কোন বড় বিষয়?”

” আমি একটা কথা বলতে চাই মা, এই কেস টা চালাইলে আপনার কি লাভ? আপনার পরিচয় কি?” ফিরোজা বেগমের চোখে সন্দেহ স্পষ্ট।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল রোজী — “লাভ! হ্যা লাভ একটা আছে!”

দৃষ্টিতে সন্দেহ দ্বিগুণ হল। মহিলারে তার গোলমেলে লাগতেছে, কোন ঘাপলা তো নিশ্চয়ই আছে। ” আপনারে মানে আপনার মেয়েরে টাকা দিতে হইব না? আমাগো তো টাকা পয়সাও নাই!”

“না, দিতে হবে না। আপনার নাতীর কেস টা বিনা পয়সায় লড়বে আমার মেয়ে।”

উঠে দাঁড়ালেন ফিরোজা বেগম – ” আজিব ব্যাপার! আপনি চইলা যান! আমরা এব্যাপারে রাজি না।”

রোজী রুমীর দিকে তাকালেন – “কেস টা আমরা জিতব রুমী, সে নিশ্চয়তা আমি তোমাকে দিচ্ছি। প্লিজ রাজি হও। আমি বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থা। তবুও বলব তুমি সময় নাও, ভেবে দেখ। এভাবে পালিয়ে মৃত লাশের মত জীবন কাটাবে, নাকি মাথা উঁচু করে বাচবে! সিদ্ধান্ত তোমার কাছে, ভাবো তুমি। ফোন নম্বর টা রেখে যাচ্ছি। মত বদলালে জানিও।”

“কোন প্রয়োজন নেই। আমি সিদ্ধান্ত বদলাব না। কোন অবস্থাতেই না। আমার কারনে আর কাউকে বিপদে ফেলতে পারব না আমি!” রুমী বাবলুকে জড়িয়ে ধরল কাঁদতে কাঁদতে। চোখ মুছে শান্ত হল সে। আমি তো মত বদলাবো না, তাই আপনাদের সাথে আর হয়ত দেখাও হবেনা। কিন্তু সারাজীবন মনে একটা প্রশ্ন থেকে যাবে, কে আপনি, কেন সাহায্য করতে চাইছেন আমাদের? প্লিজ বলেন!”

উঠে দাঁড়ালেন রোজী, “কেস টা যদি লড়তে, আমরা অবশ্যই জয়ী হতাম। লন্ডনে ফিরে যাবার আগে আমি নিশ্চয়ই বলতাম আমি কে, কেন এসেছিলাম, কেন সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ বলাটা অবান্তর! আসি। ভাল থেকো তুমি। যদিও এভাবে ভাল থাকা যায়না, কখনো না।”

অনেক টা পথ এগিয়ে যাবার পর রুমী হঠাৎ পেছন পেছন ছুটে গেল তাদের, ” এখন তো সন্ধ্যা প্রায়, আপনারা পথ ঘাটও ভালভাবে চেনেন না। ফিরবেন কিভাবে?”

রোজী হাত ধরলেন – “চিন্তা করোনা, আমরা গাড়ী নিয়ে এসেছি। তুমি অনেক ভাল মেয়ে রুমী। পথের শেষ বুঝতে খুব বেশী দূর হাঁটতে হয়না। আমি সত্যিই চেয়েছিলাম পাশে দাঁড়াতে। বিশ্বাস কর, কোন স্বার্থ নেই আমার!”

হাত ছেড়ে দিল রুমী। শেষ বিকেলের আলো ম্লান করে নেমে আসা ক্রমশ অন্ধকারে একসময় মিলিয়ে গেল মানুষ গুলো।

-নাঈমা পারভীন অনামিকা

                                        চলবে........

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *