খোকা আর ফিরে আসেনি

কতোদিন হয়ে গেলো খোকা আর ফিরে এলো না,
কত রাত্রি প্রহর হলো তার আওয়াজ শোনা হয় না বৃদ্ধা মায়ের।
যে খোকা সারা পাড়া অস্থির করে রাখতো, তাকে ছাড়া
আজ পাড়াটা বড্ড শান্ত।
ষোল ডিসেম্বর আজ, মায়ের অপেক্ষার অনেক বছর।
খোকা ফিরবে এই বিশ্বাস নিয়ে আজও অপেক্ষা মায়ের।

তখন ১৯৭১ এ মার্চ মাস, খোকার অস্থির পায়চারি।
বাবা তুই এত অস্থির কেন আজ? প্রশ্ন বৃদ্ধ মায়ের।
দেশের ভেতর হায়েনার দল বাসা বেঁধেছে,আমাদের দেশে এসে ওরা আমাদের রক্ত মাংস নিয়ে খেলছে মা, বাঁচতে হলে ওদের তাড়াতে হবে। আমি যুদ্ধে যাবো মা।
মায়ের নীরব আপত্তি মানেনি খোকা, চিৎকার করে বলেছে..
কি বলছো মা? এখন নিজের কথা ভাবার সময় নেই।
এই দেশ থেকে শত্রুমুক্ত করা ছাড়া আমাদের বসে থাকার সময় নেই। 
প্রতিদিন কত নিরীহ মানুষ মরছে, আমার মা বোনেরা ধর্ষিত হচ্ছে, কোন কাপুরুষ ঘরে বসে থাকতে পারে না।
অবশেষে খোকা যুদ্ধ গেলো,
মা দোয়া করে শেষবার বুকে জড়িয়ে নিলো খোকাকে।
আমি ফিরবো মা, একটা নতুন পতাকা নিয়ে,
একটা নতুন ভোর নিয়ে আমি ফিরবো।

একদিন দুইদিন কতোদিন হয়ে গেলো, যুদ্ধ শেষ হলো আর ফিরে আসা হলো না খোকার।
ফিরে এলো রক্তাক্ত খোকার শার্ট আর দুটি চিঠি,
একটা মায়ের জন্য আর একটা প্রিয়তমা শরিফার জন্য,
যে শরিফাকে ভালোবাসতো খোকা, কথা ছিলো যুদ্ধের পরে ওদের সংসার হবে।
খোকা যুদ্ধে যাওয়ার কয়েকদিন পর শরিফা হানাদার বাহিনীর হাতে ধর্ষিত,অতঃপর শরিফা নিহত হলো।
শরিফার জন্য লেখা চিঠি আজো পড়া হলো না, কেবল মাকে লিখেছিলো খোকা, আজ একটা অপারেশনে যাচ্ছি মা, দোয়া করো।
তারপর বিজয় নিয়ে ফিরবো, সর্ষে ইলিশ আর শুটকি ভর্তা করে রেখো।
গরম গরম ভাত দিয়ে স্বাধীন দেশে বসে খাবো।
মায়ের অশ্রু থামেনি, খোকা আর ফিরেনি। সে রাতেই সে শহীদ হয়ে গেছে।
আজ স্বাধীনতার এত বছর পরও মা সর্ষে ইলিশ আর শুটকি ভর্তা খায়নি।
কোনদিন আর খাবে না, খোকার বড্ড প্রিয় ছিলো।
অপেক্ষা আজো মায়ের একদিন হয়তো ফিরবে খোকা।
এই অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না মায়ের।

নিলয় আহমেদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *