গন্তব্য (৩য় এবং শেষ পর্ব)

গাঁয়ের পথের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে দিশা আর অরণ্য, কিন্তু কোথাও দিশার কল্পনার সেই ভাঙা জমিদার বাড়ি কিংবা শান বাঁধানো পুকুরঘাট নেই। আসলে কল্পনার সাথে বাস্তবতার বিস্তর তফাৎ। কল্পনায় ডানা মেলে নীল আকাশে ওড়া যায় কিন্তু বাস্তবে? সেই আধা ভাঙা চৌকিতে শুয়ে ভাঙা চালের ফাঁকে চাঁদ দেখার অবস্থা।
একটা নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষদের গ্রাম এটা, টিনের ঘরই এ গ্রামের সর্বোচ্চ ভালমানের ঘর, যতদূর অরণ্য দিশার চোখে পড়েছে আরকি!
কাছেই দুইটা মধ্য বয়সী মেয়ে দিশা আর অরণ্যকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছিল আর মিটি মিটি হাসছিল।
দিশা একটু এগিয়ে গিয়ে মিষ্টি করে ডাকে,”আপু শোন! ”
— জে বলেন,
— এ রাস্তাটা কোন পযর্ন্ত গিয়েছে?
— ওই সামনের নদীর পাড় পর্যন্ত,এর পরে আর যাওয়া যায় না। আপনারা কই যাবেন?
— না, আসলে আমরা ওই নদীর পাড় পর্যন্তই যাব। আচ্ছা ভাল থেক। ধন্যবাদ তোমাদের
দিশা অরণ্যের কাছে এসে জানায় সামনে নদী আছে,তারা সেখানেই যাবে।
মেয়ে দুইটা অবাক হয়, এতদূর কি তারা শুধু নদীর খোঁজে এসেছে?
বেশিদূর হাঁটতে হয়নি, মিনিট দুয়েক এগোতেই একটা ছোটনদী চোখে পড়ে দিশার। নদীর স্বচ্ছ পানি আর নদীর তীরে সদ্য ফোঁটা কাশফুল দেখে দিশা উচ্ছসিত হয় অবিরাম।।
সূর্যটা ঢলে পড়ছে পশ্চিমাকাশে, অস্ত যেতে আর বেশি সময় বাকি নেই। শরতের নীল আকাশে সূর্য তার লালিমা ছড়িয়ে দিয়েছে দিগন্তে।
নদীর পাড়ে বসে দুজনে সূর্যাস্ত দেখেছে।
—তোমার বেটার হাফের নাম কি, অরণ্য?
— মৌ, অফসানা খানম মৌ
— ওহ্, নাইস নেইম।দেখতেও নাইস তাই না?
— দেখবে মৌ কে?
শীতল চোখে দিশা অরণ্যের দিকে তাকায়,
— কদিন আছো এখানে,দিশু?
— অাগামী ফ্রাইডে পর্যন্ত
—চল উঠি, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। ওহ্ দিশা এ চকলেটটা তোমার জন্য।
অরণ্য দিশার জন্য পিনাট নিয়ে এসেছে, পুরাতন অভ্যেস কিনা!
ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসছে পৃথিবীর বুকে। দু একটা নিয়ন আলো জ্বলে উঠছে দূরপ্রান্তে কিংবা শহরের বুকে। দূর থেকে তাদের জোনাকির অালো মনে হয়।
রিক্সা ডেকে দিশাকে রিক্সায় তুলে দেয় অরণ্য।
“আবার দেখা হতে পারে আমাদের? ” অরণ্য দিশাকে আনমনে প্রশ্নটা করে নেয়।
ইতস্তত করে  দিশা উত্তর দেয়,”হুম! হ্যাঁ হতে পারে।”
— কখন?
— সেটা পরে জানা যাবে,ভাল থেক।
রিক্সা ছুটে চলেছে শহরের নিয়ন আলোর মধ্য দিয়ে,অরণ্যের গতিপথ ঠিক তার উল্টো দিকে।
দুজনের মনেই এখন বয়ে চলেছে হাজার মাইল বেগে ঝড়ো হাওয়া। দিশার চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়েই পড়েছে ইতোমধ্যে
। ব্যস্ত শহরে কারোর চোখে পড়ছেনা সে আবেগ।
দুজন দুজনকে পাগলের মত ভালবাসতো, কখনো একজন অন্যজনকে ছাড়া জীবনপথ পাড়ি দেয়ার কথা ভাবতেই পারেনি। অথচ ভাগ্যের খেলায় হেরে গিয়ে দুজন দুপথের পথিক। ভাবতে ভাবতে দিশা বাসার সামনে এসে যায়। রিক্সা থেকে নেমে দরজায় এসে কলিংবেল চাপে
মনিরা ভাবী দরজা খুলে দিশাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরে, “দিশা, কেমন কাটলো তোর সময়টা? দুজনের মনের কষ্টের বোঝাটা কি কিছুটা হালকা হয়েছে? ”
দিশা স্থির মনে উত্তর দেয়,”তা কি এত সোজা ভাবী? ”
মনিরার মুখটা মলিন হয়ে আসে,” তা অবশ্য সোজা নয়। তা কোথায় গিয়েছিলি? ”
দিশা সংক্ষেপে উত্তর দেয়,”ওই লেকের ধারে। ফ্রেশ হয়ে কথা বলি ভাবী?”
চেইঞ্জ করে, ফ্রেশ হয়ে দিশা রুমের অালো নিভিয়ে শুয়ে আছে। মনিরা ভাবী এসে আলোটা জ্বেলে দেয়,”খাবিনা দিশা? ”
—তুমি ডাইনিং এ রেখে দাও,আমি পরে খেয়ে নিব।
—তোর ভাইয়া অপেক্ষা করছে তো, ভাইয়াকে তুমি ম্যানেজ করে নাও।
ভাবী জানে দিশার জেদের কাছে তার বিকার ঘ্যান ঘ্যান করে লাভ নেই।
অরণ্য আর দিশার প্রেমে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো অরণ্যের মায়ের ব্লাড ক্যান্সার। অাচমকা সামান্য অসুস্থতায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে উনার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে।
জমানো সমস্ত টাকায় উনার চিকিৎসা করানো হচ্ছে কিন্তু কোন উন্নতির চিহ্নমাত্র নেই। বন্ধু বান্ধব সবাই সহমর্মিতা নিয়ে অরণ্যের পাশে দাঁড়ায়। এরই ফাঁকে অরণ্য একটা চাকরির চেষ্টা করে, মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন।
দিশার মামার রেফারেন্সে একটা মাল্টিন্যাশনাল কেম্পানিতে ভাল পোস্টে চাকরি হয় অরণ্যের।
অসুস্থ অরণ্যের মা একদিন গ্রামের বাড়ি দেখতে যাওয়ার মনোবাসনা ব্যক্ত করেন।
অরণ্যও মায়ের ইচ্ছাপোষণে ছোটবোনকে নিয়ে আর মা কে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যায়।
সেখানে অসুস্থ ফুফুকে দেখতে আসে মৌ। মৃত্যুশয্যাগত অরণ্যের মা ভাতিজি মৌকে দেখে অরণ্যের সাথে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বোনের এমন সিদ্ধান্তে কিছুতেই অমত করেনি মৌ এর বাবা। সেদিনই কাজী ডেকে বিয়ে দেয়া হয় আফসানা মৌ আর অরণ্যের।
দিশা আর অরণ্যের প্রেমের কথা তার ভাইয়া তাহিন জানেন শতভাগ কিন্তু সে তার চাকরির পথটা সুগম করার জন্য তার কোম্পানির নতুন এমডির সাথে বোনের বিয়ে ঠিক করে, দিশার মনিরা ভাবী সে বিয়েতে বাঁধাও দেন নি আবার উৎসাহও দেন নি।
মনিরা ভাবীর শীতল ভূমিকার জন্য সে নিজেকে অরণ্য আর দিশার জীবনটা এলোমেলো হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী মনে করে। সেদিন মনিরাও স্বামীর ভাল অবস্থানে যেতে পারার লোভটা সামলাতে পারেনি। অরণ্যের শহর ছাড়ার অপেক্ষাতে ছিল তাহিন, তাই যেদিন অরণ্য তার মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি যায় সেদিনই সন্ধ্যেবেলা কোম্পানির নতুন এমডি রামিমের সাথে দিশার বিয়ে পড়ানো হয়,এমনকি সেদিনই দিশাকে রামিম তার নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে আসে। ঠিক রাত সাড়ে আটটায় দুদিকে দুজন প্রিয় মানুষ অন্যদুটি মানুষকে বিয়ে করে অথচ দুজন থেকে কেউ জানেনা তাদের জীবনের এ বিপর্যয়ের কথা।
দিশা অনেক যুদ্ধ চালিয়েছে এ বিয়ে আটকাতে কিন্তু বাপ মা মরা চঞ্চল দিশা তার ভাইয়ের ধমক চোখ রাঙানো আর গায়ে তোলার কাছে বেশি সময় টিকে থাকতে পারেনি,অন্যদিকে অরণ্যের তার মৃত্যুশয্যাগত মায়ের হুট করে নেয়া সিদ্ধান্তে নিজের ভালবাসাকে বলিদান করলো, নিরবে শুধু চোখের জল ফেলেছে। সে দিশার মত চিৎকার করে কাঁদতে পারেনি, সাড়া পাড়াকে জানাতে পারেনি যে সে দিশাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না কিন্তু দিশা? সে চিৎকার করে বলেছে,”অামি অরণ্যকে চাই,আমি অরণ্যকে চাই।”
ফুপিয়ে কেঁদে উঠে দিশা। পুরাতন অতীতটা মনে হলে সে এভাবেই কেঁদে উঠে।
তাহিনের প্রমোশন হল ভগ্নিপতির দয়ায়। কিন্তু দিশার উপর অত্যাচার বেড়ে যেতে লাগলো দিনের পর দিন। মুক্ত পাখির মত ডানা মেলে উড়া চঞ্চল দিশাকে বন্ধী কয়েদি হয়ে যেতে হল রামিমের বাড়িতে। মোবাইল, ফেইসবুক ব্যাবহারে কড়া নিষেধাজ্ঞা। কোনমতে অনার্সটা শেষ করে দিশা।
বিয়ের পর কখনোই ভাইয়ের বাসায় যায়নি সে। বাসা থেকে বের হওয়াও ছিল রামিমের মর্জির উপর ডিপেন্ডেন্ট।
নিজেকে হারিয়ে ফেললো দিশা,চলে রামিম আর তার মধ্যে শীতল সম্পর্ক। একে একে রামিমের সাথে কাটে তার বিবাহিত জীবনের সাড়ে তিনবছর। তাহিন ট্রান্সফার হয়ে তাদের অন্য ব্রাঞ্চে চলে যায় আর তাহিনের জায়গায় এসেছে এক সুন্দরী ডিভোর্সি রমনী। রামিম তার সাথে অনৈতিক সম্পর্ক রাখে সে প্রমান সে ধীরে ধীরে পেতে থাকে কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে গেলেই কপালে জুটে কিল,থাপ্পর আর ঘুষি।
ভাই তাহিনকে জানালেও সে চুপ থাকে তার চাকরির কথা ভেবে।
এভাবে অত্যাচারিত হতে হতে দিশা প্রতিবাদ করতে শিখে গেছে, গোপনে সিভি জমা দিয়ে একটা প্রাইভেট ব্যাংকে নিয়োগ পায় সে। সেদিনই শুরু হয় দিশার সাথে রামিমের সর্বোচ্চ কুৎসিত আচরণ,অরণ্যকে জড়িয়ে নানান কুকথা সব সসময় বলে যেত সে।কিন্তু সেদিন রামিম হিংস্রের মত আচরণ করে,সহ্য করতে না পেরে দিশা ডিভোর্স চায়। এক পর্যায়ে রামিম ডিভোর্স পেপার নিয়ে আসে আর দিশাকে শর্ত দেয় ডিভোর্স দেয়ার পর এক মিনিটও দিশা এ বাড়িতে থাকতে পারবেনা।
ডিভোর্স পেপারে সই করে দিশা শুধু তার সার্টিফিকেটগুলো আর মোবাইলটা নিয়ে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে আসে।
শুক্রবার, বেলা বারোটা। দিশার উদ্দেশ্য ছিল একটা আশ্রয়স্থল খুঁজে নেয়া। সন্ধ্যার আগে তাকে একটা মাথা গুঁজার ঠাঁই বের করতে হবে। এরই মাঝে তাহিনের ফোন আসে দিশার ফোনে,”কই তুই? রামিমকে নাকি তুই ডিভোর্স দিয়েছিস?
দিশা শীতলকন্ঠে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ। ” উতলা কন্ঠে ভাইয়ের থেকে ফোন নিয়ে মনিরা ভাবী কথা বলে,”তুমি এখন কোথায় দিশা? লক্ষীবোন আগে বাসায় আসো। ঠান্ডা মাথায় সব সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। বাসায় আসো প্লিজ। ”
দিশা উত্তর দেয়, “কোন বাসা? শত অত্যাচারিত হওয়ার পরও যে বাসার দরজা কোনদিন মাড়াইনি সে বাসা? কোনদিনও না। ”
দিশা অরণ্যকে ঘৃণা করেনি কোনদিন। দিশা জানতো তার মায়ের অসুস্থতায় অরণ্যের যে কি অসহায় অবস্থা তখন! কোন সন্তানই মায়ের ধীরে ধীরে মৃত্যুপথে এগিয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেনা, সেখানে মায়ের শেষ ইচ্ছে অপূর্ণ রাখে কি করে?
মৌ আর অরণ্যকে বিয়ে দিয়ে সেদিন রাতেই মারা যান অরণ্যের মা। অরণ্যের পৃথিবীটা যেন এক নিমিষে খাঁ খাঁ মরুভূমি হয়ে গেল তার।
অরণ্য আর দিশার একই ডেটে মেরেজ এনিভার্সেরি থাকায় প্রতিবছর এদিনে দিশা অরণ্যের সুখী জীবন কামনা করতো।
দিশা সেদিন তার কলিগের কাছে আশ্রয় পায়,সাবলেট থাকে তার কলিগের সাথে। মাস শেষে বেতন পেয়ে একটু একটু করে সাজিয়ে তুলে তার নিজস্ব একটা জীবন যে জীবনে অরণ্যর স্মৃতিটুকু ছাড়া কারোর অস্তিত্ব নেই। নিজের পায়ে দাঁড়ানো একটা মেয়ে কখনোই জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়না।
তাহিন আর মনিরা ভাবীর অনুরোধ আর জোরের কারণে দিশা এবার ঈদ করতে এখানে এসেছে।
ডিভোর্সের পর পাড়া প্রতিবেশি,পরিচিতজনদের কাছে দিশাকে নানান নোংরা কথাও শুনতে হয়েছে। পরিচিত কারোর সাথে দেখা হলে তারা অরণ্যের সাথের সম্পর্কের জন্য রামিমের সাথে ডিভোর্স হয়েছে এ প্রসঙ্গটা না তুলে ছাড়তোই না!
দিশা পুরাতন প্রেমিকের কাছে ফিরে যেতেই রামিমকে ডিভোর্স করেছে বলে পরিচিত মহলে রব উঠে। তবুও দিশা থেমে যায়নি।
ডিভোর্সের পর পরোক্ষভাবে দিশাকে সবচেয়ে বেশি সঙ্গ দিতে লাগলো মনিরা ভাবী, তাহিনও এখন আর কিছু বলেনা। সে বুঝে তার ভুল সিদ্ধান্তে বোনের জীবনটা সে ধ্বংস করেছে।
মনিরা ভাবী দিশার সাথে বন্ধুত্বের সুযোগে একটু একটু করে অরণ্যকে নিয়ে গল্প জমায় ফোনে,চ্যাটে।
সে অরণ্যর গল্প করে,মাঝে মাঝে অরণ্যর ছবি পাঠায়।
অরণ্য এখন মনিরা ভাবীর কলিগ। মার্কেন্টাইল ব্যাংকে আছে দুজনেই। অন্যদিকে দিশাও এখন মার্কেন্টাইল ব্যাংকে।
পুরনো স্মৃতি রোমন্থনে বিঘ্ন ঘটিয়ে দিশার ফোনটা বেজে উঠে। ভিজে উঠা চোখের জল মুছে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে অরণ্যের কল।
গলায় স্বাভাবিকতা এনে দিশা কল রিসিভ করে,
— হ্যালো
—দিশু?
— হুম।
—কি করছো? ভাবছো বুঝি পুরনো স্মৃতি?
— দুঃসময়টা যে ভুলার মত নয়,অরণ্য।
—দিশু, কাল একবার দেখা করবে?
— কাল? কখন?
— বিশেষ অসুবিধা হবে?
— না,কোথায় আসবো বল?
— ব্রহ্মপুত্র নদের কোল ঘেঁষা জয়নুল আবেদীন পার্কে। বিকাল ৪টায় তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করে আছে।
কি হতে পারে সারপ্রাইজটা? অরণ্য কি তার বউকে নিয়ে আসবে? নাকি আরও অন্য কোন ব্যাপার?
রাতে ভাল ঘুম হয়নি দিশার। সারাটা দিন কোনমতে কেটেছে তার। বিকাল চারটায় দিশা বসে আছে নদীর পাড়ে পার্কের বেঞ্চে অরণ্য আর তার সারপ্রাইজের অপেক্ষায় ।
দূরে অরণ্য আসছে, কোলে একটা মিষ্টি মেয়ে। কাছে আসলে দিশা দেখে অবিকল আরেকটা অরণ্য তবে মাঝে মাঝে দুএকটা জায়গা অরন্যর মত নয়,যেমন দাঁতগুলো একটু লম্বাটে,ভ্রু দুটি কুঁচকানো কালো, চোখদুটি অসম্ভব টানা টানা। অমায়িক বদনখানি তাঁর। এক পলকে চেয়ে থাকে দিশা ওই মুখপানে।
— আমার বারবার ফোনকল,ব্যস্ততা পুরোটা অফিসের জন্য নয়, অনেকটা আমার এই মেয়ের জন্য। চাইল্ড কেয়ার হোমে রেখে যাই প্রতিদিন। তাই চিন্তিত থাকি বেশি।
দিশা আলতো করে কোলে নেয় শৈলজাকে । সন্ধ্যা পর্যন্ত দুজনে তাকে সময় দেয়, নৌকায় চড়ে মাঝ নদীতে ঘুরে বেড়ায় তারা। আড়াই বছরের মেয়ে শৈলজা দিশার
বুকের সাথে লেপ্টে থাকে যেন সে তার হারানো মাকে ফিরে পেয়েছে। কিছুতেই অরণ্য তার কোল থেকে নিতে পারছিল না।
— দিশু, আমার মাতৃহারা মেয়েটার মা হবে?
দুচোখে অঝোরে চোখের জল ঝরতে থাকে দিশার। আগামী শুক্রবার দিশা শৈলজার মা হওয়ার সামাজিক স্বীকৃতি পাবে।
দিশা জানে এতে প্রতিবেশি, আত্মীয়স্বজন মহলে আবার কানাঘুষা চলবে, তাতে তার কি আসে যায়?.

 -অরুন্ধতী অরু 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *