ঘৃণা ( নীল কথন )

চটাস করে থাপ্পরটা গালে। খুব শখে পরা মাকড়ি দুলটা পড়ে গেলো। জয়ীতা একটুও চমকালো না। ব্যথাটা লেগেছে কিনা বুঝতে চেষ্টা করছে জয়ীতা।
এমন আগেও হয়েছে। নতুন তো নয়! ব্যথাটা শরীরে থাকে না বেশীক্ষণ। মনে থেকে যায়। জয়ীতা আজকাল মনের ব্যথাও বোধ করি বুঝতে পারে না। কেমন জানি স্থুলবোধগুলো…

নিলয় মেয়েদের এই মুখরা স্বভাবটা একদম পছন্দ করে না। মেয়েরা হবে নম্র, ভদ্র… সাত চড়েও রা করবে না। মেয়ে মানেই তো….
জয়ীতার ঐ একটা দোষ। কথা বলবেই। কতবার বলেছে নিলয়,কতবার বুঝিয়েছে… পুরুষ মানুষ রেগে গেলে, চুপ থাকতে হয়।
এইসব চাকরী বাকরী করেই ঘরের মেয়েগুলো গোল্লায় যাচ্ছে।আর সাথে আছে টিভি সিরিয়াল,ইন্টারনেট! যত্তসব…

নিলয় একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করে। অফিসের চাপ ব্যাপক। সব সামলে এসে বাসায় একটু শান্তি পাবে.. তা তো নয়! জয়ীতা আজকাল নানান কথা বলে। জয়ীতা একটা স্কুলে পড়ায়। কি এমন কাজ! আর বাসায় এসে দুটো ভাত ফুটিয়েই জগত সংসার উদ্ধার করে…

বিয়ের পর প্রথম প্রথম জয়ীতা নিলয়ের এমন আচরণে অবাক হতো। চোখ ডুবিয়ে কাঁদতো। নিলয়কে বোঝাতে চেষ্টা করতো…
ভালবেসে যাকে বিয়ে করেছে,তাঁর জন্য মনটা যে পোড়ে!
নিলয় জানতো জয়ীতা কেমন! জয়ীতা কতটুকু নিতে পারে! একটু একটু করে জয়ীতা ক্রমশ ভারবাহী….

জয়ীতা এখন আর কাঁদে না। কতবারই ভেবেছে, চলে যাবে। কিন্তু সমাজ আর পরিবার যে শেকল পড়িয়েছে.. সেটা ভাঙার সাহস হয়নি। জয়ীতা বেশ বুঝে গেছে,মানুষের আসল চরিত্র বদলায় না। একটা ভাল মানুষের ঠুলি পড়ে, সবাই দিব্যি চলে….

নিলয়ের ভাল চেহারাটা বড়ই সুন্দর। জয়ীতাও তাই বারবার একই ভুল করে। খুব আপন ভেবে এগিয়ে এসেই… চটাস…
আজ জয়ীতার ঘুরে দাঁড়ানোর দিন। দুলটার দিকে তাকিয়ে থেকে শান্ত স্বরে বলে… আমারো দুটো হাত আছে।
নিলয় কিছুক্ষন সময় নেয় বুঝতে।বিশ্বাস করতেও…
…. আজ তোকে মেরেই ফেলবো। এত সাহস!
গলায় একটা চাপ অনুভব করে জয়ীতা। প্রচন্ড আক্রোশে ক্রমেই বাড়ছে চাপটা! এটা কি ব্যথা? কোথায় লাগছে ব্যথাটা?
শ্বাসটা আটকে যাচ্ছে… বাতাস নেই কোথাও!
জয়ীতা ছটফট করছে।
… আর কখনো এমন সাহস করলে… চাপটা ধীরে ধীরে কমে গেলো। নিলয় ছেড়ে দিয়েছে।জয়ীতা লম্বা একটা শ্বাস নেয়।

রাতভর বৃষ্টি। নিলয় ঘুমোচ্ছে। জয়ীতা বসে আছে। নাহ্ কোনো কান্না আসছে না। জয়ীতা আর কাঁদতেও চায় না।
আজই হোক শেষদিন.. সংসারে। জয়ীতা বেড়িয়ে পড়ে….
কাদায় মাখামাখি গলিটা থেকে বড় রাস্তায়… জয়ীতা এগিয়ে চলে অজানা গন্তব্যপথ বরাবর। নিজের জন্য এমন কষ্ট কেন হচ্ছে?
নিজের ভেতর একটা নদীর স্রোত… !পাড়ে দাঁড়িয়ে জয়ীতা! নদী ভাঙে,নদী গড়ে… জয়ীতার নদীটায় ভাঙনের সুর।
নিলয়ের জন্য কিছুটা করুণা ঢেউ তোলে… আহা নিলয়! ঘেন্না করতেও ঘৃনা লাগে তো…
ওড়না দিয়ে গলাটা পেঁচিয়ে নেয় জয়ীতা, নিলয়ের আঙুলের দাগগুলো ড্যাবড্যাব তাকিয়ে আছে!

-ফারহানা নীলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *