পোট্রেট অফ এ সাইকো (১০ম পর্ব)

জেরিন ড্রাইভ করছে৷ পেছনে উইলিয়াম৷ জেরিন তার পেজারটা বের করে উইলিয়াম এর কাছে দিল৷

তারপর বলল উইলিয়াম স্যার, আপনি আপনার মোবাইলের জিপিএস অন করে নিন৷
উইলিয়াম পেজার টা হাতে নিয়ে বলল মিস জেরিন এটাতো বহু আগের ডিভাইস৷ এতে কি হবে৷
জেরিন বলল স্যার এটা মডিফায়েড৷ আপনি এটা থেকে আপনার জিপিএস সিস্টেম দেখে এই লোকেশানের লংটিচ্যুড আর ল্যাটিচ্যুড নাম্বারটা প্রবেশ করান৷ এরপর সেন্ড করে দিন৷
তাতে কি হবে? উইলিয়াম প্রশ্ন করলেন৷
জেরিন বলল স্যার এটা গেলেই আমার ব্যাকআপ রেসপন্ড করবে৷ বিপদে পড়লে ব্যাকআপ একটিভেট করার এই ব্যবস্থা৷ আপনার মোবাইল নাম্বার ট্রেস করা হতে পারে৷ আমারটাও৷ কাজেই এটাই হচ্ছে আমাদের অবস্থান জানান দেবার সহজ পন্থা!
উইলিয়াম বললেন এটা ট্রেস করতে পারবে না৷
জেরিন বলল না স্যার পারবে না৷ টেকনিক্যাল ব্যাপার আমি অতটা বুঝিনা, তবে নিশ্চিত পারবে না৷
উইলিয়াম ওকে বলে কাঁপা কাঁপা হাতে নাম্বার গুলো প্রবেশ করালেন৷
নাম্বার প্রবেশ করিয়েছি৷ এখন?
সেন্ড করুন স্যার৷ ওরা দেখেছে আমরা বেরিয়ে গেছি৷ কাজেই ট্রেস করতে দেরী হবে না৷
উইলিয়ামের ফোনে আবার একটা কল আসল৷ তিনি স্পীকার অন করলেন৷ ওপাশ থেকে বলা হল সোজা গাড়ি ড্রাইভ করতে৷ আরও বলা হল জেরিন কে পাওয়া মাত্র আমরা ইরমা কে ছেড়ে দেব৷ এরপর লাইন কেটে গেল৷
স্নো ফল হচ্ছে৷ আস্তে আস্তে বাড়ছে৷ উইলিয়াম এর চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছায়া৷ জেরিন বলল স্যার আপনি চিন্তা করবেন না৷ আমরা যে ভাবে হোক আপনার মেয়ে কে ছাড়িয়ে আনব৷ লোকেশান ট্রাক করে আমার ব্যাকআপ ঠিক পৌঁছে যাবে৷
উইলিয়াম কিছু বললেন না৷ চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে৷ ঝিরঝির করে তুষার পড়ছে৷ কতক্ষণ গাড়ি চালাতে হবে জেরিন জানে না৷ ঠান্ডা বাড়ছে দেখে গাড়ীর হিটারটা আরেকটু বাড়িয়ে দিল৷ হাত বাড়ি য়ে উইলিয়াম রেডিও অন করলেন৷ ডীন মার্টিন এর গান ভেসে আসছে
Oh the weather outside is frightful
But the fire is so delightful
and since we’ve no place to go
Let it snow , Let it snow, Let it snow! ……
নিস্তব্ধ রাস্তা দিয়ে গাড়ি টা যাচ্ছে৷ তুষার আর বাতাসের ঝাপটায় ওটা একটু পরেই অদৃশ্য হয়ে গেল৷ শুধু পেছনের লাল বাতি গুলো জ্বলছে৷ নেকড়ের চোখের মতো!

….

হোলগার জ্ঞান ফিরল থেরাগের গানের শব্দে৷ মাথার ভেতরে হাজার মৌমাছির গুঞ্জন উঠেছে হোলগার৷ থেরাগ কি ভাবে তার এপার্টমেন্টে প্রবেশ করলো এর কিছূই জানে না হোলগা৷ দরোজা খোলার পরপরই থেরাগের মুখটা দেখে বিস্ময়াবিভূত হয়ে গেলো সে৷ থেরাগ শুধু বলল হ্যালো বেবি! মাথার বাম পাশে শক্ত কিছুর আঘাতে জ্ঞান হারাল হোলগা৷
ওর বেড রুমেই ওকে খাটের সাথে চিৎ করে বেঁধে রেখেছে থেরাগ৷ সামনে একটা রকিং চেয়ারে বসে দুলছে৷ গুনগুন করে গান গাইছে ও৷ ডীন মার্টিনের সেই গানটাই যেটা গাড়িতে উইলীয়াম আর জেরীন শুনছে৷
Man it does’nt show signs of stopping
And I brought me some corn for popping
The lights are turned way down low
Let it snow, let it snow, let it sno….

কি ঘুম ভাঙল ডিয়ার!
মুখে টেপ আটকানো বলে হোলগা কিছু বলতে পারলো না
থেরাগ বলল নড়ে চড়ে লাভ নেই ডিয়ার৷ শক্ত করে বেঁধেছি৷ মাথায় শুধু ফ্লাওয়ার ভাস দিয়ে বাড়ি দিয়েছি৷ তাও খুব জোরে না৷ সামনের টি টেবিলে একটা বেসবল ব্যাট রাখা৷ ওটা নিয়ে গন্ধ শুঁকলো থেরাগ৷ তারপর বলল এটা দিয়ে যখন মারবো তখন বুঝবে!
লেট ইট স্নো লেট ইট স্নো…. হা হা হা হা৷
হোলগা এক চোখে দেখছে৷ অন্য চোখে ঝাপসা দেখছে৷ সম্ভবত মাথা কেটে যাওয়ায় রক্ত গড়িয়ে চোখের উপর এসে পড়েছে৷ থেরাগ কে তার কাছে এখন মূর্তিমান পিশাচ লাগছে৷ ভয়ে হোলগার অন্তর আত্মা কেঁপে উটলো৷
খুব আস্তে ধীরে ভদ্রভাবে থেরাগ বলল জেরিন কে তোমরাই লন্ডন টেনে এনেছো তাই না! আমাকে ব্যবহার করে৷ তুমি , তোমরা জানতে৷ আমি হালায় একটা মাথা নষ্ট মানুষ৷ বুঝি নাই৷ ঐ বাড়িতে অনেক ডক্যুমেন্টস হাতে লেগেছে আমার… লেট ইট স্নো , লেটইট স্নো …
হোলগা এখন কাঁদছে৷ তার কিছু করার নেই৷ জেরিন কে মারলে সে একা মারবে৷ বাঁচালে একা বাঁচাবে ৷ কি বাঘিনীর মতো একটা মেয়ে কে এই শুয়োরেরা পাল হয়ে ফাঁদে ফেলেছে! থেরাগ ঠিক করে রেখেছিল জেরিন কে বাগে পেলে আগে খেলবে৷ তারপর …. আঘাত ভাইব্রেশান উফ… শালারা সব মাটি করে দিতে বসেছে৷ লেট আট স্নো, লেট ইট স্নো ,….
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো থেরাগ৷ বিছানায় হোলগার পাশে বসল৷ তারপর বলল তোমাকে মুক্ত করে দিব৷ এক শর্তে৷ তারপর এখানে রেখে যাব৷ বেঁধে৷ এসে ব্যবস্থা করবো৷ রাজি?
হোলগা মাথা দোলাল৷
টেপটা মুখ থেকে টান মেরে সরিয়ে থেরাগ বলল ঠিক আছে হোলগা সোনা বল তো দেখি৷
হোলগা ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল প্লীজ থেরাগ আমাকে ছেড়ে দাও৷ তোমাকে দুই মিলিয়ন পাউন্ড দিব৷ আমার ভাগ টুকু তোমাকে দিয়ে .হে .এ এ এ … ফুঁপাচ্ছে হোলগা৷
থেরাগ বলল টাকা দিয়ে কি করবো? জেরিন আমার কাছে প্রাইসলেস৷ আর তোমরা এই কটা টাকা দিয়ে আমার প্যাশন নষ্ট করবে! বলো ৷ তাড়াতাড়ি বল৷ না হয়…
হোলগা বলল সাউদাম্পটনের দিকে যাবে জেরিন কে নিয়ে৷ ওর কাছে একটা ফাইল আছে৷ ওই ফাইল উদ্ধার করে দিতে পারলে হিউজ মানি….৷ ঐ রাস্তায় বেশ কিছুদূর গেলে ডান দিকে একটা বাঁক পড়বে৷ ভেতরে আরও ঘন্টাখানেক ড্রাইভ করলে পরিত্যাক্ত একটা ওয়ার হাউজ আছে৷ সেখানে আটকাবে ওকে৷ ফাইলের জন্য৷ টর্চার…
থেরাগ হোলগার মুখে টেপ আবার আটকে দিয়ে হোলগার সাথে শুয়ে পড়ল৷
অানমনে বলতে শুরু করলো ইউ নো হোলগা, আমি মনে হয় তোমাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম৷ তাই খুন করতে যেয়েও করিনি৷ মনে করেছিলাম তুমি আমার আশ্রয় হবে৷ সাদামাটা একটা মেয়ে হিসেবে৷ আর আমার মাথার পোকা নড়ে উঠলে যাব বাইরে কাউকে না কাউকে তো পাবই…. আবার ঘরে এসে …. তোমার সাথে… থেরাগ চোখ মুছল৷

কিন্তু তোমরা আমাকে এত খাটো বুদ্ধির ভাবলে কি করে? মানুষ দেখ না পয়সা হলে দুষ্প্রাপ্য এনটিকস সংগ্রহ করে৷ আমিও তেমন৷ জেরিন আমার প্রাইসলেস এন্টিক৷ যতবার আমি আমার নিচে ভিকটিমের ভাইব্রেশান ফিল করেছি ততবার আমি জেরিন কে কল্পনা করেছি৷ আর তোমরা….
শিস দিতে লাগলো থেরাগ৷ লেট ইট স্নো লেট ইট স্নো!
আস্তে ধীরে উঠে দাঁড়ালো থেরাগ৷ বিছানার উপরে৷ বাম হাতে বেসবল ব্যাট৷ হোলগার কসটেপ লাগানো ঠোঁটে দীর্ঘ একটা চুমু দিল সে৷ হোলগা আতংকে কাঁপছে৷
ডীন মার্টিনের গান টা আবার গাইতে শুরু করলো সে৷ বেসবল ব্যাট টা দু আঙুলে দোলাচ্ছে
… When we finally kiss good night
How I’ll hate going out in the storm
But you really grab me tight
All the way hom I’ll be warm
Oh the fire is slowly dying
And my dear we’ re still goodbyeing…
লেট ইট স্নো বলেই সর্বশক্তি দিয়ে হোলগার মাথায় একটা আঘাত করলো৷ এত জোরে যে রক্ত মগজ ছিটকে সামনের জানালার কাঁচে নকশা কাটল৷
থেরাগ শিষ দিচ্ছে লেট ইট স্নো লেট ইট স্নো…..
দরোজা বন্ধ করে থেরাগ নিচে নেমে আসল৷
সামনের একটা ফোন বুথ থেকে পুলিশ ইমার্জেন্সিতে ফোন করে বলল ও মাই গড ! প্লীজ হেল্প৷ সামওয়ান কিকিকিল্ড এ গার্ল৷ প্লীজ হারি…. বলে লোকেশান বলল থেরাগ৷ রিসিভার ছেড়ে দিল৷ ওটা জয়েন্ট থেকে পেন্ডুলামের মতো দুলতে লাগলো৷ ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো শোনা যাচ্ছে৷
বরফ পড়ছে৷ থেরাগ তুষার মাড়িয়ে হাঁটতে লাগলো৷ বহুদিন পর নিজেকে আজ ফ্রি স্প্রীট মনে হচ্ছে নিজেকে৷ হোলগাকে সে ছুঁয়েও দেখেনি৷ রাস্তা থেকে আঁজলা ভরে বরফ নিয়ে চারদিকে ছিটিয়ে দিল ও৷ জেরিন যদি কিছু জানে তাহলে সেটা ওর পেট থেকে বের করা ওদের কর্ম নয়৷ ওরা জেরিনকে ফাইল না পেলে মারবে না৷ থেরাগ জানে কোথায় আছে জেরিন৷ সো….গুনগুন করে গান গাইতে লাগলো থেরাগ লেট ইট স্নো…. লেট ইট স্নো….লেট ইট স্নো…..
….
ক্রাইম স্পটে স্যাম তার দলবল নিয়ে হাজির হয়েছে৷ পুলিশ চীফ কে অন্তরীন করার পর আপাততঃ সে সামলাচ্ছে সব কিছু৷ এখানকার সবকিছু দেখে মনে হয়েছে সাইকো কেস৷ তাই স্যামকে আসতে হয়েছে৷ ফোন পেয়ে৷
স্যাম চিন্তিত৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এটা সাইকো আলতাফের কাজ৷ কিন্তু মেয়েটাকে ছোঁয় নি পর্যন্ত৷ বেসবল ব্যাট দিয়ে আঘাত করে মাথা থেতলে দেওয়া হয়েছে৷ বিছানার কাছেই ওটা পড়ে আছে৷ সাথে একজন মহিলা কন্সটবল ছিল৷ মেয়েটা হড় হড় করে বমি করে দিয়েছে সহ্য করতে না পেরে৷ রক্ত আর মগজ জানালা পর্যন্ত নকশা কেটেছে৷
স্যাম চিন্তিত মুখে বলল দেখে তো সাইকো কেসই মনে হচ্ছে৷ কিন্তু ও তো মেয়েদের মারার পর….
কিছু হিসেব তো মিলছে না! হিউ, একজন কে ডেকে বলল এই লাশ পোস্টমর্টেমের ব্যবস্থা করো৷ মনে হচ্ছে এই মেয়ের প্রতি হত্যাকারীর কোন আক্রোশ ছিল৷ সেটাই মিটিয়েছে৷
যদি ধরে নিই এই সেই আলতাফ তাহলে মেয়েটাকে এভাবে মারবে কেন? আর মারলেও তার উদ্দেশ্য হাসিল করলো না কেন! ব্যাপারটার মাঝে অন্যরকম একটা কিছুর গন্ধ পাচ্ছি আমি৷ এদিকে উইলিয়াম স্যার এভাবে জেরিন কে নিয়ে চলে গেল কেন? উনার উপর কি কোন চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে কি না! খাতিয়ে দেখ৷ উইলিয়াম এর মেয়ে ইরমা কোথায় একটু দেখ৷ প্রয়োজনে ওখানে পুলিশ পাঠাও৷ সব কেমন ঘোলাটে ঠেকছে৷

বাইরে প্রবল তুষার ঝড় শুরু হয়েছে৷ মানুষজনকে বাইরে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে৷ সতর্ক অবস্থা জারী করা হয়েছে৷ লন্ডন সিটির সাথে অনেক জায়গার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে বা উপক্রম হয়েছে৷ বেশ কিছু দুর্ঘটনার খবরও এসে পৌঁচেছে৷
ঠিক এসময়ে দপ্তর থেকে স্যাম এর কাছে কল করল একজন ডিউটিরত অফিসার৷
ফোন নামিয়ে স্যাম এর ভ্রু দুশ্চিন্তায় কুঁচকে গেল৷ হিউ প্রশ্ন করলো এনিথিং ব্যাড স্যার?
স্যাম বলল গুড ওর ব্যান্ড আই ক্যান্ট টেল৷ বাট মেবি উই গট এ লিংক৷
হাসান নামে একটা ছেলে দপ্তরে এসেছে৷ ইনচার্জের সাথে কথা বলতে চায়৷ ও বলছে ওর কাছে বাংলাদেশ থেকে আগত গোয়েন্দা জেরিনের নামে কিছু ইনফো আছে৷ এবং সেটা কেবল সে আমাকেই দিতে চায়!
….
জেরিন প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে গাড়ি ড্রাইভ করছে৷ হঠাৎ উইলিয়াম বললেন ডানদিকের পথ ধরো জেরিন ওরা আমাদের ওদিকেই যেতে বলেছে৷
প্রবল তুষারপাত হচ্ছে৷ হেড লাইটের আলোয় সাদা সাদা পেঁজা তুলোর মতো ওগুলো নেচে বেড়াচ্ছে গাড়ির চারপাশে৷ ড্রাইভ করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে৷ রাস্তার দু’পাশ গাছে ছেঁয়ে আছে বিধায় এ পথে তুষার কিছুটা কম জমেছে৷ গাড়ি আস্তে আস্তে ঘুরিয়ে জেরিন চলা শুরু করলো৷ ঠিক পেছনে মড়াৎ করে একটা গাছ ভেঙে পড়ল৷ আরেকটু হলেই গাড়ির উপর পড়ত৷ উইলিয়াম বললেন জেরিন সাবধান৷ এপথে আমাদের এগুতে হবে৷ বি কেয়ারফুল৷ ভেরি কেয়ারফুল৷ আমরা দুর্ঘটনায় পড়লে ওদিকে ইরমা….
জেরিন কিছু বলল না৷ মুখ শক্ত করে গাড়ির স্টিয়ারিং সামলাচ্ছে৷ সে৷
কিছুদূর এগুনোর পর বলল স্যার আরেকটা মেসেজ পাঠান স্যার৷ পেজার থেকে৷
উইলিয়াম বললেন নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না জেরিন৷ মনে হয় ঝড়ের কারণে…
জেরিন কিছু বলল না৷ সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাতে লাগল৷
….
দপ্তরে এসেই স্যাম ছেলেটাকে ডাকালো৷ ছেলেটার চোখে চশমা পড়া কালো ফ্রেমের৷ দেখতে তেমন চৌকষ না হলেও ছেলেটার মধ্যে পুরুষালী একটা ভাব আছে৷ চকচকে চোখ৷ আচার ব্যবহারে কনফিডেন্ট৷ স্যাম মনে মনে বলল এই ছেলে ইন্টেলিজেন্সের কিছু একটা হবে৷
সামনে বসতে বসতে ছেলেটা তার ল্যাপটপ খুলল৷ স্যাম বলল হ্যালো ৷ ছেলেটা হ্যালো বলে ল্যাপটপ টেপায় ব্যস্ত হলো৷ একমিনিট পর বলল স্যার আমার নাম হাসান৷ বাংলাদেশী৷ পলিটিক্যাল এসাইলেমে এদেশে এসেছি বেশ ক’বছর হলো৷ এখানে বর্তমানে পিএইচ ডি করছি৷ থিসিস হলো এনালাইটিক্যাল এবিলিটি এন্ড ডাটা ইনফ্রা স্ট্রাকচার৷
মিস জেরিন আসার পুর্বে বাংলাদেশ থেকে আমাকে বলা হয়েছিল, ম্যাডামের ট্রাকিং রাখতে৷ এবং নিতান্ত নিরুপায় না হলে সেটি রিভিল না করতে৷
জেরিন ম্যাম কিডনেপ হবার কথা দেশে পৌঁছে গেছে৷ সাথে সাথে এখানে আমাকে তৎপর হতে হয়েছে৷
স্যাম বলল তারমানে তোমরা আমাদের অগোচরে গোয়েন্দাগিরি করছো! স্পাইং!
হাসান হেসে বলল না স্যার৷ সেটা নয়৷ শুধু উনার ট্রেক রাখতে বলা হয়েছিল আমাকে৷ তাই করছি৷ সেটা যদি অন্যায় বা স্পাইং হয় তাহলে আপনারা অন্য ব্যবস্থা নিবেন৷ আগে এই পরিস্থিতিটা আমরা মোকাবেলা করি৷
স্যাম বলল বলুন শুনছি৷
হাসান বলতে থাকলো জেরিন ম্যাম ওর সাথে একটা পেজার টাইপ ডিভাইস আছে৷ ওটা থেকে সিগনাল পাঠানো যায়৷ অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের দুটো নাম্বার পাঠানো হয়েছে৷ যেটা এখান থেকে কেন্টের দিকে কোন একটা জায়গা নির্দেশ করছে৷ সম্ভবত সেই পথেই উইলিয়াম আর ম্যাম গ্যাছেন৷ এই দেখুন৷ বলে ল্যাপটপটা সে ঘুরিয়ে দিল৷
স্যাম উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে পড়েছেন৷ হাতে হাত দিয়ে বাড়ি মেরে বললেন দ্যাটসইট৷ তুষার ঝড় থামলে আমরা যতদ্রুত সম্ভব খবর নিব৷ ওখানকার আসপাশের পুলিশ স্টেশানে আমি খবর করছি এখুনই৷
ওয়াকিটকি তোলার সাথে সাথে হাসান বলল স্যার দাঁড়ান৷ একটা সমস্যা আছে৷
স্যাম বললেন আবার কি সমস্যা!
হাসান বলল স্যার ৷ বাট দ্যাট কোর্ডিনেট ইজ রঙ স্যার৷ টোটালি রঙ৷
বিস্মিত স্যাম বললেন হাউ কুড ইউ সে … ডিভাইস থেকে রঙ ইনফো কে পাঠালো… হোয়াই?
হাসান বলল ডিভাইস থেকে রঙ নাম্বার যে পাঠিয়েছে সে এসব কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত স্যার৷ ঠিক বলতে পারবো না৷ তবে জেরিন ম্যাম এই কাজ করেন নি৷ হয় তাদের কাছে ম্যাম ধরা পড়েছেন আর না হয় … বলতে পারছি না স্যার!
স্যাম আবার বললেন তুমি নিশ্চিত?
হাসান বলল ইয়েস স্যার৷ নিশ্চিত৷
হাউ? বিস্মিত স্যাম এর প্রশ্ন৷
হাসান বলল স্যার জেরিন ম্যাম এর পেজার ছাড়াও বিকল্প একটা ব্যবস্থা আছে৷ আর সেটা হলো ওনার জ্যাকেটে থাকা একটা জিপিএস ট্রেকার৷ যেটা সম্পর্কে ম্যামও জানেন না!
ম্যাম এর পেজারের পাঠানো সংকেত আর জিপিএস এর পাঠানো কোর্ডিনেশান দুটো ভিন্ন স্যার৷
ট্রেকারের কোর্ডিনেশান বলছে উনারা সাউদাম্পটনের দিকের রাস্তায় কোথাও আছেন!
এবং বেশকিছুক্ষণ হলো জিপিএস ট্রেকার থেকে কোন সিগনালিং পাচ্ছি না৷ আমাদের সার্চ চালাতে হবে সেই কোর্ডিনেশন ধরে৷ পেজারেরটা নয় জিপিএস এর টা ধরে!
….
জেরিন গাড়ি থামিয়েছে৷ সামনে চারপাঁচটা আলো নড়ছে৷ সম্ভবত বড় বড় টর্চ বা ঐ জাতীয় কিছু৷
জেরিন কে উইলিয়াম বললেন নামো জেরিন আমরা এসে গেছি!
জেরিন বলল কাজটা কেন করলেন স্যার? এভাবে নিজের মেয়ের নাম নিয়ে ধোঁকা দিলেন!
উইলিয়াম বললেন কি যা তা বলছো জেরিন আমি ধোঁকা দিব কেন?
জেরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল শেষবার যখন আপনাকে পেজার থেকে সংকেত পাঠাতে বলেছিলাম তখন আপনি বললেন নেটওয়ার্ক নেই! অথচ আমার ফোনে নেটওয়ার্ক ছিল স্যার৷ আপনি এমন একটা কাজ করলেন! ইরমা কিডনেপ হওয়া আসলে একটা ভাওতাভাজি তাই না মিঃ উইলিয়াম৷
পেছন থেকে পিস্তল কক করার শব্দ শুনলো জেরিন৷৷
উইলিয়াম বললেন বুঝেই যখন ফেলেছ তাহলে কি আর করা৷ এখন গুড গার্লের মতোন গাড়ি থেকে নামো৷ প্লীজ৷
জেরিন আবার বলল কেন স্যার! কেন করলেন?
উইলিয়াম বললেন টুয়েন্টি মিলিয়ন পাউন্ড জেরিন! শুধু তোমাকে এদের হাতে, না না ফাইল ও তোমাকে তুলে দিলে টুয়েন্টি মিলিয়ন পাউন্ড!
জেরিন দরোজা খুলে নেমে দাঁড়ালো৷ প্রায় একই সাথে উইলিয়াম৷ তিনি কড়া গলায় বললেন চালাকির চেষ্টা করো না প্লিজ৷ নো হাংকি পাংকি৷
জেরিন ঠায় দাঁড়িয়ে রইল৷ পেছনে উইলিয়াম৷ পিস্তল হাতে৷
সামনের আলো গুলো বড় আর তীব্র হচ্ছে৷
(চলবে)

-পলাশ পুরকায়স্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *