পোট্রেট অফ এ সাইকো(১৪ তম পর্ব)

থেরাগ সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে৷ শওকত নিচে৷ হাত উপরে তুলে৷ শওকত বলল “আচ্ছা আলতাফ মিয়া এই মাইয়া মাইনসেরে মাইরা তারপর….এইসব আকাম কইরা কি মজা পাও! জেরিন রে আমিও শেষ করবার চাই৷ তুমিও৷ চলো একটা ডীল করি৷ আমি ওরে খতম করি তুমি তারপরে …”চোখ টিপল শওকত৷ থেরাগ অনড় দাঁড়িয়ে তখনও৷

শওকত বলল “আমি কথা বলি কম৷ কিন্তু আইজকা ক্যান যে এত বলতেছি! তোমার উপরে জ্বীনের আছর আছে৷ মনেহয় হের লাইগা ভয় পাইছি আলতাফ ভাই!” শওকত হাসছে৷ ভয় সে পায় নি৷ স্রেফ মস্করা করছে, আলতাফের সাথে৷ শওকত বুক পকেটে হাত ঢোকাতে গেল৷ থেরাগ পিস্তল তাক করলো৷
শওকত বলল “আরে থামো! সিগারেট বাইর করি৷ মরার বিলাতে ঠান্ডা জব্বর৷”
আস্তে করে সিগারেটের একটা প্যাকেট বের করলো শওকত৷ প্যাকেটের ভিতরে লাইটার! সাবধানে বের করে সিগারেট জ্বালালো৷
শওকতের মাথায় ঝড়ের বেগে চিন্তা চলছে৷ দানবটা যেকোন সময় গুলি করে দিতে পারে৷ কোন বিশ্বাস নাই৷ চোখের কোন দিয়ে দেখেছে সে৷ আড়ালও নেই আসেপাশে৷ আড়ালে যেতে হলে প্রায় পাঁচফিট দূরত্বে যেতে হবে৷ দু’কদম৷ ম্যাগজিন খালি করে দেবে আলতাফ৷
শওকত বলল “বাইরে গোলাগুলির শব্দ শুনছেন নাকি! মনে লয় জেরিন হেগো কাম তামাম করছে৷ বলদ গুলারে কইছিলাম হেইডারে শেষ করতে শুনল না৷ ওখন সব গুলা গেল!”
থেরাগ হাত থেকে পিস্তল ফেলে দিল৷ বেসবল ব্যাটটা বাগিয়ে ধরলো৷ তারপর বলল “আসো দেখি.. বহুদিন কাউরে পিটাই না৷”
শওকত অবাক হল৷ আরে! মনে মনে বলল সে৷ আলতাফ মিয়া ইংরাজি কয় ক্যান?
শওকত কিছুটা বুঝল কিছুটা বুঝল না৷ তবে এটা বেশ বুঝল৷ আলতাফ তার সাথে লড়তে চাচ্ছে৷ বেল্টের বকলস এ হাত দিল শওকত৷ আটইঞ্চি লম্বা স্টিলেটো টা একটানে বের করে আনলো বেল্টের গোপন জায়গা থেকে৷ দু’জন দু’জন কে ঘিরে পাক খাচ্ছে৷ একজন সাইকো কিলার অন্যজন স্রেফ কিলার!

জেরিন হিসেব করলো পেছনের বের হবার রাস্তায় চারজন খতম হয়েছে৷ উইলিয়াম শেষ হয়েছে সামনে৷ পাঁচজন৷ আর কাউকে তো আসেপাশে আছে বলে মনে হচ্ছে না৷ ঢাল বেয়ে সন্তর্পণে উঠে বাড়ির সামনে এল সে আবার৷ সতর্ক হয়ে ক্যাম্পবেলের বাড়ির ভেতর আবার প্রবেশ করলো জেরিন৷
ক্যাম্পবেলের জ্ঞান ফিরে এসেছে৷ জেরিন বাঁধন খুলতে খুলতে বলল সরি গ্রেন্ড পা৷ এভাবে না করলে হয়তো ওরা তোমাকে মেরে ফেলত৷
ক্যাম্পবেল বলল মাথায় ভালই মেরেছো তুমি৷ এবার রামের বোতল টা এগিয়ে দাও৷ মাথা পরিষ্কার করি৷
জেরিন ক্যাম্পবেল কে ধরে উপরে নিয়ে এল৷ তারপর একটা চেয়ার টেনে বসিয়ে দিল৷
বলল গ্রান্ডপা’ এখানে কিছু দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়েছিল৷ আমার উপরে৷ এটার সাথে তোমার দেশের স্বার্থও জড়িত৷ আমাকে কিডনেপ করা হয়েছিল৷ ওদিকে একটা ওয়ারহাউজ আছে জানতো?
ক্যাম্পবেল মাথা নাড়ল৷ ওদিক থেকেও কিছু গুলির শব্দ এসেছে৷ সম্ভবত আমার লোকেরা চলে এসেছে!
আমাকে যেতে হবে৷
ক্যাম্পবেল বলল ইয়াং লেডি ডু ইউ নিড এনি হেল্প?
জেরিন বলল না স্যার আশা করি হেল্প লাগবে না৷ স্থানীয় পুলিশ কে ফোন করো৷ আর এই নাম্বারে ফোন কর বলে স্যাম এর নাম্বারটা দিল সে৷ বলল তাড়াতাড়ি৷ আমি ওদিকটা দেখছি৷
টেক কেয়ার গ্রান্ড পা৷ বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে৷
ক্যাম্পবেল কিছু বলল না৷
জেরিন বেরিয়ে গেল৷
ক্যাম্পবেল ফোন করার চেষ্টা করলো৷ লাইন পাওয়া যাচ্ছে না৷ সম্ভবত ঝড়ে নেটওয়ার্ক গেছে৷ তাছাড়া ঝড় থেমেছে কিছুক্ষণ হয়৷ সারা দেশে জরুরী অবস্থা৷ সাহায্য আসতে দেরি হবে সে নিশ্চিত৷
নিজের শটগানটা টেনে নিল ও৷ পকেটে কিছু শেল নিয়ে রওয়ানা হল ওয়ার হাউজের দিকে৷
মেয়েটার সাহায্য লাগতে পারে..

জেরিন সতর্ক পা ফেলে ফেলে ওয়ার হাউজের দিকে এগুলো৷ যেহেতু উইলিয়ামই নেই সেহেতু বেঁচে বর্তে থাকা দু’তিন জনেরই থাকার কথা নয়৷ এরা ভাড়াটে৷ বেঁচে থেকে ভাগের টাকাটা এনজয় করাই এদের কাজ৷ কাজেই পলানোর কথা৷ তবু সাবধানের মার নেই৷
ওয়ার হাউজের কাছাকাছি পৌঁছে সে চিন্তা করলো সামনের দিক থেকে নয়৷ বরং পেছনে ঢোকার কোন জায়গা আছে কি না সেটা দেখা দরকার৷ সে ঘুরে চলে গেল পেছন দিকে৷ ওকে যে ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল সেই ঘরের জানালাটা এখনও খোলা৷ সেই সময়ে সে নিচে লাফিয়ে পড়েছিল তুষারের উপর৷ চারপাশে চোখ বুলিয়ে খুঁজতে লাগল কিছু পাওয়া যায় কি না৷ মরচে ধরা একটা ল্যাডার তার সেই সমস্যার সমাধান করে দিল৷ জানালার ফ্রেম ধরে ভেতরে উঠে এল জেরিন৷ মেশিন পিস্তলটা বাগিয়ে ধরে সন্তর্পনে পা রাখল করিডোরে৷

থেরাগ আর আলতাফ নিচে লড়ছে৷ থেরাগ ব্যাট ঘুরালো৷ শওকত নিচু হয়ে এড়িয়ে ছুরি ঘুরালো৷ ওভার কোটের অনেক খানি ফেঁড়ে চলে গেল ওটা৷ শওকত সরে এল৷ এই দানবটার ব্যাটের একটা বাড়ি খেলে আর দুনিয়া দেখতে হবে না৷
থমকে দাঁড়াল থেরাগ৷ একটানে ওভার কোটটা খুলে ফেলল৷ একপাশে ছুঁড়ে দিল৷ ভেতরের উলের জামাটাও খুলে ফেলল সে৷ সাদা শার্টের নিচে দঁড়ির মতো পাঁকানো পেশি দেখা যাচ্ছে৷ কব্জির কাছে ঘুরানো কাটা একটা দাগ৷
শওকত এক পা এগিয়ে আবার ছুরি চালালো৷ লোকটা প্রফেশনালদের মতো একদিকে কাত হয়ে সরে গেল৷ ব্যাটটা আবার চালাল৷ ওটা শূন্যে বাতাস কাটল শুধু৷
এবার থেরাগ ফলস স্টেপ দিল৷ একপা সামনে বাড়িয়ে দ্রুত পিছিয়ে আসল৷ শওকত দক্ষ নাইফ ফাইটারের মতোন ছুরির ফলাটা কব্জির দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে নিচ থেকে উপরে টান দিল৷ বাম থেকে ডানে৷ এরপর থেরাগের হাতের নিচ দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিল৷ এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল থেরাগ৷ চোয়াল বরাবর ঘুসি লাগালো থেরাগ৷
শওকত ছিটকে পড়ল৷ মনে মনে বলল হালার আলতাফের বাম হাতে বেজায় জোর!
কোন রকমে উঠে দাঁড়াল শওকত৷ মাথা ঝিম ঝিম করছে৷
শওকত দেখলো দানবটা এগিয়ে আসছে৷
স্টিলেটো টা দু’হাতে বাগিয়ে ড্রাইভ দিল শওকত৷ একপাশে সরে গিয়ে থেরাগ সুইপ করলো তার হাতে ধরা ব্যাটটা৷ শওকত আক্ষরিক অর্থেই উড়ে যেয়ে দু’হাত দূরে পড়ল৷ বাম হাত কামড়ে ব্যাথা মুহূর্তে তার মস্তিষ্কে উঠে এল৷ স্টিলেটো টা হাতে নেই৷ ওটা থেরাগের উরুতে গেঁথে আছে৷
উঠে দাঁড়িয়ে হা করে দম নিচ্ছে শওকত৷ থেরাগ একটানে ছুরিটা নিজের উরু থেকে বের করে আনল৷ নিজের শার্ট একটানে ছিড়ে নিয়ে ক্ষতের উপরে বাঁধল থেরাগ৷ শওকত এমন প্রতিপক্ষের সাথে কখনও লড়াই করেনি৷ কিছুতেই যেন তার কিছু এসে যায় না৷
জেরিন কে শিকার করতে এসেছিল শওকত৷ এখন নিজেই আলতাফের শিকার হতে চলেছে সে!
শওকতের পাশেই একটা টেবিল৷ টেবিবের উপরে টুলবক্স ওখানে একটা রেঞ্জ পড়ে আছে৷ ওটা তুলে থেরাগের দিকে এগুলো সে৷
সাইকোদের মনে হয় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে কিছু থাকে৷
না হলে জেরিন যে সিঁড়ির উপরে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা সে বুঝল কি করে!
ঘুরেই হাতের ব্যাটটা ছুঁড়ে দিল জেরিনের দিকে৷ জেরিনের মাথায় লাগল ওটা৷ মাথা পেছনে সরাতে গিয়ে পা স্লিপ করলো জেরিন৷ ঠিক সেই সময়ে ব্যাটটা ওর মাথায় আঘাত করলো৷
সিঁড়ি দিয়ে পিছলে সর সর করে নিচে নেমে এল সে৷ ক্ষনিকের জন্য জ্ঞান হারালো মনে হয়৷
রেঞ্জটা বাগিয়ে লাফ দিল শওকত৷থেরাগের মাথা বরাবর নামিয়ে আনল ওটা৷ কপালের একপাশ দিয়ে পিছলে বেরিয়ে গেল৷ ঠিকমতোন লাগল না৷ সেকেন্ডের ভগ্নাংশের আগে মাথা সরিয়ে নিয়েছিল থেরাগ৷
হাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে শওকত প্রমাদ গুনল৷ মনে মনে বলল আলতাফ যাদু জানে নাকি!
জেরিনও উঠে দাঁড়িয়েছে৷ ওর শটগানটা ছিটকে গেছে একপাশে৷ মেশিন পিস্তলটা সিঁড়ির উপরে পড়ে আছে৷ নেবার সময় নেই৷
শওকত এবার বলল” এতক্ষণে আসলেন জেরিন আপা! আলতাইপ্পারে সামলাইতে পারতেছি না৷”
জেরিন বলল” তুমি তো আসছই আমারে মারতে!”
শওকত বলল “তা ঠিক৷ কিন্তু আপনে তো আসছেন হেইডারে ধরতে৷ হেরে সামাল না দিতে পারলে….”
জেরিন কিছু বলার আগেই থেরাগ সামনে বাড়ল৷ সে এখানে কনফার্ম করতে এসেছে জেরিন যেন ওর হাত ছাড়া অন্য কারও হাতে মারা না যায়! আর কিছু না৷
জেরিন দু’স্টেপ দিয়ে শূন্যে উড়াল দিল৷ বাম পা সামনে মেলে দিয়ে৷ থেরাগ বাম হাতে ওটা আটকাল৷ ভাঁজ করা ডান পায়ে মারল জেরিন৷ থেরাগের বুকে৷ এক কদম পিছিয়ে গেল সে৷ জেরিন মেঝে তে পড়ে বেড়ালের মতোন লাফাল৷ থেরাগ অপেক্ষা করছিল৷ বাম পা তুলে জেরিনের বুকে লাথি দিল সে৷ উড়ে গিয়ে পড়ল জেরিন৷
শওকত মেঝেতে স্কীড করলো৷ রেঞ্জটা দিয়ে থেরাগের হাঁটুর নিচে আঘাত করলো সে৷ এক হাঁটু মুড়ে আধ বসা হয়ে গেল থেরাগ৷ জেরিন বুকে হাত দিয়েছে৷ ভাঙা পাঁজড় সেরে ওঠেনি এখনও৷ ব্যাথা আরও বাড়ল থেরাগের লাথি খেয়ে৷ তারপরও জেরিন এগুল৷ দানবটা হাঁটু গেড়ে আছে৷
দু’হাত বাতাসে ঘুরিয়ে একদিকে কাত হয়ে ডাবল পাঞ্চ করল জেরিন৷
শওকত রেঞ্চ টা থেরাগের মাথা বরাবর নামিয়ে আনল৷
ঐ অবস্থায় ওটা ধরে ফেলল থেরাগ৷ টান দিল জোরে৷ শওকত তার উপর দিয়ে উড়ে ধরাম করে মেঝেতে পড়ল৷ টানের চোটে রেঞ্চটা অন্য দিকে ছিটকে গেল৷
মেঝেটা পিছল টাল সামলাতে না পেরে জেরিনও পড়ে গেল৷
কিছুই হয়নি এমন ভাবে উঠে দাঁড়াল থেরাগ৷ লাথি কষল জেরিনের শরীরের মাঝ বরাবর৷ হাত দিয়ে কোন রকমে ব্লক করল সে৷ তারপরও মারের চোটে দু’হাত পিছিয়ে গেল৷ বাতাসে পা ঘুরিয়ে উঠে দাঁড়াল জেরিন৷
বুঝতে পারল এভাবে থেরাগ কে কাবু করা যাবে না৷ ওর দূর্বল জায়গায় আঘাত করতে হবে৷ এক পা সামনে ভাঁজ করে পেছনে আরেক পা একটু সরিয়ে দাঁড়াল জেরিন৷ হাত গুলো নাড়ছে৷ অনেকটা হাতির সুরের মতো পেছনে শওকতও উঠে দাঁড়িয়েছে৷ লোহার একটা রড ওর হাতে৷ জঞ্জাল থেকে তুলে নিয়েছে৷
জেরিন বলল শওকত ওর পেশিতে আঘাত করো৷ প্রতিটা হাত পায়ের পেশিতে!
থেরাগ জেরিনের দিকে এগুলো৷
জেরিনের হাত মুষ্ঠি বদ্ধ নয়৷ অনেকটা সব আঙুল একসাথে জুড়ে দিয়ে কুকুরের মুখের মতোন আদল ওর আঙুল গুলোয়৷
থেরাগের দিকে দ্রুত এগিয়ে হাতের মাসলে দ্রুত তিন চারটা আঘাত হানল জেরিন৷ পিছলে বেরিয়ে গেল৷ থেরাগের হাতের নিচ দিয়ে৷
এবার লাফিয়ে উঠে কনূই দিয়ে ওর মাথায় আঘাত হানল৷ পেছন থেকে শওকত উরু বরাবর বাড়ি দিল দুটো৷ থেরাগের৷
আবার পিছিয়ে গেল৷
ঐ অবস্থায় ঘুরে জেরিন কে হাত দিয়ে প্রচন্ড ধাক্কা দিল থেরাগ৷ দ্বিতীয় আঘাট টা আর করতে পারল না জেরিন৷ উড়ে যেয়ে একটা টেবিলের উপরে পড়ল৷ ঐ টেবিলে একটা লেপটপ কিছু যন্ত্রপাতি আর একটা পিস্তল ছিল৷ সব সহ উল্টে পড়ল জেরিন৷ পিস্তলটা হাতে চলে এল পড়ার সময়ে৷
শওকত রড দিয়ে থেরাগকে আঘাত করার জন্য উদ্যত হয়েছে৷ থেরাগ অবলীলায় শওকতের গলা ধরে শূন্যে তুলে ফেলল তাকে৷
শওকতের হাত থেকে রডটা কেড়ে নিয়ে শওকতের পেটে ঢুকিয়ে দিল ওটা৷
জেরিন গুলি চালালো৷ পিঠ বরাবর৷ থেরাগের৷ একটা দুটো তিনটে৷ ঘুরে দাঁড়িয়ে তারপরও এগুতে থাকলো সে৷ মুখে রক্ত উঠছে৷ এবার মাথা বরাবর গুলি চালালো জেরিন৷ থেরাগ এর একটা চোখ অদৃশ্য হয়ে গেল৷ দড়াম করে আঁছড়ে পড়ল সে৷
শওকতও দানবের চেয়ে কম কিছু নয়৷ পেট এফোঁড় ওফোঁড় করা লোহার রডটা নিয়ে উঠে দাঁড়াল সে৷ হাতে জেরিনের ছিটকে পড়া শটগান টা৷ আলোতে ওটার রূপালি শরীর ছলকে উঠল৷ জেরিন তড়িত বসে পড়ল টেবিলটার পেছনে৷ টেবিলের মরচে পড়া লোহার পাত কিছুটা হলেও রক্ষা করল তাকে৷ গুলির বেগ কিছুটা কমিয়ে দিল৷ তারপরও জেরিনের হাতে উরু আঘাত পেল জেরিন৷
শওকত থুক করে এক দলা থুথু ফেলল৷ সাথে রক্ত বেরিয়ে এল৷ পেটে রড ঢুকে আছে৷ ভ্রুক্ষেপ নাই তবু৷
হেসে বলল আলতাফ শ্যাষ, আমিও শেষ প্রায়৷ ত্বয় জেরিন তোমারেও নিয়া যামু! টেবিলটা মনে হয় রক্ষা করছে তোমারে৷ ত্বয় আরও দুইটা ঢুকায়ে দেব.. হাসতে হাসতে টলে এগিয়ে এল সে৷ জেরিন ছেঁচড়ে পিছু হটার চেষ্টা করলো৷ পিস্তলটা হাত থেকে পড়ে গেছে৷৷ ওটা তোলার মত শক্তিও নাই জেরিনের৷ হাত শরীর রক্তে পিছল হয়ে গেছে৷ চোখে ঝাপসা দেখছে জেরিন৷ মাথায় কোন চিন্তা আসছে না৷ ঘুম পাচ্ছে যেন সব ছাপিয়ে৷
শটগান কক করার শব্দ হলো৷ পরমূহুর্তে বুম বুম করে দু’বার শব্দ হল৷ কুঁকড়ে গেল জেরিন৷
কাটা কলাগাছের মতোন বুকে পেটে প্রায় মুষ্ঠির মতোন ফুটো নিয়ে মেঝেতে পড়ল শওকত৷
পেছনে ক্যাম্পবেল দাঁড়িয়ে৷ শটগানের নল থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে৷
ছেঁচড়ে হাঁচড়ে উঠে দাঁড়ালো জেরিন৷ ক্যাম্পবেল বলল আর ইউ ওকে মাই ডিয়ার! জেরিন হেসে বলল আ’ম ওকে গ্রান্ড পা.. এরপর হুড়মুড় করে পড়ে গেল জেরিন৷
শটগান ফেলে দ্রুত আগ বাড়ল ক্যাম্পবেল৷ বাইরে পুলিশ এর গাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছে৷ হেলিকপ্টারের ব্লেডের আওয়াজও৷
নিজের জ্যাকেট খুলে রোল করে ক্যাম্পবেল জেরিনের মাথার নিচে দিল সে৷ হাত ঘসতে ঘসতে বলল মা রে সাহায্য এসে গেছে৷ আর কিছুক্ষণ টিকে থাকো, আর অল্প কিছুক্ষণ….

-পলাশ পুরকায়স্থ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *