পোট্রেট অফ এ সাইকো (১৩ তম পর্ব)

মানুষের আভাস পেয়ে থেরাগ একটা গাছের আড়ালে চলে গেল৷ দুটো আলো নড়ছে৷ এদিকেই এগিয়ে আসছে৷ ওরা থেরাগকে ক্রস করে সামনে চলে গেল৷

লোক দুটো ইংরেজীতে গালাগাল করছে৷ সম্ভবত উইলিয়াম কে৷ একজন বলছে শেওক্যাট ঠিকই বলেছে৷ ওটাকে মেরে চলে যাওয়াই উচিৎ আমাদের৷ পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠেছে৷ এখন এই বরফ ঠেলে গাড়িকে ওখানে নিয়ে যাও৷ গ্যাসোলিন খোলো, ঢাল, আগুন লাগাও৷ যত্তসব৷ একজন দরোজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসে স্টার্ট দেবার চেষ্টা করছে৷ আরেকজন বলল তুমি স্টার্ট দাও আমি একটা সিগারেট ফুঁকি৷ এখন আবার ঠেলাঠেলির কথা বলো না৷ লোকটা স্টার্ট দেবার চেষ্টা করছে৷ আরেকজন গাড়ির পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালো বাতাস হাতের আড়াল করে৷
ড্রাইভিং সিটের লোকটা বলল স্টার্ট নিচ্ছে না৷ পেছনের লোকটা বলল কীপট্রাইং৷
থেরাগ অন্ধকারে দাঁড়িয়ে হাসছে৷ হায়েনার হাসি৷ কি সহজ টার্গেট এরা৷ একেবারে ঘুঘুর মতোন৷ দুটোকে পেড়ে ফেলতে সময় লাগবে না৷
গাছের আড়াল ব্যবহার করে গাড়ির পেছনে যে দাঁড়িয়ে আছে তার পেছনে চলে গেল থেরাগ৷ সামনের লোকটা গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে৷ ইঞ্জিন কাশছে৷ আবার স্টার্ট দেবার চেষ্টা করলো সে৷ দু’বার চাবি ঘুরালো৷ ইঞ্জিনের শব্দ হবার সময়ে থেরাগ বেসবল ব্যাট দিয়ে পেছনের লোকটার মাথায় আঘাত করলো৷ ইঞ্জিনের শব্দ ছাপিয়ে ধেব করে একটা শব্দ সামনের লোকটার কানে গেল৷ পাত্তা দিল না সে৷ চাবিতেই তার সম্পূর্ণ মনযোগ৷ গাড়ি স্টার্ট হলেই সে বলল মর্টি আসো৷ হয়ে গেছে!
মর্টির সাড়া শব্দ নেই৷ মর্টি ম্যান! আর কত!
পেছনে এসে দেখে মর্টি নেই! সাথে সাথে মেশিন পিস্তলটা তোলার চেষ্টা করলো সে৷ লোকটা ভয় পেয়েছে৷ সামনে তাজা রক্ত পড়ে আছে৷ ঘন৷ মর্টি নেই৷ আগের শোনা থেব শব্দটার মানে খুঁজে পেল সে এতক্ষণে৷ কেউ মর্টিকে আঘাত করেছে৷ তারপর সরিয়ে ফেলেছে! এত তাড়াতাড়ি৷
সামনে ঝোপের ওখানে কিছু নড়ে উঠল৷ লোকটা আলো ফেলল ওখানে৷ মর্টি ওই ঝোপের ওখানে৷ মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করছে৷ লোকটার মনযোগ ক্ষনিকের তরে মর্টির দিকে গেল৷ তখনই হামলা চালালো থেরাগ৷ মর্টিকে রাস্তার পাশে ঝোপে নামিয়ে আলতো করে সরে এসেছিল থেরাগ৷ দ্বিতীয় লোকটা এদিকে আসছিল বলে গড়ান দিয়ে গাড়ির নিচে চলে যায় সে৷ লোকটার মনযোগ যখন সামনের ঝোপে মর্টির দিকে নিবদ্ধ তখনই দ্বিতীয় লোকটাকে আক্রমণ করে থেরাগ৷ এবার মাথার পেছনে ঘাড় আর মাথার সংযোগ স্থলে মোক্ষম আঘাত হানল সে৷ কাটা কলাগাছের মতো দড়াম করে আঁছড়ে পড়ল সে৷ আর নড়ল না৷ মর্টির মাথায় মারা বাড়ি টা যুত হয় নি৷ দুই লাফে ঝোপের কাছে পৌঁছে গেল থেরাগ৷ মর্টিকে আবার শুইয়ে দিল৷ এবার আর কেউ নড়ছে না৷ শুধু গাড়ির চলন্ত ইঞ্জিনটা গর্জন করে চলেছে একটানা…
রাস্তার ওপাশটা ঢাল৷ থেরাগ বডি দুটো টেনে নিয়ে গড়িয়ে দিল৷ এর আগে মেশিন পিস্তল আর আনুসাঙ্গিক জিনিস খুলে নিয়েছে সে৷ ড্রাইভিং সিটের পাশে রেখে রওনা হল গাড়ি নিয়ে৷ ওয়ার হাউজের দিকে৷ ওদের কথায় থেরাগ বুঝেছিল আসলে ওরা এটা নিয়ে যেতে এসেছিলো অতএব আপাতত ওদিকেই যাই৷

শওকত একবারও আলো জ্বালে নি৷ চাঁদের আলোয় বেশ দেখা যাচ্ছে চারপাশ৷ সে সন্তর্পণে এগুলো৷ মনে মনে চিন্তা করছে সে জেরিন হলে কি করতো৷ কোথায় যেত! জেরিন ছেড়ে দেবার পাত্রী নয়৷ কাউকেই সে ছেড়ে কথা কইবে না৷ শওকত স্বভাবগত ভাবেই কিলার৷ জেরিন ট্রেইন্ড কিলার৷ তাদের মধ্যে ফারাক খুবই অল্প ।একটা কয়েন এর এপিট আর ওপিঠ৷ এখানে ফাইল মাইলের জন্য আসেনি শওকত৷ তার টার্গেট শুধু জেরিন৷ ওদের কথায় অনেক সময় নষ্ট করে ফেলেছে সে৷ আর না৷ প্রয়োজনে উইলিয়ামকেও সে খতম করে দেবে তার কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে৷ উইলিয়ামদের চিহ্নধরে কিছুদূর এগিয়েই সে কয়েকটা আলোর নাচন দেখতে পেল৷ একটা বাড়ির সামনে৷ মনে মনে গাল পাড়ল শওকত৷ স্টুপিডের দল৷ এরা নাকি ট্রেইন্ড সোলজার৷ জেরিন একটা অস্ত্র যোগাড় করতে পারলে পাখির মতোন পেড়ে ফেলবে সবকটাকে৷ হঠাৎ ওয়ার হাউজের দিক থেকে একটা গুলির শব্দ ভেসে এল৷ শওকত দাঁড়িয়ে পড়লো৷ ওখানে আবার কি হলো!
হঠাৎ শওকতের মনে হলো ঠান্ডার মধ্যে ঘুরে লাভ কি৷ সে যদি জেরিন কে ঠিক মতো চিনে থাকে তাহলে জেরিন ঘুরে আবার ওয়ার হাউজেই যাবে৷ এই শুয়োর গুলা কিছুই করতে পারবে না৷
এরা হয় এখানে মরবে নয়তো খুঁজে না পেয়ে ওয়ারহাউজে ফেরত আসবে৷
ওয়াকিটকি তুলে উইলিয়াম কে কল করলো সে৷ বলল শুনেছো৷ গুলির শব্দ৷ উইলিয়াম বলল হ্যাঁ৷ শওকত বলল তুমি এদিকটা সামলাও৷ আমি ওদিকে দেখছি৷৷ আর কিছু না বলে ওয়াকিটকি অফ করে দিল শওকত৷
উইলিয়াম দু’জন কে বলল ওয়ার হাউজের দিকে যাও৷ দেখ ল্যানলি মনে হয় বিপদে পড়েছে৷ আমরা এদিকটা কভার করছি৷ ভেজানো দরজা ঠেলে টু বাই টু ফরমেশানে ওরা ভেতরে ঢুকলো৷ উইলিয়াম দরোজা কভার করে দাঁড়িয়ে৷

থেরাগ গাড়িটা ওয়ার হাউজের সামনে স্টার্ট বন্ধ করল৷৷ নেমে দাঁড়ালো৷ ওটা একটা গাছের নিচে পার্ক করেছে সে৷ যাতে নেমে দাঁড়ালেও সহসা বুঝা যায় না কে নেমেছে৷ নামার আগেই পাশের সিট থেকে একটা পিস্তল উঠিয়ে নিয়েছে৷ ওয়ারহাউজের দরোজাটা এখান থেকে বড়জোর ত্রিশ পঁয়ত্রিশ ফুট হবে৷ পিস্তলেই কভার করা যাবে৷ এগুলো সাইলেন্সার লাগানো লম্বা নাকের পিস্তল৷ সাইলেন্সার খুলে নিয়েছে সে৷ সাইলেন্সার গুলির বেগ অনেকটাই কমিয়ে দেয়৷ শব্দে তার কিছু এসে যায় না৷ জেরিনের সাথে তারই একমাত্র বোঝাপড়া হতে পারে৷ অন্য কেউ নয়৷ ম্যাগজিন আগেই চেক করেছে থেরাগ৷ পুরো ভর্তি৷ শ্যূটিংএ তার হাত অনেক ভাল৷ আড়াল ব্যবহার করতে জানে৷ গেরিলা যুদ্ধের ট্রেনিং আছে৷ এই উজবুক গুলা ওভার কনফিডেন্ট নিয়ে কাজ করছে৷ যত্রতত্র আলো ফেলে এগুচ্ছে৷ থেরাগ জানে ও একাই এদের জন্য যথেষ্ট৷ ওদের মেরে বাগে আনবে সে জেরিন কে৷ মোস্ট প্রেসাস ওমেন, তার জন্য জেরিন৷ অন্য সবাই আসার আগেই কাম তামাম করে সটকে পড়বে সে৷ অন্য কোথাও অন্য নামে আবার তার পাগলামি শুরু করবে৷
গাড়ির শব্দ পেয়ে ওয়ার হাউজের দরোজা ঠেলে বাইরে এসে দাঁড়াল ল্যানলি৷
গাড়ি থেকে নেমে একজন দাঁড়িয়ে আছে৷ আবছা বুঝতে পারল সে৷ কিছু বলার আগেই পিস্তল তুলে গুলি করলো থেরাগ৷ ল্যানলি ছিটকে পড়ল ওয়ার হাউজের দরোজার উপরে৷ দ্রুত এগুলো থেরাগ৷ পিস্তল তার ভাল লাগে না৷ মাথা ফাটিয়েই বেশি মজা পায় সে৷ উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা ল্যানলির মাথার মাঝ বরাবর বেসবল ব্যাট চালালো থেরাগ৷ ঢলে পড়ল ল্যানলি৷ কলার ধরে ওটাকে একপাশে সরিয়ে দিয়ে সন্তর্পনে ভেতরে প্রবেশ করলো থেরাগ৷ সতর্ক সে৷ ওয়ার হাউজের অবস্থা দেখেই বুঝে নিয়েছে ভেতরে কেউ নেই৷ তারপরও রেকি করলো থেরাগ৷ উপরে উঠে এসে দোতলার কাঠের বারান্দায় পা রাখতেই শওকত প্রবেশ করলো দরোজা ঠেলে৷ চকিতে ঘুরেই গুলি চালাল থেরাগ৷ শওকত সতর্ক ছিল৷ উপরে নাড়াচাড়ার আভাস পেয়েই ড্রাইভ দিয়ে একপাশে সরে গেল সে৷ একটা থামের আড়ালে জঞ্জালের পেছনে বসে পড়ল৷ আপাততঃ নিরাপদ সে৷
কিন্তু চিন্তা করছে নতুন ঝামেলাটা আবার কে! পুলিশ এত তাড়াতাড়ি আসার কথা না৷ ওরা সম্ভবত এখন রওনা হবে৷ তাহলে ওটা কে?
এর একমাত্র জবাব হতে পারে জেরিন যে সাইকোটাকে ধরতে এসেছে সেইটা৷ আলতাফ৷ ঠিকই হারামজাদা কুত্তার মতো গন্ধ শুঁকে চলে এসেছে৷ মাথানষ্টটা আবার এক্স আর্মি৷ এই তুষার ঝড়ের মাঝেও যদি সে চলে আসতে পারে তারমানে কতটা বেপরোয়া এই খুনী৷ শওকত ঘৃণায় এক দলা থুথু ফেলল৷ সে নিজে একজন খুনি৷ বহু খুন করেছে৷ বেঁচে থাকলে জেরিনকেও সে রেহাই দিবে না৷ কিন্তু সে আলতাফের মতন বিকৃত মানসিকতার নয়৷ কি করবে এখন! এই বদমাশটাকে কি শেষ করার চেষ্টা করবে নাকি জেরিন কে ধরার জন্য অপেক্ষা করবে!
ওয়ার হাউজের ভেতরে জ্বালানো লাইটটা ধ্বক করে নিভে গেল৷ শওকত বুঝলো সাইকোটাই এ কাজ করেছে৷ উপরে মেইন সুইচ আছে সম্ভবত৷ তার কেটে দিয়েছে বা বন্ধ করে দিয়েছে৷ চরাচর অন্ধকারে ডুবে গেল৷ বাইরে আবার তিরতির করে বরফ পড়া শুরু হয়েছে৷ শওকত আর থেরাগ দু’জনে অন্ধকারে পিশাচের মতোন অপেক্ষা করছে!

ক্যাম্পবেলের বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো দু’জন৷ তাদের পেছনে আরও দু’জন৷ ভেতরে তিনটে ঘর৷ কিছুই নেই৷ কিচেনের পাশে একটা দরোজা খোলা৷ সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে৷ ওটা ধরে একজন নেমে এল৷ পেছনে আরেকজন৷ ওরা নিচে এসে ক্যাম্পবেল কে বাঁধা অবস্থায় পেল৷ মাথা বুকের কাছে ঝুঁকে পড়েছে৷ লোকটা নড়ছে না৷ একজন তার নাকের সামনে দুটো আঙুল নিয়ে দেখল শ্বাস পড়ছে৷
আরেকজন ইশারা করলো৷ ওদের পেছনে একটা দরোজা৷ বাতাসে একটু একটু বাড়ি দিচ্ছে৷ পেছনে একজন কাভার করে সামনের লোকটাকে দরোজা খুলতে বলল লোকটা৷ দরোজা খুলেই স্তম্ভিত হয়ে গেল সে৷ পনের ফুট দূরে জেরিন দাঁড়িয়ে ৷ অন্ধকারে চাঁদের আলো আস্তে আস্তে মেঘে ঢেকে যাচ্ছে৷ লোকটার মনে হল জেরিন খোলা হাতেই দাঁড়ানো৷ মেশিন পিস্তলটা তাক করতে করতে পা বাড়ালো সে৷
জেরিনের পাতা ফাঁদে পা দিল ঠিক তখনই৷ বড় দাঁতওয়ালা ফাঁদটা খেয়াল করেনি সে৷ হাঁড়মাংস ছেদ করে ওটা পায়ে বসে গেল৷ গগন বিদারী চিৎকার করে উঠল লোকটা৷ ট্রিগারে চাপ পড়ে এলোমেলো গুলি বের হতে লাগল৷ পেছনের লোকটার চোখ ফুঁড়ে ঠক করে পেছনের দরোজায় গাঁথল গুলিটা৷ লোকটা পড়ে গেল৷
সামনের লোকটার উপরে এবার দুটো ব্যারেলই ফুটালো জেরিন৷ লোকটার ছিটকে আগের লোকটার উপরে যেয়ে পড়ল ৷ ওর পায়ের বাকি অংশটা ফাঁদে আটকে আছে এখনও!
জেরিন শটগান টা রিপিটিং৷ ছ’টা শেল ধরে৷ তড়িৎ আরও দুটো শেল ভরে নিল সে৷ জায়গা পরিবর্তন করল এরই সাথে সাথে৷
পেছনের দু’জনের চার পাঁচটা বুলেট ওখানে নাক গুঁজল৷
হাইড ডোরের সামনেরটা কাঠের দেয়াল৷ পেছনে পাথর৷ ওখানে একটা ছোটমতন প্যাসেজ৷ আগেই দেখেছে খেয়াল করেছে জেরিন৷ শটগান বাগিয়ে দু’কদম এগুলো সে৷ ডাবল গেজ শটগান৷ ছ’টা গুলিই কাঠের দেয়ালে করলো সে৷ এদিক সেদিক করে৷ দেয়ালের ওপাশে পতনের আওয়াজ পেল জেরিন৷ পেছনের দু’জনের একজন পড়ে গেছে৷ আরেকজন হামাগুড়ি দেবার চেষ্টা করছে৷ ভেঙে পড়া কাঠের দেয়ালের অংশ দিয়ে দেখতে পেল সে৷
সামনে একটা মেশিন পিস্তল পড়ে ৷ সম্ভবতঃ ফাঁদে পড়া লোকটার ওটা নিয়ে একপশলা গুলি বর্ষণ করলো জেরিন৷ লোকটা পড়ে গেল মুখ থুবড়ে আর নড়াচড়া করলো না৷
ওরা ভাবেই নি জেরিন এই অবস্থায় এমন জায়গায় ওদের আক্রমণ করবে৷ ওরা চিন্তাই করতে পারেনি৷ একটা মেয়ে এভাবে …
ভেতরে তুমুল গোলাগুলি উইলিয়াম কে সচকিত করে তুলল৷ সে দু’কদম পিছু হটল৷ যাদের কে ওয়ারহাউজে যেতে বলেছিল ওদের আবার ফেরত আসতে বলল সে৷ ওয়াকিটকিতে৷
জেরিন শটগানে আবার শেল ভরল৷ তারপর আস্তে আস্তে সরে গেল ওখান থেকে৷ পেছনের দিকে ঢাল বেয়ে ঘুরে সামনের দিকে আসতে লাগল সে৷ বরফের জন্য অবশ্য ঠিকমতোন পা ফেলা যাচ্ছে না৷
উইলিয়াম সাথের দু’জন কে ছড়িয়ে পড়তে বলল৷ নির্দেশ দিল শুট টু কিল!

জেরিন পেছনে ঝুলানো মেশিন পিস্তলটা হাতে নিয়েছে৷ ওটা গোলাগুলি থেকে সংগ্রহ করেছে সে৷ সাথে একটা ওয়াকিটকিও৷ ওটায় উইলিয়ামের নির্দেশ শুনতে পেল সে৷
ভেতরে কি হয়েছে সেটা আর দেখতে আসেনি বাকি তিনজন৷ ওরা ছড়িয়ে পড়ল জেরিন কে মারার জন্য৷
উইলিয়াম পিছু হটে রওয়ানা হল৷ এখানে থাকার আর কোন মানে নেই৷ ওয়ার হাউজে যাবারও৷ এখান থেকে নিচে নেমে যাবে সে৷ সামনের লোকালয়ে একটা না একটা গাড়ির ব্যবস্থা হবেই৷ আর মানে নেই এখানে থাকার৷ বাড়ির পাশ দিয়েই একটা ঢাল আর পায়ে চলা পথ৷ বরফে আচ্ছাদিত ওটা না নিয়ে আরও কিছুদূর পিছিয়ে আসবে বলে ঠিক করলো৷ হঠাৎ পিস্তল কক করার শব্দ হল৷ জমে গেল উইলিয়াম৷
জেরিনের গলা এই ঠান্ডার চেয়েও হিম শীতল মনে হল তার কাছে৷
উইলিয়াম ওয়াকিটকিতে ওদের ফিরে আসতে বল৷ এখানে ৷ তোমার কাছে৷
বলেই জায়গা পরিবর্তন করলো জেরিন৷ উইলিয়াম ঢোক গিলল৷
জেরিন বলল হাতে সময় নেই উইলিয়াম৷ তিনসেকেন্ড অপেক্ষা করে আমি তোমার পায়ে গুলি করব৷
উইলিয়াম ঘুরেই গুলি করলো আওয়াজ লক্ষ্য করে৷ জেরিন আগেই সরে গেছে কথা বলে৷ দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস টেনে গুলি ছুঁড়ল জেরিন৷ একপশলা৷ উইলিয়াম ঘুরে পড়ে গেল৷ অথচ এই লোকটাকেই নাকি সে বিশ্বাস করেছিল! ইরমা’র কথা মনে হলো তার৷ জেরিন জানে না এই মেয়েটার আগামি কেমন হবে৷
উইলিয়াম চিৎ হয়ে শুয়ে আছে৷ খাবি খাচ্ছে৷ জেরিন ওয়াকিটকি অন করে বাকি দু’জনের উদ্দেশ্যে বলল তোমাদের বস শেষ৷ এখন কি করবে ভেবে দেখ৷ আমাকে মারতে এলে তোমরাও যে মরবে না তার গ্যারান্টি নাই৷ যেতে পার অথবা লড়তে পার৷ কি করবে ঠিক কর৷ এখনও সময় আছে৷ ঝড় থেমে গেছে৷ যে কোন সময় পুলিশ চলে আসবে৷ গোলাগুলির ব্যাপারটা নিশ্চয়ই আসেপাশের অনেকের কানে এসেছে…. ওপাশ থেকে কোন জবাব এল না৷
ওরা আগেই চম্পট দিয়েছে৷ টাকার বিনিময়ে হত্যা করা যায় ৷বাহাদুরী ফলানোর জন্য নয়৷ মরে গেলে আর টাকা দিয়ে কি করবে৷ ওরা আগেই পিঠটান দিয়েছে৷ যখনই উইলিয়াম ওদের ছড়িয়ে পড়তে বলেছে৷ তখনই৷
জেরিন পা ফেলে উইলিয়ামের কাছে পৌঁছে গেল৷
ওর শেষ সময় উপস্থিত৷ জেরিনের দিকে তাকিয়ে কোন রকমে বলল আ’ম সরি জেরিন…
জেরিন কিছু বলল না শুধু বলল একটা সত্যি কথা বলবে.. কে তোমাকে এই কাজ করতে বলেছে?
উইলিয়াম বহু কষ্টে কিছু উচ্চারণ করলো From 92 peers SM !
গলা দিয়ে রক্ত উঠে এল উইলিয়ামের৷ মুখ ভর্তি করে বাইরে বেরিয়ে এল৷ স্থির হয়ে গেল তার দেহ৷
কথাটার যদিও কোন অর্থ বের করতে পারল না সে , এই মুহূর্তে৷ কয়েক বার আউড়ে নিল সে৷ মনে রাখার জন্য৷
এবার! হঠাৎ মনে হল জেরিনের ৷ শওকত রয়ে গেছে… কোথায়?

শওকত আঁধারে বসে থেকে চিন্তা করছে৷ এ আলতাফ না হয়েই যায় না৷ আর কে হতে পারে ৷ গলা চড়িয়ে বলল আলতাফ নাকি? আরে মাথা নষ্ট আলতাফ নি!
থেরাগ কোন জবাব দিল না৷
শওকত আবার বলল আমার কাছে বন্দুক বান্দুক নাই আলতাফ মিয়া!
ছুরি সম্বল৷ ওখন আমার শইলে যদি বুলেট ঢোকায়ে দাও তাইলে হবো?
তুমি জেরিনরে মারবার চাও আমিও৷ তাছাড়া তুমি তো কাম করো মারণের পরে৷ আমি শেষ করি তুমি তোমার হাউস মিটাও!
আলতাফ চুপ করে আছে৷
শওকত বলছে চিন্তা কইরো না আলতাফ মিয়া, বেশি ডেমেজ করবো না…. এই দেখ হাত তুইলা আমি বাইর হয়া আসতেছি৷ বাত্তি বুত্তি জ্বালাও৷ লুকালুকি খেলা আমার আবার পছন্দ না….
ওয়ার হাউজের লাইট জ্বলে উঠল৷
শওকত হাত উপরে তোলে বের হয়ে আসল৷
সিড়ি’র উপরেই দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ছয়ফুটি দানব টা৷ অনড়!

(চলবে)

-পলাশ পুরকায়স্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *