পোট্রেট অফ এ সাইকো (৫ম পর্ব)

জেরিন নিকি কে বলল , নিকি টানেলে ঢুকানোর আগে গাড়ি স্লো করে ফেল৷ আস্তে ধীরে প্রবেশ করো৷ আমি চাইছি ওটা কাছাকাছি আসুক৷ কালো রঙের গাড়ি ওটা৷

নিকি থতমত খেয়ে কিছুটা ভীত গলায় বলল তুমি কি করতে চাচ্ছ!  টানেলে ঢুকে গাড়িটা ব্রেক করবে৷ কালো গাড়িটা কাছাকাছি আসামাত্র৷ নেমে গাড়ির দিকে দৌঁড় দিব আমি৷ তুমি সামনে এগিয়ে যাবে এবং পুলিশ পেট্রোলকে অবহিত করবে! লোকটা এখানে গাড়ি ঘুরানোর অবকাশ পাবে না৷ কাজেই তাকেও নামতে হবে৷ আমি সে সুযোগটা নিতে চাই৷
নিকি কিছু বলতে যাচ্ছিল৷ জেরিন বলল আহ! নিকি যা বলছি করো৷ ফলোয়ারকে পাকড়াও করতে হবে৷ এটা আমাদের জন্য একটা ক্লু হবে৷ বড় ক্লু৷
জেরিন জানে, তার অভিজ্ঞতা থেকে জানে আলতাফ সবসময় কিন্তু কেউ লাগলো কেন ওদের পেছনে! যদি গাড়িতে আলতাফ থেকেই থাকে তাহলে ধরার একটা মোক্ষম চান্স এটা৷ আর যদি না থাকে তাহলে কে ওদের ফলো করছে?
কেউ একজন ফলো করা মানে জেরিন আসার পর থেকেই চোখে চোখে রাখা হচ্ছে তাকে! কেন? অন্য কোন ঘটনা কি এখানে জড়িত৷ বুঝতে হবে৷
টানেলের প্রায় আধাআধি যাবার পরই গাড়িটা একগাড়ি পেছনে এসে পড়ল৷
জেরিন চিৎকার করে বলল এইবার নিকি৷ নিকি ব্রেক কষল৷ পেছনের লাল লাইট গুলো জ্বলে উঠল৷ ঠিক পেছনের গাড়িটা টাল সামলাতে না পেরে নিকির গাড়ির পেছনে গুতা দিল৷ ততক্ষণে জেরিন গাড়ি থেকে নেমে গেছে৷ টানেলের দেয়ালে চেপে গেছে৷ নিকি ঝাঁকি খেল একটা৷ পেছনের গাড়ির লোকটা সমানে বকছে৷ ওর গাড়ির হেডলাইট শেষ৷ সাথে থেবড়ে গেছে নিকির গাড়ির পেছনটাও!
জেরিন চোখ রাখছে শুধু কালো গাড়িটার উপর৷ সেই গাড়ির ড্রাইভার কোন রকমে সামনের গাড়ির কিছুটা দূরত্বে স্কীড করে থামলো৷
আজ টেনেলে ট্রাফিক কম৷ না হলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিল৷ লোকটা ড্রাইভিং সিট থেকে বের হয়ে পড়িমরি করে ছুট দিল৷
জেরিন কালো গাড়ির বনেটের উপরে বাঘিনীর মতো লাফিয়ে উঠল৷ একলাফে ছাদে এর পর পেছন দিকে ছেঁচড়ে নেমে দৌড় দিল লোকটার পেছন পেছন৷
পুরো ফিট নয় জেরিন৷ পায়ে ব্যথা পাচ্ছে৷ আমল দিল না৷ লোকটাকে ধরতেই হবে৷
লোকটা লম্বায় পাঁচফিট দশ বা এগারো হবে৷ হুডি পরনে৷ চেহারা দেখতে পেল না জেরিন৷ পাশ দিয়ে একটা গাড়ি পোঁওও করে বেরিয়ে গেল৷ লোকটা ছুটতেও পারে৷ মনে মনে বলল জেরিন৷ সে অবশ্য পুর্নশক্তিতে ছুটতে পারছে না৷
লোকটা টানেল থেকে বের হয়ে একলাফে পাশের রেলিংটা পেরুলো৷ ওপাশে একটা ছোট রাস্তা আছে৷ সামনে যেয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছে ওটা৷ জেরিনও টপকালো৷ লোকটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে৷ জেরিনও নাছোড় বান্দা৷ পেছন পেছন এগুচ্ছে৷ সামনের লোকটা হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল৷ জেরিন আরেকটু জোরে এগুনোর চেষ্টা করলো৷ লোকটা আবার উঠে দৌড় দিল৷ হঠাৎ দিক পরিবর্তন করে ঢাল বেয়ে উপরে উঠে গেল লোকটা৷ পেছন ফিরে তাকালো ৷
জেরিন ঢাল বেয়ে উঠছে৷ লোকটা জেরিনের দিকে কিছু একটা ছুড়ে দিল৷ ভারী কালো জিনিসটা জেরিনের বুকে আঘাত করল৷ জেরিন আর্তনাদ করে নিচে গড়ালো৷ ঢালের ঘাস খামচে ধরে আবার উঠল জেরিন লোকটা রাস্তার পাশের রেলিং টপকে রাস্তার ওপাশে চলে গেছে৷ বড় একটা লরি দু’জনের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো৷ লরির হেডলাইটের আলোতে জেরিন নিশ্চিৎ হলো যে লোকটা ফলো করছিল সে এশিয়ান নয় সাদা চামড়ার!
ওপাশ দিয়ে রাস্তা পার হয়ে আঁধারে মিলিয়ে গেল লোকটা৷ ছুঁড়ে দেওয়া বস্তুটা তার সদ্য সারতে থাকা রিবে আঘাত করেছে৷
পুলীশের গাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছে৷ জেরিন পিছিয়ে এসে ঢাল বরাবর নামতে শুরু করলো৷ লোকটা কি ছুঁড়ে মেরেছে সেটা দেখা দরকার৷ পুলিশ আসার আগেই দরকার৷
একটু দেখতেই ওটা পেল৷ একটা ক্যামেরা! জেরিন হাতে নিয়েই ওটা খুলে ফেলে মেমরি কার্ডটা পকেটে চালান করলো৷ আসেপাশে হাকডাক শোনা যাচ্ছে৷ রাস্তার উপর থেকে বেশ কটা লাইটের আলো আর পিস্তল কক করার শব্দ শুনতে পেল জেরিন৷ সাথে হলিউডি মুভির মতো একটা শব্দ৷ ফ্রিইজ..!
অন্ধকারে আলোর দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে দু’হাত উপরে তুলল জেরিন৷ একহাতে ক্যামেরাটা ধরা৷
ওয়াকিটকিতে একজন পুলিশ বলল উনাকে পাওয়া গেছে! প্লিজ কাম৷
….

জেরিন উইলিয়াম নিকি স্যাম চারজন আধাঘন্টা পর৷ নিকির বাসায় বসে৷ সামনে ক্যামেরাটা রাখা৷ লেন্স দুটুকরো হয়ে গেছে ভেঙে৷
উইলিয়ামের মুখ থমথম করছে৷ সে জেরিন কে বলল ম্যাম আপনার এভাবে টানেলে নেমে যাওয়া উচিৎ হয়নি৷ দুর্ঘটনা ঘটতে পারত ৷ মানুষজন মারা যেতে পারত৷ ভাগ্যিস ট্রাফিক কম ছিল আজ৷ আপনাকে এখানে আনা হয়েছে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করার জন্য! ফিল্ডে দৌড়ঝাপ করার জন্য নয়৷
জেরিন বলল দেখুন স্যার৷ এভাবে না করলে গাড়িটা কিংবা এই ক্যামেরাটা পাওয়া যেত না৷
উইলিয়াম একটু উষ্ণ স্বরে বললেন আমাদের খবর দিলে আমরা ব্যবস্থা নিতাম৷ আপনার হিরোগিরি ত কোন কাজে আসেনি৷ উল্টো লোকটা পালিয়ে গেল৷
জেরিন বলল আমি সরি স্যার! আলতাফের কথা শোনার পর থেকে আমার আসলে মাথা ঠিক ছিল না৷ আমি মনে করেছিলাম ওটাই হয়তো আলতাফ৷ নিজেকে রোখতে পারিনি৷
এগারোটা কিংবা তারও বেশি খুন সে করেছে৷ এগারোটা নির্দোষ মেয়ে! এখানে অলরেডি তিনটা বা চারটা! অথচ কেউ জানিনা ও কোথায় ? এই মূহুর্তে কাকে কতল করার জন্য টার্গেট করছে৷
উইলিয়াম বুঝতে পারছেন মেয়েটার অবস্থা৷ চাকুরীর প্রথমদিকে তার একবির এমন হয়েছিল৷ অনুভুতিটা তিনি জানেন৷ ক্রিমিনালকে ধরতে না পারার ব্যর্থতা তিনি বুঝেন৷ এই প্রথম জেরিনের দিকে তিনি সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকালেন৷ তিনি আর কথা বাড়ালেন না৷
শুধু বললেন এনিওয়ে আপনি রেস্ট নিন মিস জেরিন৷ বাকিটা আমরা দেখছি৷ তাছাড়া কাল ব্যাংক হলিডে৷ নিকি কে নিয়ে আমাদের লন্ডন ঘুরে দেখ৷ গাড়ি আর ক্যামেরা আমরা সিজ করছি৷ দেখি কিছু পাওয়া যায় কি না৷ আর নিকি টিমের কেউ না কেউ ব্যাপারটা মনিটরিং করবে৷ আমরা কাল আবার বসবো৷
একটু চিন্তা করে বললেন এক কাজ করো নিকি, জেরিন কে নিয়ে কাল আমার বাড়িতে চলে এস৷ আমি অন্যদেরও বলছি৷ একটা পার্টি হবে আর সাথে এই সাইকো কে নিয়ে আলাপ৷
জেরিন বলল স্যার এই ক্যামেরাটা ওয়াইফাই যুক্ত৷ যদি কিছু থেকেও থাকে ওটা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তবুও দেখেন কিছু ট্রেস হয় কি না৷
উইলিয়াম এবার ধমকের সুরে বললেন আমি না এখন তোমাকে এ ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করতে মানা করলাম! আমরা দেখছি৷
তুমি রেস্ট নাও৷
বের হবার সময় নিকি কে ডেকে বললেন খেয়াল রেখ মেয়েটার প্রতি৷ গতকাল রাতে যেমন বলেছিলাম ওকে একা ছেড়ো না ৷ নিকি বলল ওকে স্যার! দরোজা থেকে জেরিনের দিকে তাকালেন তিনি৷ মেয়েটা চুপচাপ বসে আছে৷ উইলিয়ামের নিজেরও একটা মেয়ে আছে৷ জেরিনের চেয়ে ছোটই হবে৷ সহসা জেরিনকে দেখে উনার মেয়ের কথা স্মরণ হলো৷ তিনি জেরিন কে গুড নাইট বলে বেরিয়ে গেলেন৷
জেরিন মূর্তির মতোন বসে আছে৷ ট্রাউজারের পকেটে হাত দিয়ে ও নিশ্চিত হল মেমরি কার্ডটা পকেটেই আছে৷ নিকি গেল খাবারের ব্যবস্থা করতে৷ হঠাৎ জেরিনের খুব ক্লান্ত লাগল৷
চারিদিক স্তব্ধ নিঝুম মনে হলো তার৷
ব্যাগে ছোটএকটা ট্যাব আছে জেরিনের৷ ডুয়েল ওপারেটিং সিস্টেমের৷ উইন্ডোজ টেন আর এনড্রয়েড দুটোই চলে৷ যখন যেমন প্রয়োজন ব্যবহার করতে পারে৷ নতুন টেকনোলজি খুব বেশি যে বোঝে তা না৷ তবে কাজ চালানোর মতো জানে৷
ক্যামেরা থেকে খোলা ম্যমরি কার্ডটা, ঠিক করলো রাতে দেখে নেবে৷ এখন নয়৷ নিকি কে সে জানতে দিতে চায় না এসব৷
কোথায় যেন একটা খটকা মনের ভেতর খট খট খট খট করে যাচ্ছে..
আলতাফ খুন করছে, ও একটা অসুস্থ মানুষ, তবে জেরিনকে ফলো করছে কে? কেন?
আলতাফ এক্স আর্মি পার্সন৷ আগে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে একেবারে লো প্রোফাইল লাইফ লীড করত৷ কিন্তু সে কি তার ব্যক্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছিল? সম্ভবতঃ না৷ তার কাজকারবার অসুস্থ৷ তার ব্রেইনে সমস্যা৷ মেয়েগুলাকে মেরে সে একধরণের পৈশাচিক আনন্দ পায়৷ তারকাছে মেয়ে মানে একটা খেলনা বিশেষ…. নাহ! এসব হাইপো থিসিস জেরিনের মনে ধরছে না৷
আর্মিতে অনেক সময় সোর্স ব্যবহার করা হয়৷ খবরের জন্য৷ যে লোকটা তাদের ফলো করছিল সে হয়তো এমন কেউ ই৷ আলতাফ কি তবে তাদের পেছনে সোর্স লাগিয়ে দিয়েছিল! কেন?
জেরিনকে ফলো করতে! শুধু জেরিনকে নিয়ে একটা খেলা খেলতে চায়? আলতাফের শেষ কথাটা এখনও কানে বাজে৷ আবার দেখা হবে জেরিন৷ হয় তুমি না হয় আমি… না না ও বলেছিল হয় তোমার হাতে আমি নতুবা আমার হাতে তুমি…
জেরিন! কি ভাবছো এত? নিকির প্রশ্নে চমকে উঠল জেরিন৷
বলল নাহ৷ কিছু ভাবছি না৷ আসলে কিছু জিনিস মানে কিছু ঘটনা মেলাতে পারছি না৷
তোমরা পত্রিকায় আমার আসার খবর পাবলিশ করেছ৷ আমি এসেছি৷ সাধারণ মানুষ এসব নিয়ে আলাপ করবে সমালোচনা করবে কিন্তু তারপর ভুলে যাবে৷ কিন্তু কিছু মানুষ এই সংকেতটা ধরবে৷ কারা? কেন? কি লাভ?
নিকি বলল হয়তো তোমার পুরোনো কোন শত্রু৷
জেরিন হেসে বলল আলতাফই তো আমার সবচেড়ে ভয়ঙ্কর শত্রু৷ এমন মাথানষ্ট শত্রু থাকতে আর লাগে কি! তাছাড়া আমার শক্রুর তো অভাব নাই নিকি৷
তবে আলতাফ যদি কাউকে স্পাইওয়াচ এর জন্য পাঠিয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে খেলছে৷ নিজেকে আড়াল করে সম্পূর্ণ অন্য এক খেলা খেলছে আমার সাথে৷
নিকি বলল আস একটু খেয়ে নিই৷ আজ ভালই ধকল গেছে৷ আপাতত এসব চিন্তা সরিয়ে রাখি কি বলো৷
জেরিন আনমনে বলল হুমম! চলো পেটে কিছু দিই৷ তার মাথায় তখন অন্য চিন্তা৷ স্মৃতির থলি থেকে বের করে সবকিছুই আবার ঝাড়াপোছা করছে৷ কি রহস্য আছে তার পেছনের জীবনে!
বহু বছরের মধ্যে নিজের নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটালো সে৷ খেয়ে যেয়েই শুয়ে পড়লো জেরিন৷ নিনাও কিছুটা অবাক হলো জেরিনের আচরণে৷

হোলগা’র একরুমের স্টুডিও এপার্টম্যান্ট থেকে সামনের রাস্তাটা দেখা যায়৷ থেরাগ ওকে পৌঁছে দিয়ে ওখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে৷ ঠিক তার জানালার সামনে৷ রাস্তার ওপারে ল্যাম্পপোস্টের ধারে৷ তাকিয়ে থাকে তার জানালার দিকে৷ তারপর চলে যায়৷ হোলগা’র ভাল লাগে দেখতে৷ আজ মিহিদানায় বরফ পড়ছে৷ লোকটা ল্যাম্পপোস্টের নিচে গিয়ে দাঁড়ালো৷ হঠাৎ নাচের ভঙ্গিমায় ফুটপাত থেকে রাস্তায় পা দিল থেরাগ৷ দুহাত প্রসারিত করে ব্যালের মতো আধপাক নেচে নিল সে৷ হ্যাট খুলে জানালার দিকে নুয়ে পড়ে কুর্নিশ করলো৷ থেরাগ জানে হোলগা এখন জানার সামনে বসে আছে৷ ওকে দেখছে…

হোলগার’ চোখে কেন জানি অকারণে জল চলে আসল৷ গভীর ভালবাসায় মনে মনে সে বলল কি পাগল মানুষটা!
…..

পত্রিকার খবর ঠিক হয়ে থাকলে৷ জেরিন পৌঁছে গেছে গতকাল৷ কাজও শুরু করে দিয়েছে হয়তো৷ কদ্দিন থাকবে তুমি , জেরিন! মনে মনে বললাম আমি৷ দেখো জেরিন তুমি এসেছো তাই তোমার সন্মানে হোলগা আজ বেঁচে গেল! আমি তাকে ছেড়ে দিলাম! হোলগা আমার জন্য পাগল জেরিন৷ আর আমি পাগল তোমার জন্য৷ আমি তোমার মাথার পাশে একটা বাড়ি দিতে চাই৷ মোক্ষম বাড়ি৷ না না আগে না, পরে৷ একটু খেলিয়ে নিয়ে তারপর! তারপর যখন তুমি মৃত্যু যন্ত্রনায় কাঁপতে থাকবে ঠিক তখন৷
ঐ কাঁপুনির ভাইব্রেশান সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়, আহ! কি যে আনন্দ তুমি যদি বুঝতে জেরিন! কিন্তু ওটা শুধু আমার জন্যই তোলা থাকবে৷ তোমাকে নিয়ে যেমন আমার পরিকল্পনা আছে ঠিক তেমনি হোলগাকে নিয়েও! আপাতত অন্য কেউ… অন্য কেউ … অন্য কেউ… কথাটা বার বার জপতে জপতে আমি অদৃশ্য হলাম৷ অন্ধকারে! বরফ পড়ার পরিমান বেড়েছে৷ কাল হয়তো রাস্তাঘাট সব বরফে ডুবে যাবে!

… এই ঠান্ডার মধ্যেও লোকটা ডকইয়ার্ডের পাশে টেমসবরাবর যে পার্কের মতোন করা আছে সেখানে বসে আছে৷ কিছুক্ষণপর হাঁপাতে হাঁপাতে একটা লোক ভেতরে ঢুকল৷ হুডি পড়া৷ হুডিপড়া লোকটা জানে ওখানেই এই লোকটাকে পাওয়া যাবে৷ লোকটা ভাল ইংরাজী বলতে পারে না! তবে বুঝাতে পারে মোটামোটি৷
হুডিকে দেখেই লোকটা বলল হোয়াট হ্যাপেন্ড?
হোয়ার ক্যামেরা?
হুডি বলল সবত পাঠিয়েছি৷ অল্পের জন্য বেঁচে গেছি
লোকটা বলল ভেরি গুড
তারপর আধামাধা ইংলিশে বলল
ক্যামেরা নো নিড৷ মেমরি কার্ড প্লিজ৷
লোকটা বলল তুমি যার ছবি তুলতে বলেছিল সেই ই ত আক্রমণ করল৷ এবার ভনিতা ছাড় ৷ গিভ মি মানি৷

লোকটা হুডিকে বলল নো ম্যামরি কার্ড নো মানি!

হুডি ধৈর্য রাখতে পারল না৷ চকিতে লোকটাকে লক্ষ্য করে হাত দিয়ে ধাক্কা মারল৷
দু’কদম পিছু হটল লোকটা৷ হাত তুলে বলল প্লিজ নো পুশ৷ নো পিকচার নো মানি৷ গো…!

হুডি’র হাতে কিছু একটা কড়াৎ করে শব্দ করল৷ অটো সুইস নাইফ!

লোকটা হাসল৷ বেল্টের বকলসএ হাত দিল৷ ভোজাভাজির মতো হাতে চলে এল বেশবড় আর পাতলা একটা ছুরি৷ এগুলোকে গুপ্তি বলে৷ বেল্টের মধ্যে লুকানো গুপ্তিটা বহুবার ব্যবহার করেছে সে৷ চট্টগ্রাম ট্রিপল মার্ডারে সে জড়িত ছিল! আরমান চৌধুরী খুন হবার পূর্বে তাকে একটা মেসেজ পাঠান৷ মেসেজে লিখা ছিল জেরিন! ছাড়বি না…
লোকটা প্রভুভক্ত কুকুরের মতো৷ মুনিব কে যে একবার ঘেউ বলবে, সে তাকে দু’বার ঘেউ বলবে৷ আর সেখানে জেরিন তো বস কে মেরে গায়েব হয়ে গিয়েছিল৷ প্রায় আড়াই বছর পর জেরিন আবার উদয় হয়৷ আরমান চৌধুরিকে মেরে গা ঢাকা দিয়েছিল৷ আর কেউ না জানুক, লোকটা জানে৷ লন্ডনে স্যার এর সাথে এসেছে সে বেশ’কবার৷ এখানে লোক আছে ওদের৷ সেই ঢাকা থেকে এখানে আসার ব্যবস্থা করে দিছেন আরেকজন৷ তিনি দেশে কলকাঠি নাড়েন বসে৷ লোকটা যখন ওর কাছে যেয়ে বলেছিল জেরিন এর কথা , তখন তিনি বললেন আইচ্ছা ঐ লেডি গোয়েন্দারে খাবার চাও! ব্যবস্থা করে দিতেছি৷ ঐহানে আমাগো লোকও আছে৷ কাম করে ফেলতে পারবা৷ তারপর তিনি বলেছিলেন ঐহানে যদি বিপদে পড় তাহলে! হুনছি হেরা তো এসপার্ট এই সবে৷ লোকটা বলেছিল আরমান স্যারে নাই আমারও আর কোন দিশা নাই৷ মারণের পরে ধরলে ধরুক৷

এখানে আসা অব্দি সিন্ডিকেটের সাহায্য নেয়নি বলতে গেলে৷ শুধু এই লোককে ভাড়া করেছিল জেরিনের কিছু ইনফরমেশান এর জন্য৷ তার বস আরমানও ঠিক এভাবে কাজ করতেন…

হুডি লোকটার হাতে ছুরি দেখে একটু থমকালো এরপর গাল দিল৷ ইউ ফা… লোকটা হেসে বলল ইওর স্মল, মাই বিগ…

কিছুক্ষণ পরে হুডিকে একটা ঝোপের মধ্যে ঠেলে দিয়ে হাঁটা শুরু করলো সে৷ পেঁজাতুলোর মতো বরফ পড়ছে৷

শওকত বিড় বিড় করে কিছু একটা বলছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না৷ হুডিকে যে লোকটা শেষ করলো ওর নাম শওকত৷ শওকতের বাবা মাথা নষ্ট এক সাইকো ছিল৷ বাবার মাথা নষ্টের ভাগ কিছুটা সেও পেয়েছে৷ আরমান চৌধুরির ড্রাইভার কাম দেহরক্ষী ছিল সে৷ সারাটাজীবন আরমান চৌধুরির কায়ার সাথে ছায়া হয়েছিল সে৷ শওকতের এই আরমান চৌধুরির প্রতি অতিভক্তি এটাও একরকমের সাইকিক অভিব্যক্তি৷

(চলবে)

-পলাশ পুরকায়স্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *