পোর্ট্রেট অফ এ সাইকো (ইউনিফর্ম ২)

আমি কফি পছন্দ করি না৷ একেবারেই না৷ ‘র’ কফির মাঝে বেশি করে দুধ দিলেও সেই পোড়া একটা গন্ধ থেকে যায়৷ আর মনে হয় সেই গন্ধটা শরীরেও লেগে যায়৷

আজ যে রেস্তোরায় বসে আছি সেখানে এখন আমি ছাড়া আর কেউ নেই৷ নীরব৷ পারক্যুলেটরে কফি ব্লেন্ড করার একটা বিজ বিজ কোঁ… ব্রেস ব্রেস শব্দ আসছে৷ ওটা আমার মাথা ধরিয়ে দিচ্ছে৷
একটা হ্যাম বার্গার আর মিল্ক শেক নিয়ে টিলের পাশেই একজায়গায় বসে আছি৷ এখান থেকে অবশ্য টিল টা দেখা যায় না পুরোটা৷ ওটা একটু উঁচু আর বুক সমান৷ কাজেই ওখান থেকে উঁচু না হয়ে আমাকে দেখার সম্ভাবনা নেই৷
এই দেশে আমি এসেছি প্রায় তিন সাড়ে তিন বছর হয়ে গেল৷ এখন আমি ছিচল্লিশ বছর বয়সের মধ্য বয়স্ক একজন লোক৷

কাজে যাবার সময় সকালের নাস্তা এখান থেকে করে যাই৷ ফেরার সময় কিছু একটা খেয়ে এপার্টমেন্টে উঠি৷ সবসময়ই যে অবস্থা এমন ছিল তা নয়৷ একসময় আমি প্রবল উৎসাহে রান্নাবান্না করতাম৷ খেতাম৷ ঢেকুর তুলে টিভিতে সকার দেখতাম৷ গত কয়েক মাস আর ইচ্ছে হয় না৷ আসতে যেতে এখানেই কিছু একটা খেয়ে নিই৷ এই খাবারেও অরুচি ধরে গেছে৷ তবুও একটা ভেহিক্যাল যেমন তার জীবনে তেল মবিল ছাড়া কোন খাবার খায় না, আমিও তেমনি হয়ে গেছি৷

প্রতিদিন আসতে যেতে একই খাবার খাই৷ সম্ভবত এতদিনে আমার নামও পড়ে গেছে মিঃ হ্যাম কিংবা মিঃ শেক!

একটা সিগারেট ধরালাম আমি৷ এখানে এই রেস্তোরায় এটা জায়েজ৷ এখানে এলিট মানুষজন খেতে আসে না৷ যারা আসে তারা পরিশ্রমের কাজ করে৷ কাজেই এ ছাড়টুকু রেস্তোরা কতৃপক্ষ দিয়ে রেখেছে৷

বাইরে একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে৷ সব চকচকে এখন৷ নিয়ন সাইন গুলো জ্বলজ্বল করছে৷ পথঘাট সব ফাঁকা৷ মাঝে মধ্যে লাল কিছু বাস নির্দিষ্ট সময় পরপর রাস্তা কাঁপিয়ে চলে যাচ্ছে৷ বাস গুলোতে দু’চার জনের বেশি যাত্রী নেই৷

আমি বার্গারে কামড় বসাতে বসাতে রাস্তায় চোখ বুলাচ্ছি৷ খারাপ লাগছে না তেমন৷
আপাতত এই রেস্তোরায় ওয়েটার্স নিনা একা কাজ করছে৷ সারারাতই সে থাকবে৷ একজন লোক বারের পেছনে ঝিমোচ্ছে৷ বারটা টিলের পাশেই ৷ দু’কদম দূরে বামে৷

রাত বারটার পর নিরাপত্তার খাতিরে রেস্তোরা বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ লোহার গারদওয়ালা ছোট একটা জানালা খুলে দেওয়া হয়৷ কেউ খাবার চাইলে ওদিকেই সার্ভ করা হয়৷ ঘড়ি দেখলাম এগারোটা বিশ বাজে৷ মানে ইচ্ছে করলে আরও চল্লিশ মিনিট বসতে পারবো আমি৷ আরও বসলেও ক্ষতি নেই৷ ওরা আমার পরিচিত৷ পেছনদিকে বের করে দেবে আমায়৷

নিনার বয়স প্রায় আমার বয়সের কাছাকাছিই হবে৷ কিন্তু ফিগার ধরে রেখেছে৷ চুলে রঙ করে৷ চোখের দু’পাশে ছাড়া কোথাও বয়সের ছাপ নেই৷ বারের পাশে যে বসে ঢুলছে তার নাম রজার৷ রজার কালো মানুষ মাথা কামানো সাড়ে ছ’ফুট লম্বা৷ অসুরের মতো দেখতে৷
হিলের খটখট শব্দ শোনে জানালা থেকে চোখ ফিরিয়ে টিল কাউন্টারের দিকে তাকালাম আমি৷ কফির গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা দিল৷ নিনা এক মগ কফি নিয়ে আমার দিকেই আসছে৷
আমার কাছে এসে নিনা বলল বসতে পারি একটু৷
আমি বললাম শিওর৷
ঠক করে কফির মগটা সামনে রাখলো নীনা৷
বসে পড়ল৷
মাথার চুলে দু’হাতে বিলি কেটে একটু ইতঃস্তত করে বলল থেরাগ তোমার কাছে সিগারেট হবে? হলে আমাকে একটা দাও৷

ভাল কথা আমার নাম মোহাম্মদ তুরাগ আলি৷ ওরা আমাকে থেরাগ বলে ডাকে৷
আমি একটা সিগারেট দিলাম নিনাকে৷ লাইটার দিয়ে ধরিয়ে দিলাম৷ নিনা একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে বলল থ্যাঙ্কস৷ বাঁচালে ! এই মূহুর্তে বাইরে যেয়ে কিছুই খোলা পেতাম না৷
আমি নিনা কে বললাম চাইলে তিন চারটা রেখে দিতে পার৷ আমি প্যাকেট নিয়ে এসেছি৷
নিনা হেসে বলল তুমি মহানুভব৷
নিজের পরনের জামাটা টেনেটুনে আরেকটু নিচে নামালো সে৷ তাতে তার বুক জোড়ার ভাঁজ আরেকটু প্রকট হল৷
আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম৷
নিনা হাসল৷
বলল সিগারেটের বদলে তোমার কি কিছু চাই?
আমি বললাম না চাই না৷ এমনিই দিলাম৷
নিনা চোখ মটকে বলল স্ট্রেঞ্জ!
তোমাকে তো বেশ ক’দিন হলো দেখছি এই রেস্তোরায়৷ এর আগেও কথা হয়েছে আমাদের৷ এশিয়ান তো তুমি তাই না?

আমি বললাম হ্যাঁ৷ বাংলাদেশি৷
আমার তো মনে হয় দীর্ঘদিন ধরে তুমি একা বাস করছ৷ এখানে দিনেরপর দিন একা এসে এসব অখাদ্য খাচ্ছ৷ দেখলেই বুঝা যায়৷ মেয়ে সঙ্গী নেই৷ চাহিদাও কি নেই! নাকি তুমি গে!

আমি হাসলাম৷ বললাম নাহ গে তো নই ই৷ চাহিদা থাকবে না কেন আছে৷ কন্ট্রোল করতে না পারলে চাহিদা মেটানো তো যায়, যায় না?
নিনা আবার হাসল৷ মোহনীয় হাসি হাসার চেষ্টা করলো৷
তারপর বলল আমার সাথে বিছানায় যেতে তোমার আপত্তি আছে নাকি?
আমি হাসলাম৷ এটা নিনার একধরণের মজা৷ আমি জানি৷ অনেক কে খোঁচায় ও৷ এভাবে৷

আমি বললাম বাদ দাও৷ তোমার সাথে বিছানায় যেতে আপত্তি আছে আমার!
নিনা চোখ মটকে বলল কেন? আমি দেখতে কি সুন্দরী নই৷ আমার ফিগার কি ভাল নয়৷ এখনও আমি ডেটে যেতে পারি জানো?
আমি বললাম তুমি সুন্দরী ঠিক আছে৷ কিন্তু তোমার সারা শরীরে কফির গন্ধ লেগে থাকে৷ আমি কফির গন্ধ সহ্য করতে পারি না!
নিনা হেসে বলল ও তাই বলো৷ আমি তো মনে করেছিলাম… থাক৷ ভাল করে একটা বাথ নিলেই তো…
আমি বললাম এ প্রসঙ্গটা থাক নিনা৷ এসব নিয়ে কথা বলতে ভাল লাগছে না আমার৷
নিনা কে আরেকটা সিগারেট অফার করে বললাম তোমার দেশ কোথায় নিনা? দেখে তো মনে হয় মেক্সিকান৷
নিনা অবাক হয়ে বলল হা ঈশ্বর! তিন বছর ধরে আমাকে চেন৷ আজ এই প্রশ্ন করলে! এর আগেও তো আমার সাথে কথা বলেছ৷ আজ হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন!
তবে ঠিকই ধরেছ৷ আমি মেক্সিকান৷
নিনা তার কফির কাপে চুমুক দিল৷ আমি বাইরে তাকিয়ে থাকলাম৷
নিনার পরের প্রশ্নে আমার চোখ আবার রাস্তা থেকে ফিরিয়ে ওর উপরে রাখলাম৷
নিনা বলল এখানে প্রায়ই বাংলাদেশ এর নাম শোনা যায় এখন৷ আগে তো অতটা শোনা যেত না? আমিও তোমার দেশটা চিনতাম না৷
আমি বললাম এখন চেন কিভাবে?
নিনা বলল ঐ যে নাম শোনা যায়৷
আমি হেসে বললাম আমরা বহু আগে থেকেই এদেশে আসছি বাস করছি বসত করছি৷ ইদানিং নানান ইনসিডেন্টে আমাদের দেশের নাম বারবার মিডিয়াতে উঠে আসছে৷ তাই হয়তো বেশি শুনছো৷
আমি নিনা কে বললাম আরেকটা শেক হবে প্লীজ!
নিনা উঠে গেল৷
রেস্তোরার সামনে বাস স্ট্যান্ডে লাল দোতলা একটা বাস এসে থামল৷ তিনজন লোক নামল বাস থেকে৷ দু’জনই কালো৷ আর একজন মেয়ে৷ ওরা তিনদিকেই তিনজন চলে গেল৷ আমি বাসটার চলে যাওয়া দেখলাম৷
নিনা আবার ফিরে এল ঠক করে একটা মিল্ক শেক নামিয়ে রাখল৷
আমি ধন্যবাদ দিলাম৷
আবার সামনে বসে পড়ল সে৷
বলল তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি?
আমি বললাম কর
তুমি কি করো? মানে পেশা কি?
আমি হাসলাম৷
সত্যিটা বলব নাকি মিথ্যে টা৷ বললাম আমি৷
নিনা অবাক হবার ভান করে বলল সত্যি আর মিথ্যে আছে নাকি! তাও পেশায়!
আমি সত্যিটা বলতে বললেই কি তুমি সত্যি বলবে৷ হয়ত মিথ্যেটাই বলবে৷
আমি আবার হাসলাম৷
মেয়েটাকে সত্যি বললেই সে কি বিশ্বাস করবে! কি জানি৷
আমি বললাম তাহলে দুটোই বলি৷ কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে তুমি ঠিক করে নেবে৷
নিনা বলল ওকে ক্যারি অন..
আমি বললাম আমার প্রথম জব পাহারাদারী করা৷
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকি৷ মানুষজনের উপরে নজর রাখি৷
সপ্তাহ অন্তে মাইনে ড্র করি৷
আর দ্বিতীয় জব আমি একজন ডেথ ডিলার!
নিনা অবাক হয়ে বলল
প্রথমটা বুঝলাম কিন্তু দ্বিতীয়টা তো বুঝলাম না৷ ডেথ ডিলার মানে কি? আন্ডারটেকার জাতীয় কিছু নাকি৷ কিন্তু তুমি তো যে দেশ থেকে এসেছো সেখানকার অধিকাংশ মানুষই মুসলিম৷ সে হিসেবে আন্ডার টেকার হবার প্রশ্নই আসে না৷
আমি হেসে বললাম আরে না৷ ওসব নয়৷ আমি মানুষের মৃত্যুর পরিকল্পনা করে দিই৷ সেই অনুযায়ি একজন মানুষ এর মৃত্যু হয়৷ এটাই আমার ডেথ ডিলিং!
নিনা অবাক হলো৷ বলল তুমি৷ প্রতিদিন এখানে আসো , বসো, খাওয়া দাওয়া করো ৷ এরপর চলে যাও৷ হতে পার পাহারাদার কিন্তু পরেরটা..! জোকস করছ৷
আমি হেসে বললাম না৷ আমি জোকস করি না কখনও৷
নিনা হেসে ফেলল৷ বলল ইকুলাইজারের কাহিনী শোনাচ্ছ! ডিনজেল ওয়াশিংটনের ইকুলাইজার!
আমি হাসলাম৷ বললাম নাহ৷ সেটা নয়৷ এখানে কেউ কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেললেও আমি এগিয়ে যাব না৷ নায়ক সুলভ অতিভদ্রতার ধার আমি ধারি না৷ ওসব মুভির প্রতি আমার ইন্টারেস্ট নেই কোনও৷
নিনা বলল তা এখন পর্যন্ত ওমন কাজ কটা করেছো?
আমি হাসলাম আবার৷ বললাম এটা সেক্রেট৷ বলা যাবে না!
নিনা বলল আচ্ছা যাও বলতে হবে না৷ তুমি বিল মেটাও এবং এখান থেকে ফুটো৷ বারটা বাজতে চলল প্রায়৷
আমরা ফ্রন্ট ডোর বন্ধ করে দিব৷
আমার শেষ কথা শুনে নিনার চোখ মুখ কিছুটা শক্ত হয়ে গেছে৷

আমি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললাম৷ বললাম দেখো তোমাকে সত্যিটা বললাম কিন্তু তুমি বিশ্বাস করলে না!

নিনা বলল আমি যদি পুলিশ কে বলে দিই৷ তখন কি করবে৷ ওরা তো তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে৷

আমি বললাম প্রমাণ না পেয়ে আবার ছেড়েও দিতে পারে৷ ঠিক কি না! তুমি শুনবে এমন কিছু? কিভাবে আমি কাজ গুলা করি, দু’একটা উদাহরণ দিব৷

নিনা বলল থাক লাগবে না৷ আমার এসব শোনার রুচি নেই৷

আমি হেসে বললাম পুলিশ কিন্তু আমাকে খুঁজছে নিনা৷ ওরা আমার নাম জানেনা, আমি কে সেটা জানেনা কিন্তু আমার কাজের ধরণ জানে৷ কখন কোথায় আমার জন্য ক’টা ডেথ ডিলিং হয়েছে সেটা জানে৷ কিন্তু আমি কে সেটা … এখনও বের করতে পারেনি৷ এই দেখো আমার বা কব্জির নিচে একটা কাটা দাগ আছে৷ রিপোর্টটা কিছুদিন আগেই এসেছে৷ বাংলাদেশ থেকে৷ তোমার এজেন্সি থেকে এটা বলা হয়েছে তোমাকে৷ তোমরা সম্ভাব্য একজন মনে করেই আমাকে টার্গেট করেছ৷ ন’মাস ধরে ফলো করেছ৷ অবশ্য বিভিন্ন জায়গায়ই তোমরা ট্র্যাপ সেট করেছ৷ লাভ হয়নি কোন!
নিনা বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ সে ওখান থেকে নড়তে পারছে না৷ আমি তার কফিতে ড্রাগ মিশিয়ে দিয়েছি এক সময়ে৷ প্যারালাইজড ড্রাগ৷ আগামি ঘন্টা কয়েক সে নড়তে পারবে না আর৷

নিনা কে বললাম জানো কি৷ তুমি ন’মাস ধরে আছো এখানে৷ দীর্ঘদিন থেকে আমাকে ফলো করছো৷ ভুলে গেছো যে আমি একজন এক্স আর্মি পার্সন৷ তোমাদের মানে তোমার চলনে বলনে একটা প্রোফেশনাল ভাব আছে৷ কেউ ধরতে পারুক আর না পারুক আমি পেরেছি৷

আমাকে খাটো করে দেখা উচিৎ হয় নি তোমাদের! তুমি আগে এখানে অনেকের সাথে গায়ে পড়ে কথা বলেছ কিন্তু আমাকে সযতনে এড়িয়ে গেছ৷ এটা হচ্ছে আমার সন্দেহের প্রথম কারণ৷ দ্বিতীয়ত তুমি বা তোমরা খেয়াল করেছ আমি রাতেই আসি বেশিরভাগ সময়ে৷ তুমি এর কিছুদিন পরে নাইট শিফটে আসলে৷ তবে দু’এক কথা ছাড়া আমাকে তেমন পাত্তা দিলে না৷ অথচ সবসময়ে আমাকে নজরে রাখতে!
আমার হাতের কাটা দাগের কথা যখন তোমরা জানতে পারলে তখন তুমি পরখ করতে আসলে আজ৷ সিগারেট দেবার সময়ে সেটা আমি তোমার এটিচ্যুড দেখে বুঝতে পারলাম৷ তুমি কল্পনাও করোনি আমি বুঝতে পেরেছি৷ তাই না! মিল্কশেক আনতে উঠে গেলে৷ আমি তোমার কফিতে ড্রাগ মেশালাম৷ বুঝতেই পারোনি৷ তাই না৷
কিন্তু কথা হলো তোমরা বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষগুলোকেই কেন টার্গেট করলে সেটা বুঝতে পারিনি!

বাংলাদেশ এ আমার ক্রাইমের কোন এভিডেন্স তো আমি ছেড়ে আসিনি৷ শেষত্বক যে অফিসার আমাকে ধরতে চেষ্টা করেছিল তাকেও ফাঁকি দিয়ে বের হয়ে গেছি! স্ট্রেঞ্জ! তাহলে কিভাবে…

নিনা নড়ার চেষ্টা করছে৷ তার চোখ বিস্ফোরিত৷ আমি বেশ বুঝতে পারছি৷

আমি বললাম বাদ দাও৷ ওটা পরে জেনে নিব৷ না জানলেও ক্ষতি নেই৷ তবে আফসোস রজার না কি নাম যেন কাইল্লাটার৷ ওর জন্য৷ বেচারা মাঝখান থেকে মারা যাবে!
ইউ নো নিনা, আমি কোন প্রমাণ তো রেখে যেতে পারি না! ঠিক কি না?

তুমি একটু রিলাক্স হয়ে বস৷ আমি ঐ কাইল্লার ব্যবস্থা করে আসি৷ আমি নিনাকে রেখে উঠে গেলাম৷

রজার ঢুলছে৷ আমার কাজ সহজ হয়ে গেল৷ টিলের নিচে একটা বেসবল ব্যাট থাকে সব সময়ে৷ ওটা অনেক সময় কাজে দেয় ওদের৷ সন্তর্পণে ওটা তুলে নিলাম৷

ইটা দিয়ে কত মানুষ মেরেছি, আর এটা তো বেসবল ব্যাট! রজার বেটা হুড়মুড়িয়ে উপুড় হয়ে মেঝেতে পড়ল৷ বুঝতেই পারেনি বোধকরি৷ মৃত্যু তাকে চুমো দিল৷
আমি আবার নিনার কাছে ফিরে এলাম৷

ওর সামনে বসলাম৷ অবশ্য বারটা বেজে গেছে৷ আমি ফ্রন্ট ডোরটা বন্ধ করে ক্লোজড সাইন লাগিয়েই এসেছি৷

বেসবল ব্যাটটা পছন্দ হয়েছে৷ সেটা হাতেই রেখেছি৷ নিনার সামনে বসতে বসতে বললাম তোমাকে প্রশ্ন করে লাভ নেই আর৷ কেননা তুমি তো জবাব দিতে পারবে না৷ তবুও করছি,

আমার সম্পর্কে তোমরা জানলে কি ভাবে? নাকি অনেকের ব্যাপারেই অন্ধকারে ঢিল ছুড়েছো আর আজ সেই ঢিলটা ঠিক জায়গা মতোন লেগে গেল!

আমি প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা না করে রাস্তার দিকে থাকা কাঁচের জানালা গুলোর শেড টেনে নামিয়ে দিলাম৷ সাবধানের মার নেই!

ওরা যখন এতদূর চলে আসতে পেরেছে তাহলে আমাকে বের করে ফেলতেও বেশি সময় লাগার কথা না৷

ওভার কোটটা খুলে ফেললাম আমি৷ ভেতর থেকে আমার ইউনিফর্মটা বের হয়ে আসল৷ ওটা সযতনে খুলতে লাগলাম আমি৷ নিনা এখন আতঙ্কিত চেহারা নিয়ে আমাকে দেখছে৷ কেননা কারণটা সে জানে!

নিনাকে টেনে চেয়ার টেবিল গুলোর মাঝে মেঝেতে শুইয়ে দিলাম৷ এখন অবশ্য আমি অনেক সতর্ক৷ নিনা নড়তে পারছে না৷ ওর পোশাক আশাক টেনে খুলে নিলাম৷
বেসবল ব্যাটটা পরে কাজে লাগানো যাবে৷ ড্রাগের এফেক্টে নিনা তো আর নড়তে পারবে না৷

কাজ শেষ করে উঠে দাঁড়ালাম৷ নিনার দু’চোখ এর ধার বেয়ে অশ্রু নামছে৷ আমি ধীরে সুস্থে বেসবলের ব্যাটটা দিয়ে নিনার মাথার বাঁ পাশে মোক্ষম আঘাত হানলাম৷ মাপা মার৷ নিনা একদৃষ্টিতে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে৷ ওই দৃষ্টি কেউ চোখের পাতা বুজিয়ে দিলেই বন্ধ হবে নতুবা নয়!

আস্তে ধীরে যত্ন করে আমি আমার ইউনিফর্মটা পড়লাম৷ সাথে থাকা ব্যাগ থেকে পলিথিনের একটা ব্যাগ বের করে মিল্কশেইকের গ্লাস সযত্নে ভরে নিলাম৷ এরপর নিশ্চিত হলাম এখানে আমার কোন চিহ্ন পড়ে নেই৷ এ ধরণের কমদামী রেস্তোরায় সাধারণত সিসিটিভি থাকে না৷ তবুও ভাল করে চেক করলাম৷ তারপর পেছন দিকে বেরিয়ে এলাম৷
আসে পাশেও কোন সিসি টিভি ক্যামেরা নেই৷ আমি নিশ্চিত কেউ আমাকে দেখেনি৷

কিন্তু অবাক হচ্ছি এটা ভেবে ওরা আমাকে ট্রেস করলো কিভাবে? আমাকে ট্রেস করতে পারে এমন এলেম একজনেরই আছে৷ তার তো বহুদিন থেকে কোন খোঁজ নেই! সে কি তবে ফিরে এসেছে!

আবার কি সে আমার পিছু নেবে!

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে অকারণেই হেসে উঠলাম৷ মনে মনে বললাম ওয়েল কাম জেরিন! আ’ম ওয়েটিং….

-পলাশ পুরকায়স্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *