প্রাক্তন

হাজার টাকা ভাঙতি হবে? কন্ঠটা শুনেই কেমন চেনা চেনা লাগলো।পিছন ফিরে দেখলাম কেউ একজন বিপরীত দিকে ফিরে হাজার টাকার নোট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি কথা বলার ছুতো নিয়ে বললাম আমার কাছে হবে।  মুখ টা দেখার যে খুব ইচ্ছে ছিল।

আমার দিকে ফিরতেই আমি যেন থমকে গেলাম।তখন বার বার মনে হচ্ছিল কেন দেখতে চাইলাম।

বৃষ্টি তুমি?

তোমার মুখে আমার নাম শুনে ইচ্ছে হয়েছিল মুখ টা চেপে ধরে বলি ও নামে ডেকনা।তোমার মুখে আমার নাম টা এত কেন মায়াভরা শুনায়? মনে হয় এ নামে জড়িয়ে আছে কত নেশা।আমি সে নেশার মাঝেই ডুবে থাকি।

আমি তড়িঘড়ি করে চলে আসতে চাইলাম

তুমি বার বার আমার পিছন নিয়ে ডাকছো বৃষ্টি শোন.. কথা আছে।

আমি থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম।

হাজার টাকার ভাঙতি দিবেনা?

আমি: নেই আমার কাছে

তাহলে বললে যে?

আমি: এমনিতেই।আমায় যেতে হবে অর্নব।

ভালোই তো গিন্নী হয়ে গেছো। বাজার করতে কি নিজেই আসো?

আমি: হুম আমি ই আসি।

অর্ণব হেসে বললো কেন এখন আর বরকে বকোনা বাজার করতে না গেলে?

আমি চুপ হয়ে আছি।কিছু কথার উত্তর মাথায় আসেনা চট করে, মাথায় আসলেও মুখ অব্ধি আসতে খুব দেরি করে ফেলে।

অর্ণব আমার হাতের বাজারের ব্যাগটা নিজের হাতে নিয়ে বললো একটু বসি সামনের চায়ের দোকানটায়? বেশি সময় নিবনা।

আমার অনেক বারণ করা উচিৎ ছিল।কিন্তু পারিনি। বার বার খুব ইচ্ছে হয়েছিল কিছুক্ষণ থাকি। আর হয়তো দেখা হবে না। গোল দুনিয়ায় এক জন এর সাথে বার বার দেখা হলেও প্রিয় জনের সাথে দেখা হয়না বহুবার।

চায়ের দোকানে যেতেই অর্ণব বললো মামা দু কাপ র চা।একটাতে আদা দিবেন না।

আমি: মনে রেখেছো এখনো?

অর্ণব: কি?

আমি: আমি আদা খাইনা।

অর্ণব চুপ করে আছে।

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দুজন নিরব আছি।আমি আড় চোখে অর্ণবকে দেখছি।বিয়ের আগে বহুবার চা খেয়েছি একত্রে। ওর সাথে বিয়ের পর মাসে দু একবার বাইরে চা খাওয়া হত। তারপর চা হাতে নিয়ে ঝগড়া করতে করতে কত যে চা ঠান্ডা হয়ে গেছে তার হিসেব নেই।

১ বছরের সংসারে ঝগড়া এতই হয়েছিল যার কারনে সুখের স্মৃতিগুলি আর মনে নেই।

ভাবতে ভাবতে অর্ণব উঠে বললো চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।  আচ্ছা তোমার সাথে এই ক’বছর পর দেখা হলো?

আমি: মনে নেই। যদিও আমার মনে আছে।মিনিট সেকেন্ড এর হিসাব ও আমি রাখি তাও বলিনি লজ্জায়।আমি চাই, তুমি জানো আমি ভুলে গেছি তোমায়। তুমি এটা জেনে ফেলনা যেন আজও কতটা মনে রাখি তোমায়। তা হলে হয়তো আর চা খেতে পারবেনা। মাঝে মাঝে হয়তো শেষ বিকেলে শূন্যতা ভর করবে বুকে।কি যেন নেই কি যেন নেই, তাতে ভুগবে তুমি। হঠাৎ মনে হবে খুব মন খারাপ।কিন্তু তার কারণ জানা নেই তোমার।

অর্ণব: ৪বছর পর। তুমি বিয়ে করেছো তার খবর পেলাম আমাদের এক ফ্রেন্ড এর কাছে। ভালোই করেছো। একটা জীবনে কিছুতো পেতেই হয়।

কথাগুলি তুমি বলেছো কিন্তু আমি কথার আড়ালে কাঁপা স্বর অনুভব করেছি।

আমি: তুমিও তো বিয়ে করেছো? বউয়ের রান্নাতে লবণ ঠিক ই হয় তাইনা? আচ্ছা বউ তোমার মুখে মুখে কথা বলেনা আমার মতন?

অর্ণব: ও অফিসে থাকে দিনের বেশি সময়। ঝগড়া হবে কখন!

আমি শান্ত গলায় বললাম তাহলে যে আমায় চাকরী করতে দিতেনা?

অর্ণব হেসে মাথা নিচু করে বলে সবার কাছে কি প্রত্যাশা একই থাকে?তোমার বেলায় আমি হয়তো বেশিই নির্দয় ছিলাম। অতিরিক্ত ভালোবাসা বুঝি মানুষ কে নির্দয় করে ফেলে।

বাদ দাও। তুমি খুব সুখে আছো তাইনা? বরের ফোন লুকিয়ে চেক করো? আচ্ছা রাত করে বাসায় ফিরলে কি অভিমান করে থাকো?

আমি হেসে বললাম সংসার জীবনে এমন ভাবে ঢুকে গেছি যে বর যদি আরেক মেয়েকেও বিয়ে করে আনে তাহলে হয়তো তেমন উপলব্ধি হবেনা। যাক আমার যেতে হবে ব্যাগটা দাও এই বলে চায়ের কাপ রেখে চলে আসতে নিলাম।

অর্ণব পিছন থেকে বললো বৃষ্টি আমরা আজীবন প্রেমিক-প্রেমিকা থাকলেই হয়তো ভালো হতো। বিয়েটাই হয়তো আমাদের বিচ্ছেদের কারণ তাইনা? অতিরিক্ত কাছে আসা, অতিরিক্ত প্রত্যাশা, অতিরিক্ত অধিকার বোধগুলি মনে হয় প্রেমের বিয়েতেই ভর করে। আর এই অতিরিক্ত শব্দটাই মনে হয় বিচ্ছেদ ঘটায়।

আমি রিকশায় উঠে বসলাম। অর্ণব আমার রিকশার পাশে এসে দাড়ালো।

শাড়ির আঁচল ভালো করে খেয়াল করে নাও। চাকায় পেঁচানোর অভ্যাসটা হয়তো এখনো যায়নি।

আমি অর্ণবের চোখে পানির উপস্থিতি দেখছি।

আচ্ছা অর্ণব আসি। বউকে কষ্ট দিওনা। তাকে সময় দিও।

অর্ণব: সব ই ঠিক আছে।তুমি জানো এখন আর বাসায় ঝগড়া হয়না। হয়না কোন মান অভিমান। তাও মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় কেউ একটু ঝগড়া করুক। কেউ একবার অভিমান করে জানতে চাক এতো রাত বাইরে কি করেছো? তুমি বড্ড বাজে অভ্যাস করিয়ে দিয়ে গেছো বৃষ্টি।

আমি: কই আমি তো এখন আর ঝগড়া করিনা। ও রাত ভর যা ইচ্ছে তাই করুক। ঘরে ফিরলেই হলো।

অর্ণব: তাহলে যে বলতে মেয়েরা স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারেনা?

আমি কাঁপা গলায় বললাম, কথাটা তেমন হবেনা ঠিক। মেয়েরা স্বামীর মতন স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারেনা।

রিকশাচালক কে বললাম মামা চলুন।

বার বার ইচ্ছে হচ্ছে পিছন ফিরে দেখি অর্ণব তাকিয়ে আছে কিনা। কিন্তু আবার ভাবি তাকালেও লাভ নেই। ঝাপ্সা চোখে কিছুই দেখবোনা…

-উম্মে নিপা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *