প্রার্থনায় বাঁধার আগে


এ জীবনে অমৃতের খোঁজে—
অনেক পুড়েছে চোখ।
কতকত বাহু ঠোঁট ছুঁয়েছি অমৃতের খোঁজে, হিসেবও রাখিনি!
অমৃতলোভী দানব হয়ে হেনেছি আঘাত স্বর্গদ্বারে,
তোমার বাহুডোরে অমৃতের ঘ্রাণ—দেখেছি খুঁজে।
যা পাওয়ার ছিল, পেয়েছি সেটুকু।
হে প্রতিমা আমার,
এ বুকে বিষ, অধরেও বিষ,
খুঁজলে শরীর আগুন পাবে!
থাকতে ভাল দূরেই আছো—এটুক িবুঝি।

রয়ে গেছে যা চিহ্ন যেটুকু,
হাতড়ে সেটুকু অনেক লোভের নিশানা পাবে,
কিংবা ঘৃণা আর কামনা।
তোমায় ফেলে অমৃত খুঁজে এ হৃদয়ে ভরেছি গরল,
বুকের ভারে ক্ষয়েছি যত, ততই আমি তোমায় স্মরেছি।
বড় ইচ্ছে করে, আগুন জ্বালাই!
এ ক্ষতকে দাও না জ্বালিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে!
দহনে তোমার আমায় বাঁধো,
আমার দহনে তোমায় রাখো।
এসো, এসো নাহয় আবার পুড়ি আগেরই মত!

অনুভূতি নাকি মগজে বাঁচে?
তবে কেন বলো, এ পাঁজরখাঁচায় অনুভূতিগুলি ডানা ঝাপটায়?
কষ্ট বলো, আর সুখই বলো, সবই তো দেখি, পাঁজর খোঁজে!
এত কেন ব্যথা? গল্পগাথা, কান্নাকথা?
ওরা দেখি—সবাই দারুণ সুস্থ কেমন!
আমি নাহয় পাগলই হবো!
ভালোবাসা দাও, পাগল করো,
অমৃত ঢেলে পাগল ধরো!

তুমি যখনই বল–ভালোবাসি,
চেতনারা ওঠে জেগে,
অ-সুখ কোথায় ওড়ে হাওয়ায়,
বাসন্তী বাতাস আঁচলে আনে ঝড়!
তুমি যখনই বল—ভালোবাসি,
এ হৃদয় তৈরি হয় প্রার্থনার জন্য,
দুখের পাখিরা উড়ে চলে যায়, আর বলে যায়—
ভাল থেকো………!

তুমি যখনই বল—ভালোবাসি,
পুরনো অসুখ পালিয়ে বাঁচে,
আমি বাতাসে তোমার গন্ধ কুড়াই,
আকাশে তোমার স্বপ্ন ছড়াই,
ভোর হয়ে যায়, দূর্বা তুলে হই আনত।
তুমি যখনই বল—ভালোবাসি,
চুপিচুপি বলি—ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি………
শুধু তোমাকেই!

আমি যতবার পড়েছি প্রেমে,
তত ততবার সঁপেছি চিত্ত,
যতবার আমি এসেছি কাছে,
খুঁজেছি আমারে সদা নিত্য।
কখনও তোমার চোখের কোণে,
কখনও যুগল ঠোঁটের লাজে,
কখনও খুঁজেছি ও চুলে, বঁধু,
কখনও সাজে, শাড়ির ভাঁজে।

তোমারে বেসেছি যতবার ভালো,
পাঁজর দিয়েছি মেলে ততবার,
আপন মনে তোমায় বেঁধেছি,
নিজ প্রেমডোরে যতনে সেধেছি।
তোমার হৃদয় সত্য যত,
এ ভালোবাসা জেনো সত্য তত।
ভালোবেসে আমি পেয়েছি জীবন—কতকত নানান সাজে!

আজ বাতাস ছড়াল কী সুরভি,
আকাশ জাগাল ছন্দ,
দুটি হাত যেন পেখম মেলেছে,
বাতায়নে মৃদু গন্ধ।
ঘরের কোণে সাঁঝ নেমেছে,
পাঠালেম চিঠি মেঘে,
সখা হে, তুমি ঘুমিয়ে পড়ো না,
হাতটি আমার হেলায় ঠেলো না,
নতুন বেগে হৃদয় আবেগে উড়ে যাবো দূরে মনের সাধে।

বন্ধু তুমি জানালা খোলো,
এই নীল রাত্রিরে আমায় খুঁজো,
আমি মেঘমালা হয়ে তোমার কোলেতে
ভাসব দেখো, জুড়াব তোমায় কোমল পরশে।
বলব কথা মনে-মনে কতো,
খেলব আকাশে, বাজাব তুড়ি,
তোমার হাসির রঙিন সুতোয়,
পড়বো বাঁধা, হবো শখের ঘুড়ি।

মনখারাপের গল্প বলি, শোনো………
এক রাজ্য ছিল, সে রাজ্যে এক রাজা ছিল, তার ছিল এক ছোট্ট মেয়ে—ভীষণ রাগী, কথায়কথায় গাল ফোলাত।
অভিমান হলে গাল রাঙিয়ে, ঠোঁট উল্টে, খুব কাঁদত।
সারা হলে রাজকার্য, ফিরলে ঘরে রাণী বলতেন, তোমার মেয়ে রাগ করে আছে, খায়নি কিছু, এবার একটু সামলাও বাপু……আর পারি না!
বাবাকে পেয়ে দ্বিগুণ কেঁদে অনুযোগ মেলে বলত সে মেয়ে, মা শুধু বকে, চোখটা রাঙায় কারণ ছাড়াই।
বাবাটা অমনি বকে দিত মাকে; মায়ের মনখারাপের অভিনয় দেখে সত্যি ভেবে রাজকন্যার রাগ যেত পড়ে।
মেয়ের সাথে কত খুনসুটি, এক জীবনের কতশত রঙ—সন্ধে পিছলে রাত নামত……সেসব দিনে।
বাঁচে না সে মেয়ে বাবাকে ছেড়ে এক পলকও।
স্বর্গের সুখ পৃথিবীতে নামে, মন্দির হয় কুটিরঘরও—পাশে যদি শুধু বাবা-মা থাকে।
বড় হয়ে যায় সেই মেয়েটি। ওর বাবাকে ছাড়া চলে না আজও……..
তবু সে শিখেছে চালিয়ে নিতে, কান্না গিলে বেঁচে থাকতে—এ বিশ্বাসে, এ প্রতীক্ষায়—ফিরে আসবে বাবা কোনও একদিন!

শোনো মেয়ে, বলি—
যে প্রতীক্ষায় রয়েছ বেঁচে,
সে প্রতীক্ষার সাথী হবো আমি।
যে বিশ্বাসে জীবন বেঁধেছ,
সে বিশ্বাসে আমায়ও বাঁধো।
কিছু প্রার্থনা হয় প্রেমের মত,
কিছু প্রেম হয় প্রার্থনার মত……..
তুমি আমার প্রার্থনা হয়ে থেকো,
আমি তোমার প্রেম হয়ে রবো।
তোমার আমার প্রার্থনাতে,
দিনের ক্লান্তি ফুরোক রাতে—
এই মিনতি।
রাখবে না? বলো, তুমি রাখবে না?

-সুশান্ত পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *