প্রায়শ্চিত্ত

 

সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকা মেয়ের লাশের পা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাদঁতে থাকে আসলাম। উপর থেকে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে রয়েছে জরিনা সুন্দরি। বড্ড আদর করে জরিনা সুন্দরি নাম রেখেছিলো আসলাম নিজেই। মা মরা মেয়েটিকে নিজে কোলে পিঠে করে এত বড় করেছিলো সে। সেই মেয়েটি আজ আত্মহত্যা করেছে নিজের শাড়ি সিলিং এ পেচিয়ে। লাল বেনাসরি শাড়িটি আসলাম এনে রেখেছিলো মেয়ের বিয়ের জন্য। আগামী মাসে জরিনা সুন্দরি বিয়ে হবার কথা ছিলো। ১৮ বছর টগবগে,গায়ে গতরে অনিন্দ্য সুন্দরি ছিলো জরিনা সুন্দরি। কত স্বপ্ন দেখেছিলো আসলাম। লাশ নীচে নামিয়ে অনবরত কাদঁতে থাকে আসলাম। চিৎকার করে বলতে থাকে এ তার প্রায় প্রায়শ্চিত্তের ফল। আসলাম ফিরে যায় তার স্মৃতিতে। এক বছর আগেই আসলাম ডাকাতি বাদ দিয়েছিলো বউয়ের মৃত্যের পর পরই। বউকে কথা দিয়েছিলো সে আর ডাকাতি করবে না।আসলাম ঢুকরে কেঁদে উঠে। নিজেকে বার বার ধীক্কার দিতে লাগে। সব তার জন্য হলো। সবার অভিশাপের ফল আজ সে নিজেই পাচ্ছে।ডাকাতি করার সময় একবার সে এক প্রবাসি ঘরে ঢুকে। সবকিছু লুটপাট করার পর হঠাৎ নজর যায়,ঘরের এক কোনে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে নিশ্চুপ অবস্থায় মুখ লুকিয়ে থাকা প্রবাসির একমাত্র ১৩ বছরের কন্যার দিকে।  মুখে হাসি ফুটে উঠে আসলামের। চোখ ফেরাতে পারে না।আস্তে আস্তে মেয়েটির কাছে যায়…মেয়েটি ভয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। আসলামে হাতে লম্বা দা দেখে ভয়ে শিউরে উঠে মেয়েটি। এক হাতে ঝাটকা টান দেয় মেয়েটিকে। ঘরের অন্য প্রান্ত থেকে ভোঁ দৌড়েএসে আসলামের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় মেয়েটিকে তার মা। চিৎকার করে মেয়েটির মা বলে,আপনারা আমাদের সব নিয়ে যান,আমার একমাত্র মেয়েটির শরিরে হাত দিয়েন না|ওর আজ তিনদিন থেকে জ্বর। এই নেন চাবি।আলমারি তে স্বর্ন আছে,নিয়ে যান।আসলামের ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা বাড়তেই থাকে,এক হাতে এগিয়ে দেয়া চাবি সঙ্গি রুস্তমকে এগিয়ে দেয়। তারপর মেয়েটির মাকে হাত পা বেঁধে রাখে। কান্না থামাতে পারে না,আসলামের পায়ে ধরে অনেক অনুনয় করে। ওর শরীরে হাত দিস না। আমারে যা ইচ্ছে কর। আসলাম আবার হাসে,কচি ডাব রেখে তোর মতো বুড়া ডাবের পানি খেয়ে লাভ কি?নির্লজ্জের মতো অশ্লীল বাক্য উচ্চারন করে আসলাম ডাকাত।
হাত পা বাঁধা মাকে বাথরুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে এগিয়ে যায় কন্যার দিকে। ততক্ষনে মেয়েটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আসলাম এগিয়ে যেতে তার পায়ে ধরে অঝোর ধারায় কাঁদে,আমাকে ছেড়ে দিন,আমি তো আপনার মেয়ের মতো। আসলাম ঝাটকা টান মেরে মেয়েটির কাপড় ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলে,রাখ তোর মেয়ে  এসব মায়া কান্নায় লাভ নেই।
তারপর ছিবলে ছিবলে খায় প্রবাসির মেয়েটির শরির। সে অস্ফুট বেদনায় গোঙ্গাতে থাকে। ডাকাত আসলামের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। উন্মুত্ত নেশায় সে ধর্ষনে ব্যস্ত। আসলাম আরেক সঙ্গিকে আদেশ করে যেনো মোবাইলে ভিডিও করে। সঙ্গি নির্দেশ পাওয়া মাত্র মোবাইলে ভিডিও করে।তৃপ্তির ঢেকুর তোলে যখন ধর্ষন শেষে উঠে তখন রুস্তম এগিয়ে আসে…উস্তাদ আমি যাই। আসলাম হাসি দিয়ে বলে আরে যা না বেটা।আজ খুশির দিন,যা মন চায় কর। মেয়েটি চিৎকার করতে পারে না। মুখে কাপড় গুজে দিয়েছে। অনবরত মেয়েটি গোঙ্গাতে থাকে অস্ফুট যন্ত্রনায়। এদিকে রুস্তম এবং পর পর আসলামের আরো তিন সঙ্গির পালাক্রমে নারকিয় তান্ডব চলে মেয়েটির উপর। একসময় ক্লান্ত হয় সবাই। হাত পা বাঁধা মেয়েটির মা অসহায় হয়ে শুধু চোখের অশ্রু বিসর্জন দেয়।যাবার সময় আসলাম বলে যায়,যদি আমাদের কথা কাউকে বলিস তবে এই ভিডিও ভাইরাল হবে। জনে জনে দেখবে, তখন তোর মেয়ের ইজ্জত কোথায় থাকবে? তাই চুপ থাকিস আর ভুলে যা আজকের ঘটনা। ওরা চলে যায়। আর তার দিন পরে আসলাম জানতে পারে মেয়েটি হাসপাতাল থেকে এসে নিজের রুমে সুইসাইড করে।
এই কেসে আসলাম তিন মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়। তারপর তার বউ মারা যাবার প্রাক্কালে কথা দেয়ায় ডাকাতি পেশা ছেড়ে দেয়।মেয়ে জরিনা সুন্দরিকে বড্ড ভালোবাসতো সে।মেয়ের কারনে সে ত্যাগ করেছে এই ঘৃনিত পেশা আর সেই কিনা আজ সুইসাইড করেছে। এই এক বছর থেকে সে সম্পূর্ন অন্য মানুষ। নিয়মিত নামাজ পড়ে,মসজিদে যায়। পুরনো গোনাহ এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়।কিন্তু হঠাৎ করে এই রাতের আগের রাতে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে স্থানিয় রাজনৈতিক নেতার এক ছেলে,যার চোখ অনেক দিন থেকেই ছিলো জরিনার প্রতি।জরিনাকে প্রতিদিন রাস্তায় হেনস্থা করতো নেতার ছেলে। চার দিন আগে জরিনার হাত ধরে রাস্তায় একা পেয়ে। তারপর জরিনা কষে একটা থাপ্পড় দিয়ে পালিয়ে আসে। সেই থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে আসলাম কে বেঁধে রেখে রাতভর জরিনাকে নেতার ছেলে আর তার দুই বন্ধু মিলে নারকীয় উল্লাস করে। ঠিক এক বছর আগে সে যেভাবে প্রবাসির মেয়েকে নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠেছিলো। ফজরের আগে যখন ওরা চলে যায়।যাবার আগে ভিডিও দেখিয়ে যায় মেয়েটি আর আসলাম। যদি এই নিয়ে বাড়াবাড়ি হয় তবে কি হবে তা কল্পনা করতে পারবে না আসলাম।মেয়েটি সারাদিন কোন কথা বলেনি। রাতে কিছু খায়নি। একা একা রুমে শুয়ে পড়ে। আসলাম কিছুই বলতে পারে না। থানায় যাবে সে সাহস ও নেই।সকালে মেয়েকে ডাকতে গিয়ে সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙ্গে দেখে মেয়ে ঝুলে আছে সিলিং ফ্যানে।
পুলিশ আসে,জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? আসলাম খুলে বলে সব। রাজনৈতিক নেতার ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। দেখা যাবে কদিন পর অদৃশ্য ইশারায় ফিরে আসবে জেল থেকে। যা ক্ষতি হওয়ার তা আসলামের হয়ে গেছে। বউ মরে যাবার পর একমাত্র মেয়ে ছিলো বেঁচে থাকার সম্বল, আর আজ সেই মেয়েটি অভিমানে লজ্জায় আত্মহত্যা করলো। বুকের ভেতর অস্ফুট যন্ত্রনায় ক্রমশ নীল হতে থাকে আসলাম।বার বার বলতে থাকে,এসব তার প্রায়শ্চিত্তের ফল।লাশ ধরে অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আসলাম। আজ তার জন্য,সেই প্রবাসির মেয়ের অভিশাপের জন্য তার মেয়ের সাথে একই ঘটনা হলো। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আসলাম মেয়েকে কবর দিয়ে বসে থাকে কবরে। তার বাঁচার ইচ্ছেটুকু মনে হয় এখানে কবর দিয়েছে।জরিনার মায়ের কবরে দাঁড়িয়ে আসলাম শিশুর মতো কাদঁতে থাকে,আমাকে ক্ষমা করে দিও জরিনার মা। আমি কথা রাখতে পারিনি। আমি আমার মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। পশ্চিম আকাশের সূর্য হেলে যায়। অন্ধকার নেমে আসে ধরায়। আসলাম হাঁটা দেয় বাড়ির পথে অশ্রু সজল চোখে,বুকটা শূন্য করে। বেঁচে থাকার ইচ্ছে আজ মরে গেছে আসলামের। জরিনা মরে গিয়ে তার বাবার প্রায়শ্চিত্ত করে যায়।নীরব কবরে শুয়ে জরিনার আত্না  চিৎকার করে বলে বাবা তুমি কেনো সেদিন এমন করেছিলে! সেও তোমার মেয়ের মতো ছিলো বাবা!!

-নিলয় আহমেদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *