প্রিয়তার গল্প

বুকে হাত দিয়ে চাপ দিচ্ছিলো লোকটি আর কেমন যেনো একটা বিশ্রী হাসি হাসছিলো। আমার তখন খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো। বরাবার মনে হচ্ছিলো এটা ঠিক না। কিন্তু কেন ঠিক না তা আমি বুঝতে পারছিলাম না।

কথাগুলো বলেই কান্না করে দিলো প্রিয়তা। সেদিকে তাকিয়ে নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো প্রিয়তার মা। কি বলে সান্ত্বনা দেবে মেয়েকে তা তার জানা নেই।

মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে চেপে ধরলেন তিনি। তারপর, মেয়ের মুখে চুমু এঁকে দিয়ে বললেন, পাগল মেয়ে। কাঁদছিস কেন? বাবা আসলে সব বলে দিবি। তারপর, দেখিস বাবা লোকটাকে বকে দিবে।

মায়ের কথায় সান্ত্বনা খুঁজে পেয়ে প্রিয়তা বললো, আমি বলতে পারবোনা, তুমি বলে দিও।
মা প্রিয়তার কথা শুনে একটু অবাকই হলেন। ভাবলেন, ১০ বছরের বাচ্চা মেয়েও বুঝে কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক। কোনটা বলা যায়, কোনটা বলা যায়না।

তারপর বললেন, আচ্ছা বলে দিবো। আর কেউ যদি এমন কিছু করে আমাকে সবার সামনে বলবি। তাহলে, দেখবি আর কেউ তোর সাথে এমন করবেনা।

প্রিয়তা মায়ের কথা শুনে বললো, আচ্ছা মা বলবো। কিন্তু মা যেসব কাজ করা ঠিক না সেসব কাজ লোকে করে কেনো?

প্রিয়তার মা চুপ করে তাকিয়ে রইলেন প্রিয়তার দিকে। কারণ, উত্তরটা যে তারও জানা নেই।

কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থাকার পর তিনি বললেন, সুযোগ পেলেই হলো, প্রশ্নের আর শেষ নেই। যা পড়তে যা।

প্রিয়তা মুখ ভার করে চলে গেলো পড়ার রুমে।


রাতের ১০ টায় বাড়ি ফিরলেন প্রিয়তার বাবা। হাত মুখ ধুঁয়ে একসাথে খেতে বসলেন। খেতে খেতে তিনি দেখলেন প্রিয়তার মুখ ভার। কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পরও তিনি কারণ উদ্ধার করতে পারলেন না।

খাওয়া শেষে প্রিয়তাকে ঘুম পাড়িয়ে বিছানায় গাঁ এলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন প্রিয়তার মাকে, প্রিয়তার কি হয়েছে?
প্রিয়তার মা চুপ করে রইলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, আজ স্কুল ছুটির পর প্রিয়তাকে কার সাথে পাঠিয়েছো?
প্রিয়তার বাবা একটু অবাকই হলেন। তারপর বললেন, আমার অফিসের বন্ধু রফিকের সাথে। কাজ ছিলো তাই ওকে বললাম প্রিয়তাকে বাসায় পৌঁছে দিতে। কেনো কি হয়েছে।

প্রিয়তার মা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, বাসার সামনের রাস্তাটা দুপুরের সময় জনশূন্য থাকে। আমিও তো তখন রান্নাঘরে থাকি। এসব সম্ভবত লোকটি জানেন।

প্রিয়তার বাবা বললেন, জানবেনা কেন? ও তো তিন চারবার আমাদের বাসায় এসেছে।

প্রিয়তার মা একটু জোরে দম নিলেন। তারপর বললেন, ঘরে পৌঁছে দিতে এসে সে প্রিয়তাকে কোলে তুলে বুকের মধ্যে হাত দিয়ে আদর করেছিলো। প্রিয়তা কান্না করে দেওয়ায় বাসার সামনে রেখেই চলে গিয়েছিলো।

ব্যাপারটা প্রিয়তা মানতে পারিনি। ওর মনে হয়েছে এরকম হওয়াটা ঠিক না।

আমি ওকে দেখি গম্ভীর হয়ে ঘরে ঢুকলো। চোখে পানি টলমল করছে। বুঝেছিলাম কান্না করেছে। জিজ্ঞেস করলাম বলেনি। চুপ করে রুমে ঢুকে গেলো। ভাবলাম, কারো সাথে ঝগড়া করেছে তাই ফুলে আছে। খেতে ডাকলাম আসলোনা। আমার কোন কথাই শুনছিলোনা। এমনকি বিকালেও খেলতে বের হলোনা ঘর থেকে। ওর এসব কাজ দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। রাগ করে মারতে গিয়েছিলাম। রুমে ঢুকে দেখি কান্না করছে। পরে অনেকক্ষণ বোঝানোর পর বললো।

প্রিয়তার বাবা গম্ভীর হয়ে গেলেন। শিক্ষিত একজন লোক এরকম একটি কাজ করতে পারে- ভাবতেই খারাপ লাগছে তার।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে উঠে চলে গেলেন প্রিয়তার কাছে। প্রিয়তা না ঘুমিয়ে কান্না করছে। তিনি প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ক্ষমা করে দে মা। পৃথিবীটা অমানুষে ভরে গেছে।
আমি তোকে আর কখনো কারো সাথে পাঠাবোনা।
আমাকে ক্ষমা করে দে মা।

শেষের কথাগুলো শুনে বোঝা গেলো প্রিয়তার বাবা কান্না চেপে রেখেছেন। যেকোন মুহূর্তে  বাঁধ ভেঙে যাবে।

সেটুকু বুঝতে পেরে পেছন থেকে প্রিয়তার মা বললো, ওকে নিয়ে এসো। আজ ও আমাদের মাঝে ঘুমাবে।

-জিসান রাহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *