একুশের বইমেলায় প্রকাশিত ‘অরণ্যের দিন অরণ্যের রাত’ উপন্যাস থেকে কিছুটা অংশ…
ভীরু পায়ে আঁধার আসে, আলোর ফেলে যাওয়া পথে। আকাশের গায়ে হেলান দেয়া সবুজ পাহাড়ের পেছনে সূর্য মুখ লুকোয় নতুন ভোরে ফিরে আসবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, আঁধার তার বিশাল কালো, মিহিন চাদর মেলে দেয় সযত্নে। আঁধারের দখলদারিত্বে সূর্যের আধিপত্য হয় ম্লান। চরাচরে নেমে আসে রাত তার রহস্যময়তা সাথী করে। নিকষ কালো সে আঁধারের দখলদারিত্বে খানিকটা ভাগ বসাতেই যেন সূর্য পাঠিয়ে দেয় তার প্রতিনিধি। লক্ষ তারার প্রদীপ আর ক্ষীণ আলোকে সঙ্গী করে হেসে ওঠে চাঁদ। কখনো মৃদু কখনোবা ভরা জ্যোৎস্নায় আলোকিত করে তোলে চারদিক। অরণ্যের গাঢ় আঁধার ফিকে হয়, তাতে রহস্যময়তা রয়ে যায় কিন্তু ভীতি ছড়ায় না। এ এক অপরূপ রূপের খেলা। যে পায় সে পায় দেখতে, যে পায় না সে নিশ্চিতভাবে বঞ্চিত।
ভালোবাসার মানুষকে আরো নিবিড়ভাবে জানতে, ভালোভাবে বুঝতে সজল শহরের কোলাহল ছেড়ে চলে আসে অরণ্যের বুকে টিকে থাকা তার পুরনো বাংলো বাড়িতে, যেখানে গাড়ির গায়ে পড়া হর্ণ নেই, নেই এত এত মানুষের ভীড়। মিতুল মন থেকেই চাইছিল পারপার্শ্বিকতার বাইরে গিয়ে সজলকে নিয়ে দু একটা দিন থাকতে। তার চাইতেও বড় কথা, দুজনের সম্পর্কের মাঝে রক্তের বন্ধন বিদ্যমান থাকায় বাড়তি একটা চাপও ছিল, যা মিতুলের মাথায় ভার হয়ে আছে। সেই নির্জন বাংলো বাড়িতে পাখির কুহুতান, ভোরের ফুল, ঘাসের উপর শিশির বিন্দুর সাথে সাথে তাদের পরিচয় হয় কেয়ারটেকার আর তার বউ ফুল্লরীর। এই নিভৃত অরণ্যের আদি মানুষ।
“মলের শব্দে রাত কাঁপিয়ে আঁধারের মাঝে মিশে গেল কালো দেহাতী মেয়েটা। কত সহজ সাধারণ ওদের চলা-বলা। কোন কথার মারপ্যাঁচ নেই, কোন জটিলতা নেই। জীবন জীবিকার তাগিদটুকু না থাকলে বুঝি ওরা শুধু হাসত আর গাইত সারাবেলা। তবে যেটুকু সুখ ওদের অন্তর ধারণ করে এই পাওয়া না পাওয়ার মাঝেই, সেটুকু অমূল্য। আমাদের শহুরে সমাজে সেটা খুঁজে পাওয়া ভার, প্রায় দুষ্প্রাপ্য।
সুখ আর তার মাপকাঠি কখনও কি হয়? এ তো অলীক এক বস্তু, যে পায় তার খোঁজ সে পায় সবটাতেই আর যে পায় না সে পায় না কিছুতেই। খুঁজতে খুঁজতে জীবনের সোনালী সময় গুলো ক্ষয়ে যায় শুধু, তাকে ধরা আর যায় না।”
যে সহজ, সরল জীবন সজলের চিরকালের চাওয়া তা চাইলেই কি আর পাওয়া যায় সহজে?
নানা ঘটনার বাক গলে একদিন আবারো ফিরে আসে এই বাংলো বাড়িতে, জন্ম নেয় মিতুল আর সজলের প্রথম সন্তান। নিঃসন্তান ফুল্লরী ভালোবেসে সযতনে বড় করে চলে সেই সন্তান। ফুল্লরীর মাতৃরুপ বিচলিত করে মিতুলকে। নিজেই নিজেকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়, সরিয়ে দিতে চায় তার সন্তানের কাছের মানুষটিকে, মুছে দিতে চায় প্রিয় আদর, প্রিয় ওম। মা হয়েও মিতুল কি পারবে মাতৃত্বহীনতার এই কষ্টকে অদেখা করতে? ফুল্লরীকে সহজ ভাবে মেনে নিতে? এই দ্বান্তিকতার মাঝেই একদিন আসে সেই রাত, যে রাত বদলে দেয় ঘটনাপ্রবাহ। যেন কুয়াশা ঘেরা অরণ্যের সিঁদ কেটে নতুন এক আলোর প্রহর উঁকি দিয়ে যায় চুপিসারে…
বইয়ের তথ্য:
উপন্যাস- অরণ্যের দিন অরণ্যের রাত
লেখক- লুনা নুসরাত
প্রচ্ছদশিল্পী- নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
পৃষ্ঠা সংখ্যা- ১২৪
মূল্য- ২২২/-
প্রকাশনী- পেন্সিল পাবলিকেশনস
প্রকাশকাল: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০