বাংলা একাডেমি বইমেলা ২০২০ এ পাওয়া যাচ্ছে সালমা সুলতানার গল্পগ্রন্থ ‘দহন’

বৈশাখের এক সন্ধ্যাবেলা। আকাশে সিঁদুর লাল মেঘ।
যে কোন সময় ঝড় উঠতে পারে। এমনি এক সময় মিতুল ভাইয়াকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমাদের মফস্বলের ছোট একতলা বাড়ি। সামনে বড় উঠান। আমরা অবসর সময়ে ছাদে ওঠার পরিবর্তে উঠানেই খেলাধুলা করতাম। ছাদে খুব একটা কেউ যেতো না। তাই ভাইয়াকে সবাই এপাড়া ওপাড়া খুঁজছে ছাদে খোঁজার পরিবর্তে। শেষ চেষ্টা হিসেবে বড় আপা একবার ছাদে গেলেন। আবিষ্কার করলেন তাকে ছাদের এক কোণে। হাতের সাথে মাথা ঠেস দিয়ে মুখ গুঁজে মেঝেতে বসে আছে। বড় আপা — “কি হয়েছে মিতুল ” জিজ্ঞেস করতেই আপার বুকে মুখ লুকিয়ে হু হু করে কাঁদতে লাগলো। আপা বুঝতে পারলেন— মায়ের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। মাথায় হাত দিয়ে দেখলেন গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। মায়ের মৃত্যুর পর ও হঠাৎই খুব বেশি চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। ওরই বা বয়স কতো ছিল বড় জোড় নয় কি দশ বছর। যাই হোক মানসিক ধকল নিতে পারেনি সে। বড় আপা বাসায় নিয়ে মাথায় পানি দিতে, গা স্পঞ্জ করতে লাগলেন। রাত্রিবেলায় কিছু খাবার খাইয়ে পরে প্যারাসিটামল খাইয়ে দিলেন বড় আপা। কিন্তু কিছুতেই জ্বর কমলো না। সারারাত বড় আপা বুকের মধ্যে নিয়ে শুয়ে রইলেন। কিন্তু একটু পর পরই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছিলো। সকাল হওয়ার সাথে সাথেই আব্বা, বড় আপা মিলে ভাইয়াকে হসপিটালে নিয়ে গেলেন। কিন্তু স্হানীয় হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার সব দেখে জ্বর কমার ঔষধ দিয়ে কেন যেন দ্রুত ঢাকার বড় হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্বাবধানে ভর্তি করাতে বললেন। শুধু জ্বরের জন্য ঢাকায় স্থানান্তর! কেমন যেন খটকা লাগলো ৷ ডাক্তারের চোখের উদ্বিগ্নতা আপার দৃষ্টি এড়ায়নি। তাৎক্ষণিক এ্যাম্বুলেন্স-যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন আব্বা এবং বড় আপা। কিন্তু বিধি বাম! পথিমধ্যেই ভাইয়া ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বড় আপার কোলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ভাইয়া। মাতৃতুল্যা বড় আপাকে এক সাগর কষ্টে ভাসিয়ে স্বার্থপরের মতো সে চলে যায় মায়ের কাছে, ওপারে। বড় আপার গগনবিদারী চিৎকারে কেঁপে উঠেছিল পৃথিবী। তৎক্ষনাৎ সংজ্ঞা হারান তিনি। কারণ তিনি সন্তানের স্নেহে বড় করেছেন আমাদের। মায়ের মতোই আমাদের মঙ্গল ছাড়া, আমাদের হাসিমুখ ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারতেন না। তাই ছোট ভাইয়ার এহেন মৃত্যু কোনভাবেই মানতে পারেননি আপা। আব্বা সেদিন কিভাবে সব সামলেছেন জানি না তবে বড় আপা অনেকটাই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। এত বড় বড় দু’টো ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। তার সুস্থ হতে বেশ সময় লেগেছিল। তাও পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেন নি। মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে যেতেন। তখন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতেন ছোট ভাইয়া আর মায়ের কবরের দিকে। কমে যায় তার কর্মস্পৃহা। প্রায়ই একা একা প্রলাপ বকতেন। অভিসম্পাত দিতে থাকতেন ভাগ্যকে। আর কতো কেড়ে নেবে সে!

দহন গল্পগ্রন্থ

পাওয়া যাচ্ছে একুশে বইমেলায় পেন্সিল প্রকাশনীর ৩১৪ নম্বর স্টলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *