লাভ ম্যারেজেই ডিভোর্স বেশি?

অনেক বছর প্রেম করে বিয়ে করেছে। বছর না গড়াতেই ডিভোর্স। এরকম ঘটনাগুলো আজকাল অহরহ দেখা যাচ্ছে আমাদের শহুরে সমাজে। এতগুলো বছর যে দুটো মানুষ পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে একটা সম্পর্ককে গড়ে, এক ছাদের নিচে আসতেই সে সম্পর্কের ভিত কেন নড়বড়ে হয়ে যায়? অদ্ভুত নয়? ভালোবাসার ঘাটতি থাকলে নিশ্চয়ই এতগুলো বছর প্রেম করা যেতো না!ভালোবাসায় আসলে ঘাটতি নেই। ঘাটতিটা অন্য জায়গায়। বিয়ের আগে প্রেমিক এবং প্রেমিকা উভয়েই চেষ্টা করে নিজের সব চমৎকার দিকগুলো একে অপরের সামনে উপস্থাপন করতে। একটা মানুষ কখনোই কি পারফেক্ট হয়? না, ভালো খারাপ মিলিয়েই মানুষ। আপনার ভালোবাসার মানুষটিরও ঘাটতি আছে, ত্রুটি আছে, খারাপ দিক আছে, সীমাবদ্ধতা আছে। এই সত্যটুকু মেনে নিয়েই ভালোবাসুন, সম্পর্কে আসুন। নিজের ভালোবাসার মানুষটির সামনে পারফেক্ট হবার অভিনয় করবেন না বিয়ের আগে। আপনি যা, তার সামনে তাই থাকুন, স্বাভাবিক থাকুন। জানিয়ে দিন আপনার আচরণের, চিন্তার সীমাবদ্ধতাটুকু। সবটুকু জেনেই তিনি ঘর বাঁধতে আসুক। ঘর বাঁধার পর যদি আপনার ইমপারফেকশন প্রকাশ পায়, ঘর ভেঙে পড়বে তাসের ঘরের মতই।

“বিয়ের পর ও আর আগের মত আমার কেয়ার করে না।” প্রেমিকা থেকে সদ্য স্ত্রী হওয়া নারীদের কমন ডায়ালগ। এই ভুল বোঝার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সদ্য বিবাহিত পুরুষ হুট করেই প্রচন্ড দায়িত্বের চাপে পড়ে। উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে ভবঘুরে জীবনে অভ্যস্ত ছেলেটার মাথার উপর হুট করে চলে আসে আস্ত একটা সংসার নামক ভার, ভবিষ্যতের একরাশ স্বপ্ন আর চিন্তা। ক্যারিয়ার নিয়ে তুমুল ব্যস্ত হয়ে পড়া ছেলেটি দিনরাত এক করে কাজ করে কার জন্য? নিজ স্ত্রী, অনাগত সন্তান আর সুন্দর এক টুকরো ভবিষ্যতের জন্য। আপনার জন্যই নিজের ঘামের দামে সুখ কিনতে চাওয়া বরটি নাহয় আগের মত নিয়ম করে আপনাকে কল করে জিজ্ঞেস করতে পারছে না আপনি খেয়েছেন কিনা। তারমানে কি তিনি আর কেয়ার করছেন না? আপনাকে নিয়ে যিনি ঘর বেঁধেছেন, আপনাকে নিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ সাজাবার স্বপ্নে যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তার এই কেয়ারের চেয়ে বড় কেয়ার আর কিছু হয় না। “খেয়েছো, ভালো আছো, কী করছো” জানতে চেয়ে কেয়ার দেখানো মানুষের অভাব নেই পৃথিবীতে, আপনার জন্য, আপনাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ সাজাতে চাওয়া বরটিকে সাপোর্ট দিন। তার ব্যস্ততায় মিথ্যে অভিমানে দূরে সরে যাওয়া আপনারই বড় ভুল।

“ও আর আগের মত নেই। আগের মত আমাকে আর বোঝে না। এত এত চাহিদা ওর আজকাল, ভালো লাগে না।” প্রেমিক থেকে সদ্য স্বামী হওয়া ছেলেটির কমন ডায়ালগ। আসলেই কি তিনি অনেক কিছু চান? হয়তো বরের একটু সাপোর্ট, একটু যত্ন ছাড়া তিনি আর কিছুই চান না। অন্য একটা সংসার থেকে এসে আপনার সংসারে মেয়েটি কিছুটা হলেও একা হয়ে পড়ে নি? বাবা মায়ের রাজকন্যা মেয়েটি হয়তো না চাইতেই সবটা পেয়েছে নিজের ঘরে, আপনার কাছে তাকে চাইতে হবে এটাই উচিত নয়। তার ছোট ছোট আক্ষেপগুলোই একদিন বড় শূন্যতায় রূপ নেয়। তার চোখ, চুল, ঠোঁট নিয়ে পাতার পর পাতা কবিতা লেখা আপনি যেন এতখানিও ব্যস্ত হয়ে যাবেন না যে তার কপালে হাত রেখে মাঝেমাঝে এটুকু জিজ্ঞেস করার সময়ও না থাকে, “তুমি ভালো আছো তো?”
ভালোবেসে বিয়ে করেছে বলেই আপনার কাছে এক্সপেকটেশনটা একটু বেশিই থাকে স্ত্রীর। কাড়ি কাড়ি টাকার চেয়ে একটু যত্নের মূল্য অনেক বেশি।

হুট করে দুজন দুজনকে ভুল না বুঝে ধীরেধীরে মানিয়ে নিতে হয়। প্রেমের ফ্যান্টাসি জগতটা আর বাস্তবের সংসার জীবনে যোজন যোজন ফারাক। এখানে প্রতি মুহূর্তে সংগ্রাম, প্রতি ধাপে অসংখ্য অগ্নিপরীক্ষা। তাই দুটো ভুবনের পার্থক্য বুঝবার আগেই দূরত্ব বাড়াবেন না, আলাদা হয়ে যাবেন না। কাছে আসতে সময় লাগে অনেক, দূরে যেতে বেশি সময় লাগে না। অভিমান ভালো সম্পর্কে, অতি অভিমান নয়। অভিমান জমতে দিতে হয় না। জমাতে হয় ভালোবাসা।

-জান্নাতুন নুর দিশা


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *