শিকার

বাবা আমাকে ছোটবেলায় বলতেন বাসে উঠে অন্য যাত্রী থেকে কিছু খাবি না। এরা খাবারে বিভিন্ন অজ্ঞান করার জিনিস মিশায় তারপর সব নিয়ে যায়।
কথাটা আজও কানে ভাসছে। নাইট কোচে ঢাকা থেকে বরিশাল যাচ্ছি।
আমার সাথে ছোট একটা ব্যাগ এবং একটা বড়সর ভাল্লুকের পুতুল। এতটাই বড় যে আমি প্রায় চাপা পরে রয়েছি পুতুলের নিচে।
একটু পর একটা লোক এসে বললেন ভাইজান, একটু সাইডে চাপবেন?? আমার সিট ঐ জানালার পাশে।
আমি ” আচ্ছা ঢুকেন” বলে সাইড দিলাম লোকটাকে।
লোকটা ঢুকতে ঢুকতে বললেন, মিয়া ভাই বাড়িতে কি ছোড বইন আছে?? এত্তবড় পুতুল লইয়া যাইতাছেন তার লইজ্ঞা?? আমি হাসি মুখে বললাম জ্বী ভাই। সেরকম ই।
ওনার গা থেকে মলমের গন্ধ পাচ্ছিলাম। সাথে আবার বড় একটা ব্যাগ।
পকেট থেকে মোটা সোটা একটা মোবাইল বের করে ” ভুল বুঝে চলে যাও, যত খুশি ব্যাথা দাও ” গান টা প্লে করে দিল।কিন্তু স্থিরতা নেই। এক গানের তিন চার লাইন শোনার পর ই আবার গান চেঞ্জ করে অন্য গান শুনে। আট ঘন্টার জার্নি এমন একটা গেঁয়ো ভূতের সাথে একসাথে কাটাতে হবে, ভাবতেই বিরক্ত লাগা শুরু করল।
একটু পর ই বিরক্তির সুরে বললাম ভাই, গান কানে হেডফোন দিয়ে শুনেন। আমি একটু ঘুমাতে চাই। লোকটি গান অফ করে দিল। আমিও পুতুলটাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলাম।
ঘুম ভাংলো খেজুরের গন্ধে, চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি লোকটি খেজুর খাচ্ছে। ব্যাটাকে আমার কেমন একটু সন্দেহ হলো!
অজ্ঞান পার্টির লোক না তো আবার!!
আমার ঘুম ভেংগে যেতে দেখে,
লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল খেজুর খাবেন??
আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম তার দাতের ফাঁকে কালো খেজুর লেগে আছে। দেখেই আমার গা গুলিয়ে উঠলো। বললাম না ভাই,খাবো না ।
আবার উনি বলা শুরু করলেন , ভাই খেজুর খাওয়া কিন্তু সুন্নত। অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে কিছু খাইতে নাই। তাও গ্রামের মানুষ তো, একা কিছু খাইতে পারিনা, পাশের মানুষরে সাধতে হয়।
বলেই আবার খেজুর খাওয়ায় মন দিল। খেজুর শেষ করে বের করল আপেল। কচ কচ করে চিবিয়ে চিবিয়ে আপেল খেতে লাগল। এই আপেল খাওয়ার শব্দ টাও আমার কাছে বিরক্ত লাগছিলো।বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকাতেই,
মুচকি হেসে সে আধ খাওয়া আপেল টা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল ভাই একটা ই আছিলো ।নেন বাকি অর্ধেক খান। আমি তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে বসলাম।
পাশ থেকে উনি বললেন ভাই, কারো প্যাটে ক্ষিধা লাগলে সে অন্য মানুষের খাওন দেখতে পারে না। সামনের স্টেশনে বাস থামবে। আপনে ঐখান থেকে খাইয়া নিয়েন।
আবার বলা শুরু করল ,
ভাই কিন্তু খালি খালি ই ভয় পাইতাছেন। আইজকাল আবার এই অজ্ঞান পার্টি টার্টি নাই। এহন তো নতুন স্টাইলে বাস ডাকাতি করা হয়।
এই ধরেন বাসের ড্রাইভারের সাথে কন্টাক্ট কইরা একদল ডাকাত রাইতে রাস্তার পাশে লুকিয়ে থাকে। ড্রাইভার ওদের কথা মতো বাস স্লো করলেই ওরা চাকু আর পিস্তল নিয়া বাসে উঠে ডাকাতি করে নাইমা যায়।অথচ এমন ভাব নেয়, যেন ড্রাইভার কিছুই জানে না, আসোলেই ড্রাইভার ই থাকে নাটের গুরু।
আমি বললাম ,
চুপ করবেন আপনি??
উনি থতমত খেয়ে বসে রইলো।
একটু পর, আবার দেখি উনি চিড়া ভাজা বের করে খাচ্ছেন।
আমার পেটেও তখন অনেক ক্ষুধা ছিল।কিন্তু সাথে পানি ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
পানির বোতল টা অতি কষ্টে বের করতে হল।পুতুলটা এত বড় ছিল যে নড়তেও আমার কষ্ট হচ্ছিল। পানির বোতল বের করে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে ,
বোতলে এটিভেন -২ ঔষধ টা মিশিয়ে পাশেই রেখে দিলাম। উনি একটু পরেই আমার কাছে পানি চাইলেন৷ আমি বললাম পানি এই অল্পই আছে। বেশি খাবেন না। সে বলল আচ্ছা।কয়েক ঢোক পানি খেয়ে সে বোতলটা ফেরৎ দিল। তারপর আর হুঁশ নাই।
আমিও তাড়াতাড়ি করে তার পকেট ব্যাগ চেক করে বেশ কয়েকটা মানিব্যাগ পেলাম। এই শালা তো দেখছি, আসোলেই অজ্ঞান পার্টির একজন ছিল।
পুতুলটাকে ঠেলে ঠুলে বাসের জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিলাম। সবাই বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। কেউ কিচ্ছু দেখে নাই।
আমি বাসে উঠার সময় প্রায় ই পুতুল, ফুটবল কিংবা ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে উঠি, যাতে লোকেরা আমাকে নিষ্পাপ ভাবে ,আর এটাই আমার শিকার ধরার মূল মন্ত্র। এছাড়া আগে থেকেই কাউকে খাবার সাধতে হয় না। ভালো জামাকাপড় পরা এবং কম কথা বলা শিকার কে ফাঁদে ফেলার ভালো উপায়।আজ যাওয়া এবং আসার সময় দু বার ই বড় চাল চালতে পেরেছি।মন টা খুব ভালো লাগছে। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে চোরের সাথে বাটপারি করে লাস্ট বার অনেক গুলা টাকা হাতিয়ে নিতে পেরেছি তাই।
নিজের ভিতর একটা বস- বস ফিলিংস আসছে ।
মনে মনে প্লান করলাম সামনের স্টেশনে নেমেই নতুন বাস ধরব। বাস প্রায় স্টেশনের কাছাকাছি এসে গিয়েছে। সব কিছু নিয়ে রেডি হচ্ছি,একটু পর ই নেমে যাব,
এমন সময় হঠাৎ বাসের স্পিড কমে গেল।
বাসের ভিতর হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো একদল কালো মুখোশ পড়া লোক।
গল্পঃ

-হাসিবুল ইসলাম ফাহাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *