শ্রেষ্ঠত্ব

প্রেমিকা হিসেবে আমি তোমার অযোগ্যই ছিলাম।
তোমার সামনে গেলেই
কেমন জড়সড় হয়ে যেতাম, কথা বলতে গিয়ে কেমন যেন জড়িয়ে যেতো।
তোমার পর্বতসম বিশালত্বের সামনে আমি ছিলাম অতি ক্ষুদ্র, অতি তুচ্ছ।

জানি না, হয়তো আমার সেই নগণ্যতা, সেই অজ্ঞতাকেই তোমার ভালো লাগতো।
নিজেকে উচ্চতায় দেখতে কার না ভালো লাগে!

তুমি যখন বলতে, আমি কেবল মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতাম,
শ্রদ্ধায় আনত হতাম।
তুমি যখন আমার অজ্ঞতাকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করতে,
আমার দু’চোখে জল আসতো, সে জল লুকিয়ে ফেলে ভাবতাম,
এই যে তোমায় পেয়েছি নিজের করে, এই তো আমার ভাগ্য বটে।

মানুষ যেমন যত্ন করে আগলে রাখে রত্নাকর,
তার চেয়েও অধিক যত্নে পুষতাম প্রেম তোমার জন্য,
নিয়ম করে যত্ন নিতাম তোমার মনের,
শত ভুলের করছো ক্ষমা, শত প্রেমের দিচ্ছো অল্প দাম।
কমটা কিসের?

গর্ব হতো।
এমন জ্ঞানী প্রেমিক আমার, তার প্রেমিকা
কথা কি আর চাট্টিখানি?
জানবে লোকে, তুমি আমার।
স্বপ্নঘোরে জাল বুনতাম।

তারপর,
একদিন তুমি বললে ডেকে,
শুনছো বালা, আমি কোথায়, কোথায় তুমি?
জগতজুড়ে লোকে আমায় দিচ্ছে মান,
তোমায় লোকে কত’টা চেনে?
আদৌ কি আর যোগ্য তুমি এই প্রেমিকের, নিজেই ভাবো?

মেনেই নিলাম।
ভেবেই নিলাম, যোগ্য হবো।
সব সাধনা এক করে আজ তোমার আমি যোগ্য হলাম।
কিন্তু একি!
যতই তোমার যোগ্য হলাম,
ততই তুমি ভাঙলে কেবল আমার চোখে।

যেই তোমাকে মনে হতো বিশালতা পর্বতেরই,
সেই পর্বত প্রতিদিনই একটু করে হলো ছোট,
একটা করে ধূলিকণা পড়লো নিচে।
বড় থেকে প্রতিদিনই অল্প করে নামলে নিচে আমার চোখে,
চোখটা যত খুললো আমার,
তুমি হলে খুব সাধারণ, এখন তো আর
আগের মত মুগ্ধতা আর পাই না খুঁজে।
তোমার যত বিশালতা, সব’টা কি ভুলই ছিলো?
জাগলো প্রশ্ন নিজের বোধে।
তুমি এখন খুব সাধারণ,
খুব সাধারণ আমার চোখে।

তোমার হেলায় আমি তোমার যোগ্য হবার শপথ নিয়ে,
দেখো আজ যোগ্য হলাম।
তুমি ক্রমেই আমার চোখে হারালে সব শ্রেষ্ঠত্ব,
আমার প্রেমিক হবার তুমি ভীষণ রকম অযোগ্য।

-জান্নাতুন নুর দিশা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *