স্মৃতির বর্ষা

বর্ষা এলেই স্মৃতির জলে সাঁতরে বেড়াই
ভুলে যাই আমি আমাকে, ভুলে যাই বর্তমান,
আমার বয়স, বাধ্যবাধকতা, অপারগতা।
আমার চোখ হয়ে যায় কচিদের চোখ
শৈশবের নেশায় হাঁটতে থাকি কাদাটে আল দিয়ে
বাড়ি থেকে দৌড়ে গিয়ে ছিপ ফেলি বেগবতীর বুকে
টেংরা জীয়ল জামোই ভাঁজা পুঁটি ধরতে।

বর্ষার জলে হুমোদার বিল বিশাল সাগর
ছোটো ছোটো ঢেউ পাড়ে এসে গান শোনায়।
ঢোঙায় চরার লোভে দলবেঁধে চলে যাই বিলে
থই থই জলে ডোঙায় চরে এপারওপার করি।
ফিরে আসি স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলতে খেলতে
কাদামাটি আর আমরা অভিন্ন।
তারপর ব্রিজ থেকে বর্ষাজলে লাফিয়ে লাফিয়ে
চোখ লাল করে গোসল করা।

ভেজা গা আর কাদা পায়ে বাড়িতে আসা
মায়ের মিষ্টি বকুনি, আদুরে রাগ
মা আঁচলে গা মুছিয়ে তুললেই
যেন প্রবেশ করি কুরআন, পুরাণের স্বর্গে।
বালিশে মাথা না রাখতেই চাঁদের রুপোলি আলো
মেঘের অন্ধকারে চাঁদের লুকোচুরি দেখি
তারপর হঠাৎ বৃষ্টির নাচাগানা, সুর আর নাচের মুদ্রা
ঘরের ছন গড়িয়ে পড়ে ধীরে ধীরে চলে যায়
হুমোদায় আর বেগবতীর অন্তরে।

ধীরে ধীরে ঘুম আসে চোখে, হারিয়ে যাই বর্ষার ছন্দে
পাখিডাকা ভোর, ঘুম ভাঙে, দেখি গাছের পাতায়
রুপোলি চাঁদের আলো নেমে এসেছে আমার চোখে নেমে এসেছে
নোনা জলের বর্ষা
এভাবেই স্মৃতির ঘোর কাটে প্রতি বর্ষায়।

গুলজার হোসেন গরিব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *